সুমনপাল ভিক্ষু
"সংসারে কৃত্তিম জীবনযাত্রায় হাজার রকমের অসত্য ও বিকৃতি যেখানে প্রতি মুহূর্তে রুচি নষ্ট করিয়া দিতেছে সেখানে ইস্কুলে দশটা চারটের মধ্যে গোটা কতক পুঁথির বচনে সমস্ত সংশোধন করিয়া দিবে ইহা আশাই করা যায় না। ইহাতে কেবল ভূরি-ভুরি ভানের সৃষ্টি হয় এবং নৈতিক জাঠামি, যাহা সকল জ্যাঠামির অধম, তাহা সুবুদ্ধির, স্বাভাবিকতা ও সৌকুমার্য নষ্ট করিয়া দেয়।" শিক্ষা সমস্যা ও তোতাকাহিনী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
সমাজ-সভ্যতার ক্রমবিকাশের একটি পর্যায়ে কিন্তু শ্রমবিভাগ পরিবর্তিত হল না, কিন্তু তা সত্ত্বেও পূর্বেকার পাবিরাবিক সম্পর্কের বিষয়টি ওলটপালট হল শুধু এইজন্য যে, পরিবারের বাইরে শ্রমবিভাজনের ধরণ বদলে গিয়েছিল। এই পরিবর্তিত শ্রমবিভাজন একবিংশ শতাব্দীতে এসে প্রাচীন একান্নবর্তী পরিবার গুলিতে ভাঙ্গন ধরালো: একক পরিবার পরিণত হল একটা 'লডেরাইট' শক্তিতে এবং নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়ালো শত্রুর মতো। ধীরে ধীরে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে পড়ল বিজাতীয়পণ্য সংস্কৃতি, এই সংস্কৃতি বিংশ শতাব্দীর সময়কালে পূর্ব ইউরোপ এবং মার্কিনী সমাজের গণ্ডী অতিক্রম করে এশিয়ার সমাজ সংস্কৃতিকে সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করে ফেলল। অতঃপর এই মহা সত্য আবিস্কারে খুব বেশি দেরী হল না যে, মানুষ ও একটি পণ্য হয়ে উঠতে পারে মানুষকে দাসে পরিণত করে মনুষ্য শক্তির বিনিময় ও ব্যবহার সম্ভব। একবিংশ শতকে মানুষ নিজেই বিনিময় বস্তু হয়ে গেল। এর প্রভাবে মাষের সব থেকে ঘৃণ্য প্রবৃত্তি ও আবেগগুলি উদ্দীপিত হয়েছে এবং মানুষের অন্যসবগুণের পরিবর্তে এই বিষয়টিই বিকশিত হয়েছে। নগ্ন লোভই বর্তমান সমাজের মূল চালিকা শক্তি, ধনদৌলত, আরো বেশি ধনদৌলত হল তার একমাত্র চূড়ান্ত লক্ষ্য। এই পর্যায়টি এখন এমন অবস্থার উন্নীত হয়েছে যে মানুষ তার নিজ সত্ত্বার সম্মুখে বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সংক্ষেপে এর অর্থ 'চলতি ভণ্ডামি'ও হতে পারে। বিষয়টি সুবিমল মিশ্রের কথাতেই উঠে এসেছে। "...আধুনিক সমাজে গত কয়েকশো বছর ধরে 'জ্ঞান' ও 'ক্ষমতা'র যুগলবন্দীতে তৈরী হয়েছে নজরদারির এমন এক কাঠামো যা অবিসংবাদী প্রভুর মতো প্রতিটি নাগরিকের জন্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে কাকে বলে 'নৈতিকতা, শালীনতা' বলতে কি বোঝায়, শ্লীল-অশ্লীলের মাপকাঠিই বা কী। এই নজরদারির কাঠামোটি এণন যেখান থেকে প্রতিষ্ঠান সারা সমাজের প্রত্যেকটি ব্যক্তির উপর নজর রাখতে পারে। অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশ দার্শনিক জেরোমি বেন্থাম প্রাতিষ্ঠানিক বাড়ির এক নক্শা এঁকেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন 'প্যানপটিকন'। এই প্যানপটিকন সম্পর্কে ফরাসী দার্শনিক মিশেল ফুকো (১৯৭৭ সাল) তাঁর ডিসিপ্লিন অ্যান্ড পানিশ' গ্রন্থে বলেছেন, 'প্যানপটিকন'এর বিষয়টিকে কেউ যেন ভুল করে স্বপ্নের বাড়ি না ভাবে। এই প্রতিষ্ঠান ক্ষমতা সামাজিক মানুষের অনুমোদন নিয়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে আর ব্যক্তিকে দিয়ে 'হ্যাঁ' বলিয়ে নেয় বারবার।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, "... অসভ্য রাজারা যেমন কতকগুলি সস্তা বিলাতি কাঁচখণ্ড পুঁতি প্রভৃতি লইয়া শরীরের যেখানে সেখানে ঝুলাইয়া রাখে এবং বিলাতি সাজসজ্জা অযথাস্থানে বিন্যাস করে, বুঝিতে ও পারে না কাজটা কিরূপ অদ্ভুত এবং হাস্যজনক হইতেছে, আমরাও সেইরূপ কতকগুলো সস্তা চক্চকে বিলাতি কথা লইয়া ঝলমল করিয়া বেড়অই এবং বিলাতি বড়ো বড়ো ভাবগুলি লইয়া হয়তো সম্পূর্ণ অযথাস্থানে অসংগত প্রয়োগ করি। আমরা নিজেও বুঝিতে পারি না অজ্ঞাতসারে কী একটি অপূর্ব প্রহসন অভিনয় করিতেছি....।"
উপরোক্ত দুইটি তথ্য বোধকরি কৌতুহলী পাঠকদের পাক যন্ত্রে মানসিক অট্টালিকা নির্মাণের উপযুক্ত ইট পাটকের মজুত করতে সক্ষম হবে হয়ত কিন্তু মস্তিস্ক প্রক্ষালনের বিষয়টি নৈব-নৈব চ হতে কতক্ষণ। অগত্যা সেই সকল উপকরণ সমূহের মালমসল্লা সংগ্রহে বাধ্য হলাম।
ইংরেজি মিডিয়াম ইস্কুলে ছেলেকে ভর্তি করাতে পারার সাফল্যে কেরানি বাপ মাও গর্ববোধ করেন চাঁদে পাড়ি দেওয়ার জানো জয়ন্তী, আমাদের নানটু না ইংরেজি বলতে বলতে বাঙলাটা প্রায় ভুলেই গেছে।
বাড়িতেও সবসময় ইংরেজি বলে আমি আর পারি না বাপু-বাবাকে বলে বিগবাম....।
তাহলে সমস্যার বিষয়টি কি? এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন। "মন যখন বাড়িতে থাকে তখন তাহার চারিদিকে একটা বৃহৎ অবকাশ থাকা চাই। বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে সেই অবকাশ বিশালভাবে বিচিত্রভাবে সুন্দরভাবে বিরাজমান। কোনোমতে সাড়ে নয়টা দশটার মধ্যে তাড়াতাড়ি অন্ন গিলিয়া বিদ্যাশিক্ষার 'হরিণবাড়ি' মধ্যে হাজিরা দিয়া কখনই ছেলেদের প্রকৃতি সুস্থভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে না।"
আমাদের দেশের আপাত-সচ্ছল মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ট্রাজেডি আসলে তৃতীয় বিশ্বের একটা হাফ-কনসাস মানুষের ট্রাজেডি-যে তার পুরাতন সামন্ততান্ত্রিক সংস্কার গুলি কাটিয়ে উঠতে ও পারে না আবার গ্রহণ ও করতে পারে না, ইতস্তত চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকে। এক নজরে একে সস্তা বিকৃতরুচির কাহিনী বলে মনে হতে পারে কিন্তু এটি সেই সমাজের চলচিত্র যেখানে মানবিক সম্পর্কগুলো ভেঙেচুরে একটা ন্যূনতম অবস্থার দিকে অতিদ্রুত ধাবিত হচ্ছে, দ্রুত, অসম প্রতিযোগিতা ভিত্তিক সংস্কৃতিতে, যেখানে সম্পর্কগুলো অর্থহীন, পরস্পরের প্রতিদ্বন্ধী মাত্র অন্যকিছু নয়। সমাজ সাধারণভাবে এই অমানবিক প্রতিযোগীতাকেই সাফল্যের শর্ত হিসেবে মেনে নেয়, অদৃশ্য সামাজিক শক্তির টানাপোড়েনে যুক্ত যা। আর এটাই হল 'গ্লোবালাইজেশ'।
"টাটা সেন্টারের দিকে তাকিয়ে শ্রেণীশত্রুকে চিনে নেওয়া সহজ কিন্তু গরীব চাষীর ছেলে আমলা হয়ে পিতৃপরিচয় গোপন করলে যে সংস্কৃতি অকৃতজ্ঞ পুত্র বলে তাকে নিন্দা করতে ভালোবাসে এবং পরক্ষণেই অন্যের কাছে চাষার ছেলে আবার আইএএস হয়ে বলে মস্করা করতে ছাড়ে না, সেই সংস্কৃতিকে চিনে নেওয়া অতটা সহজ নয়।..." (ক্যালকাটা ভেটলাইন, সুবিমল মিশ্র)
একটি মাত্র শব্দের জন্য
তুমি একটন ভাষার খনিজ
হেঁটে চলেছ মায়াকোভস্কি।
কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা এই দার্শনিক কূট প্রশ্নের চাইতে গত ৫০ বরের পারিবারিক সংজ্ঞার যে পটভূমি তৈরী হয়েছে তাকে আর যাই হোক মননগত এবং বস্তুগত একাত্মতার সংজ্ঞা প্রদান করা সম্ভব নয়। কেননা সামাজিক অবক্ষয় দ্বারা সৃষ্ট চরিত্রগুলো ভাষা বা সংস্কৃতি দিয়ে যা প্রকাশ করতে চাইছে তা একঅর্থে হয়ে উঠেছে বিকার তত্ত্ব। এটা কিন্তু নৈতিকতা নয়, আশাবাদে পৌঁছোনোর ধাপ নয়, মানবিক মূল্যবোধের সংকটের একটা মাত্রা মাত্র। আর সেখানেই বর্তমান সময়ের মানুষ বিকারের পাঁকে ডুবে যেতে বসেছে।
'কঞ্চির মাথায় সূতো দিয়ে কাগজ বেঁধে
ঘুড়ি ওড়াচ্ছে সময়।
অথচ বাতাস নেই
কেউ দেখেও দেখছে না
আটটা চল্লিশের লোকাল ধরতে সবাই ব্যস্ত।
পাকুড় গাছের শাখায় ঝুলে আছে
ভূমি সংস্কার
একচক্ষু দৈত্যের মত স্বাধীনতা
দূরান্তের দিকে চোখ
নিষ্প্রাণ
সম্পর্কের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে
সহজপাঠ, বর্ণপরিচয়।' একটি উদ্দেশ্য মূলক গল্প, রিংকু শর্মা।
পাখিটা মরিল। কোনকালে যে, কেউ তা ঠাহর করিতে পারে নাই।
নিন্দুক লক্ষ্মীছাড়া রটাইল, 'পাখি মরিয়াছে।'
ভাগিনাকে ডাকিয়া রাজা বলিলেন, 'ভাগিনা, এ কী কথা শুনি।'
ভাগিনা বলিল, 'মহারাজ, পাখিটার শিক্ষা পুরো হইয়াছে।' তোতা-কাহিনী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এর আমাদের সমাজে সম্পর্ক, সম্পর্কের সংকট, উৎস এবং কার্যকারণ অনেক। এই সংকটের কালখণ্ড কিন্তু হঠাৎ করে উদ্ভুত হয়নি। এর পশ্চাত'এ রয়েছে জটিল ঘটনাসমূহের দীর্ঘ ইতিহাস। অন্য অর্থে এই বিষয়টি কোন স্থানিক বা রাষ্ট্রগত সমস্যা নয় একটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পটভূমি ও রয়েছে। সর্বোপরি পুঁজিবাদের ঘনায়মান সংকট কালে বর্তমান সময়ের একটা বিরাট অংশের মানুষজন'এর মধ্যে প্রবেশ করেছে নির্লিপ্ততা এবং অতি সহনশীলতা। যা বর্তমান সময়ের সংকটকে আরও বৃদ্ধি করেছে। একবিংশ শতকে মানব সমাজে উদ্ভূত সামাজিক সংকটের মূল চালিকা শক্তি হল উদার অর্থনীতির সর্বগ্রাসী আগ্রাসন এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ। যা স্থায়ী, ধারাবাহিক এবং ক্রমবর্ধমান। এক্ষেত্রে যেন তেন প্রকারেন অর্থোপার্জন ও পণ্য মুখী বাজারের প্রতি তীব্র আর্কষণ'ই জীবনের সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপিত হয়েছে। বর্তমান জীবনের রূপরেখা আজ অর্থের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মুনাফা অর্জন, কর্ম সংকোচন জীবনের গতিপ্রকৃতিকে পরিণত করেছে সার্কাসের ক্লাউনে। ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে মানবজমিন, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং ভালোবাসার সম্পর্ক।
'রাষ্ট্র ক্ষমতার নিয়ামকাদের দুনীর্তিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত,
এই ক্ষমতাবানদের কাছে
নীতি নিষ্ঠতার প্রত্যাশাই মানুষের কাছে মূল্যহীন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এটাই আমাদের গণতন্ত্র
ঘোরতর অন্ধকারে আচ্ছন্ন,
আর তাতেই আমাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হচ্ছে।' সুবিমল মিশ্র।
শিক্ষার ক্ষেত্রগুলি অজ্ঞানতার পক্ষে নিমজিত, অথচ যার অশুভ পরিনাম সম্পর্কে আমরা ক্রমশই উদাসীন হয়ে পড়েছি। সকলেই যেন নির্বিকার। এই শতাব্দীতে শিক্ষার শুধু পরিমান গত নয়, গুণগত ভাবধারার অভ্যন্তরেও চরমভাবে বিকৃতি দেখা দিয়েছে। আবার একদল রাষ্ট্রিক বুদ্ধিজীবীর মুখোশপড়া গর্দভ শিক্ষার মান, পথভ্রষ্ট তা নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়। তাঁরা শাসক শ্রেণীর হাতিয়ার হয়ে কাঁঠালের আমসত্ত পরিবেশন করতে ব্যস্ত। এই কারণেই এক নিঃশব্দ সংকট। আর এই সংকটের তাড়নায় আমরা পরিণত হয়েছি রাষ্ট্রিয় তোতা'তে। অন্য অর্থে আমরা তো এক একজন রাষ্ট্রিয় আনুগত্যের ট্রাপিজ শিল্পী মাত্র। লাল-নীল সার্টিনের রংচঙে পোশাক পরে আমরা ভেসে বেড়াচ্ছি এক হাত থেকে অন্য হাতে এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে যখন হাত ছেড়ে দিচ্ছি, শূণ্য, তখনও অদৃশ্য একটা টানে বাঁধা রয়েছি আমরা। এ তৈরী করেছি। আর এই ক্ষণিক শূণ্যতায় ভাসতে ভাসতে আমরা নিজের চোখে দেখছি আমাদের পরাজয়।
"শিক্ষা যে কী ভয়ংকর তেজে চলিতেছে; রাজার ইচ্ছা হইল স্বয়ং দেখিবেন। একদিন তাই পাত্র মিত্র অমাত্য লইয়া শিক্ষাশালায় তিনি স্বয়ং আসিয়া উপস্থিত।
দেউড়ির কাছে অমনি বাজিল শাঁখ ঘন্টা ঢাক ঢোল কড়া নাকাড়া তুরি ভেরি দামামা কাঁসি বাঁশি কাঁসর খোল করতাল মৃদঙ্গ জগঝম্প। পণ্ডিতেরা গলা ছাড়িয়া, টিকি নাড়িয়া, মন্ত্রপাঠে লাগিলেন। জয় ধ্বনি তুলিল। ভাগিনা বলিল, 'মহারাজ, কান্ডটা দেখিতেছেন? মহারাজ বলিলেন, 'আশ্চর্য। শব্দ কম নয়।' তোতা কাহিনী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা হারিয়ে ফেলেছে তার প্রকৃত সংজ্ঞ। শিক্ষা আজ 'মানুষ গড়ার কারিগর' নয়। শিক্ষা ব্যবস্থা এখন অর্থোপার্জনের দক্ষতা আয়ত্ব করার অন্যতম মূল উদ্দেশ্য রূপে গৃহীত হয়েছে।
একবিংশ শতকে তৃতীয় বিশ্বেরহ দেশগুলিতে উদার অর্থনীতির প্রভাবে ভোগবাদী চরিত্রেরও সম্পূর্ণ ভোলবদল ঘটেছে। এই বিষয়টি ঘটেছে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের উদরপূর্তির স্বার্থে। ফলে পণ্যমুখী বাজার তথা ভোগ্যপণ্য দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এর অনিবার্য ফলশ্রুতিতে জীবন জীবিকার বিষয়গুলি সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে ঋণের ফাঁদে জর্জরিত সাধারণ মানুষ ক্রমশই সামাজিক দায়দায়িত্ব পালন হতে দূরে সরে যাচ্ছে।
মর্গাণ বলেছেন (সমাজ ও সভ্যতা, পৃঃ ৫৫২), "... মানুষের অতীত তার অস্তিত্বের একটি ভগ্নাংশ মাত্র এবং আগামী যুগের ও একটি ভগ্নাংশ মাত্র। সম্পত্তির আরহণ যার একমাত্র লক্ষ্য সেই ঐতিহাসিক পর্বের পতন হিসেবে সমাজের বিলুপ্তি অবধারিত, কারণ এই পর্বের মধ্যেই নিহিত তার নিজ ধ্বংসের বীজ।" সুতরাং বর্তমন সম্পর্কের সংকট'এর প্রধান উৎস সমাজের বর্তমান ধনতান্ত্রিক কাঠামো বৈশিষ্ট্যের অভ্যন্তরেই নিহিত আছে। সুতরাং কাঠামোগত আমূল পরিবর্তন ব্যতীত এই সংকট মোচন সম্ভব নয়।
চেকস্ অ্যান্ড ব্যালান্স অন্তহীন রেষারেষিতে মধ্য মেধার চিড়বিড়া নিতে মতাদ্ধ অসহিষ্ণুতার বিষ ছড়িয়ে সংকীর্ণ কু-নাট্যে চেযে আছি, কোথায় সেই উদার সহিষ্ণুতার ভাবমূর্তি?
আশঙ্কা আরো ঘোর বিভৎসতা জাঁকিয়ে বসার অপেক্ষায় সবুজ সংকেত উঁকি দিচ্ছে......
সমাজের সর্বস্তরে সেই ঝলসানো রুদ্রমূর্তি নিম্ন মেধার দাপাদাপিতে দরিদ্র মধওবিত্তের বৃহৎ অংশের সামনে শুধুই নীলাকাশ-
রাষ্ট্র নির্বাক, মুখে কুলুপ আঁটা একাথে চুপ।
বন্ধ কারখানা, লআউট কেড়ে নেওয়া রুটি....
মৃত্যু মিছিল দেখতে দেখতে আমরা চুপচাপ, ব্যা ব্যা ব্ল্যাক শিল্প।
দেশ উেলিয়ার পথে....।
আধুনিক (?) যুগের মানুষ আমরা। হ্যাঁ, অবশ্যই আধুনিক যুগের। বর্তমান যুগটা মিথ্যা আর ভন্ডামির বর্ণময় চরিত্রের মোড়কে তথাকাথিত উন্নতির ধক্কানিনাদ চলছে। সাধারণ মানুষ গণমাধ্যমেমদিরা পান করে ফিরে গেছে সেই মধ্যযুগে। তবুও বলছি আমরা আধুনিক! শত অন্যায় দেখেও আমরা 'আত্মনির্ভর সমাজ' গড়তে ব্যস্ত। মানুষের দুর্দশা ক্রমশ ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হয়ে উঠছে। শিক্ষার হাল তথৈবচ সাধারণ মানুষ মৃতবৎ কিন্তু আতঙ্কিত। একই সঙ্গে ইংরেজি মিডিয়ামের রমরমা। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়ালো,
ত কিম্ ত কিম্।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অত্যন্ত ক্ষেদের সঙ্গে বলেছেন, "... বাল্যকাল হইতে আমাদের শিক্ষার সহিত আনন্দ নাই। কেবল যাহা কিছু নিতান্ত আবশ্যক তাহাই কন্ঠস্থ করিতেছি। তেমন করিয়া কোনোমতে কাজ চলে মাত্র, কিন্তু বিকাশ লাভ হয় না। হায়া খাইলে পেট ভরে না, আহার করিলে পেট ভরে। কিন্তু আহারটি রীতিমত হজম করিবার জন্য হাওয়া খাওয়া দরকার। তেমনি একটা শিক্ষা পুস্তককে রীতিমত হজম করিতে অনেকগুলি পাঠ্যপুস্তকের সাহয্যে আবশ্যক। আনন্দের সহিত পড়িতে পড়িতে পড়িবার শক্তি অলক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পাইতে থাকে, গ্রহণ শক্তি ধারণাশক্তি চিন্তাশক্তি বেশসহজ এবং স্বাভাবিক নিয়মে বললাভ করে।" কিন্তু এখনকার দিনে এ সকল কথা ভাবকুহেলিকা বলে উড়িয়ে দেবে। তাহলে সংকটটা কোথায়?
আমরা বড়ই আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর হয়ে উঠেছি। চারপাশের মানুষ জগতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শুধু দেনাপাওনার। কার্লমার্কস 'কম্পিউনিষ্ট ইস্তেহার' গ্রন্থে লিখিছিলে যে পুঁজির যুগে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক হল 'ক্যালাস ক্যাশ পেমেন্ট'এর সম্পর্ক। অব্যর্থ জায়াগণসিস। কিন্তু তারপর সেই গড্ডালিকা প্রবাহে অবগাহণ সেই সংযোগ, স্বচ্ছতা, আত্মার চর্চা কোথায়? সর্বত্রই অনিষ্টকর ছায়া এসে পড়েছে। আর আমরা বলছি মানুষ করা।
মানব সভ্যতার ইতিহাসকে অনুসন্ধান এবং পর্যালোচনা করলে দেখা যে যুগের বিবর্তনের মাধ্যমে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে আবার অনেক নতুন বিষয় আমাদের সম্মুখে উদ্ভূত হয়েছে। ফলে যুগের প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়েছে জীবনপ্রণালী, দৃষ্টিভঙ্গি, মননের আঙ্গিক এবং আরও কত কী। অপরদিকে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ একবিংশ শতকে এসে তার শাসন শোসনের আঙ্গিকের ও রকম ফের ঘটিয়েছে, তাই শিশু শিক্ষার উদান ও আজ ভিন্নমুখী, এই ভিন্নমুখী তার বিষয়টিও পুঁজিবাদী আঙ্গিকের একটি রূপক মাত্র। তাহলে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে প্রকৃত শিক্ষার স্বরূপ কী হবে?
"একটা মরাগাছের ডাল পুঁতে দেওয়া হয়েছিল।
এক পাহাড়ের পাথুরে
জমিতে।..... অনেক দিন পর
সত্যিসত্যিই একদিন দেখা গেল প্রাণ পেয়ে গেছে মরাগাছ পাতায় ভর্তি সজীব ডালপালা সে মেলে ধরেছে আকাশের দিকে। স্যাকরিফাইস-এর শুরুতে
তারকোভসকি আমাদের শুনিয়ে রাখেন
এই রূপকথা।" আড়াই-গংগা, সুবিমল মিশ্র।
জীবনের জলছবিতে 'শিশু' শব্দটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ বহন করে। কেননা জন্মবৃত্তান্ত কথার প্রারম্ভে মাতা-পিতার মনের অনেক স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্খা শিশুর জীবনের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। কেননা একটি শিশু তার জন্ম জগতের মুহূর্ত হতে শুরু করে স্বয়ং বহু আকাঙ্খা চাহিদার জীয়নকাঠি। অপরদিকে মাতা-পিতার গর্ব শুধু শিশুকে জন্ম দিয়েই নয়, তাকে প্রকৃত অর্থে মানুষ করার গুরুতর দায়িত্ব পালন করার পরে সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুখী দেখার মধ্যে। তাই শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই মাতা পিতার সম্মুখে অযাচিত ভাবে উপস্থিত হয় ঠিক কী ভাবে এবং কোন সময়কাল হতে তারা প্রকৃত অর্থে শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন।
মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন অনুসারে মানব জমিনের সবথেকে উৎকৃষ্ট অধ্যায় হল শৈশব। শৈশবের স্বর্ণালী আভা মানুষের সম্পদ। এক অর্থে বলা যায় যে ব্যতিক্রম বিহীন অবস্থায় শৈশব হল মানুষের স্বর্ণযুগ, আনন্দের এবং শান্তির নীড়। বর্তমান সমাজে এই বিষয়টি ক্রমশই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। কারণ এ প্রজন্মের সকল মাতা পিতার সুপ্ত ইচ্ছে যে তার শিশু বড় হয়ে অ্যালবার্ট আইনষ্টাইন অথবা টমাস এডিসন্ হোক! কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, এই ট্রাপিজের খেলায় শিশুকে সামিল করে তার শৈশব, সাহচর্য, মানসিক সুস্থতা ইত্যাদি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না তো?
আমাদের 'লুডেরাইট' জগতের প্রভাব শিশুর জগতকেও চার দেওয়াল'এর মধ্যে কন্দী করে ফেলেছে। অপরদিকে মাতা-পিতার অবাস্তব চাহিদা শিশুদের শৈশবকেও হত্যা করে ফেলেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুর্জোয়া শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেছেন, "ইস্কুল বলিতে আমরা যাহা বুঝি সে একটা শিক্ষা দিবার কল। মাষ্টার এই কারখানার একটা অংশ। সাড়ে দশটার সময় ঘন্টা বাজাইয়া কারখানা খোলে। কল চলিতে আরম্ভ হয়, মাষ্টারের মুখ ও চলিতে থাকে। চারটের সময় কারখানা বন্ধ হয়, মাষ্টার কল ও তখন মুখ বন্ধ করেন। ছাত্ররা দুই চারপাতা কলে ছাঁটা বিদ্যা লইয়া বাড়ি ফেরে। তারপর পরীক্ষার সময় এই বিদ্যা যাচাই হইয়া তাহার উপর মার্কা পড়িয়ে যায়।"
আজকের শিশু বইয়ের পাহাড়ের ভারে নুইয়ে পড়ছে, তবুও স্কুলে যাওয়া চাই। সে জানালা দিয়ে আকাশ দেখেনা, দেখেনা পাখির উড়ে যাওয়া কিম্বা ঘাস ফুল। শিক্ষা ব্যবস্থার অযাচিত ব্যবস্থাপনায় স্কুল ছুটির পর তার কোন খেলার অবকাশ নেই। খেলার মাঠ নিরবে কাঁদে অথচ ভীড় বাড়ছে শিক্ষা কেন্দ্রগুলিতে। দুই আড়াই বছরের শিশু ও আজ এই ইঁদুর দৌড়-এর একজন প্রতিযোগী। ফলে অনুভূতির সূচারু মনন হারিয়ে গিয়ে অনেকের মধ্যেই 'পরিপূর্ণতাবাদী' মনোভাবের বীজ রোপিত হয়েছে। এটাই আজকের সমাজের বাস্তব চরিত্র।
শিশুরা এখন দ্রুত পালটে যাচ্ছে। অপু, মাধো, বলাই কিম্বা বালকদের সর্দার ফটিকচাঁদ সব যে কোথায় হারিয়ে গেল কেউই জানে না। নেই সেই সারল্য, গোল্লাছুট কিম্বা আলোঝরা উজ্জ্বল মুখগুলি। গণমাধ্যমের মিথ্যে রসাস্বাদন, রকমারি আমোদ আহ্লাদের উদ্ভট আয়োজন অথবা হাবিজাবি ছাঁইপাঁশ গলাধ করণের বিপুল ব্যবস্থা। সস্তা বিনোদনের বাড়বাড়ন্তে শিশুকালের আশ্চর্য জগত সমাজের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে।
ইদানিং শিশু দুগ্ধস্পোয্য থাকতেই শুরু হয়ে যায় তথাকথিত ভালো স্কুলের খোঁজ। বাংলা মাধ্যম স্কুলের অর্থ হল আধুনিক মাতা-পিতার কাছে অপাংতেয়। এদিকে ব্যাঙের ছাতার মত বেড়ে চলেছে বেসরকারী ইংরেজি মাধ্যম সকুল। শিক্ষা ইত্যাদির যাবতীয় আয়োজনে শিশুর পরিচর্যা সংক্রান্ত খরচের অংকটা বোধকরি গণনার বাইরে যেতে যেতে ক্রমশই রঙ চঙে ফঅনুসে পরিণত হচ্ছে। অপরদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিবার গুলি সন্তানের সাফল্যের চিন্তায় নিজেদের জীবনের সঙ্গে সাপ লুডো খেলছে। যাদের অর্থনৈতিক সামর্থ কম, তাদের সিংহভাগই হীনমন্যতায় দিনযাপন করছে।
সভ্যতা, সমাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সমাজের জটিলতা এত বেশী বুদ্ধি পেয়েছে যে মানসিক অবসাদের বিষয়টি একটি স্বাভাবিক বা নিত্য নৈমত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাড়ছে প্রতিপত্তি এবং প্রতিষ্ঠা লাভের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগীতা। নিজের শিশুকে প্রতিপত্তি ও উন্নততর জীবন লাভের ইঁদুর দৌড়ে সামিল করতে হবে। অথচ শিশুরা উপেক্ষিত। এই উপেক্ষাই শিশুদের মনের স্বাভাবিক বিকাশের গতিপথকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। অপরদিকে গর্বিত মাতা পিতা অন্ধকারে পথ হাতড়ায়। কবি ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন-
"বিষয় বাসনা বশে পরে আত্মভ্রান্তিদোযে
আছে ভ্রান্ত হইয়া নিতান্ত।"
প্রসঙ্গত উল্লেখ্যনীয় যে প্রকৃত অর্থে একটি শিশুর শৈশবকালের সময়সীমা হল ১-৫ বৎসর। শিশুশিক্ষার স্বার্থে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর'এর 'সহজপাঠ' (১ম ও ২য় ভাগ) মাতৃ ভাষাশিক্ষার (বাংলা) একটি অপরিহার্য বই (১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ) প্রকাশ করেন। এই বইটির মূল গুরুত্ব হল এটি শিশুদের জন্য অত্যন্ত সহজ এবং সাবলীল ভাবে বাংলা বর্ণমালা ও শব্দ ভান্ডারের প্রাথমিক ধারণা দেয়, যা বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয়'এর থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই বইটি চিত্র সম্বলিত (নন্দলাল বসু অঙ্কিত) হওয়ার কারণে আর্কষণীয় এবং শিশুদের কল্পনার জগতকে আরও প্রসারিত করে তুলেছে। সহজপাঠ শুধু ভাষা শেখার বই নয়, এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেয়, যা এটিকে বাংলা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত মূল্যবান ও মৌলিক কাজ করে তুলেছে।
সহজপাঠের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য:
১। সহজ ও সাবলীল ভাষা:
সহজপাঠ বাংলা ভাষার প্রাথমিক ধারণা প্রদানের জন্য চলিত এবং সহজবোধ্য ভাষায় লেখা।
২। চিত্রের ব্যবহার:
বিখ্যাত শিল্পী নন্দজলাল বসুর আঁকা ছবিগুলো শিশুদের আকৃষ্ট করে এবং পড়া ও শেখার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করে।
৩। প্রকৃতি ও সামাজিক শিক্ষা:
বইটিতে শুধু বর্ণ ও শব্দ শেখানো হয় না, বরং এর মাধ্যমে শিশুদের প্রকৃতি, সামাজিক পরিবেশ এবং তাদের চারপাশের জগত সম্পর্কেও শেখানো হয়।
৪। শিশুদের মানসিক বিকাশ:
এটি শিশুদের কল্পনার জগতকে প্রসারিত করে এবং সার্বিক বিকাশে সাহায্য করে।
৫। আর্কষণীয় বিষয়বস্তু:
পদ্য ও গদ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন সাধারণ বিষয়, যেমন প্রাকৃতিক, মানসিক তথা নান্দনিক বোধের দ্বারা শিশুদের মনোযোগী হতে সাহায্য করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'শিক্ষা বিধি' প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, "শিশুদের পালন ও শিক্ষনের যথার্থভাব পিতামাতার উপর। কিন্তু পিতামাতার সে যোগত্য অথবা সুবিধা না থাকতেই অন্য উপযুক্ত লোকের সহায়তা আবশ্যক হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় গুরুকে পিতামাতার না হইলে চলে না।" অন্যত্র তিনি বলেছেন, "... অত্যাবশ্যকীয় শিক্ষার সহিত স্বাধীন পাঠ না মিশাইলে ছেলে ভালো হইতে পারে না। বয়ঃ প্রাপ্ত হইলেও বুদ্ধিবৃত্তি সম্বন্ধে সে অনেকটা পরিমানে বালক থাকিয়া যায়।"
বিদ্যাসাগর উপলব্ধি করেছিলেন, শুধু বিদ্যালয় স্থাপনই সব নয়, শিক্ষক-শিক্ষা প্রবর্তন ও যথেষ্ট নয়। শিশুমনের বিকাশের ক্রম অনুযায়ী উপযুক্ত বই চাই। তাই 'বর্ণপরিচয়' লেখা। নীতি উপদেশ পরিবেশনের জন্য লিখলেন 'আখ্যান মঞ্জরী'। এইভাবে শিক্ষার্থীদের বৌদ্ধিক, মানসিক ও নৈতিক জীবনগঠনের উদ্দেশ্যে ও শিক্ষার দ্বারা সামাজিক রূপান্তরের প্রত্যাশায় তিনি সংস্কার বিবর্জিত সেক্যুলার শিক্ষার প্রথম সোম্মানটি দৃঢ় ভিতের উপর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
গুগলের মতো হয়ে যাবতীয় নোটস আর তথ্যের ভান্ডার যারা আনতেন তুলে, ভালো নম্বরের আগে ভালো মানুষ হও, সে আজব কথা যারা শেখাতেন স্কুলে, কোথায় পাঠালে তাঁদের নির্বাসনে, ওহে 'নম্বরই সব' বলা ব্রেকিং নিউজে বাঁচা সুশীল সমাজ? এই খুনে নীল তিমি যুগে প্রজন্ম বাঁচাতে হলে, তাঁদের যে ছিলো বড় প্রয়োজন আজ। বিলুপ্ত, সমর রায়।
ডাকঘর, শিশু, কিম্বা শিশু ভোলানাথের খুদে নায়কেরা সকলেই হাত বাড়িয়ে আছে এমন এক স্বপ্নরাজ্যের দিকে, যাকে বাস্তব জীবনে কেউ পায় না।
বিসর্জন-এও একই হতাশা এবং বিষাদের সুর।
ডাকঘর-এর চারদিকে বন্ধ দেওয়াল, মাঝখানে একটি অসহায় মানবশিশু মুক্তির জন্য, একমুঠো নির্মল হাওয়ার জন্য, কখনো সকাতর প্রার্থনা, কখনো আর্তনাদ করছে।
সেই বন্ধ দেওয়ালে তিলে তিলে মৃত্যুর সর্বনাশের দিকে আর্কষিত হতে থেকে ও ঐ শিশু তথাপি একটি আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়নি, এ-আনন্দ স্বপ্ন দেখার। কিন্তু বৃদ্ধ মানব সভ্যতা তাঁর মুক্তি স্বপ্নের কোনো সংগত অর্থই খুঁজে পায় না, এবং এক উচ্ছৃঙ্খল রুগ্ন মনের প্রতিফলন বলেই হৃদয়ে নেয়।
অদ্যাবধি মুকুট, রাজর্ষি, ডাকঘর-এর পৃথিবী তার অস্ত্রেমের, বিচ্ছেদের এবং শাসনের যন্ত্রণা নিয়ে শিশু মানুষের পৃথিবীতে বন্ধ দেওয়ালের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
এই বয়োবৃদ্ধ পৃথিবীর মুখোমুখি আমরা, আজকের শিশুমানুষেরা শিশুর মতোই অসহায়।
"ওরে মন পাগল তুই কেন কেঁদে মরিস
পরশ পাথর খুঁজতে গিয়ে
কেন বারে বারে তুই হারিস....।"
ভীষণ হিংস্র অসুস্থ এই সমাজেই আমরা সন্তান-সন্ততি নিয়ে বসবাস করছি এবং শ্রেয় হারবার ভয়ে প্রতি মুহূর্তেই অবসাদ গ্রস্ত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছি। অতীতের সামন্তবাদের সঙ্গে ক্ষয়িষ্ণু পুঁজিবাদের একটা অস্বাস্থ্যকর সমঝোতার কারণে সামন্তযুগের কুসংস্কার, মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা, কুপ্রথা গুলি সমাজকে ধ্বংস করে ফেলেছে। ফলে সমাজের কুসংস্কার গুলি পরিবারে ঢুকে শক্তি আনন্দ-স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে, পরিজনের মধ্যে মূল্যবোধ হীনতার সংকট সৃষ্টি করেছে, মানুষ হয়েছে আদর্শচ্যুত।
দেশের স্কুল, শিশু শিক্ষা কেন্দ্র এমন কি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলি অশিক্ষার আর্বজনা দ্বারা পরিপূর্ণ, শিশু, কিশোরদের মজে প্রবেশ করছে কুঅভ্যাস, কদাচার আরও কত কি। লক্ষ লক্ষ শিশুর মনও মনুষ্যত্বকে প্রতিদিন খুন করে ফেলা হচ্ছে। দিনের পর দিন পরিবার, পরিজন এই ভয়ঙ্কর মহামারীর কবলে পড়ে ক্রমশই নিঃসঙ্গতায় ভূগছে। অথচ আমরা চোখ থাকতে ও অন্ধ, কান থাকলে বধির? আমরা প্রত্যেকেই জানি 'শিশুর একটি নিজস্ব পৃথিবী আছে, কিন্তু ওই পৃথিবী কোনো কল্পিত স্বর্গরাজ্যের মতো নয়। সময় তাকে অনবরত পাল্টায়, এবং নানাদিক থেকে।
যা কিছু পরিবেশের জলবায়ু, যা আলো, যা তার মাটি, যা আকাশ দেখা যায় শিশুর বুদ্ধিবিকাশের পূর্বেই তাদের রং দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কেননা তাদের পায়ের নীচে প্রকৃত অর্থে পারিবারিক পরিচর্যার মাটি নেই। এক্ষেত্রে প্রকৃত শিক্ষার পরিবর্তে বিজাতীয় শিক্ষা তাদের পৃথিবীতে অনাধিকার হয়ে প্রবেশ করেছে, যা খুবই বেদনাদায়ক।
এখানে শিশু, তার পরিবার কারও উচ্ছ্বাস নেই, সমস্তটাই যান্ত্রিক। অথচ কেউই তা বিশ্বাস করছে না। এখন কিন্তু তাদের সংখ্যা বাড়ছে।
শিশুর পৃথিবী অথবা ব্রাত্য পদাবতী :
"নেই বা হলেম যেমন তোমার
অম্বিকে গোঁসাই।
আমি তো, মা, চাইনে হতে
পণ্ডিত মশাই।
নাই যদি হই ভালো ছেলে,
কেবল যদি বেড়াই খেলে,
...সমস্তখন ছুটি"। শিশু ভোলানাথ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ক্রমাগত নেতিবাচক সমালোচনার প্রভাবে শিশু এবং তার মাতাপিতার মধ্যে ক্রমশই বেড়ে উঠছে হীনমন্যতা, অনীহা, উদ্বেগ, বিসন্নতা প্রভৃতি। হীনমন্যতার কারণে পরিবার এবং সমাজের মধ্যে হঠকারী চিন্তা, মানসিক বিভ্রানিত বিশেষভাবে চোখে পড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে। পরিবার তথা নিজের মধ্যেকার তথা নানাবিধ অনিশ্চয়তা ও চাপের মুখোমুখি হওয়া, নিজ অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখা, অন্তর্নিহিত গুণাবলী সমূহের বিকাশ সহ নিজেকে এই দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর উপযোগী সংবেদনশীল এবং সমাজমনস্ক যুক্তিবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জীবনকুশলতার শিক্ষা অতিমাত্রায় প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সর্বোপরি প্রয়োজন আত্মসচেতনতা, আত্মপ্রতীতি, পারস্পারিক সম্পর্কের উন্নতি, সমস্যা নিরসন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমানুভূতি, অতিরিক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
"আমাদের শিক্ষা যে দিকে পথ নির্দেশ করিয়া দিতেছে সে দিকে সভ্যতা নামক একটি মায়াবিনী মিথ্যা সাম্রাজ্য। আমাদের অদৃষ্টক্রমে বিশেষ কারণবশতই যে আমাদের শিক্ষা আমাদের নিকট নিষ্ফল হইয়া উঠিয়াছে....।" শিক্ষার হেরফের, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন, "অনিয়ন্ত্রিত প্রতিযোগিতায় শ্রমের শুধু অপচয় নয়, ব্যক্তির সমাজ সচেতনতার যৌক্তিকতা সমাজের উপর আস্থা ভেঙে পড়ে।
ব্যক্তির এই প্রতিবন্ধকতাই আমার মতে ধনতন্ত্রের সব থেকে খারাপ দিক। আমাদের সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাই এই প্রতিবন্ধকতার শিার। অত্যধিক প্রতিযোগিতার বীজ ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। তাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয় ছাত্রা জীবনে অর্জিত সাফল্য ভবিষ্যতে উজ্জ্বল রোজগার আর্থিক প্রাপ্তির সোপান।"
শিশুর মানসিক উন্নয়ন তথা বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা গগনচুম্বা। একটি দম্পতির নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি হতে পরিবারের জলবায়ু গড়ে ওঠে। আর এই জলবায়ুর প্রতি নির্ভরশীল হয়ে একটি শিশুর মনস্তাত্ত্বিক পুষ্টি সমৃদ্ধ লাভ করে। এক্ষেত্রে সন্তানের প্রতি পরিবারের বা মাতা পিতার দায়বদ্ধতা ইত্যাদি বিষয়গুলি প্রকৃত অর্থে কেমন হওয়া উচিত তার একটি চালচিত্র প্রদান করা হল
১। একটি শিশুর মনস্তাত্বিক ও অন্যান্য চাহিদা পূরণের প্রশ্নে পরিবার যেন যত্নশীল হয়।
২। শিশু যেন তার পরিবারের নিকট হতে আদর্শ আচরণ বিধি গ্রহণ এবং পর্যবেক্ষণের সুযোগ পায়।
৩। আগ্রহ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য যেন পারিবারিক প্রেরণা লাভ করে।
৪। সামাজিক মেলামেশা, কথাবার্তা'র ক্ষেত্রে যেন পরিবারের নিকট হতে পথনির্দেশনা ও সহায়তা লাভ করে।
৫। পরিবার যেন তাকে সৃজনশীল কর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে।
দাম্পত্য কলহের বিষয়টি শিশুর মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায় স্বরূপ। শিশুরা পৃথিবীর একটি অনুভূীতিকে চরমভাবে ভয় পয়, তা হল নিরাপত্তহীনতা। মনে রাখা প্রয়োজন যে সুশৃঙ্খল নিরাপত্তা শিশুর জীবন এবং তার ব্যক্তিত্বকে সমৃদ্ধ করতে পারে। ঠিক অপরদিকে বিশৃঙ্খল নিরাপত্তহীনতা শিশুর কোমলমতি জীবনকে ভয়াবহ ভাবে বিনষ্ট করতে পারে। সুতরাং এইভাবে বলা যায়-
যে শিশু সমালোচনার মধ্যে অবস্থান করে সে ঘৃণা করতে শেখে।
যে শিশু হিংস্রতার মধ্যে থাকে সে হিংসাশ্রয়ী হয়।
যে শিশু ভীত বাতাবরণে লালিত হয় যে মানসিক ভাবে ভীত হয়।
যে শিশু অন্যের দয়ায় লালিত হয় সে আত্মগ্লানিতে ভোগে।
শিশুর রাজা হওয়ার স্পর্ধা এবং একটি কান্নার অনুভব:
"মাগো আমায় ছুটি দিতে বল
সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা,
এখন আমি তোমার ঘরে বসে
করব শুধু পড়া-পড়া খেলা।
তুমি বলছ দুপুর এখন সবে
না হয় যেন সত্যি হল তাই,
একদিনো কি দুপুরবেলা হ'লে
বিকেল হ'ল মনে করতে নাই?" প্রশ্ন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বর্তমান শিশুদের জীবন অযাচিত প্রতিযোগিতা এবং অনিশ্চয়তায় পূর্ণ। তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বপ্নগুলি কলতানে মুখর নয় এবং অযাচিত দাবীর করাল গ্রাসে ডুবে আছে। তাহলে অতিরিক্ত প্রশ্রয় ইত্যাদি শিশুর সুন্দর জীবনকে কন্টকময় করছে না তো? ঝড় যাচ্ছে সংসারে অথচ অখুশি আমরা সবাই। তবে ভুলের সূত্রটা যে কোথায় সেটা আক্ষরিক অর্থেৎ বোধগম্য হচ্ছে না। ছবি আঁকা হচ্ছে ইচ্ছে পূরণের, কিন্তু অসম্ভব অস্তিরতা চারিদিকে। অশিষ্ট মুখের ভীড়ে রবীনদ্রনাথের তারাপদ হারিয়ে গিয়েছে গণমাধ্যমের চটুল বিজ্ঞাপনে। "অতএব, ছেলে যদি মানুষ করিতে চাই, তবে ছেলেবেলা হইতেই তাহাকে মানুষ করিতে আরম্ভ করিতে হইবে, নতুবা সে ছেলেই থাকিবে, মানুষ হইবে না। শিশুকাল হইতেই, কেবল স্মরণশক্তির উপর সমস্ত ভর না দিয়া, সঙ্গে সঙ্গে যথাপরিমনে চিন্তাশক্তি ও কল্পনাশক্তির স্বাধীন পরিচালনার অবসর দিতে হবে। কেবলই ঠেভালঠি মুখস্থ হবং একজামিন আমাদের এই 'মানব জনম' আমাদের এই দুলর্ভ ক্ষেত্রে সোনা ফলাইবার পক্ষে যথেষ্ট নহে।" শিক্ষার হেরফের, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
একবিংশ শতকে শিক্ষার বিষয়টি 'মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া'দের দ্বারা পরিচালিত। এরা আধুনিক শিক্ষা প্রদানের পরিবর্তে সমাজে এমন একটা শ্রেণী উৎপন্ন করার কারখানা স্থাপন করেছে যেখঅনে প্রত্যাশার স্বপ্ন অনেক কিন্তু বাস্তরে বিষয়টি অন্তঃস্বার শূণ্য। তাহলে শিক্ষার শুরুটা যদি এমন হয়, শিশুর ভবিষ্যৎতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অন্ধকার এই বাস্তব সত্যটা অধিকাংশ অবিভাবক বেমালুম ভুলে যান। অথচ শিশুর পরিবার একটু সচেতন হলে বিদ্যাশিক্ষার সূচনাপর্ব অত্যন্ত সুন্দর এবং সাবলীল ভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এপ্রসঙ্গে বলেছেন, ".. বাল্যকাল হইতে চিন্তা ও কল্পনার চর্চা না করিলে কাজের সময় যে তাহাকে হাতের কাছে। পাওয়া যাইবে না, একথা অতি পুরাতন।
কিন্তু আমাদের বর্তমান শিক্ষায় সে পথ একপ্রকার রুদ্ধ।"
প্রতিটি শিশুর অভ্যন্তরে নিহিত রয়েছে অমিত সম্ভবনার বীজ। তাকে মহীরুহে পরিণত হবার পরিস্থিতি এবং পরিবেশ প্রদান তথা সঠিক পথে উন্নীত করার দায়-দায়িত্ব শুধু অভিভাবকদের প্রতি বর্তাবে তা নয়। এই দ্বায়িত্ব রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রের পরিচালক বর্গের উপরেও বর্তায়। কারণ শিশুরা তো শুধুমাত্র পরিবারের সম্পদ নয়, রাষ্ট্র বা দেশের ও সম্পদ।
একটি রাষ্ট্র কলুষিত হয় অযোগ্য পরিচালক এবং ভ্রান্ত শিক্ষানীতির প্রভাবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে অন্ধকুসংস্কার, মূল্যবোধহীনতা রাষ্ট্রের উন্নতির পক্ষে প্রধান অন্তরায় স্বরূপ। কারণ অজ্ঞানতা, অশিক্ষা সমাজ কলুষিত করে এবং রাষ্ট্রে বিশৃংখলা তৈরী করে। যদি একটি শিশু শৈশবকাল হতে এগুলি ধারণ করে তাহলে তার মধ্যে অপরাধপ্রবণতা ইত্যকার বিষয়গুলি উদ্ভূত হয়।
বর্তমান যুগে উচ্চশিক্ষার জন্য মাতৃভাষার সাথে সাথে ইংরাজী ভাষাটাও কমবেশী রপ্ত করা প্রয়োজন কিন্তু মাতৃভাষাকে এড়িয়ে বা উপেক্ষা করে ইংরাজী শিক্ষা কতটা যুক্তিসঙ্গত সকলেরই তা ভেবে দেখা দরকার। বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য আছে, 'বৃক্ষ তোমার নাম কী ফলে পরিচয়। মাতৃভাষা ভিন্ন অন্য ভাষায় শিশু নির্মল আন্দ গ্রহণে সক্ষম নয়। তাই বিষয়টির প্রতি তীক্ষনভাবে দৃষ্টি রাখা প্রত্যেক অভিভাবকের অবশ্য কর্তব্য।
পরিশেষে সহজপাঠ'এর উদাহরণের উদ্ধৃতি দিয়ে আমার বক্তব্যটিকে ইতি প্রদান করতে চাই।
"কালো রাতি গেল ঘুচে
আলোতারে দিল মুছে।
পুব দিকে ঘুম ভাঙা
হাসে উষা চোখ রাঙা।" -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
No comments:
Post a Comment