Sunday, August 4, 2024

ফিলিপাইনে বৌদ্ধধর্ম ও বুদ্ধমূর্তি

 সুমনপাল ভিক্ষু

 

ফিলিপাইনে বৌদ্ধধর্মের প্রচারের সর্বপ্রাচীন প্রমাণ খ্রীষ্টীয় নবম শতকে যখন বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের প্রধানতম শাখারূপে পরিচিত ছিলো। এই যুগের কোন প্রাচীন বৌদ্ধ লিখিত নথি এখনও পাওয়া যায় নি। এর অন্যতম কারণ সম্ভবত লিখন মাধ্যমের নষ্ট হয়ে যাওয়া, যেগুলো পাতা ও বাঁশের উপর রচিত হয়েছিল। কিছু কিছু নথিতে ঐ দ্বীপে ঔপনিবেশিকদের এবং এশীয় বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাবের পূর্বে ফিলিপাইন যে সমস্ত স্বাধীন রাজ্য নিয়ে গঠিত ছিলো সেগুলিতে বৌদ্ধধর্মের অনুগামীর বাস করতো বলে জানা গিয়েছে যদিও জনগণের অধিকাংশই ফিলিপাইনের দেশীয় লোকধর্মকে মেনে চলতো। ফিলিপাইনের বজ্রযান সামুদ্রিক বাণিজ্যপথদ্বারা ভারতবর্ষ, শ্রীলঙ্কা, চম্পা, কম্বোডিয়া, চীন এবং জাপানের বজ্রযানে সঙ্ঘে এত গভীরভাবে সম্পর্কিত ছিলো যে এগুলিকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক করা কঠিন এবং মধ্যযুগের সামুদ্রিক এশিয়ার একটি জটিল গূঢ় বৌদ্ধধর্মের কথা বলাই শ্রেয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান বন্দও নগরীগুলিতে যেখানে গূঢ় বৌদ্ধধর্মের বিকাশ ঘটেছিলো সেখানে সেটি শৈব ধর্মের সঙ্গে সহাবস্থান করতো।

সুমাত্রার শ্রীবিজয় সাম্রাজ্য ও জাভার মজাপহিত সাম্রাজ্য উভয়ই ১৯১৮ সাল পর্যন্ত পাশ্চাত্যের ইতিহাসে অজানা ছিলো যতদিন না Ecole Francaise d’ Exteme Qrient তাদের অস্তিত্ব অনুমান করেছিলেন কারণ চৈনিক তাং ও সুং রাজবংশের ইতিবৃত্তে তাদেও কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইজিং নামে একজন চৈনিক পণ্ডিত ভারতবর্ষে যাবার পথে ৬৮৭ খ্রি. থেকে ৬৮৯ খ্রি. পর্যন্ত সুমাত্রায় বসবাস করেছিলেন। শ্রীবিজয়ের জাঁকজমক সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দ্বীপগুলি জুড়ে বৌদ্ধধর্ম সমৃদ্ধিলাভ করেছে। এই দক্ষিণ সমুদ্রের দ্বীপগুলিতে অনেক রাজা ও সেনাপতি বৌদ্ধধর্মের প্রশংসা করেন এব বিশ্বাস করেন। এবং তাঁদের অন্তর সৎকর্ম সঞ্চয়ে মনোযোগী। শ্রী বিজয় সাম্রাজ্য সুমাত্রার পালেমবাং এ ৬৫০ খ্রি. হতে ১৩৭৭ খ্রি. পর্যন্ত ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরেও বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক কেন্দ্ররূপে সমৃদ্ধ হয়েছিলো। মধ্য জাভার একটি পাহাড়ের উপর ৭৭০ খ্রি. হতে ৮২৫ খ্রি. পর্যন্ত একটি মণ্ডল হিসেবে নির্মিত হওয়া বুরোবুদুর বর্তমানে শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের গরিমার প্রমাণরূপে বিরাজিত আছে। শৈলেন্দ্র রাজাদের তিনটি প্রজন্ম সেই মন্দিরটি নির্মাণ করেন খোনে বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের ব্রহ্মা-তথ্যের একটি ত্রিমাত্রিক দৃশ্য প্রদর্শিত হতো। পরবর্তীতে জাভাদেশীয় মজাপহিত সাম্রাজ্য শ্রী বিজয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে এবং ১২৯২ থেকে ১৪৭৮ খ্রি. পর্যন্ত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রধান বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। উভয় সাম্রাজ্যই খ্রীষ্ট্রীয় ৭ম শতকে থেরবাদের কৃচ্ছ্রতামূলক আচার অনুষ্ঠানের পরিবর্তে ব্রজযানের আচার অনুষ্ঠানকে গ্রহণ করেছিলো।

বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের কোন সম্প্রদায় ছিলো না, এর অর্থগত নাম ছিলো ‘হীরক যান’। এটি তান্ত্রিক বা মন্ত্রযান বৌদ্ধধর্ম নামেও পরিচিত। ধ্যানের পরিবর্তে আচার অনুষ্ঠান ছিলো বজ্রযানের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও এটির গূঢ় শিক্ষাকে কেবল ধর্ম স্থানান্তরেণের দ্বারাই অপরকে দেওয়া সম্ভব।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার (১০)

ফিলিপাইনের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি বৌদ্ধ শিল্পদ্রব্যাদি (৯), এগুলির শৈলীতে বজ্রযানী প্রভাব রয়েছে, এদের অধিকাংশ খ্রীষ্টীয় নবম শতকে নির্মিত। এটির শিল্প সামগ্রীতে শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের মূর্তিতত্ত্বের প্রভাব রয়েছে।

বজ্রযান ও ফিলিপাইনের প্রাথমিক শিল্পকর্মের উপর তার প্রভাব:

শিল্প সামগ্রীগুলির বৈশিষ্ট্য থেকে প্রমাণিত হয় সেগুলি ঐ দ্বীপে নির্মিত হয়েছিলো, এগুলি থেকে বুঝা যায় যে, শিল্পী  বা স্বর্ণকারের বৌদ্ধ সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গভীর জ্ঞান ছিলো, কারণ তারা বৌদ্ধ শিল্পকর্মের একটি অনন্য নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। এগুলি থেকে এ অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মবলম্বী মানুষের অস্তিত্ত্বের কথা প্রমাণিত হয়। এই স্থানগুলি ছড়িয়েছিলো মিন্দান্তদ্বীপের জ্ঞা গু সান-সুরিপাও অঞ্চল হতে ফেবু, পালাওয়ান এবং লুজন দ্বীপ পর্যন্ত। অতএব, নিঃসন্দেহে বজ্রযান বৌদ্ধধর্ম সমগ্র দ্বীপ পঞ্চ জুড়ে দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলো।

১২২৫ সালে ফুস্তিলে প্রদেশের একজন তত্ত্বাবধায়ক সামুদ্রিক বাণিজ্যের চীনের জাগুরুগুয়া জু ফানছি বা বিভিন্ন বর্বর জাতির বিবরণ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থে তিনি লুজানের মিন্দোরোদ্বীপে মি-ই নামে একটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের বিবরণ দেন যেটি ছিলো একটি প্রাক্ হিস্পানীয় ফিলিপনীয় প্রদেশ। এই গ্রন্থে তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘মাই দেশটি বোর্নিওর উত্তরে অবস্থিত। এখানকার বাসিন্দারা একটি ছোট নদীর অপর প্রান্তে বিশাল গ্রামে বসবাস করে এবং নিজেদের একটি চাদরের মতোন কাপড় কণ্ড দিয়ে আবৃত করে। এখানে জঙ্গলে বুদ্ধের অনেক ধাতব মূর্তি রয়েছে যেগুলি কোথা হতে এলো তা অজানা।

প্রথম স্পেনীয়রা তাম্রলেখ প্রথার যে নম্রতা দেখেছিল এবং যেটি অন্য প্রদেশের একই জাতির এবং লুজানের থেকে পৃথক সেটি বৌদ্ধধর্মের ফলাফল হওয়া সম্ভব তামার বুদ্ধমূর্তিও রয়েছে। বৌদ্ধ দেবী তারার সোনার মূর্তি ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম। তারা ছিলেন শূন্যতায় পরমের প্রতীক। এটি ছিল হৃদয়ের জ্ঞান যেটি প্রকাশত হয় ভালোবাসা ও করুণার মাধ্যমে। বজ্রযান ঐতিহ্য আমাদের আরও বলে মানুষের হৃদয়ের করুণার প্লাবনের কথা। বোধিসত্ত্বের করুণার আকর্ষণীয় কাহিনীর কথা যিনি কোন প্রাণীর চীৎকার শুনলেই সেটির দুঃখে চোখের জল ফেলতেন। সেই চোখের জলে একটি হ্রদ তৈরী হয় যেখানে একটি পদ্মফুল ফোটে। এই ফুল হতে তারাদেবীর জন্ম হয় যিনি তাদের দুঃখ ও যন্ত্রণার উপশম করেন।

শিকাগোর Natural History’i Field Museum— এর সংগ্রহে Agusan মূর্তি:

Agusan মূর্তিটি অগুসানের ঐসপারাঞ্জাতে আবিষ্কৃত হয় ১৯১৮ সালে এবং এটি ১৯২০’র দশক হতে শিকাগোর ইলিনয়ের Field Museum of Natural History রক্ষিত আছে। ফিলিপাইনের প্রত্তত্ত্ব ও নৃতত্ত্বচর্চার পথিকৃৎ হেনরি ওটলি বেয়ার এবং কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এটির পরিচয় সম্পর্কে সহমত হয়েছেন এবং এটির তারিখ নির্ধারণ করেছেন ৯০০-৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ, যেটি শ্রীবিজয় সা¤্রাজ্যের শৈলেন্দ্র বংশের রাজত্বকালের মধ্যে পড়ে। তবে তারা অগুসান মূর্তিটির কালনির্ণয় করতে পারেন নি। সেটির নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে। যে দ্বীপপুঞ্জটি পরবর্তীকালে মালয় নামে পরিচিত হয় সেখানে হিন্দু দেবতাদের মূর্তি ইসলামের আগমনের সময় লুকিয়ে রাখতে হতো সেগুলিকে দাঙ্গার হাত ততে রক্ষা করার জন্য, কারণ সেটি সমস্ত মূর্তিই ধ্বংস করে ফেলতো। মিন্দানাওতে ১৯১৭ সালে হিন্দু মালয় দেবী স্বর্ণতারার একটি ৪ পাউণ্ডের সোনার মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছিলো। ঐ মূর্তিটি আগুসান মূর্তিকে বুঝাতো এবং এটি বর্তমানে শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিষ্ট্রিতে রাখা আছে। মূর্তিটি একটি হিন্দু মালয় দেবীর যিনি পদ্মাসনে উপবিষ্টা। এটি ২১ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে তৈরী এবং এটির ওজন প্রচার পাউন্ড। এটির উষ্ণীষ রত্খচিত এবং এটির বাহু এবং দেহের অন্যান্য বিভিন্ন অংশে প্রচুর অলঙ্কার রয়েছে। পণ্ডিতদের মতে এই মূর্তিটি ত্রয়োদশ/চতুর্দশ শতকে নির্মিত হয়েছিলো। সম্ভবত স্থানীয় শিল্পীরা একটি জাভাদেশীয় মূর্তি নকল করে এই মূর্তিটি নির্মাণ করেছিলেন। যে সোনা এই মূর্তিটি নির্মানে ব্যবহৃত হয়েছিলো সেটি মিন্দানাও থেকে এসেছিলো যেহেতু কথিত আছে, জাভাদেশীয় খনি শ্রমিকেরা এই সময়ে ভূটানে সোনার খনির কাজে নিযুক্ত ছিলো। এই স্বর্ণখনিগুলির উপস্থিতি, এই শিল্পকর্মটি এবং বিদেশীদের উপস্থিতি থেকে বুঝা যায় যে বৈদেশিক বাণিজ্যের অস্তিত্ব ছিলো, বিনিময় প্রথা নির্ভর অর্থনীতিতে দেশীয় ও বিদেশীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক যোগাযোগে সোনা ছিলো প্রধান মাধ্যম।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে এই মূর্তিটি ফিলিপাইনের নয়। লুইজি অ্যাড্রিয়ানা উড (যার স্বামী লিওনাড উড ছিলেন ১৯০৩ থেকে ১৯০৬ পর্যন্ত মোরো প্রদেশের সামরিক গভর্ণর এবং ১৯২১  থেকে ১৯২৭ গভর্ণর জেনারেল) শিকাগোর ন্যাচারাল হিস্ট্রি যাদুঘর দ্বারা মূর্তিটি ক্রয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিরেন। বর্তমানে এটি যদুঘরের গোল্ড রুম এ প্রদর্শি আছে। ‘ফিলিপাইনের প্রত্নতত্ত্ব ও মূর্তিতত্ত্ব’এর জনক নামে পরিচিত অধ্যাপক বায়রের মতে, ১৯১৭ সালে একজন মহিলা এটিকে আগুসানের এপাবনাজর কাছে ওয়াওযা নদীর বাম তীরে ঝড় ও বন্যার পর একটি গিরিখাতে পলি থেকে বের হয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পেয়েছিনে। তাঁর হাত থেকে মূর্তিটি যায় বিয়াম ব্যালোগান নামে এক স্থানীয় সরকারী কর্মচারীর কাছে। এর অল্প কিছু পর এর মালিকানা যায় আগুসান কোকোনাট কোম্পানীর কাছে যাদের কাছ থেকে ব্যাকলোগান অনেক টাকা ধার নিয়েছিরেন উড সেই কোকোনাট কোম্পানীর কাছে যাদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন উড সেই সেই কোকোনাট কোম্পানীর কাছ থেকে মূর্তিটি কিনেছিলেন। আগুসাল ডেল সুরের এস্পেরেঞ্চায় খননকার্যেও সময়ে হিন্দু বৌদ্ধ দেবী কিন্নরের একটি সোনার মূর্তি পাওয়া গিয়েছিলো। ফিলিপাইনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে অনেক সোনার তৈরী শিল্পদ্রব্যও পাওয়া গিয়েছে। এগুলির অধিকাংশই শ্রী বিজয়ের সাম্রাজ্যের নবম শতকে নির্মিত হয়েছিলো। এই শিল্পকর্মগুলির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থেকে এগুলির ঐ দ্বীপে নির্মিত হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। সম্ভবত এগুলি স্থানীয়ভাবে নির্মিত হতো কারণ প্রতœতাত্ত্বিক পিটার বেলউড একটি প্রাচীন স্বর্ণকারের দোকানের অস্তিত্তব আবিষ্কার করেছিলেন যেটি বাটানেতে ওমেগা আকৃতির সোনার অলঙ্কার নির্মাণ করতো। বৌদ্ধ শিল্পসামগ্রী পপ্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত ছিলো যেগুলোর শৈলীতে বজ্রযানী প্রভাব পরিলক্ষিত হতো। অন্যান্য প্রত্ন নিদর্শনের মধ্যে ছিলো বৌদ্ধধর্ম ও হিন্দুধর্মের কিংবদন্তীর পাখির মতো একটি প্রাণী গরুড়, এবং বেশ কিছু পদ্মপাণি মূর্তি। পদ্মপাণি অবলোকিতেশ্বর বা আলোকিত সত্তা বা করুণার বোধিসত্ত্ব নামেও পরিচিত ছিলো। টিকে থাকা বুদ্ধ মূর্তি ও ভাস্কর্য মূলতঃ পাওয়া গিয়েছিলো টাবন গুহাতে ও তার আশেপাশে ফিলিপ মেইজ দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দৈত্যাকৃত ভাস্কর্য পাওয়া গিয়েছে এবং তিনি গুহার মধ্যে সমাধি ক্ষেত্রে সেই সমস্ত বস্তুর পেয়েছেন যেগুলিকে তিনি গুহাচিত্র বলে মনে করেন যেখানে পশ্চিমদিকে যাত্রা বর্ণনা করা হচ্ছে। মিল্টন অসবোর্ণের মতোন পণ্ডিতেরা দৃঢ়ভাবে বলেন যে এই বিশ্বাস গুলি মূলত ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও এগুলি দক্ষিণ পূর্ব এশীয় সংস্কৃতি সহ অস্ট্রোনেশীয় মূলের মাধ্যমে ফিলিপাইনে পৌঁছেছিলো। শিল্পনিদর্শন থেকে ফিলিপাইনেও তার পূর্ববর্তী অবস্থার উপর বজ্রযানী ঐতিহ্য ও তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

ব্রোঞ্জ লোকেশ্বর: এটি লোকেশ্বরের একটি ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি যেটি ম্যানিলার তোল্ডোর ইসলা পুর্টি বাটোতে পাওয়া গেছে।

অমিতাভ বুদ্ধের সাব রিলিফ: অধিকাংশ ভাষার সংস্কৃত থেকে উৎপন্ন হওয়া এবং কিছু প্রাচীন মৃৎদ্রব্য থেকে প্রমাণিত হয় প্রাচীন বাতাঙ্গুযেনোরা ভারতবর্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলো। কাতালাঙ্গান পৌরসভাতে মাটির ছাঁচে একটি বুদ্ধমূর্তি পুনরুৎপাদিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ঐ পাত্রের মূর্তিটি ভারতবর্ষ, শ্যাম ও নেপালের বুদ্ধমূর্তিও অনুরূপ। এই পাত্রটিতে বুদ্ধকে ত্রিভঙ্গ মুদ্রায় একটি ডিম্বাকার জ্যোতির মধ্যে দেখা যাচ্ছে। পণ্ডিতদের মতে এই মূর্তিটিতে শক্তিশালী মহাযানী প্রভাব দেখা যাচ্ছে হেহেতু বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের চিত্র আঁকা হয়েছে।

পালাওয়ানের স্বর্ণ গরুড়: আরেকটি সোনার শিল্পকর্ম হলো হল পালাওয়ান দ্বীপের তাবন গুহা থেকে প্রাপ্ত বিষ্ণুর বাহন গরুড়ের মূর্তি। তাবন গুহায় সূক্ষ্ম হিন্দু কারুকার্য এবং সোনার শিল্প দ্রব্যের আবিষ্কারকে দক্ষিণ ভিতেনামের মেকং বদ্বীপে প্রপ্ত প্রত্ননিদর্শনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

ব্রোঞ্জ নির্মিত গণেশ মূর্তি: পালাওয়ানের পূয়ের্তো প্রতœস্থলে ১৯২১ সালে হেনরি ওটলি হিন্দু দেবতা গণেশের একটি একটি অসংস্কৃত ব্রোঞ্জ মূর্তি খুঁজে পেয়েছিরেন। এই অসংস্কৃত ব্রোঞ্জ মূর্তিটি স্থানীয় ব্যক্তিদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিলে।

এাষ্টান অবলোকিতেশ্বর: এই মূর্তিটিকে ১৯২১  সালে হেনরি ওটলি বায়ার চেবুর মাস্তানে মাটি খুঁড়ে বের করেছিলেন। এই মূর্তিটি ব্রোঞ্জ নির্মিত এবং এটি বি. . .  বৌদ্ধমূর্তি নয়। শৈব বৈশিষ্ট্যের এটি সংমিশ্রণ।

স্বর্ণতারা, অতিরিক্ত তথ্য:  তারা (বৌদ্ধধর্ম) এবং মহাবিদ্যা। স্বর্ণ নির্মিত কিন্নরী।

পদ্মপাণি ও নন্দী মূর্তি: পদ্মপাণি করুণার বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের অবতার রূপেও পরিচিত। এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত স্বণালঙ্কারের মধ্যে রয়েছে অঙ্গরীয়, নন্দীর মূর্তি আঁকা বিষ্ণু মূর্তি, পবিত্র ষাঁড়, হার, লিপি যুক্ত সোনার পাত, বিভিন্ন দেবদেবীর চিহ্নযুক্ত সোনার ফলক।

লাগুণা তাম্রফলক লিপি: এটি ১৯৮৯ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটি খ্রীষ্টীয় নবম শতকে ইন্দোনেীশয়াতে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেও প্রভাব বহন কওে যেটি ষোড়শ শতকে ইওরোপীয় ঔপনিবেশিকদের আগমনের পূর্বে সমস্ত হিন্দু ধর্মের মাধ্যমে ক্রিয়াশীল হয়েছিল।

লোকধর্মের অন্তর্ভুক্তি: তাগালোগ ও বিসায়ান বিশ্বাসের  মূলে ছিল এই ধারণা যে পৃথিবীতে ভূত ও অলৌকিক সত্তাদের বাস রয়েছে, যারা ভাল ও মন্দ উভয় ধরণেরই এবং পূজার মাধ্যমে আবশ্যই তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। স্থানীয় লোকধর্মেও সঙ্গে  হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মেও উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটেছিল। ফিলিপাইনের কিংবদন্তীতে একজন দিওয়াত্রা ছিলেন (সংস্কৃত দেবতা ও স্পেনীয় ইনচামতাদা থেকে উৎপন্ন) একধরণের অলৌকিক ক্ষমতাযুক্ত সত্তা। প্রাক্ ঔপনিবেশিক ফিলিপাইনের কিংবদন্তীতে আত্তীকরণের পর ‘দিওয়াত্রা’ শব্দটি বিভিন্ন স্তরের অর্থ গ্রহণ করেছে। ঐতিহ্যগতভাবে এই শব্দটি বিসাওয়াস, পালাওয়ান এবং মিন্দানাও আতলে ব্যবহৃত হয় এবং আনিতো শব্দটি ব্যবহৃত হয় লজন অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে। দুটি শব্দই ব্যবহৃত হয় বিকল, মারিনডুক, বোমব্লোন এবং মিন্ডোরো অঞ্চলে এবং এই অবতলটি দুটি পরিভাষার এক ধরণের মধ্যবর্তী এলাকা।(১৫৯৫-১৬০২) পেড্রো চিরিনোর দেওয়া Bathala শব্দটির বানান সম্ভবত Relaeion de las costumbres se las Tagalas (1589, Juan de Plasenua) এবং এ G Badhala Ges  Relaeion de las Yslas Filipinas (1582, Mignel de Loarea) G Batalai এর মত প্রাচীনতর নথি থেকে প্রাপ্ত দুটি পৃথক বানানের সংমিশ্রণ। শেষোক্তটিকেই সঠিক বানান বলে মনে হয়, কারণ স্পেনীয় ভাষায় য অক্ষরটি উচ্চারিত হয় না। বাথালা বা বতালা আপাতভাবে পাওয়া গিয়েছে সংস্কৃত ভট্টারা (অভিজাত প্রভু) শব্দটি হতে যেটি দক্ষিণ ফিলিপাইন ও বোর্নিওতে ষোড়শ শতকের উপাধি বাতারা নামে আবির্ভূত হয়। ইন্দোনেশীয় ভাষায় বাতারা শব্দটির অর্থ দেব, এর স্ত্রী রূপ হলো বাতারি। এটি উল্লেখযোগ্য যে মালয়তে বেতারা শব্দের অর্থ পবিত্র, এটি প্রযুক্ত হতো জাভার ক্ষমতাশালী হিন্দু দেবতাদের ক্ষেত্রে। উপাধিটি মহাজপহিতের শাসকও গ্রহণ করেছিলেন।

আগুসান মূর্তি: (সাধারণভাবে ফিলিপাইনের বৌদ্ধ তারা মা আগুসান মূর্তি হিসেবে অনুমিত কিন্তু বিতর্কিত পরিচয় উল্লেখ কওে এটিকে স্বর্ণতারা নামে উল্লেখ করা হয়)। এটি দুই কেজি (৪.৪ পাউ-) ২১ ক্যারেট স্বর্ণ মূর্তি যেটি ১৯১৭ সালে ফিলিপাইনের এস্রারানাজাতে আগুসান ডেলসুরে ওয়াওয়া নদীর তীরে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটি নির্মিত হয়েছিল নবম থেকে দশম শতকের মধ্যে। মূর্তিপি প্রায় ১৭৮ মিমি (৭ ইঞ্চি) উঁচু। এটি একটি পদ্মাসনে উপবিষ্ট হিন্দু বা বৌদ্ধ দেবী। মূর্তিটির পরিধানে রয়েছে রতœখচিত উষ্ণীষ এবং দেহের বিভিন্ন অংশে অলঙ্কার রয়েছে। বর্তমানের এটি শিকাগোর Field museum of National History রক্ষিত আছে। এটির আবিষ্কারের পর থেকে স্বর্ণ মূর্তির দেবীর পরিচয় নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। স্বর্ণমূর্তির প্রস্তাবিত পরিচিতিগুলি হল হিন্দু দেব দেবী থেকে বৌদ্ধ দেবদেবী থেকে বৌদ্ধ তারা। সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে যে এটি তান্ত্রিক বৌদ্ধ দেবী বজ্রপালা।

H. Utlgy এর মতে, মূর্তিটি একটি হিন্দু শৈব দেবী। কিন্তু এটির ধর্মীয় গুরুত্বযুক্ত হস্তমুদ্রাটি ভুলভাবে নকল করেছেন স্থানয়ি শ্রমিকেরা। তাই এর থেকে বোঝা যায় যে, ফার্ডিনা- ম্যাগেলাটনর আগমনের পূর্বে দ্বীপে হিন্দুধর্মের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে এটিও বোঝা যায় পূর্বেও ফিলিপাইনবাসীদেও মহাপহিত সা¤্রাজ্য থেকে গৃহীত হিন্দু ধর্মের একটি ভুল ধারণা ছিল। সেখানকার দেশীয় মানুষেরা হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেনি কিন্তু তারা হিনদুধর্মের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করেছিল যদিও তারা দেশীয় এ্যনিমিস্ট ধর্মকে অক্ষুণ্য রেখেছিল সোনার আগুসান মূর্তিটি তৈরী হয়েছিল পূর্ববর্তী মজাপহিত পর্যায়ের ঞাণমুক ব্রোঞ্জ মূর্তিও অনুকরণে।

এই মূর্তিটি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন ১৯২০ সালে বাটাডিয়ার D.K Baseh| তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে মূর্তিপি আদি মজাপহিত পর্বেও এটি ঞানচুক মূর্তির নকলে মিন্দাওয়ের একজন শিল্পীর দ্বারা নির্মিত হয়েছিলো এবং সেই স্থানীয় শিল্পী হাতের বৈশিষ্ট্যটি লক্ষ্য করেননি (সম্ভবত এটির সেই সমস্ত জাভাদেশীয় খনিশ্রমিকদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে থাকা ১৪ শতকের শেষে বা মাঝামাঝি সময়ে আগুসান সুরিপাও আদলে সোনার খনিতে কাজ করত বলে জানা গিয়েছে।) আপাতভাবে মূর্তিটি একটি শৈব দেবীর এবং এটির সঙ্গে ‘বুটুয়ান’ নামটি সঙ্গতিপূর্ণ (যার অর্থ লিঙ্গ)- H Utley Beyer, ১৯৪৭ অপরদিকে Juan R Francise সোনার মূর্তিটির পরিচয় সম্পর্কে বেয়ারের সিদ্ধান্তকে সন্দেহজন বলে মনে করেছেন। তিনি বেয়ারের নিন্মোক্ত সিদ্ধান্তগুলি সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। ১. বুটুয়ান শব্দটির অর্থ লিঙ্গ (বুটুয়ান শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে।) ২. বুটুয়ানের রাজা যেহেতু মুসলমান ছিলেন না তাই তিনি হিন্দুধর্মের শৈব সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছিলেন। ৩. মান্দায়(দক্ষিণে যেখানে আগুসুয়ান মূর্তিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল) এবং চেবুতে আবিষ্কৃত হওয়া অন্যান্য শৈব মূর্তির অস্তিত্ব তার স্বর্ণমূর্তিটির শৈব দেবী পরিচয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটিকে সমর্থন করা উচিত। শেষোক্ত বেয়ারের অনুমান সম্পর্কে ফ্রান্সিসকো নির্দেশ করেন যে অন্যান্য। শৈব বলে অনুমান করা মূর্তিগুলির পরিচয় এগুলির সবই ১৯৩০ এর দশকের প্রথমদিকে Aleno de Manila Museum এর অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। সন্দেহজন, যেহেতু জন ক্যারল যিনি চেবুর মূর্তিটির আলোকচিত্রটি পরীক্ষা করেছেন বিশ^াস করতেন যে এটি ‘অবলোকিতেশ্বর’, শিব নয়। ফ্রান্সিসকো স্বর্ণ মূর্তিটির  পুনঃ প্রতীক্ষার উপর ভিত্তি করে বিশ্বাস করেছিলেন যে এটি বৌদ্ধ তারার মূর্তি। মনে হয় মূর্তিটি মহাযান বৌদ্ধধর্মের অন্তর্গত কোন দেবীমূর্তি। এটি নারী বোধিসত্ত্বের ধারণার সাথে জড়িত একই সঙ্গে এটি হিন্দু দেবী (শক্তি) এবং তারা (বৌদ্ধ দেবতার স্ত্রী) হিসেবে পরিচিত মোট দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়  বৌদ্ধধমর্রে একটি বিশেষ বিকাশ।

Juan R Francisco A note on the Golden Image of Agusan (১৯৬৩): জাভার ঞানমুক থেকে বস্ত্র ধাতু মণ্ডলের চারটি ব্রোঞ্জ নির্মিত দেবীমূর্তি পাওয়া গিয়েছে।

আগুসান মূর্তিটির আরেকটি প্রস্তাবিত পরিচয় হল এই যে, মূর্তিটি বস্ত্রাতুর নামে পরিচিত মণ্ডলের অন্তর্বৃত্তে থাকা চারজন দেবীর অন্যতম। তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মে বস্ত্রধাতুর মণ্ডল হল বিস্তৃত চিত্র যেটি বিশ্বব্রহ্মা-কে প্রতীকীভাবে পরিবেশন কওে মণ্ডলগুলিকে উপস্থাপন করা যেতে পারে দ্বিমাত্রিক (হয় সমতল তলের উপর অস্থায়ীভাবে আাঁকা, বা কাপড়ের উপর চিত্রিত করা বা ধাতুর পাত খোদাই করা),  ত্রিমাত্রিক মণ্ডলগুলিকে ব্যবহার করা হয়েছিল জল, ফুল, ধূপ, দীপ ইত্যাদি দানের পবিত্র আচার অনুষ্ঠানের সময়ে।

বস্ত্র ধাতু মণ্ডল আদি বৌদ্ধ মণ্ডল মধ্যে অন্যতম সুপরিচিত ও বিস্তৃতভাবে আলোচিত মণ্ডল। এই মণ্ডলের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে বুদ্ধ বৈরোচন, তাঁকে বেষ্টন করে রয়েছে দেবতাদের একটি বৃত্ত। ঐ অন্তর্বৃত্তে চারজন অতীন্দ্রিয় বুদ্ধ চারটি কোণ দখল করে আছেন, এঁদের প্রত্যেককে চারজন করে পরিচারক বেষ্টন করে রয়েছে এবং বেষ্টনকারী চারজন দেবী অন্তর্বৃত্তের চারটি কোণে রয়েছেন। বুদ্ধ বৈরোচনের কাছে অর্ঘ্যদানকারী চারজন দেবী হলেন বজ্রলস্য (কামোদ্রেককারী নৃত্য, দক্ষিণ পূর্ব কোণে উপবিষ্টা), বজ্রমালা (মালা, দক্ষিণ পশ্চিমে উপবিষ্টা), বজ্রগীত (সঙ্গীত, উত্তর পশ্চিমে উপবিষ্টা), এবং বজ্রনৃত্য  (নৃত্য, উত্তর পূর্বে উপবিষ্টা)। বহির্বৃত্তে রয়েছেন আরো ষোলজন দেবতা, চারজন চারটি কোণে অবস্থিত বহির্বৃত্তটি ঘিরে রেখেছেন আরও ১০০০ জন বুদ্ধ ও ২৪ জন দেবতা এবং চারজন রক্ষক দেবতা চারটি দিককে রক্ষা করছেন।

পণ্ডিত Rab Linrthe ছিলেন প্রথম পণ্ডিত যিনি আগুসানের মূর্তিটিকে বজ্রপালের মূর্তি হিসেবে সনান্ত করেছেন যাঁকে সবসময় নিতম্বে হাত রাখা অবস্থায় দেখা গিয়েছে। Florine Capistrano-Balder এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হয়েছেন এই আগুসান স্বর্ণমূর্তিটির সঙ্গে Nganuk -এ আবিষ্কৃত বজ্রহীরক মণ্ডলে বসান চারটি ব্রোঞ্জমূর্তির মত মূর্তির  শৈলীর সাদৃশ্য থেকে। ঞানচুক মূর্তি ও আগুসান স্বর্ণ মূর্তির সাধারণ বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য পূর্বেই ১৯২০ সালে উল্লেখ ওলন্দাজ পণ্ডি F.D.K. Baseh পরে তার বক্তব্যকে ব্রোঞ্জ মূর্তিগুলির চিত্রের অভাবের জন্য তত গুরুত্ব দেয়নি। সাম্প্রতিককালের পণ্ডিতেরা আগুসান মূর্তি ও ঞানচুক ব্রোঞ্জ দেব মূর্তির মধ্যেকার সম্পর্কে পুনর্মূল্যায়ন করেছেন যেহেতু সেগুলি প্রায় একই সময়ে নির্মিত হয়েছিল (১০ম-১১শ শতাব্দী)। সোনার তৈরী অর্ঘ্যদানকারী ক্ষুদ্র মূর্তিটির দেবী বজ্রলাস্য হিসেবে সনাক্তকরণ থেকে বুঝা যায় যে এটি হীরকজগৎ ম-লে সঙ্গে যুক্ত বিশাল সংখ্যক অর্ঘ্যদানকারী দেবীর সঙ্গে সম্পর্কিত যাদের গতিবিধি এখনও অজ্ঞাত যা হয়ত কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে।

যদিও আগুসান বজ্রলাস্য এবং জ্ঞানচুক অর্ঘ্যদানরত দেবীদের সম্পর্কেও আলোচনার বিষয়টি পণ্ডিতদের নজর এড়িয়ে গিয়েছে, এটি সত্য যে আগুসুয়ান মূর্তিগুলিও একই প্রজাতির।

Fleruna H Capistrano Baker: প্রাচীন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভূটান।

Philippine Avcesfal Gold (২০১১) : অন্যতম যে কারণের জন্য প-িতদের পক্ষে মূর্তিগুরিকে সনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে তা হল এই যে এটির বিশেষ কোন মূর্তিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নেই। ফিলিপাইনের স্বর্ণকাররা হিন্দ ও বৌদ্ধ শৈল্পিক রীতি নীতি জানলেও এর মধ্যে এমন কোন বিশেষত্ব অন্তর্ভুক্ত করেনি যার মাধ্যমে এগুলি কোন নির্দিষ্ট দেবতারূপে সনাক্ত করা যাবে। ফিলিপাইনের স্বর্ণকাররা তাদের জাতিগত স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য এই কাজটি করে থাকতে পারে।

ইতিহাস: আগুসান ডাল সার এস্রারাঞ্জার কাছে একজন মানেব মহিলা ১৯১৭ সালে ওয়ায়া নদীর তীরে আগুসান মূর্তিটি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি শিল্প দ্রব্যটিকে একটি মানিকা (পুতুল) মনে করে কাছে রেখেছিলেন। তারপর এটির মালিকানা যায় আগুসানের ডেপুটি গভর্ণর ব্লাস ব্যকালগানের কাছের (ব্যাকলাগনের সোনা)। তবে আবিষ্কর্ত্রীর নাতনী কনসজনিয়া গতইবালের মতে তাঁর দিদিমা বেলায়ে কাম্পোস মূর্তিটিকে একি মানিকা বা পুতুল হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে এটিকে পূজার জন্য একটি বেদীর উপর স্থাপন করেছিলেন। তারপর এটি তাঁদের ঐতিহ্যবাহী মানাবো হাউজ থেকে চুরি হয়ে যায়। তারপর এটি ব্ল্যাস ব্যাকলাগনের হাতে পৌঁছয়। ১৯১৮ সালে ব্যাকলাগন এটিকে ড. উটলি বায়ের এর নজরে আনেন, যিনি এটিকে ফিলিপাউনের প্রদান প্রত্নতত্ত্বের সবচেয়ে সুন্দর নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেন। বায়ারস যিনি সেই সময়ে ফিলিপাইনের বিশ^বিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের প্রধান এবং সেই সঙ্গে ফিলিপাইনের জাতীয় যাদুঘরের অবৈতনিক সংরক্ষকের পদে কর্মরত ছিলেন। আমেরিকার ঔপনিবেশিক সরকার রাজী করানোর চেষ্টা করেন যাতে এ মূর্তিটি ম্যানিলায় ফিলিপাইনের জাতীয় যাদুঘরে রাখার জন্য।

অর্থাভাবের জন্য ঐ শিল্পদ্রব্যটি কিনতে পারেনি। তারপর ঐ মূর্তিটির মালিকানা চলে গেল আগুসান কিউরেট কোম্পানির কাছে যাদের কাছ হতে ব্লাস ব্যাকলাগন টাকা ধার করেছিলেন। মূর্তিটির আস্তিত্বের কথা লুইজি উডের মত মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কানে পৌঁছল যাঁর স্বামী লিওনার্ড উড ফিলিপাইনে আমেরিকার গভর্ণর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সোনার মূল্যের জন্য মূর্তিটি পালন করেছিলেন। সোনার মূল্যের জন্য মূর্তিটিকে গলিয়ে ফেলা হতে পারে এই ভয় পেয়ে শ্রীমতী উড সোনার শিল্পকর্মটি কেনার তহবিল তৈরীর জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করলেন। এর জন্য তিনি শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়াম এর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিভাগের প্রধান এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেলার ম্যথিউসের সাহায্য গ্রহণ করলেন। তাদের প্রচেষ্টা সফল হল যখন মূর্তিটি  ১৯২২ সালে ৪০০০ ডলারের বিনিময়ে হস্তগত করা সম্ভব হল। তারপর ১৯২২ সালেই মূর্তিটিকে জাহাজে করে আমিরিকায় পাঠিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতি রাখা হল। মূর্তিটি এখনও পর্যন্ত  সেখানেই রয়েছে। একবিংশ শতক থেকে আগুসানের যে স্থানে মূর্তিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল সেই স্থানটি বৌদ্ধ ও সর্বপ্রাণবাদী উভয়ের কাছেই তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।

ফিরে পাওয়া: বহু বছর ধরে এই শিল্পকর্মটি আমেরিকা ও ফিলিপাইনের মধ্যে একটি দ্বন্ধের কারণ হিসেবে রয়েছে এবং ফিলিপাইনের অনেক পণ্ডিত এটির প্রত্যর্পণ দাবী করেছেন। এটিকে দেখা হচ্ছে এমন একটি ঘটনা হিসেবে যেখানে দেশের একটি জাতীয় সম্পদ অর্থনৈতিক  সংকটের কারণে ফিলিপাইনের সরকার সেটি নিলামের সময় চিনতে না পারার কারণে আমেরিকানদের কাছে বিক্রি হওয়ার এরকটি উদাহরণ হিসেবে। পণ্ডিতরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে যদি ফিল্ড মিউজিয়াম শিল্প দ্রব্যপি গলিয়ে ফেলা হবে এই ভয়ে সেটিকে নিয়ে থাকে, তাহলে ফিল্ড মিউজিয়াম এর কাছে এটি প্রত্যর্পণ করা উচিত, অন্তত ফিলিপাইনে এটিকে ক্রয় করার সুযোগ দেয়া উচিত যেহেতেু যে পরিস্থিতিতে মূর্তির সোনা গলিয়ে ফেলার ভয় ছিল তা সম্ভব নয় বলেই মনে হয় তাঁরা আরও উল্লেখ করেছেন যে ফিলিপাইনের যখন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এবং আমেরিকার ঔপনিবেশিক সরকারের অধীনে ছিল তখন আমেরিকান যাদুঘর কেমন করে সেটিকে ক্রয় করেছিল। আগুসান মূর্তিটি ফিলিপাইনের কাছে প্রত্যর্পণের পক্সে অন্যতম সওয়ালদারী হলেন পূর্বতন সিনেটর অ্যাকুইলিনো পিমেন্টেল জুনিয়র যিনি তাঁর শেষ বক্তৃতাটিকে বিশেষভাবে মূর্তিপি ফিলিপাইন সরকারের কাছে প্রত্যর্পণের পক্ষে প্রচার করেছেন। শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তারা সোনার মূর্তিটি ফিরিয়ে দিতে পারে যদি ফিলিপাইনের সরকার এই বিষয়ে দৃঢ়ভাবে অনুরোধ জানায়।

২০১৮ সালে জি এম এ নেটওয়ার্ক থেকে আগুসান মূর্তিটি সম্পর্কে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয় যেখানে দেখান হয় যে আগুসানের মানুষেরা মূর্তিটি প্রত্যর্পণের বিষয়টিকে সমর্থন করেছেন। প-িতরাও একটি নথি আবিষ্কার করেছে যেখানে ঐ শিল্পকর্মপির উপর ফিলিপাইনের অধিকারের প্রমাণ রয়েছে। পণ্ডিত মানুষ ও সরকার একত্রে এই মূর্তিটি ফেরত পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিল্ড মিউজিয়ামের প্রদর্শিত হচ্ছে। আগুসানের সাধারণ মানুষ এই মূর্তিটিকে ফেরত চাইছেন যেহেতু তাঁরা এটিকে পবিত্র নিদর্শন রূপে পূজা করেন।

No comments:

Post a Comment