Sunday, July 20, 2014

জাতকে প্রতিবিম্বিত ভারতীয় অর্থব্যবস্থা

শুভাশিস বড়ুয়া

    সম্পূর্ন বুদ্ধ বচন তিনটি পিটকে বিভক্ত, সূত্ত পিটক, বিনয় পিটক ও অভিধম্ম পিটক। সূত্ত পিটক আবার পাঁচটি নিকায়ে বিভক্ত। যথা – দীর্ঘ নিকায়, মজ্ঝিম নিকায়, সংযুক্ত নিকায়, অঙ্গুত্তর নিকায় ও খুদ্দক নিকায়। জাতকে খুদ্দক নিকায়ে সংগৃহীত ১৫ টি সতন্ত্র গ্রন্থের মধ্যে ১০ম ও মহত্বপূর্ণ গ্রন্থ। জাতক ৫৪৭ টি কথায় বর্নিত, যা বুদ্ধের পূর্বজন্ম সম্পর্কিত। যে কথা নৈতিক শিক্ষার সাথে সাথে তৎকালীন সমাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থব্যবস্থার বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। কোন দেশের অর্থব্যবস্থা প্রকাশ করার জন্য তৎকালীন কৃষি, ব্যবসা-বানিজ্য, শিক্ষা, পশুপালন ইত্যাদির আর্থিক বিষয়ের অধ্যয়ন করাও গুরুত্বপূর্ণ। উক্ত ব্যবস্থার উপর দৃষ্টিপাত করলে দেশের আর্থিক অব্যবস্থার সম্পর্কে জানা যায়। অতএব, উক্ত প্রবন্ধে জাতকে বর্নিত ভারতীয় অর্থব্যবস্থায়  জাতককালিন ভারতীয় অর্থব্যবস্থা ও সমাজ চেতনা প্রকাশ করার জন্য শিল্প, ব্যবসা এবং সমাজ চেতনা ইত্যাদি বিষয় অধ্যয়নের নিমিত্তে ব্রতী হয়েছি।
       জাতকে তৎকালিন অনেক শিল্পের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই সমস্ত শিল্পের মধ্যে কিছু কিছু শিল্প বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। এই শিল্পের মধ্যে ধাতু শিল্প অত্যন্ত উন্নত ছিল। জাতকে ধাতু গলিয়ে অত্যন্ত আর্কষনীয় বস্তু তৈরির উল্লেখ পাওয়া যায়। এই ধাতু শিল্পের অন্তর্গত লোহা, সোনা, তামা, চাঁদি প্রভৃতি ধাতু শিল্পের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই ধাতুর সঙ্গে সম্পর্কিত শিল্পীদের কর্মকার, স্বর্ণকার ইত্যাদি সংজ্ঞায় অভিহিত করা হত। ধাতু শিল্প ছাড়াও যষ্টি, মাটি, দাঁত, ফুল ইত্যাদির শিল্পও সে সময় প্রচলিত ছিল।
       জাতকের অধ্যয়ন থেকে জানা যায় যে, লৌহকে পিটিয়ে এক সুনিশ্চিত আকার দিয়ে তা থেকে বিভিন্ন প্রকার মজবুত দ্রব্য বানানো হত। যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র থেকে শুরু করে কবজ লৌহও বানানো হত। লৌহ, তামা, কাঁসার পাতকে কাটার জন্য লৌহরই করাত বানানো হত এবং ঐ করাতের ধারের দ্বারা পাতগুলিকে ছেদন করা হত। বাদ্য যন্ত্রের তারও লৌহ থেকে বানানো হত।
      জাতকে কর্মকার লৌহ গরম করার স্থানকে ‘অঙ্গার কপ্পার’ বলা হত। যেখানে জলন্ত কয়ালর আগুনের মধ্যে তীর বানানোর জন্য লৌহকে গরম করা হত এবং নুনের জলে অথবা ভাতের ফেনে ডুবিয়ে লৌহকে ঠান্ডা করা হত।৪   ভিতরে ব্জলতে থাকা এবং বাইরে লৌহকে দেখা না যাওয়া মতো করে গরম করা হত।
কর্মকারের কার্যক্ষেত্র খুব ব্যাপক ছিল। জাতক কথায় তাদের বসতি গ্রামকে কামার গ্রাম নামে উল্লেখ করা হত।৬  জাতকে তাম্র শিল্পেরও উল্লেখ পাওয়া যায়। তামা ও কাঁসার বাসনপত্র, ঘরের অন্যান্য জিনিষপত্রও বানানো হত।এবং সেগুলোর ব্যবহার বহুল প্রচলিত ছিল। ক্ষারীয় দ্রব্য দিয়ে তামাকে পরিষ্কার করা হত।৮ 
জাতক গ্রন্থ অধ্যয়ন করে জানা যায় যে, সে সময় ভারতে বহুমূল্যবান ধাতু যেম্ন-সোনা, মণি ইত্যাদি দিয়েও নানান শিল্প সামগ্রী তৈরী হত।৯  এ সময় খাঁটি সোনার গহনা বানানো হত এবং ঐ গহনা বিক্রি করা হত। ঐ সমস্ত গহনা ব্যবসায়িক গুণের জন্য স্বর্ণকার বিভিন্ন প্রকার অলংকার বানানো সূচনা করেছিল। মাথার উপর ধারণ করার যোগ্য অলংকারও তৈরী করা হত।১০   পশুদের জন্যও অলংকার বানানো হত। রাজা নিজের হাতি, ঘোড়াদের জন্যও সোনা এবং অন্যান্য বহু মূল্যবান ধাতুর গহনা ও ঝালোর বানাতেন।১১
সোনা খনি থেকে পাওয়া যেত এবং অনেক সময় নদীর তট থেকেও পাওয়া যেত। জাতকে ‘সবহানি কিরননি’ শব্দের প্রয়োগের দ্বারা সোনার দোকানের নাম জানা যায় স্বর্ণকারদের মাদক দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। সোনা, রুপা, হীরা, মণি, স্ফটিক ও জহরতকে বহু মূল্যবান ধাতুর অন্তর্ভূক্ত ধরা হয়।১২
স্বর্ণকার সোনার মূর্তিও তৈরী করতেন। যা থেকে তার শিল্প নৈপুন্নের পরিচয় পাওয়া যেত।১৩ এ সময় সোনার থালা, বাটি, পেয়ালা ইত্যাদির প্রচলন ছিল। এ সমস্ত জিনিসগুলি খাওয়া-দাওয়ার অতি উত্তম পাত্র রূপে গন্য হত,১৬  জাতকে সোনার কলসী, রূপোর থালার উল্লেখ পাওয়া যায়।১৭
তৎকালীন যুগে উল, সুতি, রেশম তিন প্রকার বস্ত্রের উৎপাদন হত এবং সেগুলি পরিধান করা হত। বস্ত্র ও গহনার দ্বারা শরীর কে সুন্দর ও আর্কষনীয় ভাবে রূপ দেওয়া হত। ফলে গহনা তৈরী ও সেই সম্বন্ধীয় ব্যবসা অত্যন্ত উন্নত ছিল। রেশম বস্ত্রের উপর সোনার কাজ করার কথাও জাতকে পাওয়া যায়। রাজার টুপি সোনায় মুড়ে রাখা হত। “কাঞ্চন পট”১৮ যেখানে রাজকীয় হাতীকে রেশমের বস্ত্র ও সোনায় মুড়ে দেওয়া হত এবং হাতিগুলিকেও সোনার অলংকারে সাজানো হত, ‘নাগে হেমকপ্পনবাসে’।১৯
রাজ ঘরণীদের জন্য রেশমবস্ত্র সম্মান সূচক ছিল। তবুও সুতি বস্ত্রের ব্যবহার সীমিত মাত্রায় প্রচলিত ছিল। রেশমের মূল্যবান আর মোলায়েম সুতো দিয়ে কম্বল, আস্তরণ ও কার্পেট বানানো হত।২০ ঘরোয়া শিল্প হিসেবে সুতি শিল্পও বেশ উল্লেখযোগ্য ছিল। বস্ত্র ব্যবসায়ীদের ‘দুসিসক’ বলা হত।২১
সুতির কাঁথা মহিলাদের প্রধান ব্যবসা ছিল। একটি জাতকে মহিলাদের এ কাজকে “ ইত্থীন কপ্পাসপোত্থন ধনুলা “ বলা হয়েছে। মহিলারা সারাদিন সুতির কাঁথা তৈরী করত। এটাকেই তারা প্রিয় গৃহকার্য বলে মনে করত। ২২
‘বড়ই’ নামক ব্যক্তিরা সামুদ্রিক জাহাজ নির্মাণ করত। এই তথ্যটি ‘সমুদ্র বানিজ্য জাতকে’ পাওয়া যায়। ‘অনিল-চিত্ত-জাতক’ কাশির নিকট বড়ইদের এক গ্রাম ছিল ‘বডঢকীগাম’। বড় জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহ করতে যেত এবং সেখান থেকে গৃহ নির্মাণের উপযোগি কাঠ নিয়ে এসে এক এক্তলা, দুতলা বাড়ির ‘প্রতিরূপ’ তৈরী করত। তারপর নগরে গিয়ে সেই প্রতিরূপের মতোই কাঠের বাড়ি তৈরী করত। ২৩
নৌকা, জাঁহাজ, গাড়ী, রথ এই ধরণের যান নির্মাণ বড়িদের দ্বারা হত।২৪ এ সময় রথ নির্মাণকেও শিল্প ও কারিগরের অন্তর্গত বলে পরিগণিত হত। অপসরপপিটক২৫ কোবচ্ছ২৬ সিরিসাযান২৭ নানাবিধ উপকরণের উল্লেখ জাতকে পাওয়া যায়। এইসব নির্মাণ বড়ই’রা করতেন।
      জাতক থেকে আরো জানা যায় যে, সেই সময় হাতির দাঁতের শিল্পেরও সমাধিক প্রচলন ছিল। নগরে বিশেষ প্রকার বস্তিবাসী ছিল যাদের ‘দন্তকার বিথ’ বলা হত। যেখানে হাতির দাঁতের দ্বারা শিল্প প্রস্তুত কারকদের ঘর ছিল। সেখানে হাতির দাঁত দ্বারা নানান দ্রব্য প্রস্তুতকারীদের নিজেদের হস্ত শিল্প নৈপুণ্যের পরিচয় পাওয়া যায়।২৮ তারা আরও অনেক প্রকার ছোটোখাটো জিনিস প্রস্তুত করত। যেমন- হাতির দাঁতের চুড়ি, বাহুবন্ধ ইত্যাদি।২৯ হাতির দাঁতের তৈরী মূল্যবান চিত্রকারদের উপযোগী সামগ্রী, আয়নার আস্তরণ এবং রাজাদের রথ সাজানোর জন্য যা ব্যবহৃত হত।৩০ হাতির দাঁত সংগ্রহের জন্য হাতি শিকার করা হত এবং জীবিত হাতির দাঁত মৃত হাতির দাঁতের চেয়ে অতি মূল্যবান মনে করা হত।৩১
       জাতক থেকে আরো পাওয়া যায় যে, মাটির তৈরী বিভিন্ন পাত্র ও খেলনা বানানো হত। কুম্ভকার বাটি, সরা, ঘড়া এবং অন্যান্য ছোট বড় আকারের বাসনপত্র তৈরী করতেন, সাধারণের ঘরের এবং রাজবাড়ির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরী করতেন।৩২ তারা প্রায়ই শহর ও গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে বসবাস করত যা তাদের ব্যবসার জন্য অনুকূল ছিল। গ্রাম বা শহরের মধ্যে থাকলে তাদের ভালো কাঁচা মাটি পেতে কষ্টকর হত এবং স্থানাভাবের জন্য নিজেদের ব্যবসা প্রসার থেকে বঞ্চিত হত। সেই কারনে তারা তাদের বস্তীগুলি শহর বা গ্রামের বাইরে স্থাপন করত।৩৩ কুম্ভকারগণ তাদের উৎপাদন সামগ্রী বাজারে বিক্রি করত।৩৪
       জাতক থেকে জানা যায় যে, চর্মকার জুতো প্রস্তুত কৃত উদ্বৃত্ত চামড়া দিয়ে ব্যাগ ও ছাতা বানাতো। তলোয়ার রাখার খাপ, দড়ি, ফাঁদ ইত্যাদি বস্তুর নির্মাণ চর্মকারেরাই করত।৩৫
       জাতক পাঠ করে আরও জানা যায় যে, ঐ সময় ফুলের মালা, সুগন্ধি দ্রব্যের শিল্পের প্রচুর প্রচলন ছিল। মালাকার পুষ্পোদ্যান থেকে নানাবিধ ফুল তুলে আনত এবং নানারকমের মালা তৈরী করত। ৩৬ সেই সময় গন্ধক বিলাসী মানুষদের জনপ্রিয়তা খুব বেশী ছিল। দোকানে সুগন্ধী দ্রব্য সাজান থাকত। এই তথ্য জাতক থেকে পাওয়া যায়।৩৭ গন্ধক গ্রাহকদের সুগন্ধি দ্রব্য বিক্রি করত।৩৮ জাতকে চন্দনের মাহাত্মও প্রকাশ পায়। চন্দনসার নির্মাণের তথ্যও পাওয়া যায়।৩৯ জাতকে ধনী ব্যবসায়ীদের কথারও উল্লেখ পাওয়া যায়; যাদের ‘সেটঠি’ নামে অভিহিত করা হত। ঐ সময় ব্রাক্ষ্মণরাও যথেষ্ট সম্পন্ন ছিলেন। তাদের অনেক সম্পত্তির উল্লেখ পাওয়া যায়।৪০ জাতক অধ্যয়ন করলে জানা যায় ঐ সময় ব্যবসায়ীরা দুটি পথ অনুসরণ করতেন।
১) সমুদ্র পথে বাণিজ্য, ২) স্থল পথে বাণিজ্য।
        পণ্ডারক জাতক থেকে পাওয়া যায় যে, ৫০০ ব্যবসায়ী যখন সামুদ্রিক পথে বেরিয়ে ছিলেন তখন জলযান ভেঙ্গে গেলে তাঁরা মাছের খাদ্যে পরিণত হত।৪১ ভারত ও ব্যাবিলনের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কের বিবরণ ‘ বাবেরু জাতক’ থেকে জানা যায়।৪২
        জাতকে সামুদ্রিক ব্যবসার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না। জাতকে বহু প্রসিদ্ধ বন্দরের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ...কচ্ছে৪৩ সৌবীর৪৪ কাবেরীপত্তন৪৫ কারম্বিয়৪৬ গম্ভীরা৪৭ সেবীর৪৮ ইত্যাদি ভারতীয় বন্দর ছিল।
        জাতক অধ্যয়ন করে জানা যায়, তৎকালীন ভারতে স্থল পথে বানিজ্য বেশী চলত। তৎকালীন ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে বারাণসী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেখান থেকে প্রত্যেক দেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক পথের বিচরণ ক্ষেত্র ছিল।৪৯ পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাওয়ার পথকে জাতকে ‘পুববন্তা অপরান্ত’ বলা হত।৫০ যা বস্তুত মহান মার্গের পরিচায়ক। যা অনেক প্রদেশকে সংযুক্ত করেছিল। পূর্ব ভারতের চম্পা এক বিশিষ্ট ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। চম্পা থেকে ব্যবসায়িকগণ সুবর্ণভূমিতে যাওয়ার জন্য রওনা হত যা স্থল পথের দ্বারা মিথিলার সাথে যুক্ত ছিল।৫১ জাতক থেকে জানা যায় যে, উত্তরা পথ থেকে তক্ষশীলা যাওয়ার জন্য দীর্ঘ পথ আছে। যা মধ্য এশিয়া এবং পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্থাপন করার পক্ষে সহায়ক ছিল। যে পথ দিয়ে রাজপুতানা মরুভূমিতে যাওয়া যেত এবং তা ৬০ যোজন চওড়া ছিল ‘সট্‌ঠিযোজনক মরুকন্তারং’।৫২
       দৈনিক প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি করার দোকানদারও ছিল। যাদের ছোট ব্যবসায়ী বলা হত। দৈনিক প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন- মাংস, মদও রাখত। জাতক থেকে জানা যায় যে, বহু মূল্যবান দ্রব্য গাড়ী বোঝাই করে দেশের সুদূর স্থানে পৌঁছে দিত। এই দ্রব্যের অন্তর্গত কাশীর বস্ত্র, চাল ও ভিন্ন প্রকার সবজীও ছিল।৫৩ কাশীর রেশম কাপড় ৫৪, গান্ধারের উলের বস্ত্র৫৫, কোদুম্বরের সনের কাপড়ের আদানপ্রদান প্রচুর মাত্রায় হত। সূঁচ ও অন্যান্য লৌহর বস্তু তৈরী করে বিক্রি করার কাজ বহুল প্রচলিত ছিল,৫৭ ময়ূর ও অন্যান্য পাখির অবয়ব চিত্রিত হত।৫৮ সিল্ক, উত্তম মানের কাপড়, হাতির দাঁত এবং তার থেকে তৈরী জিনিষ, জহরৎ, সোনার অবয়ব রূপ তৈরী করা হত। উত্তর পাঞ্চালের চার দ্বারে প্রচুর সবজী বিক্রয় হত।৫৯ ফুলের বাজারেরও উল্লেখ পাওয়া যায় ৬০। নগরের বাইরে কসাইখানা ছিল যেখানে রাজা ও জনসাধারণ মাংস কিনত ৬১। সমস্ত দোকান মিলে এক্তা বাজারের আকার নিত। সকল বস্তুই বাজারে বিক্রি হত এবং ঐ সমস্ত দ্রব্য বাজারে জমা হত ৬২। তখন বারকোশ ও গাধার পিঠে করে দ্রব্য সামগ্রী বেচার জন্য নগরের রাস্তা ও গলিতে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করত।৬৩
উপসংহারঃ জাতক অধ্যয়ন করে জানা যায় ঐ সময় লৌহ শিল্প চরম উৎকর্ষ লাভ করেছিল; পাশাপাশি স্বর্ণালঙ্কার শিল্পও উৎকর্ষতা লাভ করে। এর থেকে আরো জানা যায় যে, তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থাও উন্নতি লাভ করেছিল। পশুদের জন্যও সোনার গহনা বানানো হত। সোনার মূর্তি বানানোর উল্লেখ রয়েছে। যেখানে উন্নত কলার নিদর্শণ পাওয়া যায়। দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত থালা, বাটি, পেয়ালার মতো ব্যবহার্য জিনিসও সোনার গহনার মতো ব্যবহার হত। যা থেকে ঐ সময়ের উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। রেশমি বস্ত্র সোনার দ্বারা সুসজ্জিত করে রাজবাড়ির লোকজন ব্যবহার করতেন এবং হাতি, ঘোড়াকে ঐ সোনার তৈরী রেশমি বস্ত্র পরানো হত। যা ঐ সময়ের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পরিচয়। জনসাধারণ সুতি বস্ত্র ব্যবহার করত যা ঘরোয়া শিল্প থেকে হত।
        যষ্ঠি শিল্পের অত্যধিক প্রচলন ছিল। ‘বড়ই’ যষ্ঠি দিয়ে ভিন্ন প্রকার সামগ্রী তৈরী করে নিজেদের শিল্প নৈপুন্যের পরিচয় দিয়েছিলেন। জাতক অধ্যয়ন করে জানা জায় যে, ঐ সময় হাতির দাঁতের শৈল্পিক কারুকাজও প্রচলিত ছিল। হাতির দাঁত দিয়ে ভিন্ন প্রকার অলংকার বানানো হত। মৃৎ শিল্প ঐ সময় প্রচলিত ছিল; কুম্ভকারের তৈরী মাটির দ্রব্যাদি রাজবাড়ি তথা সর্বস্তরের মানুষ ব্যবহার করত।
     জাতক কালীন ভারতে স্থল ও জল পথে বানিজ্যের অপরিসীম প্রসার ঘটলেও সামুদ্রিক পথের তুলনায় স্থল পথে অধিক বানিজ্য চলত।     
   
  


  অভিসন্ধির্ভ কুঞ্চিকাঃ
১. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৪৫,
২. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ১১১, তৃতীয় ভাগ পৃ. ২৪২,
৩.জাতক, ব্বিতীয় ভাগ, পৃ. ২৪৮,
৪. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ৬৬,
৫. জাতক, ষষ্ঠ ভাগ, পৃ. ১৮৯, বক্ষ্মারানা যথা উক্কা অন্তো ঝায়ন্তি নো বহি।
৬. জাতক, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ২৮১
৭. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ১১১,২৮৬,৮৬৪, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ২৮১,২৮৫, চতুর্থ ভাগ, পৃ. ১০৬,
    প্রথম ভাগ, পৃ. ৪৫,
৮. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ৯৫,
৯. জাতক, চতুর্থ ভাগ, পৃ. ২২৩, জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ৪৩৮-৯
১০. জাতক, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ১৯১,
১১. জাতক, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ৪৮, চতুর্থ ভাগ, পৃ. ৩৯৩,৪০৩-৪, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ২৫৮,৪০৬-৪,
১২. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ১৬৬, ৩৫১,৪৭৯, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ৬,
১৩. সো কম্মার জেট্টকং পল্কো সোপেত্বা বহুং সুবন্নং দত্বা একং ইত্থিরূপং করোহিতী সুবন্নং   
     গহেত্বা সযং ইত্থিরুপকং অকাসি। জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ২৮২,
১৪. সুবন্ন থাল, জাতক, তৃতীয় ভাগ, পৃ.২২৪,
১৫. সুবন্ন পাতি, সুবন্নভিংকার, সুবন্নসরক। জাতক, দ্বিতীয় ভাগ পৃ. ৯০,৩৭১, তৃতীয় ভাগ, পৃ.
    ১০,২৬৬, চতুর্থ ভাগ, পৃ. ৩৮৪, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৩৯,৫১০,
১৬. জাতক, চতুর্থ ভাগ, পৃ. ৩৮৪,
১৭. জাতক, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ২২৪, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ২৬০,
১৮. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ৩২২,
১৯. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৪০৪,
২০.জাতক, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ২৮৯,
২১. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ১০৯,৩০৪, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ৬৮,২৭৪,
২২. জাতক, পৃ. ২৭৬,
২৩. যথাপি তন্তে বিততে
      যংযং দেবয়ুপ বিযতি
      অপকম্মং হোতি বেতব্বং, জাতক, পৃ. ২৬,
২৪. তেনবায উপরিসোতং গন্তবা অরঞেস গেহ সম্ভার
     দারুনি কোটেঠত্বা তত্থ এব এক ভূমিক দ্বিভূমিক
     ভিন্ন, দিভেদে, গেহে সজ্জেত্বা থম্ভতো পদঠায়
     সব্বদারুসু সঞঞং কত্বা..... নগরং আগন্ত্বা যে
     যাদিসানি গেহানি আকরংবন্তি। জাতক, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ১৮
২৫. তস্মাযন্তানি কারেন্তি রাজা ভয়তি বড্‌ঢকিং। জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ২৪২,
২৬. জাতক, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ২৩৫,
২৭. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৮০৬,
২৮. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ৩৯৮, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ২৬৪,
২৯. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ৩২০, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ১৯৭,
৩০. প্রাগুক্ত,
৩১. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ৩০২, ষষ্ঠ ভাগ, পৃ. ২২৩,
৩২. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৩২, দ্বিতীয় ভাগ পৃ. ১০৬, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৪৫৪, জাতক, পৃ ৬১,   ৩৩. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ২০৫, দ্বিতীয় ভাগ পৃ. ৮৯, তৃতীয় ভাগ, পৃ.   
      ৩৬৬,৩৬৮,৩৮৫,৫০৮, পঞ্চম ভাগ পৃ. ২৯১, ষষ্ঠ ভাগ, পৃ. ৫২১,
৩৪. জাতক, ষষ্ঠ ভাগ, পৃ. ৫২
৩৫. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ১৭৫, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ১৫৩, ষষ্ঠ ভাগ, পৃ.১১৬, চতুর্থ ভাগ,পৃ.
     ১৬২, পঞ্চম ভাগ, পৃ.৮৬,১০৬,৩৬৫, ষষ্ঠ ভাগ, পৃ. ৫১,
৩৬. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ.১২০, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ৩২১, তৃতীয় ভাগ পৃ. ৪০৫, চতুর্থ ভাগ, পৃ.
      ৮২, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ২৯২,
৩৭. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ৮১,
৩৮. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ.১২৯,২৩৮, চতুর্থ ভাগ, পৃ. ৮২
৩৯. জাতক, তৃতীয় ভাগ, পৃ.১৬০,৫১২, পঞ্চম ভাগ, পৃ ১৫৬,৩০২,
৪০. ‘অসিতি কোটি বিভবো’, জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ.৩৪৯,৪৬৬,৪৭৮, তৃতীয় ভাগ, পৃ.
      ১২৮,৩০০,৪৪৪, চতুর্থ ভাগ, পৃ. ১,৬,২৪,২৩৬,২৫৪,৩৮২,
৪১. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ.৭৫,
৪২. জাতক, চতুর্থ ভাগ, পৃ. ১৩৮-৪২,
৪৩. জাতক, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ১২৬-৭,১৮৮,১৯০, চতুর্থ ভাগ, পৃ. ১৩৬-৪২,
৪৪. জাতক, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ৪৭০
৪৫. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ২৩৪
৪৬. প্রাগুক্ত, পৃ.৭৫
৪৭. প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩৯
৪৮. প্রাগুক্ত, পৃ. ১১১
৪৯. প্রি, বুড্ডিষ্ট ইন্ডিয়া, পৃ. ২২৫
৫০. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৯৮,৩৬৮, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ৫০৩, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৪৭১,৫০২,
৫১. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৩৪
৫২. প্রাগুক্ত, পৃ. ৮৯,১০৮
৫৩. প্রাগুক্ত, পৃ. ৪২৯
৫৪. জাতক, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ৪৪৩, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ১০, পঞ্চম ভাগ পৃ. ৪৯,৭৮,
৫৫. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ.৫০০
৫৬. প্রাগুক্ত,
৫৭. জাতক, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ২৮২
৫৮. প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৬
৫৯. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৪৪২, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ১৭১, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ২২, চতুর্থ ভাগ, পৃ.  
      ৪৪৫,৪৪৮,
৬০. জাতক, প্রথম ভাগ, পৃ. ১২০, চতুর্থ ভাগ, পৃ.৮২,২৭৬,
৬১. জাতক, তৃতীয় ভাগ, প্প্রি. ১০০,৩৭৮, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৪৫৮,৬২,২৭৬,
৬২. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ৩৫০, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ৪০৬,

৬৩. জাতক, পঞ্চম ভাগ, পৃ. ১১১,২০৪, দ্বিতীয় ভাগ, পৃ. ৪২৪, তৃতীয় ভাগ, পৃ. ২১,২০৩।  

No comments:

Post a Comment