Sunday, June 2, 2024

সংস্কৃত বৌদ্ধ সাহিত্য প্রাচীন ভারত

 ভূমিকা




ধর্মে স্থিতোহসি বিমলে শুভবুদ্ধিসত্ত্ব।
সর্বজ্ঞতামভিগমন হৃদয়ের সাধো,
মহ্যংশির: সৃজ মহাকরুণাগ্রচেতা।
মহ্যৎ দদশ্ব মম তোণকরো তবাদ্য ॥
-দিব্যাবদান, ২০০/২৯-৩২।

থেরবাদী বৌদ্ধ সাহিত্যে (পালি সাহিত্য) ভগবান বুদ্ধের  দার্শনিক সিদ্ধান্ত সম্মুখ সমুহ কে প্রবলভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হলেও তথাকথিত ঈশ্বরবাদ বা দেবত্ববাদকে তেমন ভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হয়নি। অপরদিকে মহাসাংঘিক বা উত্তরকালে মহাযান তথা অন্যান্য সংঘকৃত নিকায় সমৃহ তে ভগবান বুদ্ধের  বিভিন্ন রূপের চিত্রণ অবদান- কথা'র মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। অবদানশতক এবং দিব্যাবাদান সংস্কৃত বৌদ্ধ সাহিত্যের এক উজ্জ্বল উদ্ধার । অন্যান্য সংবাকৃত বৌদ্ধ সাহিত্য সমূহের মধ্যে ললিত বিস্তর, মহাবস্তু , সদ্ধর্মপুণ্ডরীক, সুখাবতীব্যুহ, বুদ্ধচরিত , সৌন্দরানন্দ, বজ্রসূচী এবং বোধিসত্ত্বাবদান কল্পলতা, ইত্যাদির ভূমিকা কোন সংঘেই করা যায়। এই সকল গ্রন্হ সমূহের বিষয় ধর্ম, বুদ্ধ এবং সংঘ তথা বোধিসত্ত্বের জীবন পর্যন্ত সীমিত নয় অধিকিন্তু  এর বিষয় প্রাচীন ভারতীয় সমাজ, জনপদ (অধুনা রাষ্ট্র),অর্থ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, সাহিত্য, কলা-স্থাপত্য, চিকিৎসা ব্যবস্থা-বিজ্ঞান তথা  ভূগোল 'এর বিভিন্ন অঙ্গের প্রতি  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে আলোকপাত করেছে।

কবি অশ্বঘোষ এবং তাঁর গ্রন্হ  বুদ্ধ চরিত ' প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসে এক প্রসিদ্ব গ্রন্হ । বুদ্ধ চরিত' গ্রন্হ বুদ্ধের  জীবনে এবং তাঁর বলার ধর্মীয় সিদ্বান্ত অত্যন্ত কাব্যিক শৈলীর মাধ্যমে প্রতিপাদিত হয়েছে। সংঘবতার সূত্র যদিও দার্শনিক গ্রন্হ তথাপি এই গ্রন্হ ঐতিহাসিক এবং সাংকেতিক সামগ্রী প্রচুর মাত্রায় বিদ্যমান রয়েছে। এইতাবে আর্যঞ্জুশ্রী মূলকল্প দর্শন, ভূগোল, ইতিহাস, জ্যোতিষ, গনিত, তন্ত্র ইত্যাদির এক মিশ্রিত গ্রন্হ যা অত্যন্ত দূরুহ এবং সাংকেতিকও বটে।

মহাবস্তুতে পৃথিবী, এর চাতুদ্বীর্প, মহাকোশ, জনপদ এবং নগর সমূহ ( নগর জনপদ) এবং গণরাজ্য (লিচ্ছ,বি, কৌলিয় এবং শাক্য) তথা গ্রাম, নদী ও পর্বতের উল্লেখ ও পাওয়া যায় । সব থেকে গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় এই যে এই মহাগ্রন্থে মহাজনপদেরে বিভিন্ন তালিকা (১৬, ১৪ ও ৭' এর) প্রাপ্ত হয়। ৭ জনপদ এর তালিকা'তে মহাজনপদের, সাথে সাথে  তাদের রাজধানী সমূহ ও উল্লেখিত হয়েছে। ভারতবর্ষকে এই গ্রন্থে শকটমুখ তথা সংকুচিত বলা হয়েছে। ললিত বিস্তর অনুসারে এই সর্বাধার মহাপৃথিবী (ইয়াং সহী সর্বব্যতাৎপ্রতিষ্ঠা) যা ৪  মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত। এতে ষোড়শ জনপদ, উত্তরাপথ, দক্ষিণাপথ এবং প্রত্যন্ত জনপদের  উল্লেখ  পাওয়া যায়। শার্দূলকর্ণাবদান হতে জনপদের এবং গনের গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ পাওয়া যায়। দিব্যাবদান গ্রন্হ'র ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম । এই গ্রন্হ বিম্বিসার হতে ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজা পুণ্যমিত্র শুঙ্গ পযন্ত মগদের ইতিহাস দৃষ্ট হয়। করুনা পুণ্ডরীক এ যবন ( গ্রীক ) রাজা মিলিন্দ ( মিরান্ডার)'র উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া পুরাণত  রাজধর্মের কথা ও বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

"যে চ ক্ষত্রাণি রক্ষন্ত পালয়ন্তি সজা প্রজাঃ।
সত্বরক্ষাব্রতাচারাঃ ক্ষত্রিয়াস্তে নৃপা নরাঃ 
 যে রঞ্জয়ন্তি ধর্মার্থে লোকাগ্নীতি প্রয়োজকঃ ল।

রাজানস্তে মহাবীরাঃ সর্বধম্মাভিপাবালকাঃ।।"

বজ্রসূচী এবং দিব্যাবদান  (শার্দূলকর্ণাবদান) 'এ চতুবর্ণ ব্যবস্থা কঠোর সমালোচনা করার সঙ্গে সঙ্গে একই বর্ণ এবং জাতির সমানতার সিদ্ধান্তকে প্রতিপাদন করা হয়েছে। দর্শন ক্ষেত্রে শূন্যবাানে এবং প্রজ্ঞা (বিজ্ঞান) তথা যোগ আচার ( সৌন্দরেন্দ কাব্য ১৪/১৬) মতবাদেরে প্রভাব প্রচলিত ছিল। মহাবস্তু তে' কপিলাবস্তু এবং রাজগৃহের সুদীর্ঘ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। অশোকাবাদাম' এ বৌদ্ধ ধর্মের বৈরী রুপের ব্রাহ্মণ ধর্মের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া বেদোক্ত বিধি, যঞ্জ এবং ব্রাহ্মণ দেবী দেবতার ও বিবরণ দেখা হয়। সাধারণ জনগণ' এর বিশ্বাস বৌদ্ধ ধর্মের পাশাপাশি মিথ্যা দৃষ্টি মূলক ধর্ম- নরক, স্বর্গ, তথা নাথ, যক্ষ ইত্যাদির প্রতি ছিল। বোধিসত্ত্ব বধান কল্পলতা'তে এর দীর্ঘ বিবরণ পাওয়া যায়। দিব্যাবদানে গায়ত্রী মন্ত্রের নিন্দা এবং পুষ্যমিত্র শুঙ্গ'কে বৌদ্ধ বিরোধী বলা হয়েছে।

"নাহং নরেন্দ্রো ন  নরেন্দ্রপুত্রঃ
পাদোপজীবী তব দেব  ভূত্যঃ
অথাপ্রিয়স্যেব নিবেদনার্থ
মিহাগতো হ হং তব  পাদমূলম"।
-দিব্যাবদান, ৪৩০/১৬
সৃষ্টি প্রকাশনীর কর্ণধারকে অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা জানাই। অলং ইতি বিত্থারেন।

সুমনপাল ভিক্ষু।

No comments:

Post a Comment