ড. সুমনপাল ভিক্ষু
অতিথি অধ্যাপক, পালি বিভাগ
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,
বঙ্গদেশে আজ সদ্ধর্মের বিকাশ এবং বিশেষ চর্চা অস্তমিত প্রায়। এর কারণ অনুসন্ধানের প্রসঙ্গটি এই মুহূর্তে আলোচনার বিষয় নয় তবুও অতি গ্লানির সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে এদেশে বৌদ্ধ সাধক রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী আজ বিস্মৃতির অন্ধকারে নির্বাসিত। তবে বলতে অত্যুক্তি নেই যে একালে বিদর্শনাচার্য রূপে তিনি ছিলেন যশ ও খ্যাতির উর্দ্ধে। "বঙ্গদেশে ধ্যানচর্চা" এবং বিদর্শনাচার্য" দীপা মা অর্থাৎ ননীবালা বড়ুয়ার জীবনবৃতান্ত রচনা প্রসঙ্গে সবচেয়ে রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দীসহ বৌদ্ধ সাধক-সাধিকাদের মহান আত্মত্যাগ, বংশগত জীবন ইত্যকার বিষয়গুলিসহ ভগবান বুদ্ধের শাসন- বিদর্শন ভাবনার বিষয় চিত্ত অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তবে এই বিষয়ে ২টি মূল্যবান গ্রন্থের উল্লেখ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা হল-
১। বঙ্গে ধ্যানচর্চা-১৯৯৫,
২। বিদশনাচর্য দীপা মা ননীবালা বড়ুয়া।
প্রসঙ্গত স্মরণীয় যে, এই দুইটি গ্রন্থে বিদর্শন তথা ধ্যানা অনুশীলনকারীদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সহ ৩৭প্রকার বোধিপক্ষী ধর্ম বিষয়ের উন্মেষ রয়েছে। সর্বোপরি ভগবান বুদ্ধের বোধি-বিধি ও বঙ্গদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘের বরণীয় মনীষীগণের মধ্যে মহাপণ্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির, শীলানন্দ মহাস্থবির এবং মহাজ্ঞান তাপস পুন্নানন্দ মহাস্থবির এর নাম এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে তাঁরা সকলেই সদ্ধর্মের গম্ভীর অনুশীলন তথা বিদর্শন চর্চার অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যাই হোক এই প্রসঙ্গে মানবিক সত্তা' গ্রন্থের লেখক জর্জ টনের এবটি বিখ্যাত উক্তির প্রতি আলোকপাত করা যাক-
"মনুষ্যত্বের বিকাশের প্রশ্নে মনের সংযত করণের প্রাসঙ্গিক অনুশীলনের বিষয়টি হল বাস্তবতা কিন্তু মন মনুষ্যকে বাস্তব অনুশীলন ব্যতিরেকে বিভ্রম" এর পথে পরিচালিত করে এবং তা ফলশ্রুতিরূপে প্রসব করে কতকগুলি ফলিত কাল্পনিক বিষয়। এই কল্পনা প্রসূত বিষয়গুলির একটি চূড়ান্ত রূপ হলো ধর্মমোহ"। যা একটি সমাজ, দেশ এবং রাষ্ট্রকে প্রকৃত আর্শে গতে এমন এক স্থান নিয়ে যায় যেখানে শুধুই (অলীক কিছু প্রচলিত ধারণা) মিথ্যার দিবাস্বপ্ন বিরাজ করে। আবার বিশ্বকবির ভাষায়-
মোর লাগি করিয়ো না শোক,
আমার রয়েছে কর্ম,
আমার রয়েছে বিশ্বলোক।
মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই--
শূন্যেরে করিব পূর্ণ,
এই ব্রত বহিব সদাই।
বিদর্শনাচার্য বাঙালি বৌদ্ধ উপাসক হলেন সেই ব্যক্তিত্ব যিনি তৎকালীন (ব্রহ্মদেশে) মায়ানমার গিয়ে প্রখ্যাত বিদর্শনাচায সেয়ামং সান্নিধ্যে প্রথম বিদর্শন জ্ঞানে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে সেই দেশেই বিদর্শন কেন্দ্র স্থাপন পূর্বক বিদর্শন ভাবনা প্রশিক্ষণের নৈতিক দায়িত্ব তথা মহান কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে বঙ্গদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন। তাঁর এই মহান কর্তব্য সাধনার পুরস্কার স্বরূপ ভদন্ত জ্ঞানীশ্বর মহাস্থবিরের সুযোগ্য উপাসক রূপে 'আর্যশ্রাবক' উপাধিতে বিভূষিত হয়েছিলেন। যা বঙ্গদেশের বৌদ্ধ সমাজে অত্যন্ত বিরল।
'একে বাপি সুরবৃক্ষেন
পুস্পিতেন বৃক্ষেন সুগন্ধিনো
বাশৎ ভপুনং সব্বং সুনত্রেশ কূল যদা।
বৌদ্ধ জগতের অনন্য এই গুণবান তথা পুণ্যবান মহৎপ্রাণ রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দীর প্রয়াণের প্রায় বৎসর অতিক্রান্ত হলেও তাঁর মহতী কর্মকাণ্ড সর্ম্পকিত ইতিহাস উদ্ধার করার বিষয়টি পুনরুদ্ধার করার মহৎপ্রয়াস অত্যন্ত গৌরবজ্জ্বল বিষয়, কারণ গুণীজনই গুণীর কদর অবগত করেন, সন্ধান করেন তথা চর্চা এবং মূল্যায়ন করেন পুঙ্খানুপুঙ্কভাবে। "মনুষ্যত্বের বিকাশটায় চরম শিক্ষা, আর সমস্তই তার অধীন। এই আপ্তবাক্যটির সঙ্গে আরও কিছু শব্দাবলী সংযুক্ত করে নিলে উপরিউক্ত উক্তিটির অসম্পূর্ণ হবে। যেমন- 'জীবন ইচ্ছা শক্তি দাবী করে।" অর্থাৎ মনুষ্যত্বের বিকাশের পরম মর্মাথ হল ব্যাপকভাবে নৈতিক জীবনের উন্নতি। এদেশে রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী এই চরম সত্যটি উপলব্ধি করেছিলেন বলেই প্রকৃত আত্মসোপানের সন্ধান তথা অনুশীলন করেছিলেন এবং এখানেই তিনি থেমে থাকেন নি। তিনি তাঁর সাধনাকে প্রকৃত মনুষ্য নির্বাণ চর্চার ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করেছিলেন।
"স্বার্থপর যে জন মানুষ, বৃহৎ জগতে যে কখনো শেখেনি বাঁচিতে"।
অর্থাৎ স্বার্থপর ব্যক্তি কখনই এই বৃহৎ জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন না। তারা নিরবে পৃথিবীতে আসে আবার নিরবেই পৃথিবী হতে বিদায় নেন। তাদের সম্পূর্ণ জীবনটাই আমি, আমার এবং আমিত্বে পূর্ণ। অর্থাৎ তারা ইতিহাস সৃষ্টিতে অক্ষম। কিন্তু কিছু ব্যক্তিজন, তাঁদের সংখ্যা অতীব নগন্য হলেও তাঁরা মুক্তচিন্তার নররূপে পৃথিবীতে উৎপন্ন হন। ধম্মপদে এই প্রসঙ্গ দৃষ্ট হয়-
"দুল্লভা পুরিসাজঞ্ঞো নমো সব্বত্থ জায়তি,
যত্থ সো জায়তি ধীরো তং কুলং সুখমেধতি"।
-ধম্মপদ, গাথা নং- ১৯৩।
এই রূপে পুণ্যশীল বিরল আধ্যাত্মিক ব্যক্তি চরিত্র আর্যশ্রাবক রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী ১৮৮৭ খ্রীঃ ৮ জ্যেষ্ঠ (আজ হতে ১৩৩ বৎসর পূর্বে) অবিভক্ত বঙ্গদেশের (বর্তমান বাংলাদেশ) হাটহাজারী উপজেলার বৌদ্ধ পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাজেন্দ্রলাল ছিলেন শ্রী হরচন্দ্র মুৎসুদ্দী এবং শ্রীমতি সরলা দেবীর জ্যেষ্ঠ পুত্র সন্তান। তাঁর বাল্যশিক্ষার ক্ষেত্রে পারিবারিক সান্নিধ্যই ছিল প্রধান। প্রসঙ্গক্রমে আলোচনা করা প্রয়োজন যে মূলত 'মুৎসুদ্দী' পদটি কোন জন্মগত নাম নয়। বৃটিশ শাসনকালে বঙ্গদেশে কর আদায়কারীগণ 'মুৎসুদ্দী' নামে পরিচিত ছিলেন। যাই হোক, আর্যশ্রাবক রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী একটি নাম নয়। অগণিত নামের একটি আলোচিত ঠিকানা। প্রায় অর্ধশতাব্দী যাবত সমগ্র বৌদ্ধ চেতনায় বিমূর্ত ভদন্ত জ্ঞানীশ্বর মহাথেরো মহোদয়ের বিদর্শনাচার্য ছিলেন রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্যনীয় যে, শ্রদ্ধেয় রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দীর পরিবার স্মরণাতীতকাল হতে বঙ্গদেশে শিক্ষা, সংস্কৃতির উন্নয়নের পাশাপাশি সদ্ধর্মের প্রচার-প্রসারে উল্লেখনীয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। জন্মসূত্রে রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী বৌদ্ধ ধার্মিক পরিবারের কৃতি সন্তান ছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণ করার পর তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। ব্রহ্মদেশে গমন এবং সেই দেশে এক প্রসিদ্ধ চিকিৎসকের ছত্রছায়ায় চিকিৎসাশাস্ত্রে তিনি বিশ্বের ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন। এই সময়কালে তিনি তাঁর মেধা এবং প্রজ্ঞাময়তায় গুণে ব্রহ্মদেশে একজন গুরুত্বপূর্ণ সুচিকিৎসকরূপেও প্রতিষ্ঠা তথা খ্যাতি অর্জনে সমর্থ হয়েছিলেন।
"এ কথা যেমন সত্য, তবু কেউ পুড়ে যেতে চায়,
পৃথিবীকে ভালো দিয়ে, কী আশ্চর্য, সেই মুর্খ হয়!"
বিদর্শনাচার্য রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দীর জন্মগ্রহণের সময়কাল ছিল ১৮০০ শতক অর্থাৎ বৃটিশ শাসনাধীন ভারত। এই সময়কালে বঙ্গীয় নবজাগরণের স্ফুরণ বিকশিত হতে থাকে। ক্রমান্বয়ে নবজাগরণের স্রোত কলিকাতার বুদ্ধিজীবি শ্রেণী তথা বৃটিশ শাসক শ্রেণীর হাত ধরে সমগ্র বঙ্গদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সকল বর্গের মানুষের মধ্যে এই নবজাগরণের আশোক প্রস্ফুটিত হয়নি। বঙ্গদেশের সিংহভাগ অঞ্চলই ছিল অশিক্ষা এবং ধর্মীয় কুসংস্কারে নিমজ্জিত। চট্টগ্রামের বৌদ্ধ প্রভাবিত অঞ্চল ব্যতিক্রম ছিল না। সেখানে অত্যন্ত বিকৃতভাবে পুরোহিত তন্দ্রের প্রভাব যুক্ত তন্ত্রবাহী বৌদ্ধ প্রভাব বজায় ছিল। উনিশ শতকের সময়কালে বৃটিশ শাসককূল ও ভারতহিতৈষী কিছু ইউরোপীয় গুণীজনের বদান্যতায় ভারতবর্ষের মানুষ বৌদ্ধধর্ম ও দর্শন তথা বৌদ্ধ স্থাপত্য সম্পর্কে ওয়াকিহাবহাল হলে বঙ্গদেশে বৌদ্ধধর্মের পুনঃসংস্কার তথা পুনঃজাগরণ শুরু হয়। এই সময়কালে বঙ্গদেশে যে সকল বৌদ্ধ মনীষী আর্বিভাব হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে বিদর্শনাচার্য রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী ছিলেন উল্লেখ্যনীয়। রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী একজন সুপ্রতিষ্ঠিত অভিজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর নিকট অর্থ ইত্যাদির প্রাচুর্যতাও ছিল এবং তিনি চাইলে পারতেন গড্ডালিকা প্রবাহে জীবন নিমজ্জিত করতে কিন্তু তাঁর অভিপ্রায় এইরূপে ছিল যে তিনি সকল দিক হতে পঙ্গুপ্রায় বৌদ্ধ সমাজকে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী করতে উদগ্রীব ছিলেন এবং এই কারণেই বিদর্শনকে বঙ্গীয় বৌদ্ধ সমাজের বিকাশ ইত্যাদির ক্ষেত্রে অমোঘ হাতিয়ার রূপে গণ্য করেছিলেন। সর্বোপরি চট্টগ্রামের বৌদ্ধ প্রভাবিত অঞ্চলে বৌদ্ধ বিহার স্থাপন তথা সদ্ধর্মের বিকাশের ক্ষেত্রে পালি শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তিনি বিদর্শন সাধনার যে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন তা কখনই তিনি নিজের মধ্যে সংকুচিত করে রাখেন নি বরং তিনি এই শিক্ষাকে বঙ্গদেশের সর্বত্র প্রসারিত করার প্রশ্নে সদা তৎপর ছিলেন। ক্রমে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় বঙ্গদেশের বিভিন্ন স্কুলে বৌদ্ধ বিহার গুলিকে কেন্দ্র করে বিদর্শনচর্চা বিকশিত হতে থাকে এবং আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। সুবিখ্যাত চীনা দার্শনিক লাওৎস বলেছেন-"মহত্তম বন্ধুত্ব বলতে বোঝায় সমাজ বিকাশের উন্নয়নে একজন প্রকৃত মনুষ্যের ভূমিকা কি? এই বিষয়টির পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুশীলন তথা এই ক্ষেত্রে অক্লান্ত শ্রম করা, নতুবা আগামী প্রজন্ম কী শিক্ষা লাভ করবে? দাসত্বের অভিশাপ না কি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, কোন বিষয়টি!” বিদর্শনাচার্য রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী উপলব্ধি করেছিলেন যে বঙ্গীয় বৌদ্ধ সমাজের বিকাশ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হল অশিক্ষা এবং অজ্ঞানতা সুতরাং এই ব্যাধি সমূহকে নির্মূলীকরণ করতে হলে মনুষ্যত্ব বোধের জাগরণ করতে হবে এবং এই কারণেই তিনি বিদর্শন চর্চার প্রতি গুরুত্ব অনুভব করেছিলেন। তাঁর সেই হেতু তিনি হয়েছিলেন বুদ্ধপুত্র।
"অদ্যমে সফলং জন্ম মূলব্বো
মনুসো ভব,
অদ্য বুদ্ধকুলে জাতো বুদ্ধ সুতোস্মি সাংপ্রতং"।
ডা. রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দি ছিলেন মুক্ত চিন্তার অধিকারী এবং বাঙালী বৌদ্ধ সমাজের দিকদর্শন, পথিকৃৎ ও জ্ঞানদীপ্তের মুর্ত পথিকৃৎ। মনুষ্যত্ববোধের উন্মেষ তথা বুদ্ধগণসহ স্বীয় মুক্তির সম উন্মুক্ত করার বিষয়ে তিনি ছিলেন সদা জাগ্রত স্বরূপ।
"আমাকেও মনে রেখো পৃথিবীর লোক
আমি খুব বেশি দেশে থাকি নি কখনো।
আমি থাকি বঙ্গদেশে, আমাকেও মনে রেখো বঙ্গদেশে তুমি।"
সর্বজনবিদিত প্রাণপুরুষ আর্যশ্রাবত ডা. রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী ছিলেন কর্মবীর, বিদর্শনাচার্য এবং সুচিকিৎসক। সাধারণ দরিদ্র মানুষের সেবার্থে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিকিৎসাকেন্দ্র। এইভাবে তিনি ক্রমান্বয়ে জনসেবাতে নিজেকে সমর্থন করেছিলেন তাঁর জীবনের শেষদিক পর্যন্ত। আর এই কারণেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন মহাসাধক।
"সময়ের অজুহাতে ছুইনি সময়
বহে গেছে নদী-জল শৈশব টলোমল
মেঘ রাস্তা আকাশের সঞ্চারি বুকে
দূর থেকে দেশে সুপ্ত-
অনুভবে বৈভব, উজ্জ্বল স্মৃতিময়।
রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দি সম্পর্কে আজ এই স্মৃতিচারণ, হয়তো প্রাসঙ্গিক কিম্বা সময়োপযোগী হবে নিঃসন্দেহে তাঁর জীবন-কর্ম পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, তাঁর ব্রহ্মদেশ যাত্রা, অত্যন্ত ঘটনাবহুল। এবং তাঁর পারিবারিক জীবন ও সমাজ চেতনা ও ধর্মীয় চেতনা অনুপ্রেরণা ও অনুশীলনের বিষয় হওয়া উচিত প্রত্যেকের জীবনে। তিনি একজন সমাজ-সংগঠক এবং অনাগত সংঘ সৃষ্টিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন তা তুলনারবীত। আধ্যাত্মিক সাধনা ও অলৌকিক প্রভাব এগুলো মহাপুরুষ ও অশৈখ্য পুরুষের ধর্মের অঙ্গস্বরুপ। সমাজ সেবা ও গ্রামোন্নয়ন তাঁর হাত ধরে হয়েছে ধর্মের আলো ও শিক্ষার আলো প্রজ্জ্বলিত করেছেন। গ্রন্থকার মহোদয় পরিশিষ্ট- ১ ও ২ সংযোজন করেছেন তা সত্যিকার অর্থে প্রশংসনীয় ও ধন্যবাদান্ত। ভন্তেকে বন্দনা নিবেদন করছি।
আমার আচার্যদেব ড. জিনবোধি ভিক্ষু মহোদয় প্রণীত 'আর্যশ্রাবক রাজেন্দ্রলাল মুৎসুদ্দী জীবন-কর্ম ও মূল্যায়ন গ্রন্থটি ইতিহাস অনুসন্ধানের খনিসদৃশ। তিনি ইতিহাসকে টেলিস্কোপের মতো সূক্ষ্মভাবে তুলে এনেছেন তাঁর জীবন-কর্মের অণু-পরমাণু। এত সল্প পরিসরে একজন মহানব্যক্তির জীবনচর্যা আঁকা সম্ভব নয়। দরকার পড়ে অনেক সময়কাল, সময়ের স্তূপ খনন করে অমূল্য রত্নরাজি আহরণ করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। গ্রন্থকার তাঁর সাধ্যমত অসাধ্য সাধন করে একটা ঠিকানার খোঁজ আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন। সেজন্য গ্রন্থাকার ও মদীয় আচার্যদেবকে নতশিরে সশ্রদ্ধ বন্দনা নিবেদন করছি। ভন্তের সুস্থ ও নীরোগ দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করছি। তাঁর পরিশ্রম সার্থক হোক। উত্তর প্রজন্ম শেখরের সন্ধানে ব্যাপৃত হোক। গ্রন্থটির বহু প্রচার কামনা করি। অলং ইতি বিত্থারেন।
ড. সুমনপাল ভিক্ষু
অতিথি অধ্যাপক, পালি বিভাগ
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,
অতিথি অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ ,
নবগ্রাম হীরালাল পালি কলেজ, কোন্নগর, হুগলি।
No comments:
Post a Comment