Sunday, July 20, 2014

রেশম পথে শুয়াং জাঙ এর ভ্রমনেঃ পথ ও নগর

-সুমনপাল ভিক্ষু

সম্রাট হর্ষবর্ধনের আমলে শুয়াং জাঙ এর পাঁচটি ভ্রমণ পথ ও ২৪ টি নগরকে অনুসরণ করে রচিত হয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা চেষ্টা করব এই নগরগুলির কয়েটির প্রাচীন অবস্থা ও আধুনিক যুগে তাদের বর্তমান অবস্থার মধ্যে তুলনা করার জন্য।
         প্রথমে রেশম পথের সাধারণ ইতিহাস। তারপর আমরা আলোচনা করব পরিব্রাজকদের প্রচেষ্টায় বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে এর প্রত্যক্ষ সংযোগ নিয়ে।
 ভূমিকাঃ
বৌদ্ধধর্মের বিস্তার এবং রেশম পথের উন্নতির মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। রেশম পথ সম্পর্কে জ্ঞানের একটা বড় অংশ বৌদ্ধধর্ম বিশেষত ঃ বৌদ্ধ  পরিব্রাজকদের অবদান নিয়ে আলোচনা করে।
          জল ও স্থলের উপর দিয়ে ৮০০০ কি.মি. (৫০০০ মাইল) বিস্তৃত এই রেশম পথ প্রাচীন চীনদেশ, ভারতবর্ষ, পারস্য, মেসোপটেমিয়া, মিশর ও রোমে বাণিজ্যের এক প্রধান ও তাৎপর্যপূর্ণ বাহন। এটি চৈনিক সাম্রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমের যোগাযোগ ঘটিয়েছিল এবং দুটি মহান সভ্যতা রোম ও চীন দেশের মধ্যে ধারণা ও পণ্যের আদানপ্রদান ঘটিয়েছিল এবং এই পথ দিয়ে রেশম পশ্চিমদিকে এবং সোনা, রূপা ও পশম পূর্বদিকে আসত। এই রাস্তাটি চীন দেশের জিয়াঙ’এ উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে চীনের প্রাচীরকে অনুসরণ করেছিল, তাকলামাকানকে পাশ কাটিয়ে, পামিরের উপর আরোহন করেছিল, আফগানিস্তানকে অতিক্রম করে লেভন্তে এসে পৌঁছয়। এটি পশ্চিমদিকে বিস্তৃত হয় উত্তর চীনের বাণিজ্য কেন্দ্র থেকে এবং তিব্বতীয় মালভূমিকে পাশ কাটিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ দুই দিকে বিভক্ত।  
       লেভন্তে আরবীয় ক্ষমতার উত্থান এবং এশিয়ায় ক্রমহ্রাসমান রোমক প্রভাবের জন্য রেশম পথ ক্রমশ পথিকহীন ও অনিরাপদ হয়ে ওঠে। খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ ও চর্তুদশ শতক থেকে রেশম পথ পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে মোঙ্গলদের অধীনে তবে প্রায় ১৪০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে রেশম যাতায়াতের পথ হিসেবে এটির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। মোঙ্গলদের পতনের পর থেকে রেশম পথের অব্যবহার ছিল অন্যতম প্রধান কারন যা অন্য পথ বিশেষত সমুদ্র পথ দিয়ে ইউরোপীয়দের চৈনিক সাম্রাজ্যে পৌছঁতে উৎসাহিত করেছিল। কেউ যদি এশিয়ার সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারত তাহলে সে প্রচুর পরিমাণে লাভ করতে পারত।
       মার্কো পোলো ছিলেন প্রথম পাশ্চাত্য দেশীয়দের মধ্যে একজন যিনি রেশম পথ ধরে ১২৭১ খ্রীষ্টাব্দে চীনদেশে এসে পৌঁছেছিলেন (যেটিকে তিনি বলেছেন ক্যাথে)। মার্কো পোলোর ভ্রমণবৃত্তান্ত প্রকাশিত হবার পর চীনদেশ প্রাচ্যে ইউরোপীয়দের আর্কষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। যখন ক্রিষ্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ খ্রীষ্টাব্দে পশ্চিমদিক অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন তখন তিনি চেয়েছিলেন রেশম পথের থেকে অধিক উত্তম কোন বানিজ্য পথ সৃষ্টি করে চীনদেশে পৌঁছতে। বলা হয়ে থাকে যে পাশ্চাত্যদেশীয়দের যথেষ্ট আ... করে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে তার পরিবর্তে এশিয়া ও ইউরোপের মাঝখানে এক মহাদেশ আবিষ্কার করেন যা পরবর্তীকালে আমেরিকা বা নতুন পৃথিবী হিসেবে পরিচিত হয়।
        জার্মান ভূগোলবিদ্‌ ব্যারন ফার্ডিনান্ড ভন রিকেটোফেন (১৮৩৩-১৯০৫) প্রথম “Seidenstrassen” বা “রেশম” পথ এই পরিভাষাটির সৃষ্টি করেন, ১৮৭৭ সালে সেহেতু চীনদেশের প্রধান রপ্তানী পণ্য ছিল রেশম। বর্ণনা হিসেবে অবশ্য কিছুটা ভুল পথে চালিত করে। এই পথটি চীনদেশ, মধ্য এশিয়া, এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিস্তৃত এই সুদীর্ঘ ক্যারাভান পথটি যে শুধুমাত্র অনেকগুলি পথের সমষ্টি ছিল তাই নয়, এটি কেবলমাত্র রেশম ছাড়াও আরও অনেক পন্য রপ্তানি আমদানি হত।
 বৌদ্ধ সংযোগঃ  
বৌদ্ধধর্ম ছিল এই ধরণেরই একটি ব্যতিক্রম যা ভারতবর্ষ থেকে চীনদেশে বিস্তৃত হয়েছিল খ্রীষ্টীয় যুগের প্রথম দিকে এই বাণিজ্য পথের মাধ্যমে। এই রেশম পথের প্রকৃতপক্ষে উদ্ভব হয় খ্রীষ্টপূর্ব ২য় শতাব্দিতে যার সূত্রপাত হয়েছিল ১৩৮ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে কূটনীতিক অভিযাত্রী ঝাং-কিয়াং এর অভিযানের মাধ্যমে যিনি সম্রাট হান উইতির আমলে মহাপ্রাচীর নির্মানের পূর্বে বর্বর যাযাবরদের বিরুদ্ধে যুগে এক বিশাল অগ্রগতি লাভ করেছিলেন। এই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল অতন্ত্য কৌশলী। এটি ছিল Xiong-nu কুচির (যাদের দীর্ঘকাল হুনদের পূর্বপুরুষ বলে মনে করা হত) শত্রু উপজাতির নেতাদের সঙ্গে সামরিক মিত্রতা স্থাপন করা যাতে করে তাদের পশ্চাদ্দিক থেকে ধ্বংস করা যায়। এই অভিযান থেকে প্রত্যাবর্তনের অল্প কিছুদিন পরেই ঝাং-কিয়াং এর মৃত্যু ঘটে। তিনি তদানিন্তন চীন সম্রাটের নিকট থেকে প্রভূত সম্মান লাভ করে এবং এখনও চীনে শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত আছেন। তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি যিনি পশ্চিমদিকে অগ্রগমন করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তদানীন্তন কালের দুটি মহাশক্তির মধ্যে স্ংযোগ ঘটিয়েছিলেন – সাম্রাজ্যবাদী চীন ও  সাম্রাজ্যবাদী রোম। তিনি যথার্থভাবেই ‘রেশম পথের পিতা’ – এই খেতাবটি অর্জন করেছেন।
      অবশ্য, হান বংশের সম্রাট মিং (৫৮ খ্রীঃ-৭৫ খ্রীঃ) এর রাজত্বকালেই রেশম পথ ধরে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তারের সূত্রপাত হয় এবং এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে পশ্চাত্যদেশে প্রতিনিধিদল প্রেরণের অর্ধ ঐতিহাসিক বিবরণ।
হাউ হানসু গ্রন্থে ৭০ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট মিং এর কিছু প্রশ্ন পাওয়া যায়-
“বর্তমান ঐতিহ্য অনুসারে সম্রাট মিং একটি লম্বা স্বর্ণনির্মিত মানুষ দেখেছিলেন যার মস্তক ম্বল ছিল। তিনি তাঁর পরামর্শদাতাদের এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে একজন উত্তর দিয়েছিলেন, “পাশ্চাত্য দেশে বুদ্ধ নামে এক দেবতা রয়েছেন। তাঁর দেহ ১৬ চি (৩.৭মিটার বা ১২ফুট) উঁচু এবং তাঁর বর্ণ খাঁটি সোনার মত’। সম্রাট সত্য ধর্ম আবিষ্কারের জন্য তিয়ান-সু (উত্তর পশ্চিম ভারত) তে দূত পাঠালেন যার পরে মধ্য রাজত্বে বুদ্ধের চিত্র ও প্রতিমূর্তি এসে পৌঁছল।“
       পশ্চিমে ব্যাক্ট্রিয়, পার্থিযান ও দাউয়ানদের রাজত্বের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও তারিম বেসিনের বিভিন্ন অঞ্চলে সরাসরি ঔপনিবেশ তৈরীর মাধ্যমে পাশ্চাত্য দেশ ও ভারতবর্ষে যাবার রেশম পথ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হয় হান চৈনিক সেনাবাহিনীদের দ্বারা যাযাবরদের আক্রমণ থেকে এই অঞ্চলে নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে। তান পিয়ান পর্বত (স্বর্গীয় পর্বত) এবং পামির পর্বত অতিক্রম করে পূর্ব হান সেনাপতি পা চাও (৩২খ্রীঃ-১০২খ্রীঃ) ৯৭ খ্রীষ্টাব্দে – Xiong-nu দের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছিলেন যারা বর্তমানে রেশম পথ নামে পরিচিত বাণিজ্য পথের উপর আক্রমন চালিয়ে যাচ্ছিল। এই পথের উপর অধিকার সুদৃঢ় করার জন্য তিনি পশ্চিমদিকে মধ্য এশিয়া ও কাস্পিয়ান সাগর অতিক্রম করে ইউরোপের দ্বারপ্রান্তে এসে উপনীত হন। তাঁর এই অসাধারণ  সমরকুশলতার মাধ্যমে তিনি তারিম বেসিন থেকে Xiong-nu দের বিতাড়িত করেন এবং পশ্চিম দেশ থেকে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষকে চৈনিক শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন।
        তবে বিস্তৃত যোগাযোগ শুরু হয়েছিল সম্ভবত খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতক থেকে যা ঘটেছিল সম্ভবত বহু সংস্কৃতিযুক্ত কুষাণ সাম্রাজ্যের অরিম বেসিনের চৈনিক অঞ্চলে বিস্তারের ফলে এবং এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল মধ্য এশিয়ার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চৈনিক অঞ্চলে ধর্মপ্রচার মূলক কার্যকলাপকুষান বংশীয় ভিক্ষু লোকক্ষেম চৈনিক হান রাজসভায় গমন করে সেখানে চৈনিক ভাষায় মহাযান সম্প্রদায়ের প্রথম জ্ঞাত অনুবাদটি সম্পন্ন করেন দশ বছর কাজ করার পর।
       পশ্চিমের দেশগুলি থেকে যখন তীর্থযাত্রীরা চীনদেশে আগমন করত তখন চৈনিক বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীরা খ্রীষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দী থেকে বিভিন্ন সময়ে ভারতবর্ষে যাত্রা করতে শুরু করেন এবং তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের ভ্রমণের যে স্মৃতি কথা রচনা করেছেন ভারতবর্ষ মধ্য এশিয়ায় খ্রীষ্টীয় ৩য় থেকে ৭ম শতক বৌদ্ধধর্মের অবস্থা সম্পর্কে তা থেকে অমূল্য তথ্য পাওয়া যায়। কয়েকজন প্রখ্যাত পরিব্রাজক হলেন ফা-শিয়েন (৩৯৯ খ্রীঃ-৪১৪ খ্রীঃ), শুয়াং জাঙ (৬২৯ খ্রীঃ-৬৪৫ খ্রীঃ) এবং ইৎসিং (৬৭১ খ্রীঃ-৬৯৫ খ্রীঃ)। তবে পাদ টীকায় এটি যুক্ত করা যায় যে খ্রীষ্টীয় ৭ম শতাব্দীর নিকটবর্তী সময়ে মধ্য এশিয়ায় ইসলাম ধর্মের বিস্তারের ফলে রেশম পথ দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের গমনাগমন অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। এই ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার ফলে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান আরও ঘনীভূত হয় এবং মধ্য এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কোন উপায়ে খ্রীষ্টীয় ১০ম শতাব্দী পর্যন্ত শক্তিশালী যোগাযোগ বজায় রেখেছিলেন যা তারিম অববাহিকার দেওয়ালচিত্র থেকে প্রমাণিত হয়।
 শুয়াং জাঙ এর যাত্রাঃ
উক্ত তিনজন প্রধান ভিক্ষুর মধ্যে শুয়াং জাঙ (৬০২ খ্রীঃ-৬৬৪ খ্রীঃ) ছিলেন চীনদেশে বৌদ্ধ রচনার চারজন মহান অনুবাদকের একজন ছিলেন যিনি রেশম পথ দিয়ে গমনাকারী সমস্ত চৈনিক পর্যটকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর স্থায়ী খ্যাতির কারণ হল তাঁর উপন্যাস- পাশ্চাত্য দেশে গমন, যা ছিল তাঁর তীর্থযাত্রার বর্ণনা যা বিপদ থেকে পলায়নের ঘটনা এবং কিছু চরিত্রে পরিপূর্ণ যারা তাঁকে ভারতবর্ষ যাত্রায় সঙ্গ দিয়েছিল। এখানে উল্লেখযোগ্য যে শুয়াং জাঙ রচিত Da Tang Xi Yu Ji (মহান তাং রাজবংশের আমলে পাশ্চাত্য আতেলের বিবরণ) এই রোমান্স ভিত্তিক রচনাটি এই উপন্যাসের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছিল।
        বৌদ্ধ রচনায় অসংখ্য বৈপরিত্য ও গরমিলের দ্বারা প্রবলভাবে বিভ্রান্ত শুয়াং জাঙ চৈনিক শিক্ষকদের কাছ থেকে এই বিষয়ে কোন সমাধান লাভ না করে এবং ফা শিয়েঙ এবং জিয়ান (৩৫০-৪২৭) স্মৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতবর্ষে ১৬ বছর ব্যাপী তীর্থ ভ্রমণে গমনকারী এবং সংস্কৃত রচনা চৈনিক ভাষায় অনুবাদকারী বিশ্ববিখ্যাত শুয়াং জাঙ সিদ্ধান্ত নেন তিনি বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি স্থল ভারতবর্ষে গিয়ে অধ্যয়ন করবেন। ভারতবর্ষে আগমনকালে শুয়ান জাঙ দিনের বেলা লুকিয়ে থাকতেন এবং রাত্রি বেলা হাঁটতেন। এই ভাবে তিনি একাকি গোবি মরুভূমি পার হলেন, তাঁর কোন পথপ্রদর্শক ছিলনা। তাঁর সঙ্গীরা তাঁকে পরিত্যাগ করে যাওয়ার পর তাঁর একমাত্র সঙ্গী ছিল তাঁর ছায়া। তিনি তাঁর যে কোন মূল্যে পবিত্র শপথ পালন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন এবং বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন রক্ষাকারী দেবতাদের করুণার উপর বিশ্বাস রেখে প্রথম পৌঁছলেন লিয়াং-জাও’তে-যেটি বর্তমান কাংসু রাজ্যে উচ্চ উপত্যকা ও গিরিখাতের মধ্যে অবস্থিত। এটি ছিল চীনদেশের তদানীন্তন একেবারে পশ্চিম সীমান্তে এবং রেশম পথের একেবারে দক্ষিণ সীমা যা যুক্ত করেছিল মধ্য এশিয়া ও চীন দেশকে। একটি সীমান্ত দুর্গ থেকে নিক্ষিপ্ত তীর তাঁকে প্রায় বিদ্ধ করেছিল তথাপি তিনি ভীত হয়ে পিছিয়ে যাননি। এই নগরীতে ৩০ দিন ধর্ম্প্রচারের পর তিনি পদব্রজে হামির উদ্দেশ্যে রওনা হন যেখানে তুরফানের রাজার কাছ থেকে এক হৃদয়গ্রাহী আমন্ত্রন নিয়ে এক ধার্মিক বৌদ্ধ চৈনিক প্রতিনিধিদল তাঁর কাছে প্রেরিত হয়েছিল।
       শুয়াং জাঙ প্রথমে চৈনিক রাজার ইচ্ছার বিরুদ্ধে চীনদেশ ত্যাগ করলেও এখন আর রাস্তায় পলায়মান কোন অজানা পলাতক ছিলেননা, ছিলেন সরকারি মান্য প্রাপ্ত একজন সম্মানিত তীর্থযাত্রি। ৩০ টি ঘোড়া ও ২৫ টি ভৃত্য সহ সমস্ত পোশাক যা ভক্ত রাজা কর্তৃক প্রদত্ত হয়েছিল ছাড়াও তাঁর অনুগমন করেছিল তাঁর একজন কর্মচারী যতক্ষণ না শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছিলেন যেখানে বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে তাঁর আগ্রহ ক্ষেত্রীভূত হয়েছিল এবং যেখানে তাঁর অধিকাংশ সময় অতিবাহিত হয়েছিল- উত্তর বিহারের বর্তমান বিহার নগরীর উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত নালন্দা বিহার। অবশ্যই রেশম পথে কমপক্ষে ৩৫ টি স্থান ছিল যার উপর দিয়ে তিনি এসেছিলেন এবং সেখানে পৌঁছবার আগে ৫ বছর সেখানে ছিলেন। এই স্থানগুলি হল – কান্দাহার, কুচ, ইপিককূল, পামির ব্যাক্ট্রিয়া, সমরখন্দ, বল্‌খ, বামিয়ান, কপিশা, জালালাবাদ, লাম্পাক, দান্ধার, পেশয়ার, উড্ডীয়ান, গান্ধার, উদাভান্ডা, তক্ষশীলা, প্রভারপুর, চাকল, চীনাভুক্তি, জলন্ধর, মথুরা, কপিত্থ, কান্যকুব্জ, অযোধ্যা, প্রয়াগ, কোশাম্বী, শ্রাবস্তী, কোপিলাবস্তু, রামগ্রাম, কুশিনগর, বেনারস, বৈশালী, পাটুলিপুত্র এবং বুদ্ধগয়া। এটি উল্লেখযোগ্য যে শেষ ৮ টি স্থান যেগুলি তাদের ভগবান বুদ্ধের সঙ্গে ঐতিহাসিক সংযোগের কারণে বৌদ্ধদের কাছে আরাধনার স্থান বলে বিবেচিত হয়। শুয়াং জাঙ ভারতের মাটিতে পা রাখেন ৬৩১ খ্রীষ্টাব্দে।
        নালন্দায় অধ্যয়নে কিছু সময়ের জন্য বিঘ্ন ঘটিয়ে শুয়াং জাঙ পবিত্র স্থান রাজগৃহ ভ্রমণে যান। সেখানে ১৫ মাস অতিবাহিত করে শুয়াং জাঙ নালন্দায় ফিরে এসে শীলভদ্রের অধীনে যোগাচার দর্শন অধ্যয়ন করেন যা তিনি ইতিপূর্বে কাশ্মীরে শিক্ষা করেছিলেন। সেখানে তিনি সংস্কৃত ভাষায় তাঁর গভীর জ্ঞানকে আরও বৃদ্ধি করেছিলেন এবং ব্রাক্ষ্মণ দর্শণ অধ্যয়ন করেছিলেন।
         ৬৩৮ খ্রীষ্টাব্দের গ্রীষ্মের পূর্বে শুয়াং জাঙ বঙ্গদেশ অভিমুখে রওনা হয়ে তাম্রলিপ্ত পোঁছান। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সিংহল দ্বীপে গমন করে হীনযান শাস্ত্র অধ্যয়ন করা। এই পবিত্র ভূমি এক বিরাট বিপ্লবের পর দুর্ভিক্ষ ও গৃহযুদ্ধের শিকার হয়, এর ফলে সেই স্থানে গমনও করার পরিবর্তে শুয়াং জাঙ কয়েকজন সিংহল দেশীয় ভিক্ষুর উপদেশে কাবচিপুরাম চলে যান। এর পর তাঁর অধিকাংশ ধর্মীয় কার্যকলাপ দাক্ষিণাত্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তারপর তিনি পশ্চিমদিকে মধ্য সিন্ধু পর্যন্ত অগ্রসর হন এবং তারপর মগধে ফিরে এসে সিন্ধু ও মূলতান ভ্রমণের পূর্বে ৩য় বারের জন্য নালন্দায় অবস্থান করেন।
       এখন পবিত্র স্থান সমূহে তীর্থযাত্রীর ভ্রমণ শেষ হল এবং এর ফলে তিনি তাঁর সময়ের বাকি অংশ ভারতীয় ধর্ম বাগ্মীদের শিক্ষা অনুসন্ধান করবার কাজে ব্যয় করতে সমর্থ হন। ৬৪০ খ্রীষ্টাব্দে শুয়াং জাঙ নালন্দার নিকটবর্তী অপর একটি বিহারে প্রজ্ঞাভদ্র নামের এক পণ্ডিত সবাস্তিবাদী ভিক্ষুর থেকে হেতু বিদ্যা (যুক্তি বিজ্ঞান) শিক্ষা করতে ২ মাস ব্যয় করেন। পরবর্তীকালে তিনি যষ্টিভনগিরি পাহাড়ে বসবাসকারী অধিকতর বিখ্যাত অপর এক সন্ন্যাসী জয়সেনের কাছ থেকে কয়েকটি মহাযানীয় রচনা যথা মহাযানসূত্রালঙ্কার অধ্যয়ন করেন। শুয়াং জাঙ কান্যকুব্জের উত্তরে অবস্থিত বিলসার অঞ্চলে পৌঁছন যেখানে তিনি ৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দের বর্ষাকালের দু’মাস অতিবাহিত করেন। পরবর্তিকালে তিনি জলন্ধ্র ও তক্ষশীলার মধ্য দিয়ে পাঞ্জাব অতিক্রম করেন এবং এই সময়ে তিনি দশ বছর পূর্বে তিনি যে পথ অনুসরণ করেছিলেন তার বিপরীত পথ অনুসরণ করেন। উর্দ্ধ পাঞ্জাবের কিছু গিরিপথ ডাকাত অধ্যুষিত ছিল কিন্তু তারা এই পর্যটক ও তাঁর সঙ্গীদের কোন ক্ষতি করেনি। ৬৪৪ খ্রীষ্টাব্দের শুরুতে যখন শুয়াং জাঙ যখন অজানা ঝুঁকিতে পরিপূর্ণ সিন্ধুনদ অতিক্রম করছিলেন তখন ৫০ টি পান্ডুলিপি ও বিরল ভারতীয় ফুলের বীজ নদীতে পড়ে যায় মাঝনদীতে প্রবল ঢেউয়ের জন্য এবং  অত্যন্ত কষ্ট করে অবশিষ্টগুলিকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। নিঃসন্দেহে এই ঘটনা ছিল শুয়াং জাঙ এর যাত্রার সবচেয়ে বড় দুঃখ। কিন্তু কপিপার রাজা যাঁর রাজত্বে তিনি প্রবেশ করছিলেন এবং যিনি উদাভান্ড পর্যন্ত তাঁকে অভ্যর্থনা করবার জন্য এসেছিলেন, সমস্ত হারানো রচনাগুলি তাঁর জন্য সুদূর উড্ডীয়ান থেকে পাঠানো হয়েছিল। কাশ্মীরের রাজা শুয়াং জাঙ এর প্রত্যাবর্তনের যাত্রার কথা শুনে তাঁকে কাশ্মীর অতিক্রম করে যাওয়ার অনুমতি না দিয়ে তাঁকে উদাভান্ড জেলায় বিদায় সম্ভাষণ জানাতে এসেছিলেন।
      কপিপা ও কাশ্মীরের রাজাদের থেকে বিদায় নিয়ে শুয়াং জাঙ মেই ক্যারাভান পথ অনুসরণ করেছিলেন যা পামীর থেকে দুনহু ইয়াং পর্যন্ত গিয়েছিলেন – এবং পৌঁছেছিলেন সেই সীমান্ত দূর্গে পশ্চীমদিক থেকে বিদেশীরা চৈনিক শাসনাধীন অঞ্চলে প্রবেশ করত। ৬৪৪ খ্রীষ্টাব্দের বসন্তে তিনি খোটানে পৌঁছে সেখানে ‘যোগাচারভূমি’র ‘মহাযান অভিধর্ম সমুচ্চয় ব্যাখ্যা’, ‘অভিধর্ম কোষ’ এবং মহাযান সম্পারি গ্রহশাস্ত্র এই চারটি রচনা বিষয়ক উপদেশ দিয়ে সাই-আট মাস অতিবাহিত করেন এবং সেই সঙ্গে তিনি অপেক্ষা করছিলেন একটি অনুরোধের উত্তরের যা তিনি পেশ করেছিলেন সম্রাট তাই জংয়ের কাছে। নভেম্বর মাসে সম্রাটের এক আদেশের দ্বারা শুয়াং জাঙ তুনহুয়াং পরিত্যাগ করেন এবং ঘরে ফেরবার জন্য অনুমতিপত্রের জন্য পুনরায় আবেদন করবার সময়ে সেখানে কিছু সময় বিশ্রাম গ্রহণ করেন। সেই অনুমতিপত্র লাভ করা মাত্রই চৈনিক রাজধানির উদ্দেশ্যে পুনরায় যাত্রা শুরু করেন। চৈনিক ৬৪৫চান্দ্রমাসে চাঙআনে একটি অনুবাদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন মহান সুখের বিহার (Temple of Grate Happiness) এ সেখানে তিনি তাঁর অবশিষ্ট জীবন উৎসর্গ করেন সংস্কৃত ধর্মীয় রচনাগুলিকে চৈনিক ভাষায় অনুবাদের কাজে এবং তিনি এই কাজে ব্যাপ্ত ছিলেন ৬৬৪ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত। শুয়াং জাঙ কে প্রায়শই চিত্রায়িত করা হয় এক প্রতিচ্ছবি হিসেবে যিনি নির্ভিকভাবে একাকী মরুভূমির উপর দিয়ে পশ্চিমদিকে হেঁটে চলেছেন হাতে দুটি ধর্মীয়পাত্র নিয়ে এবং তাঁর চোখের সামনে সম্পূর্ণ অন্ধকারে এক প্রদীপ ব্জলছে, তাঁর পিঠে রয়েছে ধর্মীয় পুস্তক পরিপূর্ণ একটি ঝুড়ি।
যাত্রাপথ এবং নগরসমুহঃ
শুয়াং জাঙ এর ভ্রমণ করা ৫ টি যাত্রাপথ ও ২৪ টি নগরের তালিকা নিম্নে বর্ণিত হল।
১) জিয়ান থেকে অক্ষু (চীনদেশের রেশমপথ) যার মধ্যে রয়েছে জিয়ান, উয়েই, জাংয়ে, হামি,    তুরফান, কুচ এবং অক্ষু।
২) বামিয়ান থেকে কাশ্মীর (আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে) যার মধ্যে রয়েছে বামিয়ান, পেশোয়ার এবং কাশ্মীর।
৩) মথুরা থেকে কোশাম্বী (উত্তর ভারত জুড়ে) যার মধ্যে রয়েছে মথুরা, কনৌজ, অযোধ্যা এবং কোশাম্বী।
৪) লুম্বিনী থেকে নালন্দা (বৌদ্ধ পবিত্রভূমিতে) যার মধ্যে রয়েছে লুম্বিনী, কুশিনগর, বারাণসী, বৈশালী, বুদ্ধগয়া ও নালন্দা।
৫) এলাহাবাদ থেকে নালন্দা (ভারতবর্ষ থেকে পশ্চিম চীনদেশ) যার মধ্যে রয়েছে এলাহাবাদ, খোটান, লাউলান ও তুনহুয়াং
        ৬২৯ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাটের আদেশ অমান্য করে শুয়াং জাঙ গোপনে তাঁর সুদীর্ঘ যাত্রার সূচনা করেন, চাঙআন বা বর্তমান জিয়ান থেকে বুদ্ধের দেশ পৌঁছতে তাঁর সময় লেগেছিল তিন বছর।
        খ্রীষ্টপূর্ব একাদশ শতক থেকে এই অঞ্চলে অস্তিত্বশীল অন্যতম নগর এবং অনেকগুলি রাজবংশের রাজধানী হিসেবে এই প্রাদেশিক নগর যা চীনদেশের শাংসি প্রদেশের রাজধানী, বর্তমানে একটি বানিজ্য কেন্দ্র এবং রেশম পথের পূর্বপ্রান্ত সীমায় অবস্থিত। অতএব চাঙআন (চিরস্থায়ী শান্তি) পরিচিত ছিল সমস্ত প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সভ্যতা হিসেবে।
        জিয়ান কয়েক শতাব্দী ধরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল যদিও এটি পশ্চিম হয়েই উত্তর চৌ রাজ্যগুলির দ্বারা রাজধানী হিসেবে গৃহীত হয়েছিল এবং এটি পঞ্চম শতকে উত্তর পশ্চিমের বর্বর রাজ্যগুলির থেকে কৌশলগত ভাবে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থিত ছিল। এটি পুনরুজ্জীবিত হয় সুই সম্রাট (৫৮১-৬১৮) দের আমলে। তাঁরাও এই শহরটিকে তাঁদের রাজধানীতে পরিণত করেছিলেন। তাং রাজবংশ (৬১৮-৯০৭) এর রাজধানী হিসেবে এটি বিস্তৃত হয় এবং তিনটি অংশে বিভক্ত হয় – প্রাসাদ নগরী, যা ছিল রাজপরিবারের জন্য, সাম্রাজ্য নগরী, যা নির্দিষ্ট ছিল রাজকর্মচারীদের জন্য এবং বহিঃস্থনগরী, যা নির্দিষ্ট ছিল কারিগর ও বণিকদের জন্য। নগরটির পতন ঘটে তাং বংশের পতনের পর যদিও এটি মধ্য এশিয়ার বাণিজ্যের একটি বাজার হিসেবে থেকে যায়। মার্কোপোলো খ্রীষ্টীয় ত্রয়োদশ শতকে এই নগরটিকে একটি সমৃদ্ধশালী বাণিজ্য কেন্দ্র রূপে বর্ণনা করেছেন।
         উক্ত তিনটি বিপর্যয় চৈনিক ইতিহাসে বৌদ্ধ ধর্মের উপর তিনটি প্রধান নির্যাতন। তাদের এই নাম দেওয়া হয়েছিল কারণ তারা ছিল সেই তিন সম্রাটের মরণোত্তর নাম যাঁরা এই তিনটি নির্যাতন চালিয়েছিলেন। এগুলির মধ্যে তৃতীয় বিপর্যয়টি ঘটেছিল ৮৪৫ খ্রীষ্টাব্দে যখন ধর্মপ্রাণ তাত্তবাদী সম্রাট তাং বংশীয় উ জং আদেশ দিয়েছিলেন বৌদ্ধ বিহার ও প্রতিমূর্তিকে ধ্বংস করতে হবে এবং তাদের সম্পত্তি রাজকোষে বাজেয়াপ্ত করা হবে। দুটি অত্যাচারের মত তৃতীয়টি ধ্বংসাত্মক ছিল না, রাজধানী চাঙআনে চারটি বৌদ্ধ বিহারকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সমগ্র সাম্রাজ্যে ৪৬০০ টি বিহার ধবংস করা হয়েছিল এবং ২৬০০০০ ভিক্ষু ও ভিক্ষুণীকে গৃহী জীবনে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছিল। এই বিপর্যয়ের প্রভাব কেবল বৌদ্ধ ধর্মের উপর নয়, Manichacism, Nestorian Christianity  এবং জরাথ্রুস্টধর্মের উপর পরেছিল। যেহেতু এই বিপর্যয় ঘটেছিল হুইচাং (৮৪১ খ্রীঃ -৮৪৬ খ্রীঃ) যুগে, এটি চৈনিক বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসে বৌদ্ধ ধর্মের উপর হুইচাং নির্যাতন বা হুইচাং দমন হিসেবে পরিচিত।
         চৈনিক কাঙসু প্রদেশের এক নগর উয়েই কাঙসু করিডরের পূর্বপ্রান্তে (যেখান দিয়ে রেশম পথ দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে উত্তর পশ্চিম দিকে গেছে) এবং প্রাদেশিক রাজধানী লান জাউয়ের উত্তরে অবস্থিত। হান যুগে উয়েই একটি প্রতিরক্ষা মূলক অঞ্চলে পরিণত হয় (২০৬ খ্রীঃ পূঃ-২২০ খ্রীঃ)। ঐতিহ্যগতভাবে একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে এই নগরটি এমন একটি স্থানে অবস্থিত যেখানে লান চাও থেকে এবং পূর্বে ইন-চুয়ান থেকে রাস্তা এসে প্রধান রেশম পথ সৃষ্টি করেছে। এটি কেবলমাত্র নগরটির চারপাশে জলসেচ যুক্ত অঞ্চলেরই নয়, নিকটবর্তী তৃণভূমিতে বসবাসরত পশুপালক যাযাবরদের উৎপন্ন দ্রব্য (বিশেষত পশম) এর সংগ্রহ কেন্দ্র ও প্রধান বাজার ছিল।২৭
         সুদূর পশ্চিম কাঙসু প্রদেশে লান-জাউয়ের ৪৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ও জিয়াউ-কুয়ানের ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত জাং-উয়ে ছিল একটি মাঝারি আকৃতির শহর যেটি ছিল রেশম পথ দিয়ে পরিভ্রমণরত পথিক ও ক্যারাভানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্রামের স্থান এবং যেখানে মার্কোপোলো একটি সম্পূর্ণ বছর অতিবাহিত করেছিলেন। দক্ষিণে এটি ছিল কিভহাইয়ের সীমানা এবং উত্তরে এটি অন্তঃমঙ্গোলিয়ার সীমানা। এই নগরটি বিশাল এবং এখানে পাওয়া যাবে যথেষ্ট সূর্যালোক, অনেকগুলো ছোট নদী ও উর্বর মৃত্তিকা, এবং স্বভাবতই এই স্থানটি পরিণত হয়েছে কাঙসু এবং সমগ্র চীন দেশের একটি প্রধান কৃষি কেন্দ্রে। হেক্সি করিডরের কেন্দ্রে, চৈনিক ইতিহাসের অধিকাংশ জুড়েই জাং-উয়ে ছিল সীমান্ত যা সাম্রাজ্যের মধ্য এশিয় অংশ পর্যন্ত একটি করিডর তৈরী করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, জাং-উয়ে নামটির অর্থ ছিল “পশ্চিম জগতের দিকে বাহু প্রসারিত করা”। পশ্চিম হান রাজবংশে এই অঞ্চলে চৈনিক সেনাদল প্রায়ই জিয়নগ্নুদের মুখোমুখি পড়ত। এটি ছিল কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি দূর্গ নগর যা রেশম পথ বরাবর অবস্থিত ছিল এবং সেখানে সৈন্যবাহিনী মিং যুগে মহাপ্রাচীরকে প্রহরা দিত এবং আজকে উয়েই এবং জাংইয়ের মধ্যবর্তী রাস্তা হল একটি উত্তম স্থান যেখান দিয়ে মহাপ্রাচীরটিকে সুষ্ট ভাবে দেখা যায়। একটি শহুরে জেলা, চারটি জেলা, একটি স্বশাসিত জেলা, ৯৭ টি শহর এবং ৯৭৭ টি গ্রাম নিয়ে হাংইয়ের মোট জনসংখ্যা হল ১,২৬০,০০০ জন যার মধ্যে মাত্র ২৬০,০০০ নগরের বাসিন্দা। হান ছাড়া ২৬ টি সংখ্যালঘু জাতি রয়েছে যার মধ্যে হুই ও তিনেতান।২৮
       হেমি হল জিন-জিয়াং এর পূর্ব উইঘুরের একটি মরূদ্যান শহর। এটি একটি আধুনিক শহর ও তার চারপাশের জেলার নাম। এই নগরটি পশ্চিমে কাঙসু প্রদেশ থেকে মধ্য এশিয়া ও পাশ্চাত্যে যাওয়ার পথে রেশম পথের উপর একটি কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। ১৯৮৫ সালে এর জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৪১,০০০। এর জনসংখ্যা ছিল ২০০২ সালে প্রায় ৫১৯,৭০০ জন, এর ৬৮.৪% হান সম্প্রদায়ভুক্ত এবং ৩১.৬% সংখ্যালঘু জাতির প্রধাণতঃ উইঘুর, কাজ.. ও হুই। তুরফানের মত হামি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার নীচে অবস্থিত এবং এখানকার তাপমাত্রা চরমভাবাপন্ন গ্রীষ্মে ৪৩ ডিগ্রি সে. এবং শীতে ৩২ ডিগ্রি সে.। সমগ্র চীন দেশ জুড়ে হামি সুমিষ্ট তরমুজের জন্য বিখ্যাত এবং হামিতে তরমুজ একটি গৃহস্থালির ফল।২৯  
        তুরফানও একটি মরুদ্যান শহর যা চীন দেশের পূর্ব জিন-জিয়াং উইঘুর স্বশাসিত অঞ্চলে অবস্থিত। এটি পো-কো-তা পর্বতমালা ও কু-লু-কো-তা-কো পর্বতমালার মধ্যবর্তী স্থানে উরুসচি নগরের ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত এবং দীর্ঘদিন ধরে উর্বর মরুদ্যানের কেন্দ্রস্থল এবং হামি থেকে কাশগড় পর্যন্ত রেশম পথের প্রধান উত্তর শাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। এর একটি বিকল্প উত্তর পথ রয়েছে যা গেছে জুংগারিয়ান অববাহিকা, ইলি নদী উপত্যকা ও মধ্য এশিয়ার মধ্য দিয়ে। তুরফানের অর্থনীতি কৃষি ও ফলচাষের উপর নির্ভরশীল এবং তুরফানে উৎপন্ন হয় তুলা ও তুলাবস্ত্র, রেশম, গম, তরমুজ, মালবেরি গাছ, আঙুর, অ্যাপ্রিকা, শুকনো ফল ও মদ্য। এই জেলায় তেলও পাওয়া যায়। তুরফান যা জুয়ানজাং এর সময়ে কাওচাঙ নামে পরিচিত ছিল। প্রাচীন রেশম পথের উত্তর দিকে একটি প্রধান বিরাম স্থল ছিল এবং এটি হল চীন দেশের উষ্ণতম, নিম্নতম ও শুষ্কতম স্থান। তুরফানের আয়দিঙ্কল হ্রদ সমুদ্রপৃষ্ঠের ১৫৪ মিটার নীচে ও জর্ডনের ডেডসীর পর পৃথিবীর দ্বিতীয় নিম্নতম হ্রদ। তুরফানের উচ্চতম বার্ষিক উষ্ণতা পায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এর বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ১৬ মিমি। এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে সুমিষ্ট আঙুর উৎপন্ন হয়। শিখা পর্বত ধ্রুপদী উপন্যাস ‘Journey to the west’ এ উল্লেখিত হয়েছে এবং উপন্যাসটি শুয়াং জাঙ এর বিবরনীকে নির্ভর করে রচিত যিনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থগুলির সন্ধানে। এই উপন্যাসে শিখা পর্বত হল শুয়াং জাঙ এর পথের একটি বাধা যতক্ষণ না বানররাজ সান উকং তাঁর সর্বপেক্ষা বিখ্যাত শিষ্য এই শিখকে নিভিয়ে দেওয়ার জন্য একটি জাদুপাখা সংগ্রহ করে পর্বতের শিখাকে নিভিয়ে দিচ্ছেন। শিখা পর্বত বেলেপাথর, নুড়ি জমে গঠিত শিলা এবং কাদা জমে গঠিত শিলার জন্য বিখ্যাত। তীব্র মধ্যগ্রীষ্মের সূর্যে এটিকে শিখার মত জ্বলন্ত বলে মনে হয়।৩০
        তারিম অববাহিকার তাকলামাকান মরুভূমির উত্তর প্রান্ত দিয়ে বিস্মৃত রেশম পথের একটি শাখার উপর অবস্থিত কুচ শহরটি একটি মরূদ্যান এটি চীন দেশের উইগুর স্বশাসিত অঞ্চলে আকসু ও কারাপরের মধ্যে অবস্থিত। কুচ মরূদ্যানটি তিয়েনশান পর্বতের দক্ষিণ ঢালের পাদদেশে। এটি ধৌত হয় কুচ এবং মু-চা-তি নদীর জলে যেগুলি বর্ষাকালে তারিম নদীতে প্রবাহিত হয় কিন্তু বছরের অধিকাংশ সময়েই নিজেদের লবণাক্ত কাদায় হারিয়ে ফেলে।
        এই জলসেচ সেবিত মরূদ্যানে উৎপন্ন হয় বিভিন্ন প্রকারের শস্য ও ফসল এবং এটি পরিচিত তার ফলের জন্য যথা আঙুর, তরমুজ প্রভৃতি। এই শহরটি তার বাদ্যযন্ত্রী ছাড়াও হস্তশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। ১৯৮০ র দশকের মাঝামাঝি কুচের জনসংখ্যা ছিল ১০,০০০-৫০,০০০ এবং ১৯৯০ তে ৭৪,৬৩২ জন। বহুদিন ধরে এটি ছিল তারিম অববাহিকার সর্বপেক্ষা জনবহুল মরুদ্যান। এর প্রাচীন জনগোষ্ঠী আর্য মানুষদের গঠিত ছিল যারা তোকারীয় বা কুচীয় ভাষায় কথা বলত। পাইদের আমলে কুচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ কেন্দ্রে পরিণত হয়; এই পর্বের নিদর্শন হল কিজিল গুহা। অনেক ভিক্ষু যারা বৌদ্ধ ধর্মকে চীনদেশে প্রসারিত করেছিলেন খ্রীষ্টীয় তৃতীয় থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যে এই অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন। এটি ভারতীয় চিন্তাভাবনা দ্বারা যথেষ্ট পরিমাণে প্রভাবিত হয়েছিল৩১ এবং একথা বলা হয়ে থাকে যে ভারতীয় রাজারা এখানে রাজত্ব করতেন।৩২
       আকসু ছিল একটি প্রাচীন বৌদ্ধ রাজ্য যা রেশম পথের সেই শাখায় অবস্থিত ছিল যা তারিম অববাহিকায় তাকলামাকান মরুভূমির উত্তরপ্রান্ত বরাবর গিয়েছিল এবং যা বর্তমান দক্ষিণ পশ্চিম জিনজিয়াং এর উইঘুর স্বশাসিত এলাকার মধ্যে পড়ে। আকসু হল তিয়েনশান পর্বতের পাদদেশে একটি মরুদ্যানের কেন্দ্র এবং এটি রেশম পথের উপর অবস্থিত একটি ক্যারাভান কেন্দ্র যা দুটি বাণিজ্য পথের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত-উত্তর তারিম রেশম পথ এবং অপর একটি পথ যা উর্বর ইলি নদী উপত্যকার উত্তরে অবস্থিত। এই শহরটি ১২২০ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ মঙ্গলাই এর রাজধানীতে পরিণত হয়। ৩৩ এই অঞ্চলের শিল্পের মধ্যে রয়েছে ধাতুশিল্প, চর্মশিল্প, বস্ত্রশিল্প ও গালিচা শিল্প। এই অঞ্চলে লৌহ ভান্ডারও রয়েছে। ১৯৯৪ সালে লোকসংখ্যা ছিল ১৯৩,৭০০ এবং ১৯৯৯ সালে ছিল২২০,৪১৫।৩৪
         শুয়াং জাঙ লিপিবদ্ধ করেছেন এই অঞ্চলে অনেকগুলো বৌদ্ধ বিহার ও ১০০০ জন ভিক্ষু ছিলেন। তিনি বলেছেন এই রাজ্যটি উত্তর দক্ষিণে ৩০০ লি ও পূর্ব পশ্চিমে ৬০০ লি ছিল। এর রাজধানীর ব্যাস ছিল ৬ লি। একথা বলা হয়ে থাকে এই অঞ্চলে উৎপাদিত বস্ত্র নিয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোর সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য চলত। আকসুর সঙ্গে কুচের ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল, কিন্তু এটির কথ্যভাষা কুচীয় ভাষার থেকে কিছুটা পৃথক ছিল। আকসুতে প্রাচীন গুহা এবং বৌদ্ধ প্রতিমূর্তি রয়েছে হতদরিদ্র অবস্থায়।
        সমরখন্দ হল ট্রান্সোক্সিয়ানা নামে পরিচিত মধ্য এশিয়ার ঐতিহাসিক অঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। এটি জেরাফসান নদী উপত্যকায় অবস্থিত এবং এটি প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ এবং এটি মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য পথের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। সমরখন্দ ৩২৯ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্বারা বিজিত হয় এবং চৈনিক ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মিলনস্থলে পরিণত হয়। চীন দেশের বাইরে প্রথম কাগজকল এখনে ৭৫১ খ্রীষ্টাব্দে প্রতিষ্টিত হয়। চীনদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ার জন্য সমরখন্দ সমৃদ্ধ হয়। এটি প্রাচীন ও মধ্যযুগে বাণিজ্যিক গুরুত্ব লাভ করে চীন ও ভারতের বাণিজ্য পথের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হওয়ার জন্য।
      শুয়াং জাঙ এর  জীবনীকার লিখেছেন ৬৩১ খ্রীষ্টাব্দে ভিক্ষুর ভ্রমণের সময়ে তাঁর দুজন বৌদ্ধ অনুগামীকে জরথ্রুস্টীয় পুরোহিতরা পশ্চাদধাবন করেন। যদিও শুয়াং জাঙ বৌদ্ধধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু সাফল্য দাবী করেছেন সে সময়ে নগরে মাত্র দুটি বৌদ্ধ মন্দির ছিল বলে মনে হয়। শুয়াং জাঙ ৬৩০ খ্রীষ্টাব্দের প্রথম দিকে এই নগরটি অতিক্রম করে গিয়েছিলেন এবং নিম্নের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেছেন-
      স-মো-কিয়েন দেশটি ১৬০০ বা ১৭০০ লি দীর্ঘ (১ লি = ৪৩০ মাইল ব্যাস)। দেশটির রাজধানীর ব্যাস হল ২০০ লি। এটি বন্ধুর ভূমি দিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে ঘেরা এবং এটি অত্যন্ত জনবহুল। বিভিন্ন দেশের মূল্যবান পণ্য সামগ্রী এখনে সঞ্চিত থাকে। এখানকার মাটি সমৃদ্ধ ও উর্বর এবং প্রচুর ফসল উৎপন্ন হয়ে থাকে। বনের গাছগুলি অত্যন্ত ঘন এবং ফল ও ফুল যথেষ্ট। এখানে শেন ঘোড়ার বংশ বৃদ্ধি ঘটানো হয়। এখানকার বাসিন্দারা অন্য দেশের বাসিন্দাদের তুলনায় শিল্প ও বাণিজ্যে নিপুণ। এখানকার জলবায়ু হল মৃদু ও মনোরম। মানুষেরা সাহসী ও কর্মশক্তি সম্পন্ন।৩৫
        আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে একটি হল বামিয়ান যা কাবুলের উত্তর পশ্চিমে বামিয়ান নদীর উপত্যকায় ২৫৪৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এটি ভারত ও মধ্যএশিয়ার মধ্যে যোগস্থাপনকারী ক্যারাভান পথের উপর অবস্থিত একটি বিরাম স্থল ও বাণিজ্য কেন্দ্র। এটি অবস্থিত দেশটির কেন্দ্রে যার রাজধানীকেও বামিয়ান বলা হয় যার জনসংখ্যা ২০০১ খ্রীষ্টাব্দে ছিল ২৮৯০০ জন। এখানে খ্রীষ্টীয় দ্বিতীয় থেকে নবম শতাব্দী পর্যন্ত অনেক বৌদ্ধ সৌধ নির্মিত হয়েছিল পাহাড়ের চূড়া বরাবর।
         বামিয়ানে একটি প্রচীন বৌদ্ধ বিহার ছিল যেখানে বুদ্ধের অনেকগুলো প্রতিমূর্তি খোদাই করা হয়েছিল। এদের মধ্যে দুটি সর্বপেক্ষা চিত্তাকর্ষক মূর্তি হল দুটি বুদ্ধের দন্ডায়মান প্রতিমূর্তি যার উচ্চতা ছিল যথাক্রমে ৫৫ ও ৩৭ মিটার এবং এগুলি ছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ বুদ্ধমূর্তি। এই স্থানটি ছিল ইউনেস্কোর দ্বারা নির্বাচিত পৃথিবীর হেরিটেজ সাইট এবং এগুলি সম্ভবত নির্মিত হয়েছিল খ্রীষ্টীয় চতুর্থ অথবা পঞ্চম শতাব্দীতে এবং দীর্ঘদিন ধরে সাংস্কৃতিক দিক চিহ্ন ছিল। ২০০১ সালের মার্চ মাসে তালিবান সরকার ঘোষনা করে যে এই প্রতিমূর্তিগুলি পৌত্তলিক এবং এর ফলে বিমান ধ্বংসী গোলা ও বিস্ফোরকের দ্বারা এগুলিকে ধ্বংস করার আদেশ দেয়।
         প্রাচীনকালে মধ্য আফগানিস্তান কৌশলগত ভাবে রেশম পথের ক্যারাভান গুলি দ্বারা সমৃদ্ধ হওয়ার জন্য অবস্থিত ছিল যা রোম সাম্রাজ্য, চীনদেশ ও ভারতবর্ষে চলাচল করত। এখানেই গ্রীক, পারসিক ও বৌদ্ধ শিল্পের বৈশিষ্টও এক অনন্য ধ্রুপদী রীতিতে যুক্ত হয়েছিল যা গ্রীক-বৌদ্ধ শিল্প নামে পরিচিত।৩৬
          কাবুল ও কুনার নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত জালালাবাদ  হল পূর্ব আফগানিস্তানের নানগারহারে অবস্থিত। এটি নব্বই মাইল বিস্তৃত একটি সড়ক দ্বারা পশ্চিমে কাবুলের সঙ্গে ও খাইবার গিরিপথ দিয়ে পশ্চিমে সমদূরবর্তী পাকিস্তানের পেশোয়ারের সঙ্গে যুক্ত এবং খাইবার গিরিপথ দিয়েই পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের বাণিজ্যের অধিকাংশ পরিচালিত হয়ে থাকে।
           ৬৩০ খ্রীষ্টাব্দে শুয়াং জাঙ জালালাবাদ আসেন এবং ভারতবর্ষে পৌঁছে গেছেন বলে মনে করেন। খ্রীঃ পূঃ দ্বিতীয় শতক থেকে জালালাবাদ অধিকারে ছিল কিন্তু আধুনিক নগর জালালাবাদ, যার পূর্ব নাম ছিল জালালকোট, নির্মিত হয়েছিল ১৫৬০ এর দশকের শুরুতে ভারতের মোগল সাম্রাজ্যের তৃতীয় ও সর্বশ্রেষ্ঠ সম্রাট জালালুদ্দিন মহম্মদ আকবর (১৫৪২-১৬০৫) দ্বারা। আমীর হাবিবুল্লাহ এবং রাজা আমানুল্লার গৃহ মিরাজ-উল-ইমারত ধ্বংস হয়েছিল ১৯২৯ সালে অন্যান্য স্থানগুলি অবশ্য অতীতের নিদর্শণগুলি ধরে রেখেছে এবং এগুলি বৈকালিক ভ্রমণের পক্ষে মনোরম স্থান। উভয় শাসকের সমাধিসৌধ সিরাজ-উল-এমার্ট এর দিকে মুখ করা একটা বাগান দিয়ে ঘেরা।৩৭
         সংস্কৃত ভাষায় পুরুষপুর নামে পরিচিত পেশোয়ার হল পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের রাজধানী এবং খাইবার গিরিপথের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। আলেকজান্ডারের ঐতিহাসিকেরা গান্ধার জেলার উল্লেখ করেননি। এই সীমানার মধ্যে প্রাচীন ভারতবর্ষের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থানগুলির মধ্যে কয়েকটি অবস্থিত ছিল, এগুলির মধ্যে কয়েকটির কথা আলেকজান্ডারের বিজয় কীর্তির কাহিনীতে রয়েছে। এবং এদের কয়েকটি বৌদ্ধ ধর্মের কিংবদন্তী স্থল এবং কয়েকটি ইন্দো মকাইথিয়া সম্রাট কনিষ্কের অধীনে বৌদ্ধ ধর্মের পরবর্তী ইতিহাসের অন্তর্গত। পেশোয়ারে একটি জাদুঘর রয়েছে যেখানে বৌদ্ধ নিদর্শণ ও গান্ধার ভাস্কর্যের নিদর্শন রয়েছে এবং রয়েছে খ্রীষ্টীয় দ্বিতীয় শতকের একটি স্তূপ যেখানে কনিষ্কের লিপি রয়েছে।
       ফা হিয়েনের মতে যিনি এটিকে শুধুমাত্র ফো-লু-পা বা পারোপা বলে উল্লেখ করেছেন রাজধানী শহরটি ছিল নগর হর ১৬ যোজন বা ১১২ মাইল দূরে। তবে শুয়াং জাঙ এর মতে দূরত্বটি ৫০০ মাইল বা ৩ লি যা নিশ্চিতভাবেই এটি ভুল পরিমাপ। জালালাবাদ ও পেশোয়ারের দূরত্ব ১০৩ মাইল। একমাত্র পেশোয়ারই ছিল কোফেসের দক্ষিণে।৩৮
     আটক হল একটি নগর যা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত এবং এটি সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত একটি সীমান্ত জেলা। এই জেলাটির নামকরণ হয়েছে আটক কুবধ থেকে যা থেকে একই নামের একটি প্রাচীন শহর। এটি অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক করিডরের শেষ প্রান্তে যা তৈরী হয়েছে কাবুল নদীর দ্বারা, এটি সিন্ধু নদে পড়েছে। ঐতিহাসিক ও কৌশলগত ভাবে আটককে মধ্যে এশিয়ার প্রবেশ পথ বলে মনে করা হয়। এই কৌশলগত অবস্থান নিয়ে এই নগরটি রয়েছে সিন্ধু নদের বাম তীরে। এটি রাওয়ালপিন্ডি থেকে মাত্র ৮০ কিমি, পেশোয়ার থেকে মাত্র ১০০ কিমি এবং কামরা থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরে অবস্থিত। যখন শুয়াং জাঙ প্রথমবার ৬৩০ খ্রীষ্টাব্দে এবং পরে ৬৪৩ খ্রীষ্টাব্দে এই জেলাটি পরিভ্রমণ করেছিলেন তখন বৌদ্ধধর্ম দ্রুত অবলুপ্তির পথে। ব্রাক্ষ্মণ্যধর্মের  পুনরুজ্জীবন যেখান থেকে ভারতে হিন্দুধর্ম তার বর্তমান অবস্থা লাভ করেছে তা শুরু হয়েছিল খ্রীষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর প্রথম থেকে এবং নিশ্চিতভাবেই শুয়াং জাঙ এর সময়ে চরম শিখরে আরোহণ করেছিল।৩৯
      কাশ্মীর যেটি পূর্বতন দেশীয় রাজ্য, এটির আয়তন হল ২২২২৩৬ বর্গ কি.মি.। এটির পশ্চিমে পাকিস্তান, উত্তরে ও পূর্বে চীনদেশ ও দক্ষিণে ভারত।
      এটি শুয়াং জাঙ দ্বারা একই নামে উল্লেখিত হয়েছে যিনি এই উপত্যকায় প্রবেশ করেছিলেন পশ্চিম দিক থেকে একটি পাথরের ফটকের মধ্যে দিয়ে এবং হুসকর মধ্যে বিশ্রাম গ্রহণ করেছিলেন। শুয়াং জাঙ এর মতে খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতকে কাশ্মীর রাজ্যটি শুধুমাত্র কাশ্মীর উপত্যকা নিয়ে নয় সিন্ধু থেকে চেনাব পর্যন্ত সমস্ত পাহাড়ি অঞ্চলটি নিয়ে গঠিত ছিল। চৈনিক পরিব্রাজক যে বিভিন্ন রাজ্যগুলি ভ্রমণ করেছিলেন সেগুলি হল কাশ্মীরের পশ্চিমে উরামা, দক্ষিণ পশ্চিমে তক্ষশীলা ও সিংহপুরা এবং দক্ষিণে পুনাখ ও রাজৌরি। শুয়াং জাঙ বর্ণনা করেছেন যে কাশ্মীর সুউচ্চ পর্বত দ্বারা পরিবেষ্টিত যা এই উপত্যকার একটি সঠিক বর্ণনা; কিন্তু যখন তিনি বলেন যে এটির ব্যাস হল ৭০০০ লি বা ১১৬৬ মাইল তিনি তখন নিঃসন্দেহে কাশ্মীরের বিস্তৃত রাজ্যের কথা বলেছিলেন উপত্যকার কথা নয় যার ব্যাস মাত্র ৩০০ মাইল।
     নগরটি ৬৩১ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত অস্তিত্বশীল ছিল এবং যখন শুয়াং জাঙ এখানে এসেছিলেন তখন এটি আর এই উপত্যকার রাজধানী ছিল না। তিনি তাঁর সময়কার রাজধানীকে ‘নতুন নগরী’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং আরও বলেছেন যে ‘পূর্বতন নগরটি এটির দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত ছিল এবং দূরত্ব ছিল ১০ লি বা প্রায় ২ মাইল এবং এটি ছিল একটি উচুঁ পর্বতের দক্ষিণে।৪০
      মথুরা উত্তর মধ্য ভারতে অবস্থিত একটি নগর এবং উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের অন্তর্গত। এটি যমুনা নদীর তীরে আগ্রা থেকে ৫০ কিমি উত্তরে ও দিল্লীর দক্ষিণে অবস্থিত। এটি মথুরা জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রাচীনকালে এটি একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্র ছিল এবং এর অবস্থান ছিল কয়েকটি অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ ক্যারাভান পথের সংযোগ স্থলে। শুয়াং জাঙ এখানে ভ্রমণ করেন। কাউকলি দেবীর মন্দির যা দুর্গার অপর রূপ একটি ক্ষুদ্র মন্দির যা নিশ্চিতভাবেই একটি বৌদ্ধ বিহারে ধ্বংসস্তূপের উপর নির্মিত। ভূতেশ্বরের মন্দিরকে বুদ্ধের শিষ্য সারিপুত্রের স্তূপের সঙ্গে অভিন্ন  বলে আবিষ্কার করা হয়েছে, এটি শুয়াং জাঙ দ্বারা উল্লেখিত সাতটি স্তূপের একটি।
        খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে বিখ্যাত নগরী মথুরা একটি বড় রাজ্যের রাজধানী ছিল, যার ব্যাস ছিল ৫০০০ লি বা ৮৩৩ মাইল। যদি এই অনুমান সঠিক হয় এই প্রদেশের অন্তর্গত ছিল কেবলমাত্র বৈরাট ও অতরজ্ঞি জেলার মধ্যে অবস্থিত সমগ্র অঞ্চলই নয়, আগ্রার পার হয়ে আরও বিশাল এলাকা দক্ষিণে নারওয়ার ও শেত্তপুরী পর্যন্ত এবং পূর্বে সিন্ধু নদী পর্যন্ত। এই সীমার মধ্যে এই প্রদেশের পরিধি ছিল ৬৫০ মাইল এবং সড়ক পথে ৭৫০ মাইল। এটির অন্তর্গত হল বর্তমান মথুরা জেলা, ভরতপুর, খিরাওলি এবং ঢোলপুর এই ছোট রাজ্যগুলি এবং গোয়ালিয়র অঞ্চলের উত্তররাংশ। এটির পূর্ব দিকে ছিল জিঝওতি রাজ্য, দক্ষিণে মালওয়া, দুটিকেই শুয়াং জাঙ পৃথক রাজত্ব হিসেবে বর্ণনা করেছেন। খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতকে নগরটির পরিধি ছিল ২০ লি যেটি তার বর্তমান আয়তনের সঙ্গে মেলে। কিন্তু তার অবস্থানটি ঠিক সেই রকম নেই যেহেতু পূর্বদিকে যমুনা নদীর বিস্তার ঘটেছে।৪১
         উত্তর মধ্য ভারতের কনৌজ শহর গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। কনৌজ খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতকে হর্ষের রাজধানী ও তাঁর সাম্রাজ্যের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। হর্ষের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তাঁর সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।
        এটি একটি অতি প্রাচীন শহর ও ব্রাক্ষ্মণ্য সংস্কৃতির কেন্দ্র। এটির নাম ছিল কান্যকুব্জ। টলেমি এটিকে কানোগিজা নামে অভিহিত করেছেন। এটি গুপ্ত সাম্রাজ্যের আমলে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পরবর্তীকালে কনৌজ একটি উজ্জ্বল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে। খ্রীষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে হর্ষবর্ধনের রাজধানী, খ্রীষ্টীয় নবম শতাব্দীতে এটি প্রতিহার সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। এ সময় এটি তার কবিদের জন্য পরিচিত ছিল। ১০১৮ সালে মাহমুদ গজনীদ্বারা বিজিত হওয়ার পর কনৌজের পতন ঘটে। প্রাচীনকালে কনৌজ এক সুবিশাল হিন্দু সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। কথিত আছে কনৌজ নামটি এসেছে কন্যাকুব্জ (বেঁকা কন্যা) থেকে এবং এর থেকে ভাষাটির নাম হয়েছে কনৌজ।  কনৌজের বর্তমান ধ্বংসাবশেষ পাঁচটি গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে, এটি অধিকার করে রয়েছে একটি অর্ধবৃত্তাকার স্থান যার ব্যাস ৪ মাইল। কোন হিন্দু বাড়ি নেই, কিন্তু বিশাল মস্‌জিদটি যা হিন্দু মন্দিরের উপর ১৪০৬ সালে জৌনপুরের ইব্রাহিম শাহ দ্বারা নির্মিত হয়েছিল তা আজও হিন্দুদের কাছে সীতার রান্নাঘর নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল এই শহর থেকে খ্রীষ্টীয় ৮০০ বা ৯০০ অব্দে।৪২
উত্তর ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা শহরটি ঘর্ঘরা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি ফৈজাবাদের সঙ্গে একটি যুগ্ম পৌরসভা। অযোধ্যা ছিল কোশল রাজত্বের রাজধানী খ্রীঃ পূঃ ৭ম শতকে। সনাতন ইতিহাসে কোশল রাজত্বের প্রথম রাজধানী ছিল অযোধ্যা এবং বৌদ্ধ যুগে (খ্রীঃ পূঃ ৬ষ্ঠ শতাব্দী – খ্রীঃ ৫ম শতাব্দী) শ্রাবস্তী এই রাজত্বের প্রধান নগর হয়ে ওঠে। পণ্ডিতরা সাধারণভাবে একমত যে অযোধ্যা সেই নগরী সঙ্গে অভিন্ন, যেখানে বুদ্ধ কিছু সময় অতিবাহিত করেছিলেন বলে কথিত আছে। পালি রচনায় সাকেতের নাম একটি নগরী হিসেবে উল্লেখিত রয়েছে এবং বলা হয়েছে এটি কোশলের পূর্বতন রাজধানী,৪৩ যেখানে রাজার ফটকযুক্ত প্রাসাদ ছিল।৪৪ আমাদের একথাও বলা হয় সেই সমস্ত স্থানের অন্যতম যেখানে মুরা এবং ... আবিষ্কারের পর মদ্য প্রচলিত হয়েছিল।৪৫
       বৌদ্ধ যুগে অযোধ্যা উত্তর কোশল ও দক্ষিণ কোশল এই দুই নামে বিভক্ত ছিল। সরয়ু নদী এই দুই প্রদেশকে বিভক্ত করেছিল। প্রথমটির রাজধানী ছিল রাপ্তি নদীর তীরে অবস্থিত শ্রাবস্তী, এবং দ্বিতীয়টির রাজধানী ছিল সরয়ূ নদীর তীরে অবস্থিত অযোধ্যা। বুদ্ধের যুগে প্রসেনজিতের পিতা মহাকোশলের রাজ্য হিমালয় থেকে গঙ্গা পর্যন্ত এবং রামগঙ্গা থেকে গন্ডক পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। হিন্দু কিংবদন্তী অনুসারে রাম ও তাঁর পিতা দশরথের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্কযুক্ত অযোধ্যা একটি তীর্থস্থান এবং হিন্দুদের কাছে পবিত্র সাতটি স্থানের এটি ছিল অন্যতম।৪৬
     মনে হয় এই নগরটি একটি শহরের নাম হিসেবে আবির্ভূত হয় সাহিত্যের একটি শাখায় যা মূলত কাল্পনিক।৪৭ অন্যদিকে সাকেত ছিল উত্তর ভারতের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন শহরগুলির অন্যতম যা অবস্থিত ছিল বর্তমান অযোধ্যা ফৈজাবাদের স্থানে। ক্রমশঃ এই কাল্পনিক শহরটি সাকেতের সঙ্গে অভিন্ন হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীকালে একটি তীর্থস্থানে পরিণত হয়।৪৮ থেরগাথার ভাষ্যে বলা হয়েছে যে সাকেত সরোভা (সরযু) নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। এটি থেকে অনুমান করা যায় যে এই দুটি নাম সম্ভবত একই স্থানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হত। কিন্তু এই বিষয়টিকে অনুমান হিসেবে ধরা যেতে পারে।
       শুয়াং জাঙ এর রচনা অনুসারে কৌশাম্বি (পালি রচনার কোশাম্বী), ছিল ৬০০০ লি বা ১০০০ মাইল পরিধিযুক্ত, যা প্রায় অসম্ভব যেহেতু এটি অন্যান্য জেলার দ্বারা সমস্ত দিকে ঘেরা ছিল। অতএব আমরা হাজারের পরিবর্তে শতক ধরব এবং এর পরিধিকে ধরব ৬০০ লি বা ১০০ মাইল। বকুলার এই কিংবদন্তী এটি প্রমাণ কররা পক্ষে যথেষ্ট যে বিখ্যাত নগর কোশাম্বী যমুনার তীরে অবস্থিত। এখন কেবলমাত্র এটা প্রমাণ করা বাকী আছে যে কোশাম থেকে এলাহাবাদের দূরত্ব শুয়াং জাঙ এর লিপিবদ্ধ করা দূরত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
দুর্ভাগ্যবশতঃ এই দূরত্বটি চৈনিক পরিব্রাজকের জীবন ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে পৃথক ভাবে নথিভুক্ত হয়েছে। প্রথমটিতে এই দূরত্বটি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ৫০ লি এবং দ্বিতীয়টিতে এই দূরত্ব উল্লেখ করা হয়েছে ৫০০ লি। শুয়াং জাঙ লিখেছেন চীনদেশে ফেরত যাবার পথে প্রয়াগ ও কোশাম্বির মধ্যবর্তী স্থানে তিনি এক বিশাল জঙ্গল ও শূন্য সমভূমির মধ্য দিয়ে সাতদিন চলেছিলেন।৫০ এখানেই বুদ্ধ মাদক দ্রব্য গ্রহণ নিষিদ্ধ করে ভিক্ষুদের প্রতি আদেশ জারী করেছিলেন।৫১
   এর অদূরে একটি কুয়ো ও স্নানাগারের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে যেটি বুদ্ধ ব্যবহার করতেন। শহরের ভেতরে দক্ষিণ পূর্ব কোনে ছিল জ্যেষ্ঠ গোসিলার বাসস্থানের ধ্বংসাবশেষ, যেখানে ছিল একটি বুদ্ধ বিহার ও  একটি স্তূপ যার মধ্যে বুদ্ধের কেশ ও নখ ধাতু ছিল। অপর একটি পুরনো ভিত ছিল বুদ্ধের স্নানাগার। অপর একটি পুরনো কাঠামো ছিল গোসিলাবনে নির্মিত একটি পুরনো বিহার যেখানে সম্রাট অশোক নির্মিত ২০০ ফুটেরও অধিক উঁচু একটি স্তূপ ছিল।৫২ এর পাশে ছিল সেই স্থান গুলো যেখানে চারজন অতীত বুদ্ধ উপবেশন ও চক্রমন করতেন। সেখানে বুদ্ধের কেশ ও নখ যুক্ত স্তূপও ছিল। বিহারটির দক্ষিণ পূর্বে ছিল একটী পুরাতন ইঁট নির্মিত গৃহ যেখানে বসুবন্ধু বাস করতেন। এই বিহারের পূর্ব দিকে একটি  আম্রবাগানে একটি গৃহের কাঠামো ছিল যেখনে অসঙ্গ প্রকরণ ইয়াবচা শাস্ত্র গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। এটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় বিষয় যে শুয়াং জাঙ মন্তব্য করেছেন কোশাম্বী হবে সেই স্থান যেখানে বুদ্ধের ধর্মের পরিসমাপ্তি ঘটবে।৫৩
      নেপালী শহর কপিলাবস্তুর অন্তর্গত, রুম্মিনদেই জেলায় হিমালয়ের পাদদেশে ইন্দো-নেপাল সীমানার নিকট অবস্থিত লুম্বিনী (সংস্কৃত ‘সুন্দর’) একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ তীর্থস্থান। এটিকে বুদ্ধের জন্মস্থান বলে মনে করা হয় যিনি মোটামুটি ৫৬৩ খ্রীঃ পূঃ থেকে ৪৮৩ খ্রীঃ পূঃ এর মধ্যে জীবিত ছিলেন। ১৮৯৬ খ্রীষ্টাব্দে নেপালী প্রত্নতাত্ত্বিকরা এক প্রস্তর নির্মিত এক বিশাল স্তম্ভ আবিষ্কার করেন যেটির নির্মাণের কৃতিত্ব সম্রাট অশোককে দেওয়া হয় যিনি এটি বুদ্ধের সম্মানে নির্মাণ করেন। এর থেকে প্রমাণিত হয় বুদ্ধের জন্মস্থান সম্পর্কিত এই কিংবদন্তীটি অন্তত খ্রীষ্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চৈনিক পর্যটক ফা-হিয়েনের বিবরনীকেও এই স্থানটির সনাক্তকরণে ব্যবহার করা হয়েছে। ১৯৭০ সালে লুম্বিনীতে নেপাল সরকার কর্তৃক একটি উদ্যান এবং একটি বিহার নির্মিত হয় এবং ইউনেস্কোর বিশ্বের ঐতিহ্যশালী স্থান  এর তালিকায় এটিকে বিশেষ ভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বৌদ্ধদের কাছে এটি গৌতম বুদ্ধের জীবনীর উপর ভিত্তি করে চারটি তীর্থস্থানের মধ্যে এটি অন্যতম, অপর তিনটি হল কুশীনগর, বুদ্ধগয়া এবং সারনাথ।৫৪  
      কুশীনগর হল উত্তর ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের কাশিয়া নামক এক গ্রামীণ শহরের নিকটবর্তী একটি তীর্থস্থান যা গোরক্ষপুর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি হল সেই স্থান যেখানে ম্যাক্স মুলারের মতে বুদ্ধ পরিনির্বাণ লাভ করেছিল ৪৭৭ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে, কিন্তু সিংহলীয় ইতিবৃত্ত ও অধ্যাপক লাসেনের মতে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন ৫৪৩ খ্রীষ্টপূর্বাব্দে আশী বছর বয়সে এবং রাজা অজাতশত্রুর রাজত্বের অষ্টম বর্ষে। অধ্যাপক উইলসন এটিকে কাশিয়ার সঙ্গে অভিন্ন রূপে সনাক্ত করেছেন যেটি গোরক্ষপুর ৩৭ মাইল পূর্বে ও বেত্তিয়ার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। বুদ্ধ পরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন কুশীনারার উপবর্ত্তনে মল্লদের শালবনে, যুগ্ম শাল বৃক্ষের মধ্যে, রাত্রির তৃতীয় যামে, উত্তরদিকে মাথা রেখে, ডানদিকে কাত হয়ে। তাঁর মৃত্যুর স্থানে অশোক তিনটি স্তুপ নির্মাণ করেন।
      শুয়াং জাঙ এর আগমনের সময়ে কুশিনারার প্রাচীরগুলি ভগ্নদশা প্রাপ্ত হয়েছিল; এবং স্থানটি প্রায় পরিত্যক্ত হয়েছিল কিন্তু প্রাচীন রাজধানীর ইঁট নির্মিত ভিতরে পরিধি ছিল ১২ লি বা ২ মাইল। অনরুদ্দওয়া ও কাশিয়ার মধ্যবর্তী ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিল অধিকতর বৃহত্তর কোন একটি স্থানে কিন্তু এদের মধ্যে কয়েকটি নিঃসন্দেহে শহরের বাইরে ছিল এখন এটির সীমানা নির্দ্ধারণ করা পুরোপুরি অসম্ভব। সম্ভবতঃ এটি অনরুদ্ধওইয়া গ্রামের উত্তরপূর্ব দিকের ধ্বংসাবশেষের ঢিবিতে অবস্থিত ছিল। সেই স্থান যেখানে বুদ্ধ নির্বাণ লাভ করেছিলেন সেই স্তূপ ও ধ্বংসাবশেষের স্থানটির সঙ্গে অভিন্ন হবে যার বর্তমান নাম মাথা-কুয়ার-কা-কোট বা মৃত রাজপুত্রের দূর্গ, এবং সেই স্থানটি যেখানে তাঁর দেহ ছিল সেটি সেই বিশাল স্তূপের সঙ্গে অভিন্ন হবে যার বর্তমান নাম দেবীস্থান।৫৫
     ভারতের দক্ষিণপূর্ব উত্তরপ্রদেশের একটি প্রত্নস্থল সারনাথ যা বারাণসীর ৬.৪ কিমি উত্তরে অবস্থিত হল সেই মৃগ উদ্যান (যেটি পূর্বেকার মৃগদাব, ঋষিপতনরা ঈষিপতন)৫৬ যেখানে ঐতিহ্য অনুসারে বুদ্ধত্ব লাভের পর বুদ্ধ প্রথম তাঁর ধর্ম প্রচার করেছিলেন বা (ধর্মচক্র প্রবর্তন করেছিলেন) কৌন্ডিন্য এবং অপর চারজন ব্রাক্ষণের কাছে, এবং এটি ছিল সেই স্থান যেখানে প্রথম বৌদ্ধ সংঘের সৃষ্টি হয়েছিল। এখানকার বৌদ্ধ সৌধগুলির মধ্যে রয়েছে সম্রাট অশোক নির্মিত সিংহ খোদিত স্মৃতিস্তম্ভ (খ্রীঃ পূঃ ৩য় শতক) এবং একটি স্তূপ (খ্রীষ্টীয় ৭ম শতক) যা ১৪০ ফুট উঁচু। এই স্তম্ভটি এখন ভারতের জাতীয় প্রতীক।
      সংস্কৃত শব্দ ‘মৃগদাব’ এর অর্থ হল হরিণের উদ্যান। এখানে আরো উল্লেখ্য যে মৃগদাব ছিল একটি সংরক্ষিত মৃগ উদ্যান। পালি ধর্মগ্রন্থে ঈষিপতন হল সেই স্থানের নাম যেখানে কয়েকজন পবিত্র ঋষির পৃথিবীতে পতন ঘটেছিল। কিংবদন্তী অনুসারে ভবিষ্যতের বুদ্ধ জন্মগ্রহণের পূর্বে কয়েকজন দেব ৫০০ জন পবিত্র মানুষের কাছে একটি ঘোষনা করতে অবতরণ করেছিলেন। এর ফলে সেই সমস্ত পবিত্র মানুষ আকাশে উঠে অন্তর্ধান করেন এবং তাদের নিদর্শণ মাটিতে পতিত হয়। সারনাথ যার উৎপত্তি সারঙ্গনাথ থেকে যার অর্থ হল ‘হরিণদের প্রভু’ এবং এটি অপর একটি প্রাচীন বৌদ্ধ কাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত যেখানে বোধিসত্ত্ব একজন হরিণ যিনি একজন রাজার কাছে নিজের জীবনের উৎসর্গ করতে চাইলেন একটি হরিণ শিশুর পরিবর্তে যাকে রাজা হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এতে রাজা এতই অভিভূত হয়ে পড়েছিলেন যে তিনি মৃগদের অভয়ারণ্য হিসেবে এই উদ্যানটি নির্মাণ করেন। উদ্যানটি আজও যেখানে রয়েছে। শুয়াং জাঙ এর মতে যে স্থানটিতে বুদ্ধ প্রথম তাঁর চারটি আর্যসত্য প্রচার করেছিলেন সেই স্থানটি অশোকের স্তম্ভ দ্বারা চিহ্নিত হয়ে রয়েছে এবং জেনারেল ক্যানিংহামের মতে ধর্মচক্র স্তূপটি নির্মাণ করেছিলেন অশোক। এই স্তূপের উত্তরে রয়েছে সেই ধ্বংসাবশেষ যেখানে ভবিষ্যতের বুদ্ধ মৈত্রেয়র সম্পর্কে ভবিষ্যবাণী করেছিলেন।৫৭
প্রাচীনকালে বৈশালী ছিল লিচ্ছবি প্রজাতন্ত্রের রাজধানী এবং বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম উভয়ের প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। জৈনধর্মের প্রবর্তক মহাবীর বৈশালীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানে অনেক সময় অতিবাহিত করেছিলেন। বৌদ্ধদের দ্বিতীয় মহাসন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এর উদ্দেশ্য ছিল আচার-আচরণের নিয়ম সরবরাহ করা।৫৮ এই স্থানটির সর্বপ্রাচীন উপনিবেশ কালো ও লালরং এর মৃৎপাত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল যা সম্ভবত প্রাক্‌ বৌদ্ধ যুগের। বৈশালী একটি গ্রামের স্থানে অবস্থিত যা বর্তমানে বাসরা নামে পরিচিত।৫৯
         অম্বপালী এই নগরের সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ অবদান রেখেছিলেন।৬০ অম্বপালীবন যেখানে বুদ্ধ প্রায়ই অবস্থান করতেন, তা এখান থেকে নিকটেই।৬১ কখনো বুদ্ধ অবস্থান করতেন মহাবনে যা বৈশালীর নিকটে।৬২ বুদ্ধের মৃত্যুর পর তাঁর নিদর্শণের একাংশ এই নগরে রক্ষিত হয়।৬৩   জাতক থেকে জানা যায় সেখানে ৭৭০৭ জন রাজা এবং সমসংখ্যক রাজপ্রতিনিধি, সেনাপতি ও সম্পদ ছিল, যা সম্ভবত বৈশালীর পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের বা আরও সম্ভবত এই সহজ বিষয়টি যে সেইসময় বৈশালী ছিল একটি জনবহুল স্থান।৬৪
         পূর্ব মধ্যভারতের বিহার রাজ্যের অন্তর্গত বুদ্ধগয়া গ্রামে কিংবদন্তী অনুসারে বুদ্ধ বোধিজ্ঞান লাভ করেন। এই স্থানে বৌদ্ধ সংস্কৃতির অনেক নিদর্শন রয়েছে (খ্রীষ্টীয় অষ্টম শতক-দ্বাদশ শতক)। বিশ্ববিদ্যালয় এই স্থানেই অবস্থিত এবং সারা পৃথিবীর তীর্থযাত্রীরা এই স্থানে আগমন করেন। এখানে রয়েছে হীরক সিংহাসন শোভিত মহাবোধি মন্দির (যার নাম বজ্রাসন) এবং পবিত্র বোধিবৃক্ষ। ২০০২ সাল থেকে এটি UNICEF এর World Heritage Site
         নালন্দার ইতিহাস বুদ্ধের ও জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীরের সমসাময়িক। পরবর্তীকালের একটি তিব্বতীয় সূত্র থেকে জানা যায় খ্রীষ্টীয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকের বৌদ্ধ দার্শনিক নাগার্জুন বুদ্ধগয়াতেই অধ্যয়ন করতেন। মহাবীর নালন্দায় অবস্থিত পাওয়াপুরীতে মোক্ষলাভ করেছিলেন। তবে এই অঞ্চলটি বৌদ্ধ ইতিহাসে তার গুরুত্বের জন্য অধিকতর সুপরিচিত। বিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় সেই স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খ্রীষ্ট পূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এবং বুদ্ধ এই স্থানটি পরিদর্শণ করেছিলেন এবং পাবারিকা আম্রকাননে উপদেশ দান করেছিলেন বলে মনে করা হয়। পরে নালন্দা বিশ্বাবিদ্যালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, এবং এটি খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান কালীন ১০০০০ ছাত্রের বাসস্থান ছিল। এখানকার শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন নাগার্জুন। সপ্তম শতব্দীতে শুয়াং জাঙ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তারিত বিবরণ রেখে গেছেন।৬৫
           নালন্দা যেটিকে প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয় বলে উল্লেখ করা হত খ্রীষ্টীয় চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ভারতবর্ষের বৌদ্ধ শিক্ষার সর্বপেক্ষা বিখ্যাত কেন্দ্র ছিল। ১১৯৩ খ্রীষ্টাব্দে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর বখতিয়ার খলজীর অধীনস্থ তুর্কী আক্রমণকারীদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়; এই ঘটনাটি দেখা হয় ভারতবর্ষে বৌদ্ধ ধর্ম ধ্বংসের অন্তিম মাইলফলক হিসেবে। ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের দ্বারা ব্যপক খননকার্যের ফলে জানা গেছে এই বিহারের ভিত ছিল গুপ্ত যুগের( খ্রীষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী)। খ্রীঃ সপ্তম শতাব্দীতে কনৌজের শক্তিশালী রাজা হর্ষবর্ধন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করতেন বলে জানা যায়। তাঁর রাজত্বকালে শুয়াং জাঙ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সময় অবস্থান করেছিলেন এবং এখানকার পঠিত বিষয় সমূহ এবং ভিক্ষুদের জীবনের বিবরণ রেখে গেছেন। পাল রাজবংশের আমলে নালন্দা একটি শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধির শিখরে আরোহন করে (খ্রীঃ অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী) এবং এটি পাথর ও ব্রোঞ্জের ধর্মীয় ভাস্কর্যের একটি কেন্দ্র হয়ে ওঠে। নালন্দা সম্ভবতঃ বিহারে মুসলমান আক্রমণের সময়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং আর তার পুনর্গঠন সম্ভব হয়নি।৬৬
         প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাসে এলাহাবাদের গুরুত্ব প্রমাণিত হয় অশোকের এলাহাবাদ স্তম্ভলিপি। এখনও এই স্তম্ভটি পুরানো এলাহাবাদ দুর্গের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানটির ধর্মীয় গুরুত্ব আজও আছে, সর্বাপেক্ষা প্রাচীন সৌধ হল সেই স্তম্ভটি (খ্রীঃ ২৪২ অব্দ) যেখানে অশোকের আমলের লিপি রয়েছে।৬৭
          খোটান বা হোটান রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক রাজধানী। খোটান থেকে শাসিত হয় অনেকগুলি জেলা যা তাকলা মাকান মরুভূমির দক্ষিণ সীমানায় মরূদ্যান বরাবর বিস্তৃত। যখন ভেনিসীয় পর্যটক মার্কো পোলো ১২৭৪ খ্রীষ্টাব্দে এই স্থানে ভ্রমণ করতেন তখন তিনি একটি বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে এটির গুরুত্ব, এর কৃষিজ সম্পদ বিশেষ করে সূক্ষ্ম তুলো লক্ষ্য করেন। রেশম পথের দক্ষিণ অংশে হোটান ছিল ভারতবর্ষ থেকে তারিম অববাহিকায় বৌদ্ধধর্ম প্রচারের একটি প্রাচীন প্রাণকেন্দ্র। এর জনসংখ্যা ছিল ৮০০০০ উতিয়ান ছিল চীনদেশের প্রথম স্থান যেখানে বৌদ্ধধর্ম গৃহীত হয়েছিল। শুয়াং জাঙ এর ভ্রমণবৃত্তান্তে উতিয়ানে ১০০ টিরও বেশী বৌদ্ধ বিহার আছে যেখানে প্রায় ৫০০০ ভিক্ষু বসবাস করতেন। উতিয়ানের বিহারে সঙ্গে উত্তর তারিম অববাহিকার গুহা বিহারগুলির পার্থক্য আছে। এগুলি কঠিন ভিতের উপর তৈরী এবং গুহাচিত্র ও ভাস্কর্য দ্বারা শোভিত উতিয়ানে বৌদ্ধ শিল্পে ভারতবর্ষ  ও পারস্যের শিল্পের সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত হয়। এখনকার জনসংখ্যা ছিল ১৯৭০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ে ১০০০০ থেকে ৫০০০০ এবং ১৯৯৪ তে ৭৫০০০।৬৮
     প্রাচীন শহর লাউ-লান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব ২য় শতাব্দীতে একটি মরুদ্যানে যার জলের ব্যবস্থা ছিল সমৃদ্ধ। এটি হঠাৎই ইতিহাস হয়ে যায় প্রায় ৮০০ বছর সমৃদ্ধির পর। এই নগরটি যেটি একদা লাউ-লান রাজ্যের রাজধানী ছিল সেটী পশ্চিমাঞলের ৩৬ টি রাজ্যের অন্যতম এবং এটি রেশম পথের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছিল। যাই হোক, এটি খ্রীষ্টীয় ৬ষ্ঠ শতকে পুরোপুরি অন্তর্হিত হয়ে গেল। লাউ-লান ছিল একটি নগর যেটি অবস্থিত ছিল কেন্দ্রীয় রেশম পথ বরাবর যেখানে হান রাজবংশ (২০৬ খ্রীপূঃ-২২০খ্রীপূঃ) এর কেন্দ্রীয় সরকার তার শাসনতান্ত্রিক অঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিল। খ্রীষ্টীয় ৪র্থ শতাব্দীর মধ্যে এটি জিনজিয়াং এর সর্বপেক্ষা সমৃদ্ধশালী নগরে পরিণত হয় এবং তখন তার জনসংখ্যা ছিল ১৪০০০, এখানে সমস্ত জাতির বণিকরা সমবেত হত। খ্রীষ্টীয় ৪র্থ শতকে সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করার পর লাউ-লান দ্রুত ধ্বংসের পথে অগ্রসর হয়। শুয়াং জাঙ তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্তে লিখেছেন “ নগর এবং বাড়িগুলি আজও দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু সেখানে কোন মানুষ নেই। পুরাতাত্ত্বিকদের মতে নদীর গতি পথের পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের অবনমনের ফলে নগরটি পরিত্যক্ত হয়েছিল।৬৯
       তুন-হুয়াং হল মধ্য এশিয়ায় রেশম পথ বরাবর চিরাচরিত চৈনিক উপনিবেশের সর্ব পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এটি ছিল প্রথম বাণিজ্য কেন্দ্র যেখানে পশ্চিম থেকে চীন শাসিত অঞ্চলে প্রবেশ করেই বিদেশী বণিকেরা পৌঁছতেন। প্রাচীনকালে এখানেই রেশম পথের দুটি শাখা এসে মিলিত হত যা তারিম অববাহিকার উত্তর ও দক্ষিণে বিস্তৃত হয়েছিল। ৩৬৬ খ্রীষ্টাব্দ থেকে খ্রীষ্টীয় ত্রয়োদশ শতকের শুরুতে শিয়া(Hsia) রাজবংশের পতন পর্যন্ত তুন-হুয়াং ছিল বৌদ্ধধর্মের এক মহান কেন্দ্র। এটি ছিল মধ্য এশিয়ার রাজ্যগুলি থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রবেশের অন্যতম প্রধান জায়গা এবং এই বৌদ্ধরা তুন-হুয়াং এর প্রথম গুহাটিকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা সহস্র বুদ্ধের গুহা হিসেবে পরিচিত। এই সময় থেকে এই শহরটি একটি প্রধান বৌদ্ধ কেন্দ্র এবং তীর্থস্থান হয়ে ওঠে। সেখানে অনেকগুলি বিহারবাসী সম্প্রদায় ছিল (তাদের অনেকগুলি ছিল অচৈনিক) যা স্থানীয় সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল এবং যাকে পূর্বাপর শাসকেরা উদারভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। এর মধ্যে একটি গুহা মন্দিরে ৬০০০০ সংখ্যক পঞ্চম থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত কাগজের পান্ডুলিপির সমৃদ্ধ সংগ্রহ, মুদ্রিত নথিপত্র আবিষ্কৃত হয় ১৯৯০ সালে। এই সংগ্রহে বৌদ্ধ রচনা ছাড়াও তাও, জরথ্রুষ্টীয় ধর্মগ্রন্থ এবং অনেকগুলি ধর্ম নিরপেক্ষ রচনা পাওয়া গেছে। যদিও বেশীরভাগ পান্ডুলিপি ও নথিপত্র বিদেশীদের কাছে বিক্রি হয়েগিয়েছিল গুহাগুলিতে এখন অনেক চিত্র রয়েছে। প্রায় ৫০০ টি গুহার অনেকগুলি যেগুলিকে একত্রে মা-কাও গুহা বলা হয় সেগুলিকে জনগণের কাছে উন্মুক্ত করা হয় ১৯৪৯ সালে, এবং এই গুহাগুলি বিশ্বের ঐতিহ্যশালী স্থান হিসেবে চিহ্নিত হয় ১৯৮৭ সালে।৭০
       শুয়াং জাঙ এর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রেশম পথ বরাবর বৌদ্ধধর্মের পতনের কারণ ছিল পূর্ব দিকে তাং রাজবংশের পতন এবং পশ্চিম দিকে আরবদের আক্রমণ। মধ্যএশিয়ায় ইসলামীকরণ শুরু হয়েছিল খ্রীঃ ৮ম শতাব্দীতে। যেহেতু ইসলাম ধর্মে মূর্তি পুজো নিষিদ্ধ অধিকাংশ বৌদ্ধ চিত্র ও প্রতিমূর্তি গুলিকে হয় বিকৃত নতুবা ধ্বংস করা হয়েছিল।৭২ খ্রীষ্টীয় পঞ্চদশ শতকের মধ্যে সমগ্র মধ্যএশিয়ায় ইসলামীকরণ সম্পূর্ণ হয়।৭৩ একজন প্রভাবশালী এবং প্রাচীন বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে শুয়াং জাঙ এর মধ্যেও চৈনিক বৌদ্ধধর্মের সেই উদ্বেগ নিহিত আছে; চিরাচরিত কনফুসীয়বাদ বনাম মহাযানীয় প্রগতিশীলতা, সনতানের আনুগত্য বনাম মধ্যবাসী সুলভ শৃঙখলা। এই উদ্বেগ দেখ গেছে কেবলমাত্র তাঁর ব্যক্তিগত উত্তরাধিকারে নয় যার অন্তর্গত তাঁর যাত্রার উপর ভিত্তি করে রচিত অত্যন্ত জনপ্রিয় চৈনিক উপন্যাস।
      কিছু সময় ধরে তাং রাজবংশের মধ্যভাগে ‘ফেক্সজিং’ সম্প্রদায় সমগ্র চীনদেশে যথেষ্ট গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল, কিন্তু প্রতিষ্ঠাতা শুয়াং জাঙ এবং তাঁর উত্তরাধিকারী কুইজির মৃত্যু পর এই সম্প্রদায় দ্রুত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এই ধ্বংসের অন্যতম কারণ ছিল ৮৪৫ সালের সাম্রাজ্যের বৌদ্ধ বিরোধী কার্যকলাপ। অপর একটি কারণ হল হুযায়ান সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনা। এছাড়াও এই সম্প্রদায়ের দর্শণ তার দুর্বোদ্ধ পরিভাষা ও মন ও চেতনার চুলচেরা বিশ্লেষণের জন্য বাস্তববাদী চৈনিকদের দ্বারা গৃহীত হয়নি।৭৪

আকর কুঞ্চিকাঃ

. রোমানরা প্রবল ভাবে বিশ্বাস করত যে রেশম গাছে জন্মায়। প্লিনি লিখেছেন, মেরীয়রা তাদের জঙ্গলের
    পশমের জন্য বিখ্যাত। তারা এগুলিকে জলের সাহায্যে পাতা থেকে সরাত। চৈনিকদেরও এই কাল্পনিক
    কাহিনীগুলিকে মিথ্যা প্রমাণ করার কোন চেষ্টা করেনি। তাদের রেশম বিক্রি করতে তারা অধিকতর আগ্রহী
    ছিল যার গোপন কথা তারা এক হাজার বছর আগেই আবিষ্কার করেছিল। তারা স্থির করেছিল তারা এই
    ব্যবসায় তাদের একচেটিয়া কারবার কায়েম রাখবে। এই কাজটি তারা করতে সমর্থ হয়েছিল আরও দুশ
    বছর ধরে, যতদিন না রেশম কীটের ডিম চীনদেশ থেকে বাইজানটিয়ানে পাচার করে হয়েছিল নেস্টরিয়
    ভিক্ষুদের দ্বারা যারা এটিকে কাঠের ফাঁপা লাঠির মধ্যে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। -Peter Hopkirk, Foreign
     Devils on the Silk Road- The Search for the Lost Cities and Treasures of Chinese and Central Asia,
     (Amherst: the University of Massachusetts Press, 1980), p. 19. অপর একটি সূত্র দাবী করে এটি অন্য
    রকম। Luce Boulonosis, Silk Road-Monks, Warroyrs and Merchants on the Silk Road (Hong Kong,
     Odyssey, 2004), pp. 179-85. অত্যন্ত কৌতুহলোদ্দীপক ভাবে চীনের সমস্ত ঐতিহাসিক নিদর্শণের মধ্যে মা
    ওয়ান দুই এর খননকার্য- যেখানে হানের একচিহ্নিত সমাধি এবং রেশমের উপর চিত্র এবং অন্যান্য বস্তু
    আবিষ্কৃত হয়েছে- পরিচালিত হয়েছিল হুনান রাজ্যের চাংশা নগরে ১৯৭২ সালে- প্রকাশ করে নিশ্চিত
    প্রত্যক্ষ প্রমাণ যে বৌদ্ধধর্ম সম্পর্কে জানবার আগেই চৈনিকদের মনশ্চক্ষে স্বর্গ, নরক ইত্যাদির ধারণা ছিল।
      Derhuey Lee, Indian Buddhist Literature and Chinese Moral Books- a Comparative Analysis, (Delhi:
      Vidyanidhi Prakashan 2005), p. 261.
২. চৈনিক ভাষায় রচিত সর্বপ্রাচীন রচনা থেকে জানা যায় খ্রীঃপূঃ ২য় শতাব্দীতেই চীনে নির্মিত বস্ত্র এবং
    বাঁশ জাত দ্রব্য অক্ষু উপত্যকার ব্যাক্ট্রিয়ানাতে বিক্রি হত। এটি Zhang Qian ব্যক্তিগত ভাবে দেখেছিলেন।
    W.Pacow, Chinese Buddhism Aspects of Interaction and Reinterpretation, (Lanham: University Press
      of America, 1980) p. 213.
৩. চীনদেশের উপর তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে তিনি die Seidenstrasse, এবং একটি মানচিত্রের কথা বলেছেন, of
      die Seidenstrasse des Marinnns, Seven Hedin, The Silk Road, (Delhi: Book Faith India. 1994) p.226.
৪. যেহেতু সরকারী যোগাযোগের দ্বারা বৌদ্ধধর্ম বিশ্বাস আগমন করেছিল, তাই স্বাভাবিক ভাবেই এর
    প্রাথমিক অবস্থায় এর প্রভাব কেবলমাত্র সমাজের উঁচুতলায় সীমাবদ্ধ ছিল। চুয়ের শাসক চু লিউ ইন
    ছিলেন অভিজাত ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম এটিতে বিশ্বাস করতেন এবং হান রাজবংশের লুই জি ছিলেন
   প্রথম সম্রাট যিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। পেং গুও, Chang gao  jiao si, (Taipet: Wenjin chu ban she,
      1993), pp,10,13. Luce Boulnois, Silk Road-pp 59-74.
৫. কিংবদন্তী অনুসারে বলা হয় যে সম্রাট এক বিরাটাকায় স্বর্ণোজ্জ্বল মূর্তি স্বপ্না দর্শণ হয়েছিল এক রাত্রে।
    পরের দিন তিনি এটিকে তার সভাসভ্যদের কাছে বর্ণনা করেন এবং এক সভাসদ্‌ ফু ই তার কাছে
    ব্যাখ্যা করেন যে তিনি ভারতবর্ষের বুদ্ধকে স্বপ্নে দেখেছিলেন। এর ফল স্বরূপ সম্রাট কাই ইনের নেতৃত্বে
    তিনি বৌদ্ধধর্মকে খুঁজে বের করতে ভারতবর্ষে ১৮ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল পাঠান। তিন বছর পর
     তারা দেশে ফিরে আসেন ইউঝি (সম্ভবত আধুনিক কালের আফগানিস্তান) দেশ থেকে শাক্যমুনি
     সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধের ছবি, সংস্কৃত ভাষায় রচিত ৬০,০০০ শব্দযুক্ত বৌদ্ধধর্ম গ্রন্থ এবং দুজন
     ধর্মপ্রচারক কাশ্যপ মাতঙ্গ এবং ধর্মরক্ষ। পরের বছর সম্রাট শ্বেতাশ্ব বিহার নির্মাণ করেন করতে  
     আদেশ দেন যা রাজধানী লউ-ইয়াং থেকে তিন মাইল দূরে অবস্থিত ছিল। এই বিহারটি নির্মিত
      হয়েছিল সেই অশ্বটির স্মৃতিতে যা চীনদেশের প্রথম বৌদ্ধ রচনাকে বহন করে এনেছিল যার নাম ছিল
     ‘বিয়াল্লিশটি অধ্যায়ের সূত্র; যা অনূদিত হয়েছিল চৈনিক ভাষায় দুই ভিক্ষু দ্বারা। এটি চীনদেশে নির্মিত   
      সর্বপ্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। Keneth K.S.Chen, Buddhism in China- A Historial Survey, (New  
       Jersey: Princeton University Press, 1964), p.29. 
৬. শুয়াং জাঙ সি.ইউ-কি Buddhist Records of the Western World, (Delhi: Motilal Banarasidass 1981), p
       xix, অন্য একটি সূত্রে অবশ্য দাবী করা হয়েছে যে তিনি তার তীর্থযাত্রায় ১৭ বছর অতিবাহিত
     করেছিলেন।
৭. Yixuan: Tang xuan zang san eang chuan shi hui bian (Taipei Dong da chu ban she, 1989). Pp 931-34.
     তবে শুয়াং জাঙ এর তারিখের তিনটি সংস্করণ আছে। বিশদে জানতে দেখুন, Tingfu Yann, Xuan zang
      lun ji (Jinan: Qilu chanban she, 1986), pp6-20, or  
৮. নির্বাণ এবং বুদ্ধধাতুর মত বিষয়ও রয়েছে। তংফু ইয়াং . Xuanzang lunji, p.67. Ref- যে শব্দগুলিকে
    অনুবাদ করা হয়েছে তার ধ্বনিকে প্রায়ই ভুল করা হয়, বিভিন্ন অঞ্চলের শব্দগুচ্ছকে প্রায় ভুল বোঝা
    হয়, যার ফলে অর্থ হারিয়ে যায়। শব্দটি ভুল হওয়ার ফলে অর্থটিও বিকৃত হয়। অতএব যেমন বলা
    হয়, ‘ ভুল এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সঠিক নাম পাওয়া অপরিহার্য।‘ Hiuen Tsang, Si-Yu-Ki Buddhist
      Records of the Western World, p.115.
৯. শুয়াং জাঙ এর ভারতবর্ষে আগমনের পূর্বে ১৩ জন শিক্ষকের অধিনে তিনি অধ্যয়ন করেছিলেন।
     Shangyao Su, Jie chu de liu xne shemg: Xuanzang das hi (Taipei: domgchuchu ban she, 1995) p.320-
        321.
১০. Chihfu li ‘Xuanzang das hi zai yin du jing nei yo xue yuxhen cai tong zi can xue yu gong di li , lu xiang
        ji chi yi yi zi tan gtou’ the chung-hwa Buddhist journal, vol. vii 1994, p.174.
১১. সংস্কৃত কুচিনা। যদিও বৌদ্ধ রচনার অপর মহান অনুবাদক কুমার জীবের (৩৪৪-৪১৫) জন্ম স্থান
      ছিল শুয়াং জাঙ এর সময়ে থেরবাদ বা হীনযানের অন্যতম সীমানা। Sally H. Wriggins, Xuzm zang si
        lu xing (Taipai: Triumph, 1997,) p.55. অপর ২ জন অনুবাদক যারা ৪ মহান অনুবাদকের অন্তর্গত,
     তারা হলেন পরমার্থ (৪৯৯-৫৬৯) এবং অমোঘভদ্র (৭০৫-৭৪৪)।
১২.  Rene Grousset, In the Footsteps of the Buddha (San Francisco: Chinese Materials Center, 1976)
         pp.51-165.

১৩. Yinshun Shin, Yindu zhi fofiao (Taipei: Zheng wen chu ban shi, 1985) p.338.
১৪. শুয়াং জাঙ এর ভারতবর্ষ ভ্রমণের সময়ে ১৩৮ টি দেশ ছিল এর মধ্যে তাঁর পদস্পর্শ ঘটেছিল ১১০ টি
     দেশে, কুয়ুন জাং, “ Wad a daxuanfa shi”, Xian dai fo join xue cong kan. Vol II (1977), p.62.
১৬. শুয়াং জাঙ যোগাচার দর্শনের ঐতিহ্যকে বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে
      নিয়ে গিয়েছিলেন এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই দর্শনটি অধ্যয়নের পথ প্রশস্ত করেছিলেন। সূত্র
     Derhney Lee, ‘Dharmkarti’ and Dignaga Holy People of the World- Across Cultural Encyclopedia, Vol
         I, pp.231-33.
১৭. Jianying Sen, Xuan zang nyan jui (Kaifeng: He nan da xue chu ban she, 1997) pp.209-235.
১৮. Junshi Li, Xuan zang sancang, (Zhanghua: Zhuan xin chu ban she, 1978), p.115.
১৯. Jifu Lan, The Chnanghwa fo jian bai kequan shu ( Tainan County: Zhong hua fo jiao bai ke wen xian ji
        jing hui 1993).
২০. তিনি তাঁর সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন
              ১) তথাগতের শরীরের পাঁচশটি দানাদার সংস্করণ।
              ২) একটি স্বচ্ছ পাদানির উপর রাখা বুদ্ধের সোনার প্রতিমূর্তি।
              ৩) একটি স্বচ্ছ পাদানির উপর চন্দন কাষ্ঠের বুদ্ধ প্রতিমূর্তি। এই মূর্তিটি সেই
                  প্রতিমূর্তিটির একটি সংস্করণ যা কোশাম্বীর রাজা উদয়ন নির্মাণ করেছিলেন।            
              ৪) চন্দন কাঠের একটি অনুরূপ প্রতিমূর্তি যা নির্মিত হয়েছিল বুদ্ধের ত্রয়স্ত্রিংশ স্বর্গ
                  থেকে অবতরনের পর।
              ৫) একটি স্বচ্ছ পাদানির উপর রাখা বুদ্ধের একটি রৌপ্য প্রতিমূর্তি।
              ৬) একটি স্বচ্ছ পাদানির উপর রাখা বুদ্ধের স্বর্ণ নির্মিত প্রতিমূর্তি।
              ৭) একটি স্বচ্ছ পাদানির উপর রাখা বুদ্ধের চন্দন কাঠ নির্মিত প্রতিমূর্তি।
              ৮) মহাযান দর্শনের ১৮৪ টি রচনা।
              ৯) ২২ টি ঘোড়ার উপর বাহিত ৫২০ টি রচনা।
      শুয়াং জাঙ Si-Yu-Ki Buddhist Records of the Western World, P.XX. Ref “তিনি পৃথিবীর প্রান্তে
     পৌঁছেছিলেন এবং দেখেছিলেন যেখানে সমস্ত জিনিষ শেষ হয়। এখন তিনি তাঁর স্বদেশে নিরাপদে
     পৌঁছে গেছেন এবং তাঁর সঙ্গে এনেছেন মূল্যবান সম্পদের বিপুল সম্ভার। এর মধ্যে ছিল বৌদ্ধধর্মের
     ৬৫৭ টি পবিত্র গ্রন্থ এর মধ্যে কয়েকটি ছিল অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন। এই সমস্ত রচনা লেখা
     হয়েছিল তালপাতায়, সোনা, রূপা, স্ফটিক ও চন্দন কাষ্ঠের উপর। এছাড়াও কতগুলো কৌতুহলদ্দীপক
     ছবি ছিল, আর ছিল ১৫০ টি নিদর্শণ। এ সমস্ত নিদর্শণ গুলি বাহিত হয়েছিল, ২০ টি ঘোড়া দ্বারা এবং
     অত্যন্ত জাকঁজমকের সঙ্গে নগরে নিয়ে আসা হয়েছিল। Thomas Watters, On Tuan Chwang’s Travels
        in India, (Delhi: Munshirm Manoharlal, 1996), p12.

২১. তাঁর অনুবাদ তিনটি পর্যায়ে বিভক্তঃ প্রথম ৬ বছর যেখানে কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল যোগাচারভূমিশাস্ত্র
     (৬৪৫-৬৫১), মধ্যবর্তী ১০ বছর যার কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল অভিধর্মকোষশাস্ত্র (৬৫১-৬৬০) এবং অন্তিম
      ৪ বছর (৬৬০-৬৬৪) যার বিষয় ছিল মহাপ্রজ্ঞপারমিতা শাস্ত্র। অনুবাদক হিসাবে তাঁর কর্মের প্রতিটি
     পর্যায়ে শুয়াং জাঙ মনে করেছিলেন যে তাঁর দায়িত্ব হল ভারতীয় বৌদ্ধ রচনাগুলোকে অবিকৃত অবস্থায়
      চৈনিক পাঠকদের কাছে পেশ করা। টমাস ওয়াটার্স এর মতে ভারতবর্ষ থেকে চীনদেশে শুয়াং জাঙ
      দ্বারা আনীত রচনার সংখ্যা হল ৬৫৭ যার তালিকা নীচে দেওয়া হল –
                    মহাযানসূত্রঃ ২২৪ প্রকার
                    মহাযানশাস্ত্রঃ ১৯২ প্রকার
        স্থবির সূত্র, শাস্ত্র এবং বিনয়ঃ ১৪ প্রকার
        মহাসাংঘিক বিনয়, সূত্র ও শাস্ত্রঃ ১৫ প্রকার
        সম্মিতীয় সূত্র, শাস্ত্র ও বিনয়ঃ ১৭ প্রকার
        কাশ্যপীয় বিনয়, সূত্র ও শাস্ত্রঃ ৪২ প্রকার
        সর্বাস্তিবাদী সূত্র, বিনয়, শাস্ত্রঃ ৬৭ প্রকার
        ইন লুন (অনুমান বিজ্ঞানের উপর গ্রন্থ)ঃ ৩৬ প্রকার
        শেনলুন (শব্দের উৎপত্তি সংক্রান্ত রচনা)ঃ ১৩ প্রকার
        Thomas Watters, On Yuan Chawang’s Travel in India p.21.

২২. তাং রাজবংশ এবং পূর্ব তুর্কীদের মধ্যে সে সময়ে যুদ্ধ চলছিল তাই সম্রাট তান-তাই-জং বিদেশ ভ্রমণ
      নিষিদ্ধ করেছিলেন, তবে শুয়াং জাঙ কয়েকজন বৌদ্ধ রক্ষীকে রাজী করিয়েছিলেন কানসু প্রদেশের
      লিয়াং-জাও দিয়ে সাম্রাজ্য থেকে বের হয়ে আসতে।
২৩. ভারতবর্ষ পর্যন্ত শুয়াং জাঙ এর পশ্চিমমুখী পদচিহ্ন প্রথমে শুরু হয়েছিল উত্তরে, তারপর পূর্বে তারপর
      পূর্বতীর ধরে দক্ষিণ পর্যন্ত এবং তারপর পশ্চিমদিক ধরে মধ্যভারতে এবং শেষে চীনে প্রত্যাবর্তন।
       শুয়াং জাঙ Datang xiyu, jt (Taipei: Shang zhon chu ban she, 2005), p.5.
২৪. ২৫ খ্রীষ্টাব্দ থেকে ৫৮৫ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত চীনদেশের প্রাচীন রাজধানী গুলি ছিল চাঙআন ছাড়া অন্যত্র,
      বিশেষ হান বংশীয় সম্রাট মিং এর আমলে (৫৮ খ্রীঃ- ৭৫ খ্রীঃ) যখন রাজধানী ছিল লোয়াং। বৌদ্ধ ধর্ম
       চীনদেশে এসেছিল রেশম পথ ধরে। অতএব এটি দেখ যাচ্ছে যে এই ধর্মের আগমনের সময়ে
       চাঙআন ততটা জনপ্রিয় ছিল না যতটা জনপ্রিয় ছিল তাং যুগে যখন এই ধর্ম চীনদেশের ইতিহাসে
       প্রগতির চরম শিখরে আহরণ করেছিল।
২৫. এগুলি ছিল Cien, Jianfu, Ximing and Zhuangyan. Tanghuiyao –র ৪৮ তম fascicle and zitong jain এর
     ২৪৮ তম fascicle.
২৬.  Yarong Wang, Chang anfojiao shilun. (Beijing: Zone jiao wen hua chu ban she, 2005) p.159. তিনটি
      বিদেশী ধর্মের মধ্যে জরথ্রুষ্টীয়বাদ চীনদেশে প্রথম প্রবেশ করে, তারপর নেস্টরীয় খ্রীষ্ট ধর্ম এবং শেষে
      Manichaeism. Da Xiang Tang dai chang an yu xiyu wen ming. (Taipei: Ming wen chu she,
          1988),p.89-95.
২৭. Britannica 2003 Ultimate Ref. site CD.ROM.S.V.Wuwei
২৯. Britannica 2003 Ultimate Ref. site CD.ROM.S.V.Hami
৩১. Derhuey Lee ‘’ On Karma- a Buddhist Basis”, Buddhist Studies, Vol. XXX (December 2006), p.74-84.
৩৩. জিন-জিয়াং এর বাসিন্দারা এটা দেখাতে অত্যন্ত সক্রিয় যে তাদের পরিচিত পথের মধ্যে রেশম পথ
      প্রথম ছিলনা। এই সম্মানটি দাবীদার “জেড বাণিজ্য পথ” যা প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় সাত হাজার বছর
      আগে এবং কোন কোন সূত্র থেকে জানা যায় এটি জিয়া ও শাং আমলে প্রচলিত ছিল। হোটান থেকে
      আজকের কুইত এবং কানসু রাজ্যের মধ্যে দিয়ে গিয়ে এই জেড বানিজ্য পথটি ছিল শুয়াং জাঙ এর
      সাদা জেড পাথরের বাণিজ্যের ধমনীস্বরূপ। প্রথমে এটি খোটান নদী থেকে উত্তোলিত হত এবং জিন-
      জিয়াং এর জেড পাথর হত বহু বর্ণের যদিও ছোট সাদা পাথর যার বাইরেটা ছিল লালচে বাদামী
     রঙের ছিল সবচেয়ে দামী। এটি স্পর্শ করলে মসৃণ লাগত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চৈনিক সম্রাটেরা
     এটিকে তীব্রভাবে কামনা করেছিলেন। সমস্ত আকার এবং মাপের জেড পাথর খুঁজে পাওয়ার ভালো
      জায়গা হল আন্তর্জাতিক মহাবাজার এবং জিন-জিয়াং এর প্রাচীন দ্রব্যাদির দোকান। যে সমস্ত
     দর্শনার্থীরা এই অঞ্চলের জেড পাথর, রেশম ও অন্যান্য ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তাঁরা জিন-
      জিয়াং এর স্বশাসিত আঞ্চলিক জাদুঘরটি পরিদর্শন করতে পারেন।
৩৪. Columbia Encyclopedia. Sixth Edition 2005. S. V. Aksu
৩৬. http://www.highbeam.com/library/due asp?DOCID=IP.
৩৮. The Columbia Encyclopedia, Sixth Edition 2005, S.V.Pesawar and A Cunningham, ‘The Ancient
         Geography of India (Calcutta Chuckernertty, 1924) pp. 47-49.
৪০. http://www.encyclopedia.com/html/k/kashmir.asp (2008.4.21), Britannica 2003 Ultimate Ref. suite
        CDROM, S.V.Kashmir and A.Cunningham, The Ancient Geography of India. pp. 89-103.
৪১. A Cunningham, The Ancient Geography of India pp 73-374 and N.N.Bhattacharya, The Geographical
        Dictionary of Ancient and Medieval India (New Delhi, Munshinam Manoharlal, 1991) pp. 127-128.
৪২. http://www.encyclopedia.com/html/K.Kananj asp (2007.3.24) and
        http://en.wikipedia.org/wiki/Kanyakubja (2007.3.24)
৪৩. Fausball, Jatakas, Vol.III (London Trubner & Co, 1897), p. 270
৪৪. V Trenekner & R.Chalmers, Majjhima Nikaya, Vol I (London: Pali Text Society, 1896) p.149
৪৫. Fausboll. Jatakas. Vol II. P.13
৪৭. H.Bakkar, ‘The Rise of Magadha as a Place of Pilgrimage,… Iranian Journal, Vol XXIV No. 2 (April
         1982). P.116
৪৮. ‘Bakkar’, Ayodhya E. le nom et le lieu, ‘Revue de I’ Historie des religion Vol III (January 1986) p.53
৪৯. Woodward Hardy, E; Muller, E.Barua, D.L et al.. Parapmattadipani – Dhammapalachariya’s  
         Commentary on the Udana, the Theragatha, the Therigatha, the Cariyapitaka, the Tivuttaka, the
         Vimanabatthu, and the petavatthu, Vol I,  (London: Pali Text Society 1977) p.110
৫০. A Cunningham, The Ancient Geography of India, p. 391-98
৫১. H. Oldenburg, Vinaya Pitakam, Vol II, (London: Pali Text Society, 1883), p.307
৫২. Rongxi Li, The Great Tang Dynasty Recurd of the Western Regions (Berkeley: Numata Center for
        Buddhist Translation and Research, 1996), p.160
৫৩. Rongxi Li, The Great Tang Dynasty, Record of the Western Regions p.161
৫৪. Britannica 2003 Ultimate Ref. suite S.V.Lumbini
৫৫. A Cunningham, The Ancient Geography of India, pp.430-33 and NN.Bhattacharya, The
        Geographycal Dictionary of Ancient and Medieval India, pp.111-112
৫৬. এটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল যেমন সুদসসন (ফৌসবল জাতক ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১৯,
     ৫ম খণ্ড, পৃ ১১৭, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ ১৩১) কাশী/ কাশিকা/ কাশিপুরা (ফুসবল জাতক ৫ম খণ্ড পৃ ৫৪, ৬ষ্ঠ
      খণ্ড পৃ ১০৯), ব্রক্ষ্মভাবনা (ফুসবল জাতক ৫ম খণ্ড পৃ ৩১২), পুপ্প ভাতি (ফুসবল জাতক ৪র্থ খণ্ড পৃ
      ১১৯, ৬ষ্ঠ খণ্ড পৃ ১৩১), রাম্মা/ রাম্মাকা/ রাম্মানগর রাম্মাবতী (ফুসবল জাতক ৪র্থ খণ্ড পৃ ১১৯)।
৫৭. http://www.encyclopedia.com/html/s/ sarnath.asp (2007.11.11).
৫৮. H.Olderberg, Vinaya Pitakam, Vol. II, p. 299
৫৯. Britannica 2003 Ultimate Ref. suite CD-ROM, s.v. Vesali.
৬০. V.Trenekner & R.Chalmers, Majjhina Nikaya, p.268
৬১. Anguttara Nikaya, Vol. IV, (London: Pali Text Society, 1900), p.99
৬২. V.Trenckner & R.Chalmers, Majjhima Nikaya, p. 227; Anguttara Nikaya, Vol. I, pp. 220,230; H.   
         Olderberg, Vinaya Pitakam, Vol. II, p. 225, Vol. IV, p. 24
৬৩. T.W.Rhys Davids & J.E.Carpenter, Digha Nikaya, Vol. II, (London: Pali Text Society, 1911), p. 167
৬৪. Fausboll, Jatakas, Vol. III, p. 1
৬৬. http://www.encyclopedia.com/html/n/nalanda.asp (2007.7.23) and Britannica 2003 Ultimate Ref.
         suite CD-ROM, s.v. Nalanda.
৬৭.  The Columbia Encyclopedia, Sixth Edition 2005, s.v. Allahabad.
          http://www.encyclopedia.com/html/H/Hotan.asp (2008.1.14)
৭০. http://www.encyclopedia.com/html/d/dunhuang.asp (2007.12.3) and The Columbia Encyclopedia
         and Sixth Edition 2005, s.v. Dunhuang.
৭১. Ref. Derhuey Lee, “Xuanzang’s Pilgrimage to India (629-645),” Buddhist Studies, Vol. XXVII (March
         2005), pp. 77-88
৭২. The two colossal statues of the Buddha, carved into the sandstone cliffs in Bamiyana, Afghanistan,
           were demolished by the Taliban on March 2001. The Taliban were a fundamentalist Islamic militia  
          that governed most of Afghanistan from 1996 to December 2000.
৭৩. Ironic but true, the Central Asian art de facto held sway over Buddhism’s propagation along the Silk
          Road. See, for details, Derhuey Lee, “The Transmission of Buddhism along the Silk Road,” Buddhist
          Studies, Vol. XXXIII (June 2007), pp. 28-29.
                     



   


No comments:

Post a Comment