Sunday, June 2, 2024

বৌদ্ধধর্ম এবং মানবাধিকার

ভূমিকা


"রূপস্য হস্তী ব্যবাবৎ বকাস্য শোকস্য সোনির্দিধবং রর্তীবল।
মাশ: স্বাতীনাং রিপুরিন্দ্রিয়ানাােসা জরা পরের উন্ম:।।
পীতং হালেনালি পড়া: শিশুরে কালেম ভুরা: পরিবৃন্তপূর্ব্যাস্থা! ক্রপেন ভত্বা  চ সুবা বহুমান ক্রেতেনের জরাপুলেত: "" -ব্যাচেরিতা, ৩/৫০-৫০।,,,,,

যে সত্যের ক্ষেত্রে রাপাবর্তী এক নবজাত শিশুর প্রাণ রক্ষাতে নিজের দুইটি স্তনকে ছদন করেছিলেন, সেই সত্য,  না তো রাজ্যের প্রশ্নে, না তো ভোগের প্রশ্নে, না তো ইন্দ্রত্ব লাভের প্রশ্নে, না তো চক্রবর্তী- প্রাপ্তির প্রশ্নে আর না তো অন্য কোন ইচ্ছা দ্বারা প্রেরিত হয়ে সম্পূর্ণ হয়েছিল, এই সত্যের পশ্চাতে এক উদার নৈতিক ভাবনা ছিল অপ্রান্ত সম্যক সম্বোধি কে সম্বোধি লাভ করাবো, যিনি ইন্দ্রির লোলুপ , তাঁকে ইন্দ্রিয় - নিগ্রহ এবং আন্তাদমনের শিক্ষা প্রদান করবো, যিনি অমুক্ত, তাঁকে মুক্ত করবো, যিনি নিঃসাহার, তাঁকে আশ্রয় দান করবো এবং যিনি দুঃখী তাঁকে দুঃখ হতে নিবৃত্তি দান করবো।

এই সত্য দ্বারা উৎসাহিত হয়ে এবং দুঃখী মানুষের আর্তনাদকে সহ্য না করার কারনে বোধিসত্ত্ব মহাসত্ত্ব সিদ্ধার্থ ,  সম্যক সম্বুদ্ধ  হয়ে বহু জনের হিতার্থে, সুখার্থে সে দর্শন তত্ত্বের প্রচার করেছিলেন তা ভারত- বর্ষে গণ্ডি অতিক্রম করে বিশ্ব ধর্মে পরিণত হয়েছিল এবং এই বিশ্ব ধর্ম কোনোরূপ বলপ্রয়োগ তথা সাধারণ জনগণের উপর হিংসাশ্রয়ী ভাবে প্রদান করা হয়নি, উপরক্ত সম্পূর্ণভাবে অহিংসার মাধ্যমে বিস্তৃত হয়েছিল এই কারণেই গৌতম বুদ্ধকে পৃথিবীর প্রথম মানবতারবাদের রূপরকার তথা বৌদ্ধধর্মকে মানতাবাদী ধর্ম বলা হয়। 

তবে এখানে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে গৌতম বুদ্ধ রাজতন্ত্রের বিলোপ সাধন না করে কিভাবে মানবতাবাদের জনক হয়ে উঠেছিলেন এবং বৌদ্ধধর্ম কিভাবে মানবতাবাদী ধর্ম? এর উত্তরে বলা যায় যে গৌতম বুদ্ধ কোন অর্থের রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন না ফলে তাঁর মতাদর্শের প্রভাবে মগধ বা অন্যান্য জনপদের শাসককুল ও জনগণ বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে রাজতন্ত্রকে গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর মধ্যে একত্রীভূত করেছিলেন। এক্ষেত্রে মহামতির অশোকের লাজুলামন্দাগিরি লঘু গিরিলেখ এক উৎকৃষ্ট, উদাহরণ রুপের পণ্য হতে পারে, যেমন -

"দেবপ্রিয় এরকম আজ্ঞা করেছেন- মাতাপিতার সেবা করবে এবং প্রাণীদের জীবনের গুরুত্ব বিশেষভাবে মনে করবে, সত্য কথা বলবে। এই রকম গুণযুক্ত ধর্মই প্রচলিত হওয়া উচিত। আর এটা কার্যে পরিনত হওয়া

অপর অর্থে বলা যায় যে মহামানব গৌতম বুদ্ধ তাঁর দর্শন তথ্য  প্রচারার্থে যে ভিক্ষু এবং ভিক্ষুণী সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তা কোন অর্থেই লক্ষণ শীল বা বর্ণবাদের আঙ্গিকে প্রতিষ্ঠিত হয়নি উপরন্তু সংঘ ছিল গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতা পূর্ণ এবং বর্ণবাদের পরিবর্তে মানবাধিকারের আঙ্গিকে প্রতিষ্ঠিত ফলে অলন্তি বিলম্বের সংঘ হয়ে উঠেছিল বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা জাত-পাত বিরোধী গণতান্ত্রিক পরিকাঠাখো যুক্ত একটি সংগঠন। বৌদি ধর্ম নারী মুক্তি এবং নারী শিক্ষার প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করার ফলে বিভিন্ন স্তরের নারী বৌদ্ধ সংঘে প্রবেশ করেছিল এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার কার্যে নিজেদের সমর্পণ করেছিল। বৌদ্ধ ধর্ম তথা মহামানব বুদ্ধ কোন অর্থে সমাজের প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস কে গ্রহণ করে নি, ফলে সমাজের পরিকাঠামোর উন্নতি বিধান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের প্রশ্নে বৌদ্ধ ধর্ম হয়ে উঠেছিল মানবতাবাদী ধর্ম যা আজও অম্লান। সর্বোপরি বৌদ্ধ ধর্ম  আন্তর্জাতিক ধর্ম হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তার অহিংসাবাদী পরিকাঠামো তথা মানবতাবাদী কার্যকলাপ কে কোন অর্থে অস্বীকার করা সমভব নয়। 

“নিরাধরাং জগতক্র তীব্রতাত্যা ভ্রমত্যলম ।  তদায়ত্তস্ত জীবোহরং শ্রান্তিভূমিং ন গচ্ছতি ।।

অনুরুপ ভাবে-

"জীবলোকান বা পঞ্চৈবম্ পশ্যাদ্দিব্য  চক্ষুষা  ন পেবে তেসু বৈ সারং  রম্ভাপ্তম্ভোদরেন্বিব।।
- বুদ্ধচরিতম,পূঃ ২০২। 
সৃষ্টি প্রকাশনীর কর্ণধারকে অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা জানাই। অলং ইতি বিত্থারেন।

সুমনপাল ভিক্ষু ।

No comments:

Post a Comment