Friday, August 23, 2024

Prefac

 Preface 


An Analytical Study on the concept of the Wise (Pandita) in Theravada Buddhist Perspective"' this very name suggests that in this discussion the author has made an attempt to define and interpret the term 'Pandita or wise from the standpoint of various texts which belong to the Thevada Buddhist school. 
This study is divided into five  chapters.  Chapter1 provides the introduction. Chapter 2 is the main part of the study where the meaning of the word wise, the characteristics of a wise person and various types of wise persons have been discussed. Chapter 3 of the study discusses topics related to the wise in Theravada Buddhism. Chapter 4 
discusses the concept of the wise in Thersvada Buddhist perspective and Chapter 5 or the last chapter of the book is about conclusion and suggestions. 
In our daily life we often come across people who are intelligent and we also meet people who are foolish. Naturally one should try to associate with the intelligent and avoid the foolish because in this way we can improve our life. But to do this properly we should learn to distinguish between the intelligent and the foolish. According to one definition a wise person is one who remains equally unmoved while cofronting  admiration or censure. In the words of the Buddha," Just as a solid rock is shaken by the storm, the wise are not affected by praise or blame" ( Selo yatha ekaghano vatena na samirati Evam nindapasamsasu ,na saminjanti pandita).In Buddhist literature a wise person possesses three main characteristics. They are (1) Their thoughts always are always beneficial. (2) They are soft spoken (3) Their actions are always beneficial. So it is very important to remain associated with wise people because they can provide valuable guidance in our problems and can become our role models. Theravada Buddhist literature abounds in reference to wise people namely Mahamangala Sutta. Dhammapada ( Panditavagga), Majjhima Nikaya( Balapandita Sutta), Sunnakathavannana of Saddhammapakasani which is a commentary on the Patisambidhamaagga. The primary objective of this thesis is an indepth study of wisdom which is embodied in the character of a wise person their thought intellect and mental make up. 
Chapter 1 of the study has outlined the three main characteristics of a wise person and in Chapter 2 of the study we come to know that there are three ways in which a wise person feels happiness and joy. In an assembly the wise man maintains and upholds the five precepts which are violated by ordinary human beings and this gives pleasure to a wise person. 
According to the Balapanditasutta of the  Samyuttanikaya a wise person is the one who can resist craving and ignorance because according to the Buddha in order to attain nirvana one has to destroy these two enemies . So the most important ability of wise men and women lies in their abillity to avoid evil. The Mahamangala sutta of the Suttanipata says that the main characteristic of wise men are the follow the rules of basic morality. According to dictionary the term Wise means Pandita which can be interpreted in many ways such as clever, skilled, circumspect etc. Sometimes wise men are also called medhavi  which means intelligent or knowledgable. In our daily life we consider a man to be wise if he has knowledge of general subjects or things and have finished education with a high degree of study. A wise person is generally very considerate and he treats others in the very way he would like to be treated by them. 
In order to attain real wisdom a wise person has to train his mind. From our childhood we are taught by different teachers. The Buddha was a great teacher who was always kind and loving to his students. He taught his students with compassion and sympathy. This kindness of the teacher towards his student is more effective in training them than his knowledge or expertise. The duty of a true teacher towards his students can be divided into five types. Teachers should see that (a) Their pupils are trained in the best discipline. ( b) Their pupil have grasped their lessons well (c) They have been instructed in the arts and sciences (d) Their pupils have been introduced to friends and associates ( e) Their students have been provided with safety in every quarter. 
Mindfulness is a very important characteristic 
of a wise man. A mindful person has the ability to concentrate on the present. Mindfulness teaches a person to have a clear comprehension and clear grasp of the surroundings where he actually finds him in. A wise person must have a clear conception of what he wants to be and how he wants to spend his life. Lord Buddha was the wisest person and his mission was to help every being live a happier life in this world and beyond. A truly wise person should follow the footsteps of the Buddha but he should not impose himself on his followers like a leader. Instead in order to be truly effective as a ruler he should become a part of the team. This kind of attitude will create an atmosphere of mutual respect and trust within the group.  
In many Theravada scriptures we find discussion on the subject of wisdom and wise persons. The fourth chapter of our present study devotes itself to this topic. Once the Buddha said," ... Whether affected by 
happiness or by pain the wise show neither elation nor depression. It is the duty of the wise an to lead their friends and followers to the life of charity, morality, right views and good deeds. In the fifth chapter of the study it has been rightly pointed out by the the 
researcher that the wise man is one who (a) thinks good thoughts, speaks good words and does good deeds ( b) always has a clear understanding and comprehension of man and matters ( c) always exhibits qualities like forgiveness, courage and friendship.

বৌদ্ধ সাহিত্য দুটি ধারায় বিদ্যমান

 বৌদ্ধ সাহিত্য দুটি ধারায় বিদ্যমান—থেরবাদ বা হীনযান সাহিত্য ও মহাযান সাহিত্য। থেরবাদ বৌদ্ধ সাহিত্য ও ধর্মদর্শন শাস্ত্র তথা প্রাচীন থেরবাদী সম্প্রদায়ের মূল পালি সাহিত্যে যেমন জাতক ও অপদান কাহিনি আছে তেমনি সর্বাস্তিবাদী সম্প্রদায়ের তথা মহাযান ধর্মদর্শন শাস্ত্রেও সমান্তরালভাবে বৃহদাকার আয়তনে সংস্কৃত অবদান সাহিত্য পরিলক্ষিত হয়। পালি অপদান ও সংস্কৃত অবদান সাহিত্য প্রায় সমার্থক। জাতক কাহিনির মতো অবদান কাহিনিগুলো একই রীতিতে রচিত।

অপদান খুদ্দকনিকায়ের ষোড়শতম গ্রন্থ হলেও এটি একটি বিশাল গ্রন্থ। অপদান গ্রন্থে সর্বসাকুল্যে ৫৫৯ শ্রাবক, ৪০ জন শ্রাবিকার জীবনবৃত্তান্ত উপলব্ধ হয়। অপদানকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়—পচ্চেক বুদ্ধাপদান, বুদ্ধাপদান ও থের অপাদান ও থেরী অপদান। থের অপদানে ৫৫৯ জন স্থবিরের জীবন কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
 থের-থেরীদের জীবনাচরণ ও জীবনাদর্শন সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে ‘অপদান’ এর পাশাপাশি বিমলাচরণ লাহা রচিত 'A history of Pali Literature' ও M. H. Bode রচিত 'Legends of Rastrapala in the Pali Apadana and Buddhaghosa's commentary' গ্রন্থদ্বয় অধ্যয়ন করা উচিত।
পালি পিটক সাহিত্যে জাতক ও অপদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। ঠিক তদ্রুপ বৌদ্ধ সংস্কৃত সাহিত্যে অবদান সাহিত্যও সমান তাৎপর্যবহ। অপদান বা অবদান শব্দের অর্থ প্রশংসনীয় ও প্রশস্তিমূলক কীর্তিগাথা। বিষয়বস্তুর নিরিখে অপদান ও জাতক পালি ও বৌদ্ধ সাহিত্য সম্ভারে ঐতিহাসিক গ্রন্থরাজি।
পালি অপদান সাহিত্য পালিভাষায় পদ্যাকারে, অন্যদিকে সংস্কৃত অবদান সাহিত্য গদ্যে রচিত হলেও স্থানে স্থানে ছন্দোবদ্ধশ্লোক পরিদৃশ্যমান। অপদান সাহিত্য মূলকথা গাথায় রচিত হলেও গল্পের ছলে পরিবেশিত হয়েছে। পাঠক পাঠ করলে মনে হবে যেন গাথাগুলো কেউ গল্পের মতো করে পড়ে শোনাচ্ছেন। এখানে গল্পের আকারে পরিবেশনের অন্যতম কারণ হলো সাধারণ মানুষের কাছে যেন বোধগম্য ও সহজবোধ্য করে তোলা এবং মানুষ যাতে সহজে হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হয়। নির্বাণ, অনাত্ম, বা শূন্যতার তত্ত্বের মতো দুরূহ তত্ত্ব অপদানের আলোচ্য বিষয় নয়। অবদানের তুলনায় অপদানে গাথা গল্পগুলো সরল ও ক্ষুদ্র, পৌরাণিক জটিল ও দীর্ঘ নয়।
বুদ্ধের প্রতি অপার শ্রদ্ধা ও অনুরাগজনিত নানা সৎকর্মের উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের অন্তরে বিশ্বাস ও ভক্তির উদ্রেকভাব উৎপন্ন করাই অপদানের উদ্দেশ্য। 
অপদানকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা হয়—পচ্চেক বুদ্ধাপদান, বুদ্ধাপদান ও থের অপাদান ও থেরী অপদান । শেষ দুটি  অপদানে যথাক্রমে ৫৫৯ জন ভিক্ষু  ও ৪০জন ভিক্ষুণী অপদান রয়েছে। এটি লক্ষ্য করা যায় যে অন্যান্য জায়গায় প্রাপ্ত অনেকগুলি ভিক্ষু কাহিনি  অপদান গ্রন্থে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। ধম্মপূজকের কাহিনি ও নাগিত স্হবির কাহিনি এই দুটি উদাহরণ।
থের অপাদান ও থেরী অপদান দুটিতে ভিক্ষু  ও ভিক্ষুণী এই তালিকাটির দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।  ১। কিছু কিছু কাহিনি যদিও অভিন্ন নামযুক্ত বিষয়বস্তুর দিক থেকে সম্পূর্ণ পৃথক, ২। এমন অনেকগুলি কাহিনি রয়েছে যেগুলি থেরগাথা ও থেরীগাথার কাহিনির সঙ্গে তুলনীয়।প্রথমটির উদাহরণ হল চিত্তপূজক সংখ্যা ২৭৭, ২৯১, ৩৭৭, ৪৬২; মঞ্চদায়ক সংখ্যা ৩৫৮ ও ৪৩০; বুদ্ধসঞ্ঞক সংখ্যা ৩০৯, ৪৮২; এবং দ্বিতীয়টির উদাহরণ হল সারিপুত্ত, অপদান ১এবং  থেরগাথা ২৫৯; মহামোগ্গল্লান ২ ও ২৬৩; মহাকাস্যপ ৩ ও ২৬১; উপালি ৬ ও ১৮০; আনন্দ ১০ ও ২৬০; রাহুল ১৬ ও ১৯৩; সিবলি  ৫৪৩ ও ৬০; কুমারকাস্যপ ৫৩৫ ও ১৬১; নন্দিকাস্যপ  ৫৫২ ও ২০৩; বক্কলি  ৫৩২ ও ২০৫; এই সংখ্যা নিরূপণ কাহিনিগুলির কয়েকটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় সঙ্গীতিতে মূল রচনার সঙ্গে সংযোজিত হয়েছে। 
 বুদ্ধ তথা তাঁর শ্রাবক শ্রাবিকাদের জীবনাচরণ ও জীবনচর্যা ভাষান্তরিত করা সত্যি দূরূহ কার্য। বিশেষত পরবর্তীতে পালি সাহিত্য সংকলক ও অর্থকথাকারগণের অপরিমিত পাণ্ডিত্য ও জ্ঞানভাণ্ডারের কুঞ্চিকা খোলার চেষ্টা মানে পঙ্গুর গিরি লঙ্ঘনের মতো স্পর্ধা। 
অলং ইতি বিত্থারেন।

পিপরাওয়া বৌদ্ধ কলস শিলালিপি

(পিপরাওয়া বৌদ্ধ কলস শিলালিপি)

ভারতের উত্তর প্রদেশের সিদ্ধার্থনগর জেলার পিপরাওয়া থেকে পাওয়া কলসটির শিলালিপি। এই শিলালিপিটি ব্রাহ্মীতে পাওয়া প্রাচীনতম শিলালিপি, যা সম্রাট অশোকের আগে ব্রাহ্মী। এই ব্রাহ্মীর বিশেষত্ব হল এর আকৃতি ও আকার নেই। সময়টা ছিল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী। 

𑀲𑀼𑀓𑀺𑀢𑀺 𑀪𑀢𑀺𑀦𑀁 𑀲𑀪𑀕𑀺𑀦𑀺𑀓𑀦𑀁 𑀲𑀧𑀼𑀢𑀤𑀮𑀦𑀁
𑀇𑀬𑀁 𑀲𑀮𑀺𑀮𑀁 𑀦𑀺𑀥𑀦𑁂 𑀩𑀼𑀥𑀲 𑀪𑀕𑀯𑀢𑁂 𑀲𑀓𑀺𑀬𑀦𑀁

সুকিতি ভতিনং সভাগিনিকনং সপুতদলং।
ইয়ং সলিলং নিধনে বুধস ভগবতে সকিয়নং।

Sukiti-bhatinaṃ sabhaginikanam sa-puta-dalanam 
iyaṃ salila-nidhane Budhasa bhagavate sakiyanam

সুকিতি - ভগবান বুদ্ধকে সুকৃতি (মানব দেহের সেরা সৃষ্টি) বা সুকীর্তী (সুখ্যাতিতে পূর্ণ) বলা হয়। আরেকটি মত হল সুকিতি শব্দটি শুধুমাত্র রাজকুমার সিদ্ধার্থের পরিবারের সদস্যদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

ভাই-বোন।
সভগিনিকনং - বোন সহ।
সপুতদলনং – পুত্র ও কন্যা অর্থাৎ পুত্রবধূ সহ।
ইযং - এই।
সলিলং নিধনে - দেহের মৃত্যু অর্থাৎ হাড়ের (অস্হি) পাত্র।
 বুধস ভগবতে সকিয়নং - শাক্যদের ভগবান বুদ্ধ।

অনুবাদ - এই অস্হি পাত্রটি ভগবান বুদ্ধের শাক্য ভাই, বোন, পুত্র এবং পুত্রবধূরা (দান) করেছিলেন।

Sunday, August 4, 2024

চিত্ত ও সমাধি

 চিত্ত  ও সমাধি

চিত্ত হল চিতি ধাতু নিষ্পন্ন শব্দের অর্থ চিন্তা করা। এখানে “ চিন্তা করে ” অর্থ আলম্বন গ্রহণ করে , আলম্বন জানে, আলম্বন অবগত হয়। অর্থকথা অনুসারে চিত্ত হল যা বিষয়কে জানে বা অবগত হয় (চিন্তেতি, বিজানাতি) । অভিধর্ম অনুসারে চিত্তের উত্তম সংজ্ঞা হল- বিষয়কে জানা বা অবগত হওয়া কারণ বিষয়কে জানার জন্য আত্মারূপে কোন জ্ঞাতা নেই ।

চিত্তের অপর নাম মন, চেত, চিত্তুপ্পাদ, নাম, বিঞ্ঞান(বিজ্ঞান) প্রভৃতি অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাই অভিধর্মে চিত্ত এবং মনকে পৃথক করে দেখানো হয়নি। বস্তুত, চিত্ত ও মন এক অর্থে ব্যবহৃত হয়। চিত্ত, মন, বিজ্ঞান এক অর্থবোধক, এদের লক্ষণ যথাক্রমে চিন্তন, মনন ও বিজানন এরাও একার্থবোধক। আলম্বন বিজানন চিত্তের স্বভাব। অর্থাৎ মনন ইন্দ্রিয় দ্বারা যা চিন্তা করা হয় তাই চিত্ত। মনন ইন্দ্রিয় কি চিন্তা করে বলা হলে তা হলে বলতে হয় চেতসা চিন্তেতি অর্থাৎ অনুভূতিতে উপলব্ধি বিষয় বা আলম্বনকে চিন্তা করে, আলম্বনকে জানে, আলম্বনকে অবগত হয়। 

চিত্ত কোন প্রকার উপকরণ ব্যতীত একা উৎপন্ন হতে পারেনা এবং কোন ক্রিয়াও সম্পন্ন করতে পারেনা। চিত্তের উপকরণ হল চিত্তবৃত্তি (চৈতসিক)। আবার চিত্তের উৎপত্তিতে আলম্বন অপরিহার্য। আলম্বন শব্দের অর্থ অবলম্বন। মাটি না হলে শস্য যেমন উৎপন্ন হতে পারেনা, তেমনি আলম্বন হল চিত্ত ও চৈতসিকের কার্যক্ষেত্র।

চিত্তের উৎপত্তিতে আলম্বনের মত বস্তু একান্ত অপরিহার্য যা চিত্তের আশ্রয়স্থল। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা, কায় ও হৃদয়কে বলা হয় চিত্ত ও চিত্তবৃত্তির বস্তু (বস্তু বলতে বোঝায় আধার, আশ্রয়স্থল)। কারণ এগুলোকে আশ্রয় করেই চিত্ত ও চিত্তবৃত্তির ক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। জন্মের প্রত্যুষে চিত্ত বা মনের প্রথম উদয়কে বলা হয় প্রতিসন্ধি চিত্ত। এর পরেই ভবাঙ্গ চিত্ত (মনের অবচেতন স্তর) বা ভবাঙ্গ প্রবাহ। ভবাঙ্গ হচ্ছে স্থির নিস্তরঙ্গ নির্মল চিত্তপ্রবাহ। যখন রূপ, শব্দ, গন্ধ, রস, স্পর্শ এ পঞ্চ আলম্বনের (বিষয়ের) সঙ্গে চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা এবং ত্বক এ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সংযোগ হয়, তখন ভবাঙ্গ (স্থির, নিস্তরঙ্গ, নির্মল চিত্তপ্রবাহ) চিত্তের অবচেতন স্তর (নিস্তরঙ্গ) ভেদ করে নদীর ঢেউয়ের মত চিত্তকে তরঙ্গায়িত করে। একেই বলা হয় চিত্তের উৎপত্তি ।

অভিধর্ম অনুসারে চিত্তের সংখ্যা ৮৯ প্রকার। কিন্তু ৪০ প্রকার লোকোত্তর চিত্ত সংযুক্ত হয়ে ৮৯ প্রকার চিত্ত ১২১ প্রকার হয়। 

এখন জ্ঞান বা প্রজ্ঞা (সচেতনতা), এটি এমন একটি ধর্ম (বিষয়বস্তু) যা মানসিক ক্রিয়া-কলাপের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করা হয়, কিছু জানার বা সচেতন হওয়ার মানসিক ক্রিয়াকলাপ। এর সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্যগুলি হল: ১) স্পষ্টতা বা প্রভাস্বর, যার অর্থ হল স্বরূপ নির্মাণ, ২) প্রজ্ঞা (সচেতনতা) কোন কিছুর বিষয়ে সচেতনতা বা কোন কিছুর জ্ঞান, এবং ৩) কিছু অনুভব করার সময় বিভিন্ন ধরণের সকারাত্মক বা নকারাত্মক আবেগ থাকে কিন্তু তবুও মানসিক ক্রিয়াকলাপের স্বভাব নিজের দিক থেকে নিরপেক্ষ থাকে। একটি মানসিক ক্রিয়াকলাপ সহায়ক বা ক্ষতিকারক কিনা সেটা নির্ভর করে চেতসিকের উপর, মানসিক ক্রিয়াকলাপরূপী চেতসিকের মূল স্বভাবের উপর নয়।

উদাহরণ স্বরূপ, ক্রোধ চিত্তের মূল স্বভাবের অংশ নয়। পরিবর্তে ক্রোধ উদ্ভূত হওয়ার জন্য হেতু এবং প্রত্যয়ের উপর নির্ভর করে। (অন্যদিকে কোন কিছুর মূল স্বভাব বিরতিহীন নয় এবং উদ্ভূত ও উপস্থিত হওয়ার জন্য হেতু এবং প্রত্যয়ের উপর নির্ভর করে না। এটি উদ্ভূত হয় এবং নিরন্তর উপস্থিত থাকে।) এরপর কিছু নির্দিষ্ট চেতসিক যেমন- ক্রোধ, হেতু এবং প্রত্যয়ের উপর ভিত্তি ক’রে উৎপন্ন হয় আর সেটা শুধুমাত্র তখনই প্রভাবশালী হয়।

চেতসা চিন্তেতি” অর্থাৎ অনুভূতিতে উপলব্ধ বিষয় বা অবলম্বন (জড় বা অজড় বস্তু যাকে আলম্বন বা অবলম্বন করে চিত্ত উৎপন্ন হয় তাই চিত্তের “বিষয় বা আলম্বন বা অবলম্বন বা আরম্মন”।   “চিন্তা করে” অর্থ আলম্বন গ্রহণ করে (অবলম্বন করে)। আলম্বনকে জানে, আলম্বনকে অবগত হয়। “চিত্ত, মন, বিজ্ঞান” শব্দত্রয় একার্থবাচক; এদের যে কোন একটি অন্য দুইটির প্রতিশব্দ জ্ঞাপক। এদের লক্ষণ যথাক্রমে চিন্তন, মনন ও বিজানন; এগুলোও একার্থবোধক আলম্বন বিজানন চিত্তের স্বভাব। “চিন্তেতি” ক্রিয়াপদে দুইটি প্রধান অবলম্বন অর্থে ঘনিষ্ঠরূপে সন্ধিবদ্ধ এবং প্রায়শ অবিচ্ছেদ্য, যেমন—“চিৎ” এবং “ চেৎ” অর্থাৎ “চিত্ত” এবং “চেতস” ; (তুলনীয়) তুমি “চেতো” দ্বারা “চিত্ত” কে দমন-সংযত-শান্ত করা দরকার (মধ্যম নিকায়); (তুলনীয়) অত্তনা চোদয অত্তানং (স্ত্রীলিঙ্গে); (তুলনীয়) চেতসা চিত্তং, সমন্নেসতি (সংযুক্ত নিকায়)। সাধারণ ব্যবহারে “চিত্ত” এবং “চেতস” শব্দদ্বয়ের মধ্যে অর্থের কোন পার্থক্য দেখা যায় না। চিত্তেন নীযতি লোকো; উপক্কিলিট্ঠ চিত্তেন; অসল্লীনেন চিত্তেন (সংযুক্ত নিকায়)। চিত্তেসু (অঙ্গুত্তর নিকায়) সমাহিতে চিত্তে; চিত্তে ব্যাপন্নে কাযকম্মং পি হোতি; (সংযুক্ত নিকায়) চিত্তম্হি (চিত্তস্মিং) ব্যাপন্নে কাযকম্মং পি হোতি। “চিত্ত” এবং “চেতস” শব্দের পাঁচমিশালী বা এলোমেলো ব্যবহার:—“চিত্ত” সাধারণত মনকেই বুঝায়, আর “চেতস” সাধারণত চিত্তের অবস্থান স্থান হৃদয়কেই বুঝায়। (“চিত্ত” এবং “চেতো” শব্দের যৌগিকে ব্যবহার) চিত্ত-সমাধি = চেতো-সমাধি। পক্ষান্তরে “চেতোখিল” এবং “চেতো-ৰিমুত্তি” , কিন্তু “চিত্ত” এর সহিত “ৰিমুত্ত-চিত্ত” , “উপক্কিলেস” শব্দের সঙ্গে “চিত্ত” এর সংযোগ সীমাবদ্ধ ইত্যাদি। নিম্নোক্ত বাক্যসমূহে তা বর্ণিত হয়েছে—(সংযুক্ত নিকায়) ৰিৰটেন চেতসা সপ্পভাসং চিত্তং ভাৰেতি—খোলা মনে সে আনন্দোজ্জ্বল ভাবনায় ধ্যান করছে; চেতসা চিত্তং সমন্নেসতি ৰিপ্পমুত্তং—সে মনে মনে তাঁদের নিষ্পাপ মনকে সম্যক অনুসন্ধান বা তদন্ত করছে। (দীর্ঘ নিকায়) “ৰিগতাভিজ্ঝেন চেতসা” অনুসরণে “অভিজ্জায চিত্তং পরিসোধেতি”।

অঙ্গুত্তর নিকায়) অনুপারম্ভচিত্তো ভব্বো চেতসো ৰিক্খেপং পহাতুং “চেতসো ৰূপসমো” অনুকরণে “ৰূপসন্ত-চিন্তো’। (দীর্ঘ নিকায়) “সমাহিতে চিত্তে” অনুকরণে “চেতাসমাধি। (অঙ্গুত্তর নিকায়) “চিত্তং পদুট্ঠং” অনুকরণে “চেতেপদোস”। (সংযুক্ত নিকায়) চেতসো ততো চিত্তং নিৰারযে—আন্তরিক ইচ্ছা—ওটি হতে মনকে নিবারণ কর। অন্যান্য বিষয়ে মানসিক কার্যধারা সম্পর্কে “চিত্ত” এর সম্বন্ধ:—“চিত্ত” অর্থে “হৃদয়” অর্থাৎ মানুষের ব্যক্তিত্ব সংযোগে হৃদয়—(সংযুক্ত নিকায়) হদযং ফলেয্য, চিত্তৰিক্খেপং পাপুণেয্য—হৃদয় বিদীর্ণ হবে, চিত্তবিক্ষেপ ঘটবে; = চিত্তং তে খিপিস্সামি, হদযং তে ফালেস্সামি (সংযুক্ত নিকায়)। (সংযুক্ত নিকায়) কামরাগেন চিত্তং মে পরিডয্হতি (বৈষম্য অর্থবাচক) নিব্বাপেহি মে হদয পরিল়াহং—আমার হৃদয়-অগ্নি নির্বাপিত করো (মিলিন্দ প্রশ্ন); (তুলনীয়) অভি-নিব্বুতাত্তো (সূত্রনিপাত); = অপরিডয্হমান—চিত্তো (সূত্র নিপাত অর্থকথা)। (দীর্ঘ নিকায় অর্থকথা) চিত্তং অধিট্ঠহতি—হৃদয় বা মন বসানো, ইচ্ছা করা। “চিত্ত” শব্দ মানসিক অবস্থায়— শারীরিক অবস্থার সহিত বৈষম্য প্রকাশে:—” চিত্ত” (বিপরীত) “কায” অর্থাৎ “কিলন্ত কায—চিত্ত”—অবসন্ন শরীর ও মন (দীর্ঘ নিকায়)। (সংযুক্ত নিকায়) আতুর কায-চিত্ত। (অঙ্গুত্তর নিকায়) নিকট্ঠকায—চিত্ত। (সংযুক্ত নিকায়) ঠিত কায-চিত্ত—স্থির দেহ ও মন; (তুলনীয়) ঠিতত্ত। (সংযুক্ত নিকায়) পস্সদ্ধি কায-চিত্ত—দেহমনের শান্তি। অর্থকথাচার্য “সঙ্খারাক্খন্ধ” অথবা চৈতসিক সমূহকে ছয় যুগ্মভাবে পৃথক করে দেখিয়েছেন, যেমন—” ৰিঞ্ঞাণক্খন্ধ” এতে “চিত্ত কায পস্সদ্ধি” (মন ও দেহের প্রশান্ত ভাব), চিত্ত-কায লহুতা (মন ও দেহের লঘুতা) ইত্যাদি; অন্য তিনটি মানসিক “খন্ধ” , যাকে “নাম-কায” রূপে গ্রহণ করা হয়েছে (ধর্মসঙ্গণী এবং ধর্মসঙ্গণী অর্থকথা)। (দীর্ঘ নিকায়) পস্সদ্ধ নাম-কায়। জ্ঞানালোক প্রাপ্ত বা সদবুদ্ধি সম্পন্ন অবস্থা:—” চিত্ত” (মন); বৈষম্যে “মনস” (মনের ভাব বা চিন্তাধারা এবং “ৰিঞ্ঞাণ” (বুদ্ধি, জ্ঞান, যথার্থ অনুভব, বোধ)। এই তিনটি মনের অভিব্যক্তির অন্য নামে অদৃশ্যভাবে শরীরের কর্মশক্তি গঠিত করে থাকে, যঞ্চ ৰুচ্চতি “চিত্ত’তি ৰা “মনোতি” ৰা “বিঞ্ঞণং’তি” ৰা; (দীর্ঘ নিকায়) অযং অত্তা নিচ্চো ধুৰো ইত্যাদি,  (সংযুক্ত নিকায়) তত্র’স্সুত বা পুথুজ্জনো নালং নিব্বিন্দিতুং ইত্যাদি,  তং রত্তিযা চ দিৰসস্স চ অঞ্ঞ-দ-এৰ উপ্পজ্জতি অঞ্ঞং নিরুজ্ঝতি (সংযুক্ত নিকায়)। “আদেসনা পাটিহারিয” (পরচিত্ত বিজ্ঞান-জ্ঞান) এতে:—এৰং পি তে মনো ইত্থম্পি তে মনো ইতি পি তে চিত্তং—এতাদৃশ আপনার চিন্তাশক্তি এবং এতাদৃশ আপনার মন অর্থাৎ চিন্তার স্বভাব (দীর্ঘ নিকায়)। (সংযুক্ত নিকায়) নিচ্চং ইদং চিত্তং নিচ্চং ইদং মনো; চিত্তেন নীযতি লোকো—চিত্ত বা চিন্তা দ্বারা সংসার পরিচালিত হয়ে থাকে; অপতিট্ঠিত—চিত্তো আদীন-মনসো অব্যাপন্ন চেতসো; ব্যাপন্ন-চিত্তো পদুট্ঠ মনসনকপ্পো। পদুট্ঠ-চিত্তো = পদুট্ঠ মনসো (পেতৰত্থু অর্থকথা)। আবেগময় বা ভাবোদ্দীপক ধারা বুঝালে:—কর্মবাচ্যে অভিপ্রায় বা সঙ্কল্প অর্থে হয়ে থাকে। বৈষম্য বুঝালে:—ইচ্ছাবৃত্তি বা অভিলাষ অর্থ হয়ে থাকে। চিত্ত” এখানে চারটি “সমাধি” এর মধ্যে একটি। চারটি সমাধি, যথা—ছন্দ সমাধি, বিরিযসমাধি, চিত্ত সমাধি, ৰীমংসা সমাধি (দীর্ঘ নিকায়)। কার্য অর্থে “চিত্ত” ও “কম্ম” এর উৎসম্বরূপ, যেমন—(অঙ্গুত্তর নিকায়) চিত্তে ব্যাপন্নে কাযকম্মং পি ব্যাপন্নং হোতি—অভিপ্রায় (অর্থাৎ মনের অভিপ্রায়) যখন অসৎ হয় তখন শারীরিক কর্মও অসৎ হয়ে থাকে চিত্তং অপ্পমাণং যং কিঞ্চি পমাণকতং কম্পং ইত্যাদি। সংযুক্ত নিকায় বর্ণনায় “চিত্ত” “ কায” এবং “ৰাচা” এই দুটির বৈষম্য, তিনটি একত্রে “কাযেন (কার্যে), “ৰাচায” (কথায়), “চিত্তেন” অথবা “মনসা” (অভিলাষে বা ইচ্ছায় বা চিত্তবৃত্তিতে)। সেরূপ সংযুক্ত নিকায়ে বলা হয়েছে—তং ৰাচং অপ্পহায (চিত্তং অপ্পহায, দিট্ঠিং অপ্পহায।” চিত্ত” ত্রিবিধ “দক্খিণেয্য সম্পত্তি” এর মধ্যে একটি; ত্রিবিধ “দক্খিণেয্য সম্পত্তি” যথা—খেত্তসম্পত্তি (দান গ্রহীত), চিত্ত সম্পত্তি (সদিচ্ছা), পযোগসম্পত্তি (উপায়) (ৰিমানৰত্থু অর্থকথা)।  “চিত্ত” তিন প্রকার “ভাবনা” এর মধ্যে একটি তিন প্রকার “ভাবনা” , যথা—(দীর্ঘ নিকায়) কাযভাৰনা, চিত্তভাৰনা, পঞ্ঞভাৰনা। “চিত্ত” চতুর্বিধ “সতিপট্ঠান” এর মধ্যে একটি চতুর্বিধ “সতিপট্ঠান” , যথা—(দীর্ঘ নিকায়) কাযৰেদনা ধম্মা, চিত্তৰেদনা ধম্মা ইত্যাদি।” চিত্ত” বিনয়ের “অধিসীল” ইত্যাদিতে (সীল—নীতিতত্ত্ব, পঞ্ঞ—প্রজ্ঞা সহকারে) “সীলক্খন্ধ” এর অংশ স্বরূপ। (তুলনীয়) তিস্সো সম্পদ, যথা—সীলসম্পদা, চিত্তসম্পদা, দিট্ঠিসম্পদা ( = সীল এবং তুলনীয়—চেতনা, চেতসিক) (অঙ্গুত্তর নিকায়)। (সংযুক্ত নিকায়) “চিত্ত” এবং “পঞ্ঞা” এই শব্দ দুইটিও একত্র বিন্যাস হয়ে থাকে। (অঙ্গুত্তরনিকায়) অনুভূতি অর্থে “চিত্ত” শব্দ “সঞ্ঞা, চিত্ত, দিট্ঠি” সমবায়ে বুদ্ধিবৃত্তির প্রক্রিয়ার সঙ্গে বৈষম্য হয়ে থাকে। সোজা বা ইঙ্গিতে “চিত্ত” সম্বন্ধে বর্ণনা:—(ধর্মপদ অর্থকথা) চিত্তং’তি ৰিঞ্ঞাণং ভূমিকৰত্থু আরম্মণ কিরিযাদি—চিত্ততায পনেতং চিত্তং’তি ৰুত্তং। (খুদ্দকপাঠ অর্থকথা) চিত্তং’তি মনো মানসং। (নেত্তি) চিত্তং মনোৰিঞ্ঞাণং’তি চিত্তস্স এতং ৰেৰচনং। (ধর্মসঙ্গণী) যং চিত্তং মনো মানসং হদযং পণ্ডরং ইত্যাদি। মনিন্দ্রিয়। যেমন—“রপাবচর চিত্ত” (বিশুদ্ধিমার্গ)। “চিত্ত” এর সমপ্রয়োগের শ্রেণীতে অর্থ:—মন, হৃদয়, ইচ্ছা, বিজ্ঞান, অভিপ্রায়, সঙ্কল্প ইত্যাদি। হৃদয় সংবেদজ আবেগময় অথবা বোধশক্তি সম্বন্ধীয় ভাবোদ্দীপক সত্তার সাধারণ অবস্থাস্বরূপ, ইদ্রিয়সমূহে (ইন্দ্রিযানি) এটির সম্পর্ক। স্থির সঙ্কল্প ও অপ্রতিভ হৃদয় গভীর আবেগময় সাম্যাবস্থার লক্ষণ, ইহা ইন্দ্রিয়সমূহ দমনের কারণস্বরূপ বলে গ্রহণ করা হয়। (সংযুক্ত নিকায়) সমাদহংসু চিত্তং অত্তনো উজুকং অকংসু, সারথী ৰ নেত্তানি গহেত্বা ইন্দ্রিযানি রক্খন্তি পণ্ডিতা। (অঙ্গুত্তর নিকায়) উজুগতো—চিত্তো অরিযসাৰকো। (সংযুক্ত নিকায়) ঠিত চিত্ত। (অঙ্গুত্তর নিকায়) ঠিত চিত্ত আনেজ্জপ্পত্ত। (সূত্র নিপাত) চিত্তং ন কম্পতি। (সংযুক্তনিকায়) চিত্তং ন ৰিকম্পতে; (বিপ) চপলং চিত্তং (ধর্মপদ)। (অঙ্গুত্তর নিকায়) খিত্ত চিত্ত ৰিসঞ্ঞিন; চিত্তং রক্খিতং মহতো অত্থায সংৰত্ততি—সুরক্ষিত চিত্ত মহালাভের দিকে প্রবর্তিত হয়। সমার্থবাচক শব্দ:—চিত্তং দন্তং চিত্তং গুত্তং, চিত্তং সংৰুতং। (ধর্মপদ) চিত্তং রক্খেত মেধাৰী চিত্তং গুত্তং সুখাৰহং। (সংযুক্তনিকায়) চক্খুন্দ্রিযং অসংৰুতস্স ৰিহরতো চিত্তং ব্যাসিঞ্চতি রূপেসু। (ধর্মপদ) যে চিত্তং সঞ্ঞমেস্সন্তি মোক্খন্তি মারবন্ধনা—যারা চিত্তকে সংযম করতে পেরেছেন তাঁরা মারের বন্ধন হতে মুক্ত হয়েছেন; পাপা চিত্তং নিৰারযে। (সংযুক্ত নিকায়) ভিক্খুনো চিত্তং কুলেসু ন সজ্জতি, গয্হতি, ৰজ্ঝতি। কাম (বিসয়াসক্ত), রাগ (তীব্র আকাঙ্ক্ষাযুক্ত) সংস্পর্শে:- কামা (সূত্র নিপাত) কামা মথেন্তি চিত্তং। (সংযুক্ত নিকায়) কামরাগেন ডয্হামি। (সূত্র নিপাত) কামে নাপেক্খতে চিত্তং। (ধর্মপদ) মা তে কামগুণে ভমস্সু চিত্তং। (সংযুক্ত নিকায়) মনুস্সকেহি কামেহি চিত্তং ৰুট্ঠপেত্বা। (অঙ্গুত্তর নিকায়) ন উল়ারেসু কামণ্ডণেসু ভোগায চিত্তং নমতি; কামাসৰা পি চিত্তং ৰিমুচ্চতি। (দীর্ঘ নিকায়) কামেসু চিত্তং ন পক্খন্দতি নপ্পসীদতি ন সংতিট্ঠতি—আমার মন কাম সমূহে বা তীব্র আকাঙ্ক্ষায় উল্লম্ফন করে না, বসে না অথবা স্থিত হয় না। (সংযুক্ত নিকায়) কামেসু তিব্বসা রাগো ব্যাপন্নচিত্তো। (পেতৰত্থু অর্থকথা) কামামিসে লগ্গচিত্তো। রাগা—(সংযুক্ত নিকায়) রাগো চিত্তং অনুদ্ধংসেতি—রাগ বা ভ্রষ্টতা চিত্তকে ক্রমে ধ্বংস বা ক্লান্ত করে থাকে। (অঙ্গুত্তর নিকায়) রাগপরিযুট্ঠিতং চিত্তং হোতি। (সংযুক্ত নিকায়) সারত্ত চিত্তো; ৰিরত্তচিত্তো। বিবিধরূপে ব্যবহার:—(অঙ্গুত্তর নিকায়) পটিবদ্ধ চিত্ত; পরিযাদিন্নচিত্ত লাভেন অভিভূত (সংযুক্ত নিকায়) উপক্কিলিট্ঠ চিত্ত—উপক্লিষ্ট চিত্ত; (অঙ্গুত্তর নিকায়) ওতিন্ন চিত্ত—প্রেমে পতিত মন। শান্ত চিত্ত, একাগ্র চিত্ত, মীমাংসিত চিত্ত, আত্মদমিত বা বশীভূত চিত্ত, সুনিপুণ চিত্ত, অপ্রতিভ চিত্ত অর্থে:— (সংযুক্ত নিকায়) চিত্ত পসীদতি—মন আনন্দিত হয়; = পসন্নচিত্ত (অঙ্গুত্তর নিকায়)। (সংযুক্ত নিকায়) ৰিপ্পসন্ন চিত্ত। চিত্ত সংতিট্ঠতি। একজাতীয় শব্দে—সংতিট্ঠতি, সন্নিসীদতি, একোদি হোতি, সমাধিযতি (তুলনীয়) চেতসো একোদিভাৰ। চিত্ত সমাধিযতি—চিত্ত সমাধিস্থ বা ধ্যানস্থ হয়; = সমাহিত চিত্ত। চেতো সমাধি। সুপতিট্ঠিত চিত্ত; (মূলে আছে) চতূসু সতিপট্ঠানেসু সুপতি্টঠিত চিত্ত। (সংযুক্ত নিকায়) সুসন্ঠিত চিত্ত; ৰসীভূত চিত্ত। (ধর্মপদ) দন্তচিত্ত। মনের উদ্দেশ্যজনিত অর্থে: মন লাগানো, কিছু পাইবার জন্য পুনঃপুন চেষ্টা, উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, ইত্যাদি। চিত্তং নমতি—মন নমিত হয়; (একত্রে) চিত্তং অপ্পোস্সুক্কতায নমতি; চিত্তং নেক্খম্ম-নিন্ন নমতি (সংযুক্ত নিকায়); (ধর্মপদ) ৰিৰেক চিত্তং নমতি। চিত্তং পদহতি— ছন্দং জনেতি ৰাযমতি ৰিরিযং আরব্ভতি চিত্তং পগ্গণ্হাতি পদহতি (দীর্ঘ নিকায়)। প-নি-দহতি (পণিধি, পণিহিত—নত অর্থে); (তুলনীয়) চেতো পণিধি (সংযুক্ত নিকায়); তত্থ চিত্তং পনিদহতি; চিত্তং দুপ্পনিদহতি; চিত্তং সম্মাপনিদহতি (ধর্মপদ)। অসৎ চিত্ত বুঝালে:—পদুট্ঠ চিত্ত (তুলনীয়) চেতোপদোস; (বিপ) পসন্ন চিত্ত। ব্যাপন্ন চিত্ত। চিত্তে ব্যাপন্নে কাযকম্মং পি ব্যাপন্নং হোতি (অঙ্গুত্তর নিকায়)। সমোহ চিত্ত। (দীর্ঘ নিকায়) সমোহ চিত্ত সরাগচিত্ত ইত্যাদি। পবিত্রতায় পূর্ণ মন অর্থে:—পবিত্র চিত্ত, পরিষ্কার চিত্ত, শোধিত চিত্ত, মুত্ত চিত্ত, নিরপেক্ষ বা নির্লিপ্ত চিত্ত ইত্যাদি। মুত্ত চিত্ত, ৰিমুত্ত চিত্ত ইত্যাদি; (তুলনীয়) চেতসো ৰিমোক্খা, চেতো ৰিমুত্তি, মুত্তেন চেতসা; আসৰেহি চিত্তানি মুচ্চিংসু (সংযুক্ত নিকায়)। এখানে “ৰিমুত্ত চিত্ত” অর্থে “ৰিমুত্ত সুভাৰিত চিত্ত, ৰিমুত্ত ৰিরত্তচিত্ত, রাগা ৰিমুত্ত চিত্ত, ৰিমুত্ত সুদন্ত চিত্ত”। “সুৰিমুত্ত চিত্ত” অর্থে “সুৰিমুত্ত সতিমা চিত্ত”। (মধ্যম নিকায়) চিত্তং পরিসোধেতি। (সংযুক্ত নিকায়) অলীন চিত্ত। মেত্তচিত্তং ভাৰেতি—মনে মনে মৈত্রীচিন্তা করে অর্থাৎ সদিচ্ছা পোষণ করে বা মঙ্গল কামনা করে (দীর্ঘ নিকায়)। মেত্তা-সহগতেন চেতসা। ভাৰিত চিত্ত। ভাৰিত সুসমাহিত চিত্ত। সদ্ধা-পরিভাৰিত চিত্ত। ভাৰিত বহুলীকত চিত্ত। শান্ত, উপশমিত, নির্লিপ্ত চিত্ত অর্থে:—সন্তচিত্ত, উপসন্ত চিত্ত। পরিচালনীয় বা সহজে নড়ানো চড়ানো যায় এরূপ চিত্ত অর্থাৎ সত্য লাভের জন্য উৎসুক এবং প্রস্তুত, খোলা বা মুক্ত এবং নিজ নিজ মন অর্থে:—কল্লচিত্ত, মুদুচিত্ত, উদগ্গচিত্ত, পসন্নচিত্ত, লহুচিত্ত, লহুক মুদিত চিত্ত। বিবিধ বিশেষ ভাষায় ব্যক্ত:—(সংযুক্ত নিকায়) অব্ভুত—চিত্তজাতা—আশ্চর্যে পরিপূর্ণ চিত্ত; এৰং চিত্তো—এইরূপ মন, মনের এই অবস্থায় চিত্তেন মে গোতমো জানাতি—গৌতম আমার চিত্ত—সম্বন্ধে জ্ঞাত আছেন। (বিনয়) থেয্যচিত্তো—চুরি করবার চিত্ত (মধ্যম নিকায়) আরদ্ধ চিত্তো। (সংযুক্ত নিকায়) অঞ্ঞচিত্তং উপট্ঠাপেতি। (জাতক) নানাচিত্ত। (পেতৰত্থু অর্থকথা) নিহীনচিত্তো। (অঙ্গুত্তর নিকায়) নিকট্ঠচিত্তো আহটচিত্তো। (সংযুক্ত নিকায়) সুপহত চিত্ত। (ধর্মপদ) ৰিসঙ্খারগত চিত্ত। (সূত্রনিপাত) সম্পন্নচিত্ত। (সংযুক্ত নিকায়) ৰিব্ভন্তচিত্ত। চিন্তা বা ভাবনা অর্থে:—(সংযুক্ত নিকায়) মা পাপকং অকুসলং চিত্তং চিন্তেয্যথ—কোনরূপ পাপ চিন্তা করিও না। (পেতৰত্থু অর্থকথা) ন চিত্তমত্তংপি—(এখানে চিত্তোৎপত্তির ক্ষণ নির্দেশ করে বলা হচ্ছে) এমন কি একমাত্র চিত্তক্ষণও নয়; মম চিত্তং ভৰেয্য—আমার চিন্তা করা উচিত। বিশুদ্ধিমার্গে চিত্তকে বানরের স্বভাবের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

সমাধি' শব্দটি 'সম-আ-ধ' শিকড় থেকে এসেছে, যার অর্থ 'সংগ্রহ করা' বা 'একত্র করা', এবং এইভাবে এটি প্রায়শই 'ঘনিষ্ঠতা' বা 'মনের একীকরণ' হিসাবে অনুবাদ করা হয়। প্রথম দিকের বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে, সমাধি  শব্দটি সমাথা (শান্ত থাকা) এর সঙ্গেও যুক্ত। সমাধি কে একাগ্রতা, এক-বিন্দু মনের হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

সমাধি দুটি সংস্কৃত শব্দ ' সাম ' এবং ' ধি ' দ্বারা গঠিত যার অর্থ যথাক্রমে 'সম' এবং 'বুদ্ধি' বা 'বুদ্ধি'। সুতরাং, যে অবস্থায় একজন ব্যক্তি তার বুদ্ধির সমস্ত স্তরে সমতা আনয়ন করে তাকে সমাধি বলে।

সমাধিকে মনের অবস্থা হিসাবে বোঝা যায় যখন এটি সম্পূর্ণরূপে একটি চিন্তার মধ্যে বা নিজের মধ্যে শোষিত হয় যাতে সেই চিন্তার "পরিমাণ" এবং "গুণ" এর সমতা থাকে। আমাদের মন যখন কোনো চিন্তা, বস্তু বা ধারণার উপর সম্পূর্ণরূপে শোষণ করে, এমনকি অল্প সময়ের জন্যও, তখন তা সমাধিতে বলা যায়।

সমাধি শব্দের আরেকটি অর্থ হল 'সম্পূর্ণতা'। যেমন একটি সমস্যার সমাপ্তি বলা হয় তখনই যখন আমরা তার "সমাধান" পাই, সমাধিকে একটি চিন্তার সম্পূর্ণ সমাপ্তি হিসাবে অনুবাদ করা হয়। 

সমাধি শব্দের আরও একটি অর্থ হল 'একত্র করা।' এইভাবে, যে অবস্থায় বিষয় (ধ্যানকারী), বস্তুর ধ্যান ও জ্ঞান বস্তুর মিলনে মিলিত হয়, সেই অবস্থা হল সমাধি। এখানে, যে ব্যক্তি ধ্যান করছেন তিনি নিজেই ধ্যানের প্রক্রিয়ার সাথে একত্রিত হন।

সমাধি ও ধ্যান

অষ্টাঙ্গিক মার্গের আটটি উপাদানের মধ্যে সমাধি হল শেষ। এটিকে প্রায়শই ধ্যান (পালি: ঝানা) উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করা হয়, কিন্তু সূত্তের সমাধি ও ধ্যান একই নয়। যখন সমাধি এক-বিন্দুযুক্ত ঘনত্ব, ধ্যানে এই সমাধিটি প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করা হয়, সমতা ও মননশীলতার পথ দেখায়। ধ্যানের অভ্যাস ইন্দ্রিয়- গভীর  অনুভূতি প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াগুলিকে এড়িয়ে মননশীল উপায়ে ইন্দ্রিয়গুলিতে সমতা রাখা সম্ভব করে তোলে। দ্বিতীয় রূপ-ধ্যানের সময় সমাধি (সমাধি-জি, "সমাধি থেকে জন্ম" যা বিতর্ক-বিকার (আলোচনামূলক চিন্তা) থেকে মুক্ত এবং অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি প্রদান করে।

বুদ্ধঘোষ সমাধি কে সংজ্ঞায়িত করে "চেতনা ও চেতনার কেন্দ্রীকরণ একক বস্তুর উপর সমানভাবে ও সঠিকভাবে সহযোগে যে অবস্থার গুণে চেতনা ও এর সহগামীগুলি সমানভাবে এবং সঠিকভাবে একক বস্তুতে থাকে, বিক্ষিপ্ত ও বিক্ষিপ্ত"। বুদ্ধঘোষের মতে, থেরবাদ পালি গ্রন্থে সমাধির চারটি প্রাপ্তির উল্লেখ রয়েছে: ক্ষণিক একাগ্রতা (খণিকসমাধি): মানসিক স্থিতিশীলতা যা সমথ ধ্যানের সময় উদ্ভূত হয়।

প্রাথমিক একাগ্রতা (পরিকম্ম সমাধি): ধ্যানকারীর ধ্যান বস্তুর উপর ফোকাস করার প্রাথমিক প্রচেষ্টা থেকে উদ্ভূত হয়।

প্রবেশের একাগ্রতা (উপাচার সমাধি): যখন পাঁচটি বাধা দূর হয়, যখন ঝানা উপস্থিত হয়, এবং উপস্থিতির সাথে 'প্রতিভাগ চিহ্ন' (পতিভগনিমিত্ত) দেখা দেয়।

শোষণ ঘনত্ব (আপন সমাধি): বস্তুর ধ্যানের উপর মনের সম্পূর্ণ নিমগ্নতা এবং চারটি ঝাঁসের স্থিরকরণ।

বুদ্ধঘোষের মতে, তার প্রভাবশালী আদর্শ-কর্ম বিসুদ্ধিমগ্গে, সমাধি হল প্রজ্ঞা লাভের "আনুমানিক কারণ"। বিসুদ্ধিমগ্গ ধ্যানের জন্য ৪০টি বিভিন্ন বস্তুর বর্ণনা করে, যেগুলি পালি ধর্মশাস্ত্র জুড়ে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু স্পষ্টভাবে বিসুদ্ধিমগ্গে গণনা করা হয়েছে, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাসের মননশীলতা (আনাপানসতি) ও মৈত্রীময় দয়া (মেত্তা)।

বৌদ্ধ পালি গ্রন্থে তিন ধরনের সমাধি বর্ণনা করা হয়েছে যেটিকে ভাষ্যমূলক ঐতিহ্য 'মুক্তির দরজা' (বিমোক্ষমুখ) বা চীনা বৌদ্ধ ঐতিহ্যে 'মুক্তির তিনটি দরজা'  শূন্যতা-ঘনিষ্ঠতা (সূর্যত: শূন্যতা-সমাধি) (পালি: সুঞ্ঞত সমাধি) চিহ্নহীনতা-ঘনিষ্ঠতা (সূর্যত: অনিমিত্ত-সমাধি) (পালি: অনিমিত্ত সমাধি) বা নিদর্শন-ঘনিষ্ঠতা (সূর্যত: অলক্ষণ-সমাধি) লক্ষ্যহীনতা-ঘনিষ্ঠতা (সূর্যত: অপ্রনিহিত-সমাধি) (পালি: অপনিহিতো সমাধি)।

এই তিনটি সবসময় একই ক্রমে উদ্ধৃত হয় না। নাগার্জুন, একজন মধ্যমাক বৌদ্ধ পণ্ডিত, তার মহা-প্রজ্ঞাপারমিতা-শাস্ত্রে, এই "তিন সমাধি" সম্পর্কে তার প্রথম ব্যাখ্যায় অনিমিতার আগে অপ্রণিহিতকে তালিকাভুক্ত করেছেন। কিন্তু পরবর্তী তালিকায় এবং একই কাজের ব্যাখ্যাগুলি আরও সাধারণ ক্রমে ফিরে আসে। অন্যান্য, যেমন থিচ নাত হ্যান, থিয়েন বৌদ্ধ ভিক্ষু, শূন্যতা ও  অনিমিতার পর তৃতীয় হিসেবে অপ্রাণহিতাকে তালিকাভুক্ত করেন। নাগার্জুন এই তিন ধরনের সমাধিকে প্রকৃত জ্ঞানপ্রাপ্তদের (বোধিসত্ত্ব) গুণাবলীর মধ্যে তালিকাভুক্ত করেছেন।

নাগার্জুনের মতে, 'শূন্যতা'-এর উপর একাগ্রতা হল সমাধি যেখানে কেউ স্বীকার করে যে সমস্ত ধর্মের প্রকৃত প্রকৃতি একেবারেই শূন্য (অত্যন্তশূন্য), এবং যে পাঁচটি সমষ্টি স্ব (অনাত্ম্য) নয়, স্ব (অনাত্ম্য) এর অন্তর্গত নয় এবং স্ব-প্রকৃতি ব্যতীত শূন্য।

সংকেতহীনতার উপর মনোযোগ নাগার্জুনের মতে, 'সঙ্কেতহীনতা'-এর উপর একাগ্রতা হল সমাধি যেখানে কেউ স্বীকার করে যে সমস্ত ধর্ম লক্ষণমুক্ত (অনিমিত্ত)। থিচ নাত হ্যান-এর মতে, "লক্ষণগুলি" চেহারা বা ফর্মকে বোঝায়, চিহ্নহীনতার উপর একাগ্রতাকে চেহারা দ্বারা বোকা না বানানোর সঙ্গে তুলনা করে, যেমন সত্তা এবং অ-সত্তার দ্বিধাবিভক্তি।

মহর্ষি পতঞ্জলি বলেছেন যে মনের কাজ - চিত্তবৃত্তি - মুক্তির যৌগিক পথে বাধা। যদি ব্যক্তি চূড়ান্ত সত্য অর্জন করতে চায় তবে এই ৫টি বৃত্তিগুলি দূর করতে হবে।

ভারতীয় শাস্ত্রে বিভিন্ন পদ দ্বারা সমাধির অবস্থা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পতঞ্জলি যাকে সমাধি বা কৈবল্য বলেছেন তাকে বুদ্ধ কর্তৃক নির্বাণ বলা হয়েছে। এই সমস্ত শর্তগুলি মূলত চিন্তাহীনতা, আকাঙ্ক্ষাহীনতা এবং অ-আসক্তির একই অবস্থা প্রকাশ করে।

সমাধির পর্যায় অর্জন করা খুবই কঠিন। মহর্ষি পতঞ্জলি বলেছেন দুটি অনুশীলন ধ্যানকারীকে যোগিক পথে উন্নীত করতে পারে- অধ্যয়ন (আত্ম-অধ্যয়ন) এবং বৈরাগ্য (অ-আসক্তি)। এই দুটির ধারাবাহিক অনুশীলনের ফলে উচ্চ স্তরের উপলব্ধি হতে পারে এবং যোগী সমাধি অবস্থায় পৌঁছাতে পারে।

যখন আমরা দৈহিক আনন্দ, আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্তি পাই এবং নিজেদেরকে বোঝার দিকে এগিয়ে যাই, তখন আমরা বৃহত্তর পরিচয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাছাকাছি চলে যাই। কখনও কখনও, বৈষয়িক বস্তু, অনুভূতি, আমাদের চিত্তবৃত্তি আমাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সমাধি অর্জনের জন্য আমাদের অগ্রগতির অবনতি ঘটাতে পারে। 

দীর্ঘনিকায়ের “সুভ সুত্তন্তু”—এতে এটি “সমাধি-খন্ধ” (একাগ্রতায় বিভাগ বা অংশবিশেষ) সংজ্ঞা বা নাম দেওয়া হয়েছে, অন্য প্রকারে এর নাম “চিত্ত সম্পদা” যাহা “ সমণ” জীবন হতে পুণ্যফল রূপে উৎপন্ন হওয়ার ( “সামঞ্ঞফল সুত্তন্তু”) ঊর্ধ্বগতি (আরোহণ) ক্রমে “সীল সম্পদা” এবং “পুঞ্ঞ সম্পদা”—এতদুভয়ের মধ্যে দাঁড়ায়। “অম্বট্ঠ সুত্ত”—এতে অনুরূপ পদসমূহ হলো “সীল, চরণ, ৰিজ্জা” (দীর্ঘ নিকায়)। এরূপে “সমাধি” নিম্নোক্ত বিষয়সমূহে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যথা— ইন্দ্রিয় সমূহের রক্ষণ অর্থাৎ “ইন্দ্রিযেসু গুত্তাদ্বার”,  আত্ম—অধিকার বা স্থৈর্য বা প্রশান্তি অর্থাৎ “সতিসম্পজঞ্ঞ”, সন্তুষ্টি অর্থাৎ “সন্তুট্ঠি”,  পঞ্চবাধা (নীৰরনানি) হতে মুক্তি, চতুর্বিধ ধ্যান অর্থাৎ “ঝান”। এবম্বিধ উপায়ে আমরা দেখতে পাই যে “সমাধি” সুবিন্যস্ত “সম্পদা” সমূহের মধ্যে একটি, যেমন অঙ্গুত্তর নিকায়ে বলা হয়েছে—“সীলসম্পদ, সমাধিসম্পদ, পঞ্ঞাসম্পদ, ৰিমুত্তিসম্পদ” দীর্ঘ নিকায়ে সুবিন্যস্ত “খন্ধ” সমূহের মধ্যে যেমন বলা হয়েছে- “সীলক্খন্ধ, সমাধিক্খন্ধ, পঞ্ঞাক্খন্ধ, ৰিমুত্তিক্খন্ধ; চুল্লনিদ্দেসে যেমন বলা হয়েছে “সমাধি, ৰিমুত্তি, সীল”। মধ্যম নিকায়ে “সমাধি”—এর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে—“চিত্তস্স একগ্গতা”; ধর্মসঙ্গণীতে “চিত্তস্স অৰিক্খেপ” এবং “সমথ”—এর সঙ্গে অনন্যতা প্রতিপাদন করা হয়েছে। দীর্ঘ নিকায়ে বলা হয়েছে—“সম্মাসমাধি অষ্টবিধ আর্যমার্গের (অরিয-মগ্গ) মধ্যে একটি। “অরিয” (দীর্ঘ নিকায়), “সমথ-ৰিপস্সনা, সমাধি ৰিপ্ফারা ইদ্ধি (বিশুদ্ধিমার্গ) এর বর্ণনাও দ্রষ্টব্য। “সমাধি”—এর বর্ণনা এবং বিশেষ গুণ দ্বারা বর্ণনা:—এর চতুর্বিধ “নিমিত্ত” (নিদর্শন বা প্রমাণ) হলো চতুর্বিধ “সতিপট্ঠান” (মধ্যম নিকায়), ষড়বিধ অবস্থা এবং ষড়বিধ বাধা (অঙ্গুত্তর নিকায়), অন্যান্য বাধাসমূহ (মধ্যম নিকায়)। “সমাধি” হতে দ্বিতীয় ধ্যান (ঝান) উৎপন্ন হয় (দীর্ঘ নিকায়)। “কুসলা ধম্মা” লাভের মধ্যে “সমাধি” একটি অবস্থা-বিশেষ (অঙ্গুত্তর নিকায়); “সমাধি” অন্তর্দৃষ্টি বা পরিজ্ঞানের সহায়ক (অঙ্গুত্তর নিকায়), স্বর্গীয় দৃশ্যসমূহ দর্শনের সহায়ক ইত্যাদি (দীর্ঘ নিকায়), পাহাড় পর্বতাদি অপসারণের সহায়ক (অঙ্গুত্তর নিকায়); “সমাধি” নিজের ভ্রান্তিসমূহ বিদূরিত করে (অঙ্গুত্তর নিকায়), অর্হত্ত্বে নীত করে (অঙ্গুত্তর নিকায়); আনন্তরিক সমাধি (সূত্রনিপাত); (দীর্ঘ নিকায়) চেতোসমাধি (মনের উল্লাস বা মহানন্দ); (নেত্তি) চিত্তসমাধি; (সংযুক্ত নিকায়) ধম্মসমাধি। (দীর্ঘনিকায় অর্থকথা) “সমাধি” দ্বিবিধ ক্রম বা পদবিশিষ্ট, যথা—উপাচার সমাধি (প্রাথমিক সমাহরণ বা একাগ্রতা), অপ্পনা সমাধি (সমাহরণ বা একাগ্রতা লাভ); এখানে পরবর্তীটি “ঝান”-এর ফল-বিশেষ (বিশুদ্ধিমার্গ) এই দুইটির তৃতীয় ক্রম বা পদযুক্ত হয়েছে “খণিখ সমাধি (ক্ষণিক সমাধি বা একাগ্রতা)। (অঙ্গুত্তর নিকায়) “সমাধি”-এর তিন প্রকার বিশিষ্ট, যথা—সুঞ্ঞত (শূন্যময়), অপ্পনিহিত (লক্ষ্যহীন বা উদ্দেশ্যহীন), অনিমিত্ত (নিমিত্তহীন বা নিদর্শনহীন)। (দীর্ঘ নিকায়) “সমাধি (তযো সমাধি)” “সৰিতক্ক সৰিচার, “অৰিতক্ক ৰিচারমন্ত” অথবা “অৰিত অবিচার হয়ে থাকে। (দীর্ঘ নিকায়) “সমাধি চার প্রকার, যথা—ছন্দসমাধি, ৰিরিয সমাধি, চিত্ত সমাধি, ৰীমংসা সমাধি; অন্য প্রকারেও চতুর্বিধ, যথা—হানভাগি সমাধি, ঠিতিভাগিয সমাধি, ৰিসেসভাগিয সমাধি, নিব্বেধভাগিয সমাধি; অন্যত্র দুই হয় “ধম্মা দুপ্পটিৰিজ্ঝা” স্বরূপ।

 চিত্ত ও সমাধি গ্রন্থটি স্বল্প পরিসরে আমি প্রণয়ন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। হয়তো পাঠকদের কোথাও কোথাও অসংলগ্ন লাগতে পারে। একটু সমাধি সম্পন্ন হয়ে দৃষ্টি সহকারে পাঠ করেন তাহলে মনোশংকা বিদূরিত হবে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। এই ক্ষুদ্র পুস্তিকাটি প্রকাশ করার জন্য আমি পালি প্রকাশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। অলং ইতি বিত্থারেন।


সুমনপাল ভিক্ষু 

চেয়ারম্যান, বোধ-নিধি সোস্যাল ওয়েলফেয়ার কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। 

 

 

ফিলিপাইনে বৌদ্ধধর্ম ও বুদ্ধমূর্তি

 সুমনপাল ভিক্ষু

 

ফিলিপাইনে বৌদ্ধধর্মের প্রচারের সর্বপ্রাচীন প্রমাণ খ্রীষ্টীয় নবম শতকে যখন বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের প্রধানতম শাখারূপে পরিচিত ছিলো। এই যুগের কোন প্রাচীন বৌদ্ধ লিখিত নথি এখনও পাওয়া যায় নি। এর অন্যতম কারণ সম্ভবত লিখন মাধ্যমের নষ্ট হয়ে যাওয়া, যেগুলো পাতা ও বাঁশের উপর রচিত হয়েছিল। কিছু কিছু নথিতে ঐ দ্বীপে ঔপনিবেশিকদের এবং এশীয় বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাবের পূর্বে ফিলিপাইন যে সমস্ত স্বাধীন রাজ্য নিয়ে গঠিত ছিলো সেগুলিতে বৌদ্ধধর্মের অনুগামীর বাস করতো বলে জানা গিয়েছে যদিও জনগণের অধিকাংশই ফিলিপাইনের দেশীয় লোকধর্মকে মেনে চলতো। ফিলিপাইনের বজ্রযান সামুদ্রিক বাণিজ্যপথদ্বারা ভারতবর্ষ, শ্রীলঙ্কা, চম্পা, কম্বোডিয়া, চীন এবং জাপানের বজ্রযানে সঙ্ঘে এত গভীরভাবে সম্পর্কিত ছিলো যে এগুলিকে সম্পূর্ণভাবে পৃথক করা কঠিন এবং মধ্যযুগের সামুদ্রিক এশিয়ার একটি জটিল গূঢ় বৌদ্ধধর্মের কথা বলাই শ্রেয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান বন্দও নগরীগুলিতে যেখানে গূঢ় বৌদ্ধধর্মের বিকাশ ঘটেছিলো সেখানে সেটি শৈব ধর্মের সঙ্গে সহাবস্থান করতো।

সুমাত্রার শ্রীবিজয় সাম্রাজ্য ও জাভার মজাপহিত সাম্রাজ্য উভয়ই ১৯১৮ সাল পর্যন্ত পাশ্চাত্যের ইতিহাসে অজানা ছিলো যতদিন না Ecole Francaise d’ Exteme Qrient তাদের অস্তিত্ব অনুমান করেছিলেন কারণ চৈনিক তাং ও সুং রাজবংশের ইতিবৃত্তে তাদেও কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইজিং নামে একজন চৈনিক পণ্ডিত ভারতবর্ষে যাবার পথে ৬৮৭ খ্রি. থেকে ৬৮৯ খ্রি. পর্যন্ত সুমাত্রায় বসবাস করেছিলেন। শ্রীবিজয়ের জাঁকজমক সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দ্বীপগুলি জুড়ে বৌদ্ধধর্ম সমৃদ্ধিলাভ করেছে। এই দক্ষিণ সমুদ্রের দ্বীপগুলিতে অনেক রাজা ও সেনাপতি বৌদ্ধধর্মের প্রশংসা করেন এব বিশ্বাস করেন। এবং তাঁদের অন্তর সৎকর্ম সঞ্চয়ে মনোযোগী। শ্রী বিজয় সাম্রাজ্য সুমাত্রার পালেমবাং এ ৬৫০ খ্রি. হতে ১৩৭৭ খ্রি. পর্যন্ত ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরেও বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক কেন্দ্ররূপে সমৃদ্ধ হয়েছিলো। মধ্য জাভার একটি পাহাড়ের উপর ৭৭০ খ্রি. হতে ৮২৫ খ্রি. পর্যন্ত একটি মণ্ডল হিসেবে নির্মিত হওয়া বুরোবুদুর বর্তমানে শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের গরিমার প্রমাণরূপে বিরাজিত আছে। শৈলেন্দ্র রাজাদের তিনটি প্রজন্ম সেই মন্দিরটি নির্মাণ করেন খোনে বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের ব্রহ্মা-তথ্যের একটি ত্রিমাত্রিক দৃশ্য প্রদর্শিত হতো। পরবর্তীতে জাভাদেশীয় মজাপহিত সাম্রাজ্য শ্রী বিজয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে এবং ১২৯২ থেকে ১৪৭৮ খ্রি. পর্যন্ত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রধান বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। উভয় সাম্রাজ্যই খ্রীষ্ট্রীয় ৭ম শতকে থেরবাদের কৃচ্ছ্রতামূলক আচার অনুষ্ঠানের পরিবর্তে ব্রজযানের আচার অনুষ্ঠানকে গ্রহণ করেছিলো।

বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের কোন সম্প্রদায় ছিলো না, এর অর্থগত নাম ছিলো ‘হীরক যান’। এটি তান্ত্রিক বা মন্ত্রযান বৌদ্ধধর্ম নামেও পরিচিত। ধ্যানের পরিবর্তে আচার অনুষ্ঠান ছিলো বজ্রযানের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও এটির গূঢ় শিক্ষাকে কেবল ধর্ম স্থানান্তরেণের দ্বারাই অপরকে দেওয়া সম্ভব।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার (১০)

ফিলিপাইনের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি বৌদ্ধ শিল্পদ্রব্যাদি (৯), এগুলির শৈলীতে বজ্রযানী প্রভাব রয়েছে, এদের অধিকাংশ খ্রীষ্টীয় নবম শতকে নির্মিত। এটির শিল্প সামগ্রীতে শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের মূর্তিতত্ত্বের প্রভাব রয়েছে।

বজ্রযান ও ফিলিপাইনের প্রাথমিক শিল্পকর্মের উপর তার প্রভাব:

শিল্প সামগ্রীগুলির বৈশিষ্ট্য থেকে প্রমাণিত হয় সেগুলি ঐ দ্বীপে নির্মিত হয়েছিলো, এগুলি থেকে বুঝা যায় যে, শিল্পী  বা স্বর্ণকারের বৌদ্ধ সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গভীর জ্ঞান ছিলো, কারণ তারা বৌদ্ধ শিল্পকর্মের একটি অনন্য নিদর্শন সৃষ্টি করেছেন। এগুলি থেকে এ অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মবলম্বী মানুষের অস্তিত্ত্বের কথা প্রমাণিত হয়। এই স্থানগুলি ছড়িয়েছিলো মিন্দান্তদ্বীপের জ্ঞা গু সান-সুরিপাও অঞ্চল হতে ফেবু, পালাওয়ান এবং লুজন দ্বীপ পর্যন্ত। অতএব, নিঃসন্দেহে বজ্রযান বৌদ্ধধর্ম সমগ্র দ্বীপ পঞ্চ জুড়ে দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলো।

১২২৫ সালে ফুস্তিলে প্রদেশের একজন তত্ত্বাবধায়ক সামুদ্রিক বাণিজ্যের চীনের জাগুরুগুয়া জু ফানছি বা বিভিন্ন বর্বর জাতির বিবরণ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থে তিনি লুজানের মিন্দোরোদ্বীপে মি-ই নামে একটি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের বিবরণ দেন যেটি ছিলো একটি প্রাক্ হিস্পানীয় ফিলিপনীয় প্রদেশ। এই গ্রন্থে তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘মাই দেশটি বোর্নিওর উত্তরে অবস্থিত। এখানকার বাসিন্দারা একটি ছোট নদীর অপর প্রান্তে বিশাল গ্রামে বসবাস করে এবং নিজেদের একটি চাদরের মতোন কাপড় কণ্ড দিয়ে আবৃত করে। এখানে জঙ্গলে বুদ্ধের অনেক ধাতব মূর্তি রয়েছে যেগুলি কোথা হতে এলো তা অজানা।

প্রথম স্পেনীয়রা তাম্রলেখ প্রথার যে নম্রতা দেখেছিল এবং যেটি অন্য প্রদেশের একই জাতির এবং লুজানের থেকে পৃথক সেটি বৌদ্ধধর্মের ফলাফল হওয়া সম্ভব তামার বুদ্ধমূর্তিও রয়েছে। বৌদ্ধ দেবী তারার সোনার মূর্তি ছিলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম। তারা ছিলেন শূন্যতায় পরমের প্রতীক। এটি ছিল হৃদয়ের জ্ঞান যেটি প্রকাশত হয় ভালোবাসা ও করুণার মাধ্যমে। বজ্রযান ঐতিহ্য আমাদের আরও বলে মানুষের হৃদয়ের করুণার প্লাবনের কথা। বোধিসত্ত্বের করুণার আকর্ষণীয় কাহিনীর কথা যিনি কোন প্রাণীর চীৎকার শুনলেই সেটির দুঃখে চোখের জল ফেলতেন। সেই চোখের জলে একটি হ্রদ তৈরী হয় যেখানে একটি পদ্মফুল ফোটে। এই ফুল হতে তারাদেবীর জন্ম হয় যিনি তাদের দুঃখ ও যন্ত্রণার উপশম করেন।

শিকাগোর Natural History’i Field Museum— এর সংগ্রহে Agusan মূর্তি:

Agusan মূর্তিটি অগুসানের ঐসপারাঞ্জাতে আবিষ্কৃত হয় ১৯১৮ সালে এবং এটি ১৯২০’র দশক হতে শিকাগোর ইলিনয়ের Field Museum of Natural History রক্ষিত আছে। ফিলিপাইনের প্রত্তত্ত্ব ও নৃতত্ত্বচর্চার পথিকৃৎ হেনরি ওটলি বেয়ার এবং কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এটির পরিচয় সম্পর্কে সহমত হয়েছেন এবং এটির তারিখ নির্ধারণ করেছেন ৯০০-৯৫০ খ্রিষ্টাব্দ, যেটি শ্রীবিজয় সা¤্রাজ্যের শৈলেন্দ্র বংশের রাজত্বকালের মধ্যে পড়ে। তবে তারা অগুসান মূর্তিটির কালনির্ণয় করতে পারেন নি। সেটির নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে। যে দ্বীপপুঞ্জটি পরবর্তীকালে মালয় নামে পরিচিত হয় সেখানে হিন্দু দেবতাদের মূর্তি ইসলামের আগমনের সময় লুকিয়ে রাখতে হতো সেগুলিকে দাঙ্গার হাত ততে রক্ষা করার জন্য, কারণ সেটি সমস্ত মূর্তিই ধ্বংস করে ফেলতো। মিন্দানাওতে ১৯১৭ সালে হিন্দু মালয় দেবী স্বর্ণতারার একটি ৪ পাউণ্ডের সোনার মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছিলো। ঐ মূর্তিটি আগুসান মূর্তিকে বুঝাতো এবং এটি বর্তমানে শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিষ্ট্রিতে রাখা আছে। মূর্তিটি একটি হিন্দু মালয় দেবীর যিনি পদ্মাসনে উপবিষ্টা। এটি ২১ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে তৈরী এবং এটির ওজন প্রচার পাউন্ড। এটির উষ্ণীষ রত্খচিত এবং এটির বাহু এবং দেহের অন্যান্য বিভিন্ন অংশে প্রচুর অলঙ্কার রয়েছে। পণ্ডিতদের মতে এই মূর্তিটি ত্রয়োদশ/চতুর্দশ শতকে নির্মিত হয়েছিলো। সম্ভবত স্থানীয় শিল্পীরা একটি জাভাদেশীয় মূর্তি নকল করে এই মূর্তিটি নির্মাণ করেছিলেন। যে সোনা এই মূর্তিটি নির্মানে ব্যবহৃত হয়েছিলো সেটি মিন্দানাও থেকে এসেছিলো যেহেতু কথিত আছে, জাভাদেশীয় খনি শ্রমিকেরা এই সময়ে ভূটানে সোনার খনির কাজে নিযুক্ত ছিলো। এই স্বর্ণখনিগুলির উপস্থিতি, এই শিল্পকর্মটি এবং বিদেশীদের উপস্থিতি থেকে বুঝা যায় যে বৈদেশিক বাণিজ্যের অস্তিত্ব ছিলো, বিনিময় প্রথা নির্ভর অর্থনীতিতে দেশীয় ও বিদেশীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক যোগাযোগে সোনা ছিলো প্রধান মাধ্যম।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে এই মূর্তিটি ফিলিপাইনের নয়। লুইজি অ্যাড্রিয়ানা উড (যার স্বামী লিওনাড উড ছিলেন ১৯০৩ থেকে ১৯০৬ পর্যন্ত মোরো প্রদেশের সামরিক গভর্ণর এবং ১৯২১  থেকে ১৯২৭ গভর্ণর জেনারেল) শিকাগোর ন্যাচারাল হিস্ট্রি যাদুঘর দ্বারা মূর্তিটি ক্রয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিরেন। বর্তমানে এটি যদুঘরের গোল্ড রুম এ প্রদর্শি আছে। ‘ফিলিপাইনের প্রত্নতত্ত্ব ও মূর্তিতত্ত্ব’এর জনক নামে পরিচিত অধ্যাপক বায়রের মতে, ১৯১৭ সালে একজন মহিলা এটিকে আগুসানের এপাবনাজর কাছে ওয়াওযা নদীর বাম তীরে ঝড় ও বন্যার পর একটি গিরিখাতে পলি থেকে বের হয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পেয়েছিনে। তাঁর হাত থেকে মূর্তিটি যায় বিয়াম ব্যালোগান নামে এক স্থানীয় সরকারী কর্মচারীর কাছে। এর অল্প কিছু পর এর মালিকানা যায় আগুসান কোকোনাট কোম্পানীর কাছে যাদের কাছ থেকে ব্যাকলোগান অনেক টাকা ধার নিয়েছিরেন উড সেই কোকোনাট কোম্পানীর কাছে যাদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন উড সেই সেই কোকোনাট কোম্পানীর কাছ থেকে মূর্তিটি কিনেছিলেন। আগুসাল ডেল সুরের এস্পেরেঞ্চায় খননকার্যেও সময়ে হিন্দু বৌদ্ধ দেবী কিন্নরের একটি সোনার মূর্তি পাওয়া গিয়েছিলো। ফিলিপাইনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে অনেক সোনার তৈরী শিল্পদ্রব্যও পাওয়া গিয়েছে। এগুলির অধিকাংশই শ্রী বিজয়ের সাম্রাজ্যের নবম শতকে নির্মিত হয়েছিলো। এই শিল্পকর্মগুলির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থেকে এগুলির ঐ দ্বীপে নির্মিত হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। সম্ভবত এগুলি স্থানীয়ভাবে নির্মিত হতো কারণ প্রতœতাত্ত্বিক পিটার বেলউড একটি প্রাচীন স্বর্ণকারের দোকানের অস্তিত্তব আবিষ্কার করেছিলেন যেটি বাটানেতে ওমেগা আকৃতির সোনার অলঙ্কার নির্মাণ করতো। বৌদ্ধ শিল্পসামগ্রী পপ্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত ছিলো যেগুলোর শৈলীতে বজ্রযানী প্রভাব পরিলক্ষিত হতো। অন্যান্য প্রত্ন নিদর্শনের মধ্যে ছিলো বৌদ্ধধর্ম ও হিন্দুধর্মের কিংবদন্তীর পাখির মতো একটি প্রাণী গরুড়, এবং বেশ কিছু পদ্মপাণি মূর্তি। পদ্মপাণি অবলোকিতেশ্বর বা আলোকিত সত্তা বা করুণার বোধিসত্ত্ব নামেও পরিচিত ছিলো। টিকে থাকা বুদ্ধ মূর্তি ও ভাস্কর্য মূলতঃ পাওয়া গিয়েছিলো টাবন গুহাতে ও তার আশেপাশে ফিলিপ মেইজ দ্বারা পরিচালিত সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দৈত্যাকৃত ভাস্কর্য পাওয়া গিয়েছে এবং তিনি গুহার মধ্যে সমাধি ক্ষেত্রে সেই সমস্ত বস্তুর পেয়েছেন যেগুলিকে তিনি গুহাচিত্র বলে মনে করেন যেখানে পশ্চিমদিকে যাত্রা বর্ণনা করা হচ্ছে। মিল্টন অসবোর্ণের মতোন পণ্ডিতেরা দৃঢ়ভাবে বলেন যে এই বিশ্বাস গুলি মূলত ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও এগুলি দক্ষিণ পূর্ব এশীয় সংস্কৃতি সহ অস্ট্রোনেশীয় মূলের মাধ্যমে ফিলিপাইনে পৌঁছেছিলো। শিল্পনিদর্শন থেকে ফিলিপাইনেও তার পূর্ববর্তী অবস্থার উপর বজ্রযানী ঐতিহ্য ও তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

ব্রোঞ্জ লোকেশ্বর: এটি লোকেশ্বরের একটি ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি যেটি ম্যানিলার তোল্ডোর ইসলা পুর্টি বাটোতে পাওয়া গেছে।

অমিতাভ বুদ্ধের সাব রিলিফ: অধিকাংশ ভাষার সংস্কৃত থেকে উৎপন্ন হওয়া এবং কিছু প্রাচীন মৃৎদ্রব্য থেকে প্রমাণিত হয় প্রাচীন বাতাঙ্গুযেনোরা ভারতবর্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলো। কাতালাঙ্গান পৌরসভাতে মাটির ছাঁচে একটি বুদ্ধমূর্তি পুনরুৎপাদিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ঐ পাত্রের মূর্তিটি ভারতবর্ষ, শ্যাম ও নেপালের বুদ্ধমূর্তিও অনুরূপ। এই পাত্রটিতে বুদ্ধকে ত্রিভঙ্গ মুদ্রায় একটি ডিম্বাকার জ্যোতির মধ্যে দেখা যাচ্ছে। পণ্ডিতদের মতে এই মূর্তিটিতে শক্তিশালী মহাযানী প্রভাব দেখা যাচ্ছে হেহেতু বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের চিত্র আঁকা হয়েছে।

পালাওয়ানের স্বর্ণ গরুড়: আরেকটি সোনার শিল্পকর্ম হলো হল পালাওয়ান দ্বীপের তাবন গুহা থেকে প্রাপ্ত বিষ্ণুর বাহন গরুড়ের মূর্তি। তাবন গুহায় সূক্ষ্ম হিন্দু কারুকার্য এবং সোনার শিল্প দ্রব্যের আবিষ্কারকে দক্ষিণ ভিতেনামের মেকং বদ্বীপে প্রপ্ত প্রত্ননিদর্শনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

ব্রোঞ্জ নির্মিত গণেশ মূর্তি: পালাওয়ানের পূয়ের্তো প্রতœস্থলে ১৯২১ সালে হেনরি ওটলি হিন্দু দেবতা গণেশের একটি একটি অসংস্কৃত ব্রোঞ্জ মূর্তি খুঁজে পেয়েছিরেন। এই অসংস্কৃত ব্রোঞ্জ মূর্তিটি স্থানীয় ব্যক্তিদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিলে।

এাষ্টান অবলোকিতেশ্বর: এই মূর্তিটিকে ১৯২১  সালে হেনরি ওটলি বায়ার চেবুর মাস্তানে মাটি খুঁড়ে বের করেছিলেন। এই মূর্তিটি ব্রোঞ্জ নির্মিত এবং এটি বি. . .  বৌদ্ধমূর্তি নয়। শৈব বৈশিষ্ট্যের এটি সংমিশ্রণ।

স্বর্ণতারা, অতিরিক্ত তথ্য:  তারা (বৌদ্ধধর্ম) এবং মহাবিদ্যা। স্বর্ণ নির্মিত কিন্নরী।

পদ্মপাণি ও নন্দী মূর্তি: পদ্মপাণি করুণার বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের অবতার রূপেও পরিচিত। এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত স্বণালঙ্কারের মধ্যে রয়েছে অঙ্গরীয়, নন্দীর মূর্তি আঁকা বিষ্ণু মূর্তি, পবিত্র ষাঁড়, হার, লিপি যুক্ত সোনার পাত, বিভিন্ন দেবদেবীর চিহ্নযুক্ত সোনার ফলক।

লাগুণা তাম্রফলক লিপি: এটি ১৯৮৯ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটি খ্রীষ্টীয় নবম শতকে ইন্দোনেীশয়াতে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেও প্রভাব বহন কওে যেটি ষোড়শ শতকে ইওরোপীয় ঔপনিবেশিকদের আগমনের পূর্বে সমস্ত হিন্দু ধর্মের মাধ্যমে ক্রিয়াশীল হয়েছিল।

লোকধর্মের অন্তর্ভুক্তি: তাগালোগ ও বিসায়ান বিশ্বাসের  মূলে ছিল এই ধারণা যে পৃথিবীতে ভূত ও অলৌকিক সত্তাদের বাস রয়েছে, যারা ভাল ও মন্দ উভয় ধরণেরই এবং পূজার মাধ্যমে আবশ্যই তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। স্থানীয় লোকধর্মেও সঙ্গে  হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মেও উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটেছিল। ফিলিপাইনের কিংবদন্তীতে একজন দিওয়াত্রা ছিলেন (সংস্কৃত দেবতা ও স্পেনীয় ইনচামতাদা থেকে উৎপন্ন) একধরণের অলৌকিক ক্ষমতাযুক্ত সত্তা। প্রাক্ ঔপনিবেশিক ফিলিপাইনের কিংবদন্তীতে আত্তীকরণের পর ‘দিওয়াত্রা’ শব্দটি বিভিন্ন স্তরের অর্থ গ্রহণ করেছে। ঐতিহ্যগতভাবে এই শব্দটি বিসাওয়াস, পালাওয়ান এবং মিন্দানাও আতলে ব্যবহৃত হয় এবং আনিতো শব্দটি ব্যবহৃত হয় লজন অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে। দুটি শব্দই ব্যবহৃত হয় বিকল, মারিনডুক, বোমব্লোন এবং মিন্ডোরো অঞ্চলে এবং এই অবতলটি দুটি পরিভাষার এক ধরণের মধ্যবর্তী এলাকা।(১৫৯৫-১৬০২) পেড্রো চিরিনোর দেওয়া Bathala শব্দটির বানান সম্ভবত Relaeion de las costumbres se las Tagalas (1589, Juan de Plasenua) এবং এ G Badhala Ges  Relaeion de las Yslas Filipinas (1582, Mignel de Loarea) G Batalai এর মত প্রাচীনতর নথি থেকে প্রাপ্ত দুটি পৃথক বানানের সংমিশ্রণ। শেষোক্তটিকেই সঠিক বানান বলে মনে হয়, কারণ স্পেনীয় ভাষায় য অক্ষরটি উচ্চারিত হয় না। বাথালা বা বতালা আপাতভাবে পাওয়া গিয়েছে সংস্কৃত ভট্টারা (অভিজাত প্রভু) শব্দটি হতে যেটি দক্ষিণ ফিলিপাইন ও বোর্নিওতে ষোড়শ শতকের উপাধি বাতারা নামে আবির্ভূত হয়। ইন্দোনেশীয় ভাষায় বাতারা শব্দটির অর্থ দেব, এর স্ত্রী রূপ হলো বাতারি। এটি উল্লেখযোগ্য যে মালয়তে বেতারা শব্দের অর্থ পবিত্র, এটি প্রযুক্ত হতো জাভার ক্ষমতাশালী হিন্দু দেবতাদের ক্ষেত্রে। উপাধিটি মহাজপহিতের শাসকও গ্রহণ করেছিলেন।

আগুসান মূর্তি: (সাধারণভাবে ফিলিপাইনের বৌদ্ধ তারা মা আগুসান মূর্তি হিসেবে অনুমিত কিন্তু বিতর্কিত পরিচয় উল্লেখ কওে এটিকে স্বর্ণতারা নামে উল্লেখ করা হয়)। এটি দুই কেজি (৪.৪ পাউ-) ২১ ক্যারেট স্বর্ণ মূর্তি যেটি ১৯১৭ সালে ফিলিপাইনের এস্রারানাজাতে আগুসান ডেলসুরে ওয়াওয়া নদীর তীরে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটি নির্মিত হয়েছিল নবম থেকে দশম শতকের মধ্যে। মূর্তিপি প্রায় ১৭৮ মিমি (৭ ইঞ্চি) উঁচু। এটি একটি পদ্মাসনে উপবিষ্ট হিন্দু বা বৌদ্ধ দেবী। মূর্তিটির পরিধানে রয়েছে রতœখচিত উষ্ণীষ এবং দেহের বিভিন্ন অংশে অলঙ্কার রয়েছে। বর্তমানের এটি শিকাগোর Field museum of National History রক্ষিত আছে। এটির আবিষ্কারের পর থেকে স্বর্ণ মূর্তির দেবীর পরিচয় নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। স্বর্ণমূর্তির প্রস্তাবিত পরিচিতিগুলি হল হিন্দু দেব দেবী থেকে বৌদ্ধ দেবদেবী থেকে বৌদ্ধ তারা। সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে যে এটি তান্ত্রিক বৌদ্ধ দেবী বজ্রপালা।

H. Utlgy এর মতে, মূর্তিটি একটি হিন্দু শৈব দেবী। কিন্তু এটির ধর্মীয় গুরুত্বযুক্ত হস্তমুদ্রাটি ভুলভাবে নকল করেছেন স্থানয়ি শ্রমিকেরা। তাই এর থেকে বোঝা যায় যে, ফার্ডিনা- ম্যাগেলাটনর আগমনের পূর্বে দ্বীপে হিন্দুধর্মের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু তার সঙ্গে এটিও বোঝা যায় পূর্বেও ফিলিপাইনবাসীদেও মহাপহিত সা¤্রাজ্য থেকে গৃহীত হিন্দু ধর্মের একটি ভুল ধারণা ছিল। সেখানকার দেশীয় মানুষেরা হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেনি কিন্তু তারা হিনদুধর্মের বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করেছিল যদিও তারা দেশীয় এ্যনিমিস্ট ধর্মকে অক্ষুণ্য রেখেছিল সোনার আগুসান মূর্তিটি তৈরী হয়েছিল পূর্ববর্তী মজাপহিত পর্যায়ের ঞাণমুক ব্রোঞ্জ মূর্তিও অনুকরণে।

এই মূর্তিটি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন ১৯২০ সালে বাটাডিয়ার D.K Baseh| তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে মূর্তিপি আদি মজাপহিত পর্বেও এটি ঞানচুক মূর্তির নকলে মিন্দাওয়ের একজন শিল্পীর দ্বারা নির্মিত হয়েছিলো এবং সেই স্থানীয় শিল্পী হাতের বৈশিষ্ট্যটি লক্ষ্য করেননি (সম্ভবত এটির সেই সমস্ত জাভাদেশীয় খনিশ্রমিকদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে থাকা ১৪ শতকের শেষে বা মাঝামাঝি সময়ে আগুসান সুরিপাও আদলে সোনার খনিতে কাজ করত বলে জানা গিয়েছে।) আপাতভাবে মূর্তিটি একটি শৈব দেবীর এবং এটির সঙ্গে ‘বুটুয়ান’ নামটি সঙ্গতিপূর্ণ (যার অর্থ লিঙ্গ)- H Utley Beyer, ১৯৪৭ অপরদিকে Juan R Francise সোনার মূর্তিটির পরিচয় সম্পর্কে বেয়ারের সিদ্ধান্তকে সন্দেহজন বলে মনে করেছেন। তিনি বেয়ারের নিন্মোক্ত সিদ্ধান্তগুলি সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। ১. বুটুয়ান শব্দটির অর্থ লিঙ্গ (বুটুয়ান শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে।) ২. বুটুয়ানের রাজা যেহেতু মুসলমান ছিলেন না তাই তিনি হিন্দুধর্মের শৈব সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছিলেন। ৩. মান্দায়(দক্ষিণে যেখানে আগুসুয়ান মূর্তিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল) এবং চেবুতে আবিষ্কৃত হওয়া অন্যান্য শৈব মূর্তির অস্তিত্ব তার স্বর্ণমূর্তিটির শৈব দেবী পরিচয় সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটিকে সমর্থন করা উচিত। শেষোক্ত বেয়ারের অনুমান সম্পর্কে ফ্রান্সিসকো নির্দেশ করেন যে অন্যান্য। শৈব বলে অনুমান করা মূর্তিগুলির পরিচয় এগুলির সবই ১৯৩০ এর দশকের প্রথমদিকে Aleno de Manila Museum এর অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। সন্দেহজন, যেহেতু জন ক্যারল যিনি চেবুর মূর্তিটির আলোকচিত্রটি পরীক্ষা করেছেন বিশ^াস করতেন যে এটি ‘অবলোকিতেশ্বর’, শিব নয়। ফ্রান্সিসকো স্বর্ণ মূর্তিটির  পুনঃ প্রতীক্ষার উপর ভিত্তি করে বিশ্বাস করেছিলেন যে এটি বৌদ্ধ তারার মূর্তি। মনে হয় মূর্তিটি মহাযান বৌদ্ধধর্মের অন্তর্গত কোন দেবীমূর্তি। এটি নারী বোধিসত্ত্বের ধারণার সাথে জড়িত একই সঙ্গে এটি হিন্দু দেবী (শক্তি) এবং তারা (বৌদ্ধ দেবতার স্ত্রী) হিসেবে পরিচিত মোট দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়  বৌদ্ধধমর্রে একটি বিশেষ বিকাশ।

Juan R Francisco A note on the Golden Image of Agusan (১৯৬৩): জাভার ঞানমুক থেকে বস্ত্র ধাতু মণ্ডলের চারটি ব্রোঞ্জ নির্মিত দেবীমূর্তি পাওয়া গিয়েছে।

আগুসান মূর্তিটির আরেকটি প্রস্তাবিত পরিচয় হল এই যে, মূর্তিটি বস্ত্রাতুর নামে পরিচিত মণ্ডলের অন্তর্বৃত্তে থাকা চারজন দেবীর অন্যতম। তান্ত্রিক বৌদ্ধধর্মে বস্ত্রধাতুর মণ্ডল হল বিস্তৃত চিত্র যেটি বিশ্বব্রহ্মা-কে প্রতীকীভাবে পরিবেশন কওে মণ্ডলগুলিকে উপস্থাপন করা যেতে পারে দ্বিমাত্রিক (হয় সমতল তলের উপর অস্থায়ীভাবে আাঁকা, বা কাপড়ের উপর চিত্রিত করা বা ধাতুর পাত খোদাই করা),  ত্রিমাত্রিক মণ্ডলগুলিকে ব্যবহার করা হয়েছিল জল, ফুল, ধূপ, দীপ ইত্যাদি দানের পবিত্র আচার অনুষ্ঠানের সময়ে।

বস্ত্র ধাতু মণ্ডল আদি বৌদ্ধ মণ্ডল মধ্যে অন্যতম সুপরিচিত ও বিস্তৃতভাবে আলোচিত মণ্ডল। এই মণ্ডলের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে বুদ্ধ বৈরোচন, তাঁকে বেষ্টন করে রয়েছে দেবতাদের একটি বৃত্ত। ঐ অন্তর্বৃত্তে চারজন অতীন্দ্রিয় বুদ্ধ চারটি কোণ দখল করে আছেন, এঁদের প্রত্যেককে চারজন করে পরিচারক বেষ্টন করে রয়েছে এবং বেষ্টনকারী চারজন দেবী অন্তর্বৃত্তের চারটি কোণে রয়েছেন। বুদ্ধ বৈরোচনের কাছে অর্ঘ্যদানকারী চারজন দেবী হলেন বজ্রলস্য (কামোদ্রেককারী নৃত্য, দক্ষিণ পূর্ব কোণে উপবিষ্টা), বজ্রমালা (মালা, দক্ষিণ পশ্চিমে উপবিষ্টা), বজ্রগীত (সঙ্গীত, উত্তর পশ্চিমে উপবিষ্টা), এবং বজ্রনৃত্য  (নৃত্য, উত্তর পূর্বে উপবিষ্টা)। বহির্বৃত্তে রয়েছেন আরো ষোলজন দেবতা, চারজন চারটি কোণে অবস্থিত বহির্বৃত্তটি ঘিরে রেখেছেন আরও ১০০০ জন বুদ্ধ ও ২৪ জন দেবতা এবং চারজন রক্ষক দেবতা চারটি দিককে রক্ষা করছেন।

পণ্ডিত Rab Linrthe ছিলেন প্রথম পণ্ডিত যিনি আগুসানের মূর্তিটিকে বজ্রপালের মূর্তি হিসেবে সনান্ত করেছেন যাঁকে সবসময় নিতম্বে হাত রাখা অবস্থায় দেখা গিয়েছে। Florine Capistrano-Balder এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সহমত হয়েছেন এই আগুসান স্বর্ণমূর্তিটির সঙ্গে Nganuk -এ আবিষ্কৃত বজ্রহীরক মণ্ডলে বসান চারটি ব্রোঞ্জমূর্তির মত মূর্তির  শৈলীর সাদৃশ্য থেকে। ঞানচুক মূর্তি ও আগুসান স্বর্ণ মূর্তির সাধারণ বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্য পূর্বেই ১৯২০ সালে উল্লেখ ওলন্দাজ পণ্ডি F.D.K. Baseh পরে তার বক্তব্যকে ব্রোঞ্জ মূর্তিগুলির চিত্রের অভাবের জন্য তত গুরুত্ব দেয়নি। সাম্প্রতিককালের পণ্ডিতেরা আগুসান মূর্তি ও ঞানচুক ব্রোঞ্জ দেব মূর্তির মধ্যেকার সম্পর্কে পুনর্মূল্যায়ন করেছেন যেহেতু সেগুলি প্রায় একই সময়ে নির্মিত হয়েছিল (১০ম-১১শ শতাব্দী)। সোনার তৈরী অর্ঘ্যদানকারী ক্ষুদ্র মূর্তিটির দেবী বজ্রলাস্য হিসেবে সনাক্তকরণ থেকে বুঝা যায় যে এটি হীরকজগৎ ম-লে সঙ্গে যুক্ত বিশাল সংখ্যক অর্ঘ্যদানকারী দেবীর সঙ্গে সম্পর্কিত যাদের গতিবিধি এখনও অজ্ঞাত যা হয়ত কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে।

যদিও আগুসান বজ্রলাস্য এবং জ্ঞানচুক অর্ঘ্যদানরত দেবীদের সম্পর্কেও আলোচনার বিষয়টি পণ্ডিতদের নজর এড়িয়ে গিয়েছে, এটি সত্য যে আগুসুয়ান মূর্তিগুলিও একই প্রজাতির।

Fleruna H Capistrano Baker: প্রাচীন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভূটান।

Philippine Avcesfal Gold (২০১১) : অন্যতম যে কারণের জন্য প-িতদের পক্ষে মূর্তিগুরিকে সনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে তা হল এই যে এটির বিশেষ কোন মূর্তিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নেই। ফিলিপাইনের স্বর্ণকাররা হিন্দ ও বৌদ্ধ শৈল্পিক রীতি নীতি জানলেও এর মধ্যে এমন কোন বিশেষত্ব অন্তর্ভুক্ত করেনি যার মাধ্যমে এগুলি কোন নির্দিষ্ট দেবতারূপে সনাক্ত করা যাবে। ফিলিপাইনের স্বর্ণকাররা তাদের জাতিগত স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার জন্য এই কাজটি করে থাকতে পারে।

ইতিহাস: আগুসান ডাল সার এস্রারাঞ্জার কাছে একজন মানেব মহিলা ১৯১৭ সালে ওয়ায়া নদীর তীরে আগুসান মূর্তিটি আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি শিল্প দ্রব্যটিকে একটি মানিকা (পুতুল) মনে করে কাছে রেখেছিলেন। তারপর এটির মালিকানা যায় আগুসানের ডেপুটি গভর্ণর ব্লাস ব্যকালগানের কাছের (ব্যাকলাগনের সোনা)। তবে আবিষ্কর্ত্রীর নাতনী কনসজনিয়া গতইবালের মতে তাঁর দিদিমা বেলায়ে কাম্পোস মূর্তিটিকে একি মানিকা বা পুতুল হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে এটিকে পূজার জন্য একটি বেদীর উপর স্থাপন করেছিলেন। তারপর এটি তাঁদের ঐতিহ্যবাহী মানাবো হাউজ থেকে চুরি হয়ে যায়। তারপর এটি ব্ল্যাস ব্যাকলাগনের হাতে পৌঁছয়। ১৯১৮ সালে ব্যাকলাগন এটিকে ড. উটলি বায়ের এর নজরে আনেন, যিনি এটিকে ফিলিপাউনের প্রদান প্রত্নতত্ত্বের সবচেয়ে সুন্দর নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করেন। বায়ারস যিনি সেই সময়ে ফিলিপাইনের বিশ^বিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের প্রধান এবং সেই সঙ্গে ফিলিপাইনের জাতীয় যাদুঘরের অবৈতনিক সংরক্ষকের পদে কর্মরত ছিলেন। আমেরিকার ঔপনিবেশিক সরকার রাজী করানোর চেষ্টা করেন যাতে এ মূর্তিটি ম্যানিলায় ফিলিপাইনের জাতীয় যাদুঘরে রাখার জন্য।

অর্থাভাবের জন্য ঐ শিল্পদ্রব্যটি কিনতে পারেনি। তারপর ঐ মূর্তিটির মালিকানা চলে গেল আগুসান কিউরেট কোম্পানির কাছে যাদের কাছ হতে ব্লাস ব্যাকলাগন টাকা ধার করেছিলেন। মূর্তিটির আস্তিত্বের কথা লুইজি উডের মত মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কানে পৌঁছল যাঁর স্বামী লিওনার্ড উড ফিলিপাইনে আমেরিকার গভর্ণর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সোনার মূল্যের জন্য মূর্তিটি পালন করেছিলেন। সোনার মূল্যের জন্য মূর্তিটিকে গলিয়ে ফেলা হতে পারে এই ভয় পেয়ে শ্রীমতী উড সোনার শিল্পকর্মটি কেনার তহবিল তৈরীর জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করলেন। এর জন্য তিনি শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়াম এর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিভাগের প্রধান এবং শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেলার ম্যথিউসের সাহায্য গ্রহণ করলেন। তাদের প্রচেষ্টা সফল হল যখন মূর্তিটি  ১৯২২ সালে ৪০০০ ডলারের বিনিময়ে হস্তগত করা সম্ভব হল। তারপর ১৯২২ সালেই মূর্তিটিকে জাহাজে করে আমিরিকায় পাঠিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতি রাখা হল। মূর্তিটি এখনও পর্যন্ত  সেখানেই রয়েছে। একবিংশ শতক থেকে আগুসানের যে স্থানে মূর্তিটি আবিষ্কৃত হয়েছিল সেই স্থানটি বৌদ্ধ ও সর্বপ্রাণবাদী উভয়ের কাছেই তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।

ফিরে পাওয়া: বহু বছর ধরে এই শিল্পকর্মটি আমেরিকা ও ফিলিপাইনের মধ্যে একটি দ্বন্ধের কারণ হিসেবে রয়েছে এবং ফিলিপাইনের অনেক পণ্ডিত এটির প্রত্যর্পণ দাবী করেছেন। এটিকে দেখা হচ্ছে এমন একটি ঘটনা হিসেবে যেখানে দেশের একটি জাতীয় সম্পদ অর্থনৈতিক  সংকটের কারণে ফিলিপাইনের সরকার সেটি নিলামের সময় চিনতে না পারার কারণে আমেরিকানদের কাছে বিক্রি হওয়ার এরকটি উদাহরণ হিসেবে। পণ্ডিতরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে যদি ফিল্ড মিউজিয়াম শিল্প দ্রব্যপি গলিয়ে ফেলা হবে এই ভয়ে সেটিকে নিয়ে থাকে, তাহলে ফিল্ড মিউজিয়াম এর কাছে এটি প্রত্যর্পণ করা উচিত, অন্তত ফিলিপাইনে এটিকে ক্রয় করার সুযোগ দেয়া উচিত যেহেতেু যে পরিস্থিতিতে মূর্তির সোনা গলিয়ে ফেলার ভয় ছিল তা সম্ভব নয় বলেই মনে হয় তাঁরা আরও উল্লেখ করেছেন যে ফিলিপাইনের যখন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এবং আমেরিকার ঔপনিবেশিক সরকারের অধীনে ছিল তখন আমেরিকান যাদুঘর কেমন করে সেটিকে ক্রয় করেছিল। আগুসান মূর্তিটি ফিলিপাইনের কাছে প্রত্যর্পণের পক্সে অন্যতম সওয়ালদারী হলেন পূর্বতন সিনেটর অ্যাকুইলিনো পিমেন্টেল জুনিয়র যিনি তাঁর শেষ বক্তৃতাটিকে বিশেষভাবে মূর্তিপি ফিলিপাইন সরকারের কাছে প্রত্যর্পণের পক্ষে প্রচার করেছেন। শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তারা সোনার মূর্তিটি ফিরিয়ে দিতে পারে যদি ফিলিপাইনের সরকার এই বিষয়ে দৃঢ়ভাবে অনুরোধ জানায়।

২০১৮ সালে জি এম এ নেটওয়ার্ক থেকে আগুসান মূর্তিটি সম্পর্কে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয় যেখানে দেখান হয় যে আগুসানের মানুষেরা মূর্তিটি প্রত্যর্পণের বিষয়টিকে সমর্থন করেছেন। প-িতরাও একটি নথি আবিষ্কার করেছে যেখানে ঐ শিল্পকর্মপির উপর ফিলিপাইনের অধিকারের প্রমাণ রয়েছে। পণ্ডিত মানুষ ও সরকার একত্রে এই মূর্তিটি ফেরত পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিল্ড মিউজিয়ামের প্রদর্শিত হচ্ছে। আগুসানের সাধারণ মানুষ এই মূর্তিটিকে ফেরত চাইছেন যেহেতু তাঁরা এটিকে পবিত্র নিদর্শন রূপে পূজা করেন।