Monday, May 19, 2025

ড. সুকোমল চৌধুরী

 

**সুমনপাল ভিক্ষু**

 

. সুকোমল চৌধুরী ঐতিহ্যবাহী বেপারি গ্রামের একজন জমিদার বেপারী বংশে জন্মগ্রহণ করে। তখন ফেব্রুয়ারী ১৯৩৯(মতান্তরে //১৯৩৬) সাল। তাঁর পিতা সুধীর চন্দ্র বড়ুয়া এবং মাতা সুহাসিনী চৌধুরী। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম,, পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সংস্কৃত, পালি, তিব্বতী ভাষায় উৎপন্ন, এবং ত্রিপিটক বিশারদ, দেশ-বিদেশের বহু পত্রিকায় বৌদ্ধধর্ম দর্শন বিষয়ে তাঁর বহু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর সম্পাদনায় ধর্মাধার বৌদ্ধ গ্রন্থ প্রকাশনী অতীশ মেমোরিয়াম পাবলিশিং হতে ইতিমধ্যে বাংলা ইংরেজীতে বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃত কলেজের পালি বিভাগের প্রধান বিগত কয়েক বৎসর যাবত উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত এবং পরবর্তীকালে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি সাংস্কৃত বিভাগে অধ্যাপনা করেন। তিনি বিপাস্সনা রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইগতপুরি, বিশ্বভারতী, নব নালন্দা মহাবিহার, নালন্দা, বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি, মগধ বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি কোলকাতা বিদর্শন শিক্ষা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ধর্মাধার ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ধর্মাধার শতবার্ষিকী ভবনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদকনালন্দা পত্রিকা এবং বোধিভারতী পত্রিকায় সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করে বহুবছর।

তাঁর লেখা প্রকাশনীর মধ্যে-) মনুষ্য বিকাশে ধর্ম (হিন্দি থেকে অনুবাদ), ) ধম্মপদট্ঠকথা- থেকে ৯খন্ড (এক সেট), ) ভবচক্র (বুদ্ধের জন্ম-জন্মান্তর রহস্য), ) মহামানব গৌতম বুদ্ধ, ) গৌতম বুদ্ধের ধর্ম দর্শন, ) বিনয় পিটকে সুত্তত্রিভেদে (পোরাহিকা পালি হতে বঙ্গানুবাদ), ) সংযুক্ত নিকায় (৩য় খন্ড), ) সংযুক্ত নিকায় (৪র্থ খন্ড),) বিজ্ঞপ্তিশাত্রতা সিদ্দি,১০) পণ্ডিত ধর্মাধার মহাস্থবির, ১১) ভারততত্ত্ববিদ অধ্যাপক বেণীমাধব বড়ুয়া, ১২) সুমঙ্গল বিলাসীনি, ১২) সমন্তপাসাদিকা, ১৩) বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম সংস্কৃতি, ১৪) অত্থসালিনী, ১৫) মহাবোধিবংশ, ১৬) পারাজিকা, ১৭) পাচিত্তিয়া, ১৮) জিনকালমালী  যৌথ অনুবাদ, ১৯) উপাসকজনালংকার, যৌথ অনুবাদ, ২০) সদ্ধম্মোপায়ন, ২১) Contemporary Buddhism in Bangladesh, ২২) Analytical study of the Abhidharmakosa, ২৩) Buddha and Buddhism (Edited), ২৪) আর্যমঞ্জুশ্রীকল্প মূলকল্প যৌথ অনুবাদ, ২৫) বৌদ্ধ কোষ তিন খন্ডে, নব নালন্দা মহাবিহার, নালন্দা২৭) পট্ঠান, এবং ধর্মাধার বৌদ্ধ গ্রন্থ প্রকাশনী থেকে প্রায় ৪৫টির অধিক গ্রন্থ সম্পাদন করেন। তিনি ত্রিপিটকের টি আদ্য-মধ্য উপাধি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থানে অধিকার করেন এবং ৩টি স্বর্ণপদক পেয়েছেন। ১৯৮০-৮১ সালে জাপানে সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। জাপানী প্রফেসর Egaku Meyeda- সঙ্গে গবেষণা করেন। ১৯৭০ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি,এইচ,ডি, ডিগ্রি লাভ করেন। তৎকালীন পালি বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর . অনুকুল চন্দ্র বন্দোপাধ্যায় তত্ত্বাবধানে। গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল- 'A compararive study of the abhidhrmakos with other Abhidherma Tests' সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনাকালীন সময়ে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি সংস্কৃত বিভাগে অধ্যাপনা করেন। সাম্প্রতিক তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃত স্বরূপ ২০০৫ সালে ভারত সরকারের রাষ্ট্রপতি পুরস্কার লাভ করে বঙ্গীয় বৌদ্ধ জাতিকে গর্বিত করেছেন।

১৯৭৫ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজ অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৯সালে তিনি অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। 

গর্ভমেন্ট সংস্কৃত কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর . সুকোমল চৌধুরী //২০২৫ সকাল ১১:৪০ মিনিটে নীল রতন সরকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মতো বিরল প্রতিভা মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা সহজেই পূরণ হওয়ার নয়। পণ্ডিত ধমার্ধার গ্রন্থ প্রকাশনীসহ বহু গ্রন্থ অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ এবং অসংখ্য গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করে বহু কীর্তিতের পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশ ভারতে তাঁর অসংখ্য ছাত্রছাত্রী প্রতিভাবান গবেষক ভিক্ষুসংঘ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন। নালন্দা পত্রিকা, বোধিভারতী, জগজ্জোতি পত্রিকা প্রকাশে সত্যিই তাঁর অবদান প্রশংসনীয়। তিনি সাধক শ্রেষ্ট থথবা মহাস্থবিরের বংশধর। তিনি বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা মহাবোধি সোসাইটির উন্নয়নের ক্ষেত্রেও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। উল্লেখ্য যে, তাঁর মবদেহ বিদর্শন শিক্ষা কেন্দ্র, মহাবোধি সোসাইটি, বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা, সংস্কৃত গর্ভনমেন্ট কলেজে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে স্মরণ সভা করা হয়, পরিশেষে তাঁর মরদেহ উত্তরবঙ্গ মালবাজার নিয়ে গিয়ে শেষ অন্ত্যেষ্টক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

বুদ্ধগয়া বোধিদ্রুম মূলে তাঁর নৈর্বানিক শান্তি কামনায় বুদ্ধ পূজা ও বোধিদ্রুম পূজা শেষে তাঁকে পুণ্য নিবেদন করা হয়, পরিশেষে তাঁর পূতাস্হি নৈরঞ্জনা তথা অন্তসলিলা ফল্গু সমাধি সমর্পণ করা হয়।

No comments:

Post a Comment