সুমনপাল ভিক্ষু
ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্মের সংজ্ঞা দেওয়া সহজ নয় এবং আমরা এর যাই সংজ্ঞাই দিই না কেন তা একটি মানুষের ক্ষেত্রে যথাযথ হলেও অন্য অনেকের ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। একটি কথা যা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি তা হল এই যে ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধগণ হল বিভিন্ন প্রকারের একটি গুচ্ছ। ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্মে মানুষ যোগ দিচ্ছে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের থেকে খ্রীষ্টধর্ম থেকে ইহুদীধর্ম, নাস্তিক্যবাদ থেকে নিরীশ্বরবাদ এবং বিভিন্ন ধরণের প্রতিষ্ঠিত বৌদ্ধধর্ম নিকায়গুলি থেকে।
অন্যান্য অনেক
সমতুল্য ঐতিহ্য থেকে নিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম একটি নতুন সম্প্রদায় এবং এই সম্প্রদায়ের
কোন এক প্রকার ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরা স্টাপেন ব্যাচালার-এর প্রজাতি নয়। সমস্ত
ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরাই স্টাপেন ব্যাচালারকে জানে না, এবং যদি অনেকেই জানে
তারা সকলে তাঁর সঙ্গে বৌদ্ধধর্মের সমস্ত বিষয়ে একমত নয়। সকলে এই পদ্ধতিতে আচার
অনুষ্ঠান পালন করে না, বা সুত্তগুলিকে একইভাবে দেখেও না, এবং অনেকে স্বয়ং গৌতম
সম্পর্কেও একমত নয়। ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরা বৌদ্ধধর্মের গৌরবময় ও বর্ণনাময় ইতিহাসকে
মুছে ফেলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না, তাঁরা ঐতিহ্যকে আচার অনুষ্ঠান ও বিলাসকে ধ্বংসও
করতে চান না। অধিকাংশ ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধই প্রাচীন বৌদ্ধধর্মকে ভুল এবং ধর্ম
নিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্মকে ঠিক বলে মনে করেন, আবার নাও করেন।
তারা কী বিশ্বাস করে? বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অনেক বৌদ্ধ যদিও তারা ধ্যান এবং মনোযোগ নিয়ে অনেক কাজ করে থাকেন সেই বিন্দুতে পৌঁছান যেখানে তাঁরা তাঁদের নিজেদের বিশ্বাসকে ভালোভাবে আবিষ্কার করতে, ব্যবচ্ছেদ করতে এবং যথাযথ ক্ষেত্রে পরিত্যাগ করতে চেয়েছেন। বিশ্বাস হল একটি ধারণামাত্র যাকে একজন আঁকড়ে থাকে কোন ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য প্রমাণসহ আবার কোন ক্ষেত্রে কোন প্রমাণ ছাড়াই। আমাদের সকলেরই বিশ্বাস রয়েছে, এইভাবেই মানুষ বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা গড়ে তোলে। কিন্তু এই বৌদ্ধ অনুশীলন তাদের বুঝতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর। কোন ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরা মনে করেন বুদ্ধ ছিলেন একটি ঐতিহাসিক চরিত্র এবং তার প্রামাণিকতা তাঁদের অনুশীলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। অবৌদ্ধরা ধর্মনিরপেক্ষ গৌতমকে ঐতিহাসিক চরিত্র বলে মনে করেন না, তাঁরা গৌতমকে কাল্পনিক চরিত্র এবং তাঁর শিক্ষাকে প্রজ্ঞা পরিপূর্ণ বলে মনে করেন যদিও তাঁদের মধ্যে এর মধ্যে কিছু কিছু অর্থহীন। অনেক ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরা কখনও গৌতমকে নিয়ে কখনও চিন্তাই করেননি এবং তিনি ঐতিহাসিক চরিত্র হোন বা না হোন তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। আবার কোন কোন ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরা কিছু কিছু আচার অনুষ্ঠান পালন করেন যা তাঁরা ঐতিহাশালী বৌদ্ধধর্ম থেকে শিখেছিলেন আবার কেউ কেউ এই আচার অনুষ্ঠানগুলিকে বর্জন করে থাকেন। আবার কোন কোন ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরা মনে করেন সব শিক্ষাকেই বিজ্ঞানের কষ্টি পাথরে যাচাই করে নেওয়া উচিত। জীবনের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা উচিত, এবং যে সুত্তগুলিকে জীবনে অনুশীলন করা সম্ভব নয়, সেগুলিকে বর্জন করা উচিত। এমন অনেক ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরা পুনর্জন্মে বিশ্বাস করেন, আবার অনেকে করেন না।
এমন অনেক ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরা মনে করেন আমরা প্রজ্ঞার একটি নির্দিষ্ট অবস্থায় পৌঁছে দুঃখের বিনাশ ঘটাতে পারি আবার অনেকে তা মন করেন না। এমন অনেক ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরা মনে করেন বোধিজ্ঞান হল জাগ্রত থাকার মুহূর্ত। বর্তমানে মনোযোগকে নিবদ্ধ রাখা এবং এর জন্য মানসিক কোন অলঙ্করণ ঘটে না। আবার অনেক ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধরা মনে করেন নিজেকে কোন রকমের বৌদ্ধ বলা বৌদ্ধ সুলভ নয়।
যে বিষয়ে মিল পাই তা হল সকলের বৌদ্ধধর্মে ও তার অনুশীলনে আগ্রহ রয়েছে এবং সকলে কম দুঃখ পেতে চাই বা একেবারেই চাই না। এটা স্বীকার করতে হয় যে কোন একটি স্তরে বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে শিখছি, সেটা কেবল মননশীলতা বিষয়ে আকর্ষণ হলেও। ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ কথাটি বিতর্কিত যেটি বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা লাভ করছে। কখনও ধর্মনিরপেক্ষ বলতে বোঝান হয় ধর্মহীনতা বা অপ্রাকৃতের বিপরীত, এই পৃথিবী সংক্রান্ত, এবং এই জীবন সংক্রান্ত, বা সমস্ত ধরনের ঐতিহ্য ও ধর্মের অনুগামী বা কোন বিশেষ ধর্মকে মেনে না চলা।
এছাড়াও আরো অনেক বৌদ্ধ গোষ্ঠী রয়েছে প্রাকৃতিক বৌদ্ধধর্ম, বাস্তববাদী বৌদ্ধধর্ম। এইসব নামগুলি কেবলমাত্র ছাপ নয়। এগুলি একটি প্রথাগত স্তরে সাহায্য করে, কিন্তু এগুলিকে নিয়ে এক করা বা আঁকড়ে ধরা উচিত নয়। যদি নিজেকে বাস্তববাদী বৌদ্ধ বলতে স্বচ্ছন্দবোধ করেন এবং যদিও ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধ কথাটি কাউকে আকর্ষণ করে তাহলে তাই হয় যদি নিজেকে যেন অনুশীলনকারী বলেন এবং এই সাইবার বিষয়বস্তু উপভোগ করেন তাহলে তো চমৎকার। যে সুত্তগুলিকে পছন্দ করি সেগুলি থেকে একটি শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হলে মতামতের গোলকধাঁধায় আটক হবেন না, ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধগণ এই সমস্ত বিষয় বিশ্বাস করবেন তখনই এমন একজনের সাক্ষাৎ লাভ করেন, যিনি এগুলিকে বিশ্বাস করেন না। যদি কোন বিশেষ পদ্ধতিতে ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধদের সংজ্ঞা দেন তাহলে এমন করে সাক্ষাৎ পাবেন যিনি অন্যভাবে এর সংজ্ঞা দেন। বরং এরকম করে বলা ভাল আমার এবং আমার অনুশীলনের ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম হল বা একথা বলা আমি নিজেকে একজন ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধ বলি কারণ— আপনি চাইলে নিজের সংজ্ঞা দিতে পারি, কিন্তু অন্যের সংজ্ঞা দেবার ব্যাপারে সতর্ক হব। কোন সংজ্ঞা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং সেই ছাপকে আপনি কত আঁটসাটভাবে পাবেন সেই দিকে নজর দিন।
ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধদের (অন্যান্য সমস্ত বৌদ্ধদের মতই) মধ্যে অসংখ্য পার্থক্য রয়েছে। আমাদের সবার মধ্যে মিল হল এই আমরা সকলেই দুঃখ পাই এবং আমরা সকলেই এই দুঃখের অবসান ঘটাতে চাই। আমরা এই ভিত্তি থেকে শুরু করি, পরস্পরের প্রতি করুণা অনুভব করি। স্বাস্থ্যকর মতপার্থক্য উপভোগ করি, তথ্যের আদানপ্রদান করি এবং এই অনুশীলনের উপকারিতাকে উপভোগ করি। ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম হল বৌদ্ধধর্মের মধ্যে একটি নতুনভাবে উদিত হওয়া মূলত গৃহীদের একটি অন্দোলন। বিভিন্ন বৌদ্ধ আধুনিকতা যেগুলি আধুনিক চিন্তার আলোকে ঐতিহ্যশালী বৌদ্ধ ভাবনা ও অনুশীলনকে পরিবর্তন করতে চেষ্টা করে তাদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ধর্মের মূল উপাদানগুলির পূর্ণ বিন্যাসের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্মের ভিত্তি নিহিত রয়েছে। এই উদ্দেশ্যে এটি ঐতিহাসিক সিদ্ধার্থ গৌতম বা বুদ্ধের মূল শিক্ষাগুলিকে পুনরাবিষ্কার করতে চায় কিন্তু একথা প্রকাশ করতে চায় না বুদ্ধ কী বুঝিয়েছিলেন। বরং একটি প্রাচীন পালি সাহিত্যের উপদেশগুলিকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করে যা বুদ্ধের নিজস্ব ঐতিহাসিক প্রসঙ্গে (খ্রীঃ পূঃ ৫ম শতকের গাঙ্গেয় সমভূমির সংস্কৃতি) তাদের অর্থকে প্রকাশ করে আবার একই সঙ্গে আমাদের সমকালে বসবাসরত মানুষদের জীবনে তাদের মূল্য ও প্রাসঙ্গিকতাকে প্রমাণ করে। এই ব্যাখ্যার দুটি দিকই আক্ষরিক অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ, কারণ তারা ল্যাটিন মূল শব্দ saculum এর কথা আমাদের মনে করায় যার অর্থ হল একটি বিশেষ যুগ বা প্রজন্ম। এই আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি Stephen Bachelar-এর Confession of a Buddhist Athiest-এ সম্ভবত সবচেয়ে ভালোভাবে বিবৃত হয়েছে ।
ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্মে এই প্রস্তাব করা হয় যে আমরা ভারতবর্ষের অধিবিদ্যা বিষয়ক বিশ্বাসকে পিছনে ফেলে আসি। এই সংস্কৃতি মানুষের জীবনকে অমোচনীয় এক দুঃখের জগৎ হিসেবে মনে করে, যার থেকে মুক্তি হিসেবে একজন মানুষ মনুষ্যলোকের বাইরে আশ্রয় খোঁজে এটি সেই দৃষ্টিভঙ্গি যা সমস্ত ধর্মের বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দুধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে দেখা যায়। অপরদিকে ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম বুদ্ধের শিক্ষাকে এই জীবন ও জগতে মানুষের জীবনকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রয়োগ করে। এই অধিবিদ্যা উত্তর অবস্থানকে গ্রহণ করে একটি বৌদ্ধ কঠোরতার অস্তিত্বশীল ধর্মীয়রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, যা বুদ্ধের পারিনির্বাণের পর থেকে বিবর্তিত হয়ে এসেছে। এর পরিবর্তে এটি নিজেকে আজকের অধিবিদ্যা উত্তর দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছে এবং নিজেকে বৈপ্লবিক খ্রীষ্টীয় ঈশ্বরতত্ত্বের সঙ্গে একই রাস্তায় আবিষ্কার করেছে যার দৃষ্টান্ত Don Cuput Gainni Vattimo ইত্যাদি ভাবুকদের রচনায় পাওয়া যায়।
একইভাবে ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম ক্ষমতার কর্তৃত্বপূর্ণ গঠনকে বাতিল করে থাকে এবং পাশাপাশি গোঁড়া বৌদ্ধ বিশ্বাসের অধিবিদ্যা বৈধতা দান করেছে। এটি ধ্যান অনুশীলনের বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা দানের উপর ভিত্তি করা আধ্যাত্মিক ধারণাকে প্রশ্ন করে আবার এই ধারণাকেও প্রশ্ন করে যে বৌদ্ধ অনুশীলন হল মূলত কোন শিক্ষক বা সম্প্রদায় দ্বারা অনুমোদিত কিছু ধ্যান কৌশল বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন গুরুত্ব দেয় যা স্বাধীনতাকে উৎসাহিত করে এবং একজনের মানবতার প্রতিটি বৈশিষ্ট্যকে অর্ন্তভুক্ত করে যার আদর্শ হল আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ। এই ধরনের মানসিকতা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত প্রয়োজনের প্রতি বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। সমস্ত সময় ও স্থানে কেবল কোন প্রকৃত পথ বা ‘আলোকপ্রাপ্তি’র উপর গুরুত্ব দেয় না।
ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম একটি জনপ্রিয় শব্দগুচ্ছ পরিণত হয়েছে প্রকাশনা, সাক্ষাৎকার, ব্লক এবং বডকাস্ট এটিতে পরিপূর্ণ সেখানে এই শব্দগুচ্ছের এবং কখনও কখনও এটির ব্যবহারকারীদের প্রশংসা বা সমালোচনা করা হয়েছে। তাই ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম কাকে বলে? এটি কি জনপ্রিয় হয়েছে? এটির কি প্রয়োজন আছে? এটিকে কি বাধা দেওয়া উচিত? এটি কী করবে? এটি কী সারাবে? এই সম্মেলনে আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করার জন্যই উপস্থিত হয়েছি।
এই শব্দগুচ্ছটি
বিদীর্ণ ও নিন্দিত উভয়ই প্রসঙ্গের উপর নির্ভর করে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বলতে কী বোঝায় তা নিচে আলোচনা করা হল—
১) গোঁড়া র্ধমের
বিপরীত শব্দরূপে অর্থাৎ উদারপন্থী ‘সহিষ্ণু’ অথবা এমনকি বহুত্ববাদী।
২) ঐতিহ্যের বন্ধনে
আবদ্ধ নয়, স্পষ্টতই মৌলবাদী নয়।
৩) একেবারেই
আক্ষরিক অর্থে ‘এই শতকের’।
৪) সন্ন্যাস
বর্হিভূত বা ‘বিহারের অংশ নয়’ রূপে।
৫) বিশ্বের সম্পর্ক
ঐক্যবদ্ধ মতাদর্শরূপে নয়।
৬) অধিবিদ্যাবিষয়ক
নয় নিশ্চিতভাবে এই পৃথিবী সম্পর্কিত।
৭) ধার্মিক নয়।
সমসাময়িক পাশ্চাত্য বৌদ্ধধর্ম এবং এটির প্রায়ই সন্ন্যাস বর্হির্ভূত, উপাদান, কেন্দ্র, আন্দোলন এবং প্রকাশনার দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা এটি লক্ষ করতে পারি যে ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পাশ্চাত্যে বৌদ্ধ স্থানান্তরণের অধিকাংশটাই ধর্মনিরপেক্ষ প্রসঙ্গে ঘটছে এবং বৌদ্ধশিক্ষাকে ধর্মনিরপেক্ষ বানানোর এই প্রক্রিয়া বেশ কিছু সময় ধরে চলছে। হ্যাঁ, কিনা তা প্রশ্ন নয় প্রশ্ন হল কেন এবং কী উদ্দেশ্যে? এই বিকাশ বুদ্ধের দর্শনের সঙ্গে কতটা সঙ্গতিপূর্ণ, যে শক্তি এই আন্দোলন পরিচালনা করছে তার সম্পর্কে কতটা সৎ বা সচেতন আমরা ইতিহাস এবং সংস্কৃতিক গোঁড়ামির সম্পর্কে কতটা ভাবি বা আত্মসমালোচনা করি। শিক্ষার সম্ভাবনা সম্পর্কে কতটা অতীত, ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা সম্পর্কে কতটা সর্তক এবং কি বাজী রাখা হয়েছে তা কতটা স্পষ্ট? এই আলোচনার শিরোনাম হিসেবে এবং মনোবিশ্লেষণ সম্পর্কে Karl Knana-এর বিবৃতিকে কিছুটা পরিবর্তন করেছি। বুদ্ধের একজন শিষ্য এবং সমসাময়িক বৌদ্ধদের কাছে ভাষণ দেওয়া একজন সমসাময়িক বৌদ্ধ হিসেবে ক্রম উদ্ভুত হওয়া ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্মের নামে যা কিছু ভাল বা খারাপ ঘটছে সে বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করা যাক। যেহেতু এটি ইতিমধ্যেই ঘটছে এবং এই বিষয়ে কিছু তালিকাও সংযোজন করা উচিত।
খারাপটা দিয়েই শুরু করা যাক। এর মধ্যে কিছু বিশ্লেষ মানসিকতা নিয়ে চিন্তিত যেগুলি আকাঙ্ক্ষা ভবিষ্যতে ভুলবশত ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বৌদ্ধধর্ম দ্বারা অনুমোদিত হবে—
প্রথমটি হল সুবিধাজনক ও সহজ বৌদ্ধধর্ম এটি হল ভালো থাকার উপায়। এটি পাশ্চাত্যের মূল্যবোধ, বর্তমান বিশ্বাস এবং গড়ে ওঠা স্পর্শকাতরতাকে কোনরকম ভীতি প্রদর্শন করে না। এটি কোন আঘাত করে না, এটি কোন প্রচেষ্টা, পরিবর্তন, কোন গভীর চিন্তা করে কিছুর মোকাবিলা দাবী করে না। এর বার্তা অত্যন্ত সরল। যদি ভাল লাগে তাহলে এটি মন্দ নয় এবং এর থেকে কোন সমস্যা তৈরী করা উচিত নয়।
দ্বিতীয় প্রকার হল সুন্দর বৌদ্ধধর্ম। এটি ধর্মের অত্যন্ত সহজ রূপ, উপরের সুবিধাজনক বৌদ্ধধর্মের জীবন শৈলীপ্রকার। এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, এর অনেক বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি রয়েছে এবং এর মূল সুরটি স্বস্তিদায়ক কঠিন রচনাগুলি পড়ার দরকার নেই, কঠিন প্রচেষ্টা করার, বা মতামতকে পরীক্ষা করার বা সবকিছু ত্যাগ করার ও দরকার নেই। কেবল দয়ালু সৌজন্যপূর্ণ এবং সামান্য একটু বেশী মনোযোগী হতে হবে।
তৃতীয় প্রকারটি হল যুক্তিবাদী বৌদ্ধধর্ম। এটি বৌদ্ধ শিক্ষাকে সমস্ত আধুনিক ভাবনার আলোকে যাচাই করে যেগুলি নিজেদের বৈধ, স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকররূপে দাবী করে। এটি বিজ্ঞানের যে কোন নতুন আবিষ্কার দ্বারা শিক্ষাগুলিকে সমর্থন করতে চেষ্টা করে। যেমন— যুক্তিবাদ, যুক্তিবাদী ইতিবাচকতা, আচরণগত স্নায়ুবিজ্ঞান, চিকিৎসাবিষয়ক মনস্তত্ব ইত্যাদি। এটির মূল বার্তা হল এই, “যদি আমরা এটি পরিমাপের দ্বারা প্রমাণ করতে না পারি তাহলে এটি সত্যি সত্যি ঘটছে না। এটির বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এর সবচেয়ে খারাপ প্রকার হল Scientism এটি বৈজ্ঞানিক অনুশীলনের প্রয়োগ নয়, বরং একটি আদর্শ এবং ধর্মের বিকল্প। আজ সকলের অন্যতম বক্তা উইনস্টান হিগিনস এটি সম্পর্কে ব্যাপক ও নিখুঁতভাবে আলোচনা করেছেন। বৌদ্ধধর্মের বিজ্ঞানের সঙ্গে নৈকট্যকে অত্যন্ত মূল্য দিই এবং বৌদ্ধ ভাবনা ও অনুশীলনকে ধর্মনিরপেক্ষ ও ধর্মবর্হিভূত জ্ঞানের ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করা ও তার দ্বারা প্রভাবিত হওয়াকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিই। কিন্তু তবু এই সমস্ত জনপ্রিয় ধ্যান ধারণাকে সেই সমস্ত প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে জীবনের বৌদ্ধ শিক্ষার বৈধতা হিসেবে গ্রহণ করতে অনেক দ্বিধাবোধ করি। বৌদ্ধধর্ম, বেশ, কিন্তু আমাদের কাছে এটি প্রমাণ করার মত যথেষ্ট তথ্য নেই যে এই বস্তুটি মস্তিষ্কে প্রভাববিস্তার করে।” ত্রিশ বছর ধ্যান করে মনের অজ্ঞতার উৎপত্তি ও বিলোপোর দিকে লক্ষ রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, যে প্রকৃত পক্ষে স্নায়ুবিক পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়ার জন্য উদ্দীপিত হওয়া প্রয়োজন। অবৈজ্ঞানিক ব্যক্তিগত ও কাহিনীগত প্রমাণকে অত্যন্ত গম্ভীরভাবে প্রত্যাখ্যান এবং বিজ্ঞানের নিঃশংসয়ে একথা প্রমাণ করার জন্য অপেক্ষা কথা যে কিছু একটা ঘটেছে পদ্ধতিগত কঠোরতা প্রকারভেদ যেটি সম্ভবত সমস্ত মানুষদের দ্বারা নক্সা করা যাদের আরও ভালো কিছু করার মত কল্পনাশক্তির অভাব রয়েছে। বিজ্ঞান যদি নিজের জন্য এটি দাবী করে তবে তাই হোক। কিন্তু এটিকে কেবলমাত্র নিজের ভালো থাকার লক্ষণ এবং মস্তিষ্কের পরিবর্তনের লক্ষণ হিসেবে না পেয়ে এবং সমগ্র বৌদ্ধ প্রজ্ঞার পরশপাথর হিসেবে পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি এবং যতক্ষণ না আমরা পরীক্ষার মাধ্যমে এটি প্রমাণ করতে না পারছি, সবচেয়ে বৈধ অনুমান হল এই যে বৌদ্ধধর্ম ও ধ্যানের স্বাস্থ্যকর ফলাফল হল সমস্ত পালি টেক্সট সোসাইটির একটি কাজ।
বৌদ্ধশিক্ষার প্রতি সর্বশেষ একটি মনোভাব হল ফ্ল্যাটল্যান্ড বৌদ্ধধর্ম। এগুলি হল অধিবিদ্যা উত্তর সময় এবং ধর্মে কোন আধ্যাত্মিক প্রবণতার সমালোচকরা খুব দ্রুত ধার্মিক মানুষদের এবং তাদের প্রতিষ্ঠানের দ্বারা ধর্মের নামে গত শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া বিপদ ও ক্ষতির দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করবেন। সমস্ত অভিজ্ঞতার অতীত একটি বাস্তবতা বিষয়ে যথার্থই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, সমস্ত অবভাসের বাইরে ‘দুধের গোপন কৃষ্ণতা সম্পর্কে’ যেমন করে একজন কবি বলেছেন। তবে, অধিবিদ্যা ছাড়াও আরো অসাধারণ বস্তুও রয়েছে। সমলোচকরা সহজেই অতিপ্রাকৃত ও আধ্যাত্মিকের পার্থক্যকে লক্ষ করতে ব্যর্থ হন, এমন একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা যাতে আমি বিস্ময় মিশ্রিত মুগ্ধতা অনুভব করেছি, এমন কিছুর সঙ্গে সংযোগ অনুভব করেছি যা পরিধির বাইরে, সেটি আমাকে প্রকৃতই পরিবর্তন করতে পারে একটি অধিবিদ্যাবিষয়ক বিবৃতি, অতীন্দ্রিয় বিশ্বাস, বা একটি কর্তব্যজ্ঞান ভিত্তিক নিরুঙ্কুশ অবস্থান। প্রথমটির মূল্য হ্রাস করা বা পুরোপুরি ছুঁড়ে ফেলা এবং দ্বিতীয়টি প্রতিরোধ করা সেই একধরনের ফ্ল্যাটল্যান্ড বৌদ্ধধর্ম সৃষ্টি করে যার কথা বলা হয়েছে।
যদি আমার
ঘ্রাণশক্তি খুব ভালো থাকে এবং যদি আমি কেউ পেঁয়াজ কাটলে ঘ্রাণ নিতে পারি তাহলে
যার ঘ্রাণশক্তি ভালো নয়, তার কাছে এটি একটি অতীন্দ্রিয় বা অলৌকিক অভিজ্ঞতা
হতে পারে। আমার কাছে এটি অলৌকিক নয়, পেঁয়াজের গন্ধ মাত্র। আমি জানি তা প্রমাণ করতে পারব
না,
কিন্তু
তা আমি জানি। এটি সেই পুরোন গল্প যেখানে কচ্ছপ মাছকে তার শুকনো জায়গায় বেড়াতে
যাবার গল্প বলছে তার হাঁটা মৃদুমন্দ বাতাস, সন্ধ্যার সূর্য, পুষ্পিত বৃক্ষের
সুঘ্রাণ, এবং মাছ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে তার অভিজ্ঞতায় যা কিছু ভিজে, ঠান্ডা বা তরল
নয় তা অভাবনীয় যে শুকনো জমি, বাতাস এবং পুষ্পিত বৃক্ষের নীচ দিয়ে হাঁটা
কল্পনামাত্র। যদিও ভদ্র অজ্ঞেয়বাদী অলৌকিক বিষয় সম্পর্কে উন্মুক্ত থাকেন, blattand বৌদ্ধ অলৌকিকতার
সম্ভাবনাকেও অস্বীকার করেন এবং তাঁর অভিজ্ঞতার ঠিক বাইরে যা রয়েছে তার যথার্থতা
বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। “এটি রূপকথার গল্প। আমরা অলৌকিকতাকে ত্যাগ করে বাস্তবে ফিরে
আসি,
ধর্মনিরপেক্ষ
বৌদ্ধধর্মের ভালো দিকগুলি নিয়ে। সাম্প্রতিক বিকাশের অন্যতম আনন্দের বিষয় এই
যে আরো বেশী সংখ্যক মানুষ শিক্ষার সুফল লাভ করছেন এবং প্রাচীন রচনাগুলি পাঠ করার
সুযোগ পাচ্ছেন। এটি খুব ভালো সময়। সব মিলিয়ে বৌদ্ধশিক্ষার সম্পদ সেই মানুষদের
থেকে বেশী রয়েছে যাঁরা পড়িয়েছিলেন। এটি খুব ভালো, যা পাওয়া যায়
তার বিষয়ে আমি সর্বদা ধর্মনিরপেক্ষ।
ধর্মনিরপেক্ষ
বৌদ্ধধর্মের জন্য ইচ্ছার তালিকাটি অত্যন্ত দীর্ঘ এই তালিকার পিঠে দেখছি সেটা ভাগ
করে নিতে পারলে সুবিধা—
প্রথমত, আমরা বৌদ্ধ রচনাগুলিকে ভালো করে বুঝতে পারি না। কোন জিনিসকে ছুঁড়ে না ফেলে উচিত সেখানে কী আছে তা বোঝা। এবং একথা বিশ্বাস করি না যে সেই মৌখিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিতি রয়েছে যার মধ্যে এই স্থানান্তরণগুলি প্রোথিত রয়েছে। কেবল এটুকু জানতে পারি বৌদ্ধ রচনাগুলির সম্পর্কে আরো বেশী করে জানতে এবং সেগুলির দেশনার পরিস্থিতি সম্পর্কে আরো বেশী করে ভাবতে হবে। ভাষাতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক অধ্যয়নে মনোনিবেশ করার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে তাতে নিয়োজিত হবার প্রয়োজন রয়েছে যাকে ‘সাংস্কৃতিক অনুবাদ’ নামে উল্লেখ করতে পারি। একটি ভাষা থেকে অন্য ভাষায় গ্রন্থ অনুবাদ করাই যথেষ্ট নয়। বৌদ্ধধর্ম দেখতে গেলে বা লক্ষ করলে দেখা যায় মানুষ অতি সহজেই সংস্কৃত, তিব্বতীয় জাপানী শব্দগুলির ইংরাজী সমার্থক শব্দগুলিকে সহজেই মাথায় রাখতে পারে। কিন্তু এই শব্দগুলির তাৎপর্যকে তাদের প্রকৃত অভিজ্ঞতার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে না। যিনি সম্প্রতি তাঁর একটি অর্ন্তদৃষ্টিকে জানেন, এ সমস্ত বছরে দুঃখে সম্পর্কে আলোচনা শুনে সত্যিই বুঝতে পারিনি আসলে আমাদের ক্রোধ এক ধরনের দুঃখ বলে উল্লেখ করেছিলেন হয়তো বৌদ্ধ ধারণাগুলির সঙ্গে তাঁর প্রকৃত মনস্তাত্ত্বিক অভিজ্ঞতার সংযোগের সমস্যার মুখোমুখি হওয়া একমাত্র ব্যক্তি নন।
দুটি অনুবাদের প্রয়োজন রয়েছে একটি বৌদ্ধ মূল ভাষা থেকে আমাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় এবং অপরটি হল বৌদ্ধরা সচরাচর ভাষায় যেভাবে কথা বলা এবং যেমন করে চিন্তা করি এবং নিজেদের বুঝি। যে বৌদ্ধশিক্ষার খণ্ডাংশ লাভ করেছি তার দ্বারা নিজেদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে চিন্তা একেবারেই প্রভাবিত না হতে পারে। ইংরাজীতে অনূদিত হওয়া সত্ত্বেও এই টুকরোগুলি কোনভাবে মনের বৌদ্ধ অংশে থেকে যায় এবং সেখানে বোধ বা অভিজ্ঞতাকে কোনরকম পরিবর্তন করতে না পেরে কেবল থেকে যায়। একজন ব্যক্তি হিসেবে নিজের করা অধিকাংশ অনুবাদই এই দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। মানুষকে দেখাতে চেষ্টা করা হয়। নিকায়গুলি কী বলছে কিন্তু তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভাষায়। এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসু পদ্ধতি তবে এর জন্য প্রয়োজন প্রাচীন রচনাগুলিকে আরও ভালোভাবে বোঝা এবং সেগুলো কোন প্রসঙ্গে উৎপন্ন হয়েছে তা আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করা। এখানে জন পিপকের সঙ্গে একমত, যিনি আজ সকালে বৌদ্ধ ইতিহাসের অধ্যয়ন এবং শিক্ষাগুলির প্রাসঙ্গিকীরণের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বৌদ্ধধর্মের পাশ্চাত্যে স্বাভাবিকরণের পুরোপুরি পক্ষে। কিন্তু সেটিকে তার উৎপত্তি থেকে প্রাসঙ্গিকীকরণ করার পর অনুগ্রহ করে তা যেন করা হয়। কোন জিনিসটির স্বাভাবিকীকরণ করছি তা যদি না বুঝি তাহলে এমন কিছুকে স্বাভাবিকরণ করব যা তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
যে পরিমাণে বৌদ্ধশিক্ষা পাওয়া যাচ্ছে এবং যে পরিমাণে শিক্ষা বর্তমানে দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। প্রায়শই মানুষকে বোঝাতে পারি না তাদের দেওয়ার মত কী আছে যা তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ বোধলাভের জন্য প্রয়োজনীয় উপায়ও দিতে পারি না। আরো বিস্তৃততর ক্ষেত্রে একথা স্বীকার করার প্রয়োজন রয়েছে যে এই শিক্ষাগুলিকে গ্রহণ করতে শুরু করেছি মাত্র এবং পাশ্চাত্যে বৌদ্ধধর্মের কেবলমাত্র সূচনা হয়েছে মাত্র। এমনকি এখনও পর্যন্ত যতটুকু লাভ করেছি তার থেকে বুঝতে পারি যে এই সম্পদ অত্যন্ত ক্ষমতাশালী, আকর্ষণীয় এবং অনেক বেশী পরিশ্রম ও মনোযোগ দাবী করে। যদি আরো গভীরভাবে অনুসন্ধান করি তাহলে এই সম্পদ আরো বেশী করে খুঁজে পাব নিঃসন্দেহে, এই যে নিকায়গুলির অবদানকে ইউরোপে আরো বেশী করে প্রশংসিত হতে দেখতে পাব। প্রাচীন বৌদ্ধ ধ্যানমূলক মনঃস্তত্ব ও জ্ঞানবিদ্যার গভীর অধ্যয়ন পাশ্চাত্য মনোবিজ্ঞান ও মনঃ চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত মূল্যবান হতে পারে। এখনও মনের প্রশিক্ষণের বৌদ্ধ ধারণাকে অনুসরণ করে আরো ইতিবাচক মনোবিজ্ঞানের জন্য আশাবাদী রোগমূলক বিষয়ে অনেক গবেষণাও এবং এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ভাল থাকা, সন্তুষ্টি, করুণা এবং অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতার প্রকৃতি সম্পর্কে গবেষণার খামতি রয়েছে। অবশ্যই মননশীল অনুশীলনের প্রয়োগ সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং এই অনুশীলনের দ্বারা মনের ক্রিয়ার উন্নতিসাধন সম্পর্কে সচেতন হওয়া সম্পূর্ণ পৃথক দুটি বস্তু। মননশীলতা বর্তমানে অত্যন্ত বর্ধনশীল একটি ক্ষেত্র কিন্তু ১৩০ বছরের পুরনো মনোবিজ্ঞান মননশীলতার বৌদ্ধ ধারণার অবাধ্যতার সঙ্গে কতটা লড়াই করছে তা দেখা যায় যদি মনোবিজ্ঞানের মননশীলতার একটি প্রায়োগিক সংজ্ঞায় পৌঁছানোর জন্য হতাশাজনক প্রচেষ্টার কথা বিবেচনা করি। কখনও কখনও মনোবিজ্ঞানের মানদণ্ডগুলিকে সত্যি সম্পর্কে বৌদ্ধ ধারণার জটিলতাকে অপরের কাছে পৌঁছে দেবার তুলনায় কোন কিছুকে পরীক্ষা, প্রমাণ ও বিক্রি করার ক্ষেত্রে বেশী উপযুক্ত বলে মনে হয়। পল প্রসম্যানের মত কিছু গবেষক এই ক্ষেত্রে বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন যার শুরু হয়েছে মননশীল স্তরের যেটা বিচার বিশ্লেষণ করা তাঁর সঙ্গে অন্যান্যরাও এই বিষয়ে সতর্ক করছেন যে মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মননশীলতার আধুনিক ধারণার সব কিছুই যে ঠিকঠাক রয়েছে তা নয়।
দর্শনের
ক্ষেত্রে সরাসরি ভাবনামূলক ঐতিহ্য থেকে বৌদ্ধ জ্ঞানবিদ্যা ও তার মন সম্পর্কে বোধ
বিষয়ক অধিকতর গুরুত্ব অনুসন্ধান উৎপন্ন হবে বলে আশা করি। এটি কঠিন কাজ হবে কারণ এর
অর্থ হল ভাবনার একটি প্রকারে নিয়োজিত হওয়া যা পাশ্চাত্যের দার্শনিক ঐতিহ্য থেকে
অনেক ভিন্নপথে বিকশিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলির সবই রয়েছে, কেবল সেগুলি তুলে নেওয়া
এবং এদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষা। সবচেয়ে জোরদার ইচ্ছাটি হল সাহিত্য সমালোচনার
অভ্যাসগুলির সাহায্যে নিকায় এবং অভ্যাস অন্যান্য প্রাচীন বৌদ্ধ রচনাগুলির অধ্যয়ন, পাঠভিত্তিক
বিশ্লেষণ ব্যাখ্যাবিজ্ঞান এবং আখ্যানবিদ্যা, সাহিত্য সমালোচনার
যাবতীয় অধ্যয়ন। বৌদ্ধজগতের ফ্র্যাঙ্ক কারমড, নরগ্রপ ফ্রাই এবং রবাট
অন্টাবের মতো মানুষের অভাব রয়েছে। বৌদ্ধ রচনার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে অনেক কিছু করতে
হবে। একজন সাহিত্য সমালোচকের দৃষ্টি নিয়ে রচনাগুলিকে পরীক্ষা করব আরো সতর্কভাবে
এবং বিক্রি করার মতো কোনরকম ঈশ্বরতত্ত্ববিষয়ক (বা শৈল্পিক) দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়াই
এবং একমাত্র উদ্দেশ্য হবে কাহিনীগুলিকে কী ঘটছে তা বোঝা। কেমন করে উপমাটি নির্মিত
হয়েছে। কার স্বর কথা বলছে? বক্তার দৃষ্টিভঙ্গি এবং লক্ষ্য কী? শ্রোতা কে? এই উপদেশগুলির
প্রাসঙ্গিকতা বা পরিবেশ কী?
যদি ধর্মশাস্ত্রের শিক্ষার এই জ্ঞানলাভ করতে চাই তাহলে কোনভাবে এর মধ্যে প্রবেশ করতে হবে এবং এখানেই সাহিত্যিক পাণ্ডিত্য আখ্যানবিদ্যা এবং পাঠ্যাংশ বিষয়ক বিশ্লেষণের প্রয়োগ ঘটবে। এই বক্তৃতায় স্টিফেন ব্যাচেলর চারটি আচ সত্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং এগুলিকে চারটি কাজ নামে পূর্ণগঠন করেছেন। Ahie in Wonder-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন যেখানে অ্যালিস একটি বোতল খুঁজে পায় যার মধ্যে রহস্যময় কোন পদার্থ ছিল। বোতলের লেবেলে লেখা ছিল না তার মধ্যে কী আছে কেবল লেখা ছিল আমাকে পান কর, জ্ঞানভির থের বলেন, “একইভাবে আমদের ঐ চারটি আর্য সত্যকে দেখাতে হবে আদৌ সত্য হিসেবে নয়, কাজ হিসেবে। বৌদ্ধ বোতলের প্রথমটি বলে আমাকে বোঝো, দ্বিতীয়টি বলে আমাকে ত্যাগ করো, তৃতীয়টি উৎসাহ দেয় আমাকে উপলব্ধি করো, এবং চতুর্থটি বলে আমাকে বিকশিত করো। এই চারটি কাজে ফিরে যাওয়া প্রয়োজন নিরাপদ ‘সত্য’ হিসেবে নয়, বরং আবেদন এবং প্রকৃত কর্তব্য হিসেবে।
যদি ধর্মনিরপেক্ষে বৌদ্ধরা ধর্মনিরেপক্ষর থেকে বেশী কিছু হতে চায় তাহলে তাদের প্রয়োজন বৌদ্ধ ঐতিহ্যের মধ্যে খোঁজা এবং পৃথক করা যথাসম্ভব কম পূর্ববিচারের সঙ্গে এর অর্থ হল— কম্ম বিপাক পুনর্ভব, লোকোত্তরের মর্যাদা এবং জ্ঞান ইত্যাদি চেষ্টা করা এবং তাদের কোনভাবে বাতিল করে না দেওয়া। এই কারণে এগুলি প্রাশ্চাত্যের মূল্যবোধ ও সাম্প্রতিক বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, এই প্রস্থ শিক্ষা রয়েছে যার বিষয়বস্তু হল— বোধ ও লোকোত্তর জগৎ (অতীন্দ্রিয় জগৎ)। এই শিক্ষাগুলি জোরালোভাবে ধ্যানানুশীলনের মাধ্যমে অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির উপর গুরুত্ব দেয়। আমি লক্ষ্য করেছি কয়েকজন ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধ বুদ্ধের শিক্ষার এই বিষয়টিকে স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করেন এবং এই প্রশ্নটি অন্তত বৈধ বলে বিবেচিত হোক যেটি এই উপলব্ধির সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক। যদি উপলব্ধির সম্ভাবনাকে পরিত্যাগ করি তাহলে বুদ্ধের শিক্ষাকে সমালোচনামূলক মানবতাবাদের আরেকটি প্রকারে পরিণত করব এবং তাই ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম বুদ্ধের বার্তার কাছে তার প্রায় শত্রুতে পরিণত হবে।
একদিকে স্বীয় পছন্দ নিয়ে সুবিধামত তৈরী করা একটি বৌদ্ধধর্ম এবং অপরদিকে প্রচলিত পরস্পরার একজন ঐতিহ্যশালী বিশ্বাস প্রবণ হওয়ার মাঝামাঝি বিকল্প পথ কী রয়েছে? নিজের পছন্দমতো চলা এবং দৃঢ়ভাবে গোঁড়ামির পথে চলা এই দুইয়ের মাঝে রয়েছে প্রাচীন পাশ্চাত্য আলোকপ্রাপ্তি প্রফুল্ল। এর অর্থ হল বুদ্ধের শিক্ষার ব্যাখ্যায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিশুদ্ধত্বের দাবীর বাইরে বের হয়ে যাওয়া এবং আরো সাধারণতভাবে তাদের নিজস্ব ইতিহাসকে কল্পকাহিনী বানানো এবং এই সমস্ত ঐতিহ্যকে ভুল প্রমাণ করার সবল প্রবণতার উর্ধে উঠে যুক্তিপূর্ণ বৌদ্ধ ধর্ম দিয়ে শুরু করা। একটি সচেতন ধর্ম নিরপেক্ষ বৌদ্ধ দৃষ্টিকোণ এই ঐতিহাগুলির কয়েকটিকে তাদের নিজস্ব অতীত ইতিহাস অনুসন্ধানে সাহায্য করতে পারে।
যদি ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম পুরনো কল্পকাহিনীকে পরিষ্কার করার ভালো করা নতুন কল্পকাহিনী থেকে বেশী কিছু হয় তাহলে তার প্রয়োজন হবে নিজের ইতিহাস ও আত্মপ্রতিকৃতির দিকে তাকানো, এটিই তার বিশেষ উদ্দেশ্য। ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে আমরা কী নিরাময় করতে যাচ্ছি? একটি অংশ আশা করে যে ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্ম ধার্মিক হওয়ার মাপকাঠিটিকে ত্যাগ করবে না। যদি তারা ধর্মের পরিধি ছেড়ে বের হয়ে আসে তাহলে গোঁড়া ঐতিহ্যবাদী ও মৌলবাদীদেরই জয় হবে। বৌদ্ধধর্মকে ধর্মনিরপেক্ষ বৌদ্ধধর্মের নেতা হিসেবে সমালোচনামূলক সচেতন ও আলোকপ্রাপ্ত।
সহায়ক গ্রন্থসূচী:
১) Bachelor, Stephen
(2015). After Buddhism Rethinking the Dharma for a Secular Agem. Yale
University Press. ISBN 030020518X.
২) Bachelor Stephen
(1998). Buddhism without Beliefs. Rinerhead Books. ISBN-57322656-4.
৩) Ward, Tin (1995). What
the Buddha Never Tanght, what the Buddha Neur Tanght Celestual Arts. ISBN
0-89087-687-8.
৪) Rasheta, Noah (2016).
Secular Buddhism. Blurb.
৫) Harris, Sam (2014). Waking
Up A Guide to Spirituality Without
Rehgion, Semon and Sehuster. ISBN 978-1451636017.
৬) Wright, Robert
(2017). Why Buddhism is True: The Science and Philosophy of Meditation and
Enlightenment, Simon and Schuster. ISBN-9781439195468.
No comments:
Post a Comment