Monday, May 19, 2025

ভক্তিশতকম্ ও রামচন্দ্র কবিভারতী

 

ভক্তিশতকম্ রামচন্দ্র কবিভারতী

-সুমনপাল ভিক্ষু

 

 

"মোহ সম্বন্ধো লোকো ভববরূপোর দিস্সতি,

উপধিসম্বন্ধনো বালো তমসা পরিবারিতো, সস্সতি বিয় খায়তি পস্সতো নথি কিঞ্চনন্তি।"৭০।।- উদানং, চুল বগ্গো।

অষ্টম শতক হতে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৪০০ বৎসর বাংলায় বৌদ্ধধর্মের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাল। এই সময়ে ভারতবর্ষ হতে বিস্মৃতপ্রায় বৌদ্ধধর্ম বাঙালীর রাজ্যে অন্তিম আশ্রয় গ্রহণ করে এবং অপূর্ব প্রাণশক্তিতে পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে। আবার এই ধর্মের পুনরুদ্ধানের সঙে সঙ্গে শিক্ষায়-দীক্ষায়, শিল্পে-সাহিত্যে তথা অন্যান্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাঙালীর জীবনে যে সর্বতোমুখী বিকাশ ঘটেছিল তা ভাবনা করলে বিস্মিত হতে হয়।

ধর্মীয় উদারতার ক্ষেত্রেও পালযুগ বাংলার ইতিহাসে অনতিক্রান্ত এবং অতুলনীয়। এই যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান বাঙালীর জাতীয় সংহতি স্বজাত্যবোধ বস্তুতঃ বাংলা বাঙালী জাতির মূল অর্থে গোড়াপত্তন হয় এই যুগে।

আলৌহিত্যেপকণ্ঠাত্তকাগ্রহনোপত্যকাদামহেন্দ্র-

দাগঙ্গাশ্লিষ্টসামোস্তহিনশিখরিনঃ পশ্চিমাদাপয়োধেঃ। সামন্তৈর্যম্য বাহুদ্রবিনহৃতমদৈঃ পাদয়োরানমন্ত্রি

শূভারন্তাংশুরাজিব্যতিকরশবলা ভূমিভাগাঃ ক্রিয়ন্তে।।" পুরগুপ্তের তাম্রলিপি, ১ম সর্গ।

ধর্মীয় উদারতার ক্ষেত্রেও পালযুগ বাংলার ইতিহাসে অনতিক্রান্ত এবং অতুলনীয়। পালরাজাগণের ধর্মীয় উদারতা ধর্মাশোক (মহামতি অশোক), কনিষ্ক হর্ষবর্ধনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। পালরাজাগণ বৌদ্ধ মতালমবী হলে পরধর্মের প্রতি পরম সহিষ্ণু ছিলেন। বস্তুত শাক্ত কবি রামপ্রসাদ সেনের কল্পনাতে যেমন কালী-কৃষ্ণ মিলে মিশে একত্রি ভূত হয়ে গিয়েছিল, ঠিক তেমন ভাবেই পালযুগে বৌদ্ধ অবলোকিতেশ্বর এবং আর্যতারা ব্রাহ্মণ্য ধর্মে আসন গ্রহণ করেছিল। উত্তরকাল এই মহামিলনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় এয়োদশে শতকের মধ্যভাগে রচিত রামচন্দ্র কবিভারতীর ভক্তিশতকম্ গ্রন্থের এই শ্লোকটিতে,

"জ্ঞানংসয্য সমস্তবস্তুবিযয়ং সস্যানবদ্যং বচো যস্মিন্ রাগলবোহপি নৈবন পুনর্দ্ধেযোন মোহস্তথ। যস্যাহেতুরনন্তসত্ত্ব সুখদানল্পাকৃপামাধুরী

বুদ্ধো বা গিরিশোহথবা ভগবাংস্তস্মৈ নমসকুস্মহে'।। ভক্তিশতকম্।

"জ্ঞান যাঁর সমস্ত বস্তু বিষয় ব্যাপী, বাক্য যাঁর নির্দোষ, যাঁর চিত্তে অনুরাগ দ্বেষ মোহ প্রভৃতি বিকারের লেশ মাত্র নেই, যাঁর অহেতু অজস্র কৃপামাধুরী অনন্ত জীবের সুখদান করেছে, সেই ভগবানকে আমরা নমস্কার করি তিনি বুদ্ধই হোন আর গিরিশই হোন।"

পালচন্দ্র প্রমুখ বৌদ্ধ রাজন্যবর্গের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বাংলার এক দীর্ঘ সময়কাল ব্যাপী বৌদ্ধধর্ম বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করেছিল। বৌদ্ধধর্মের উদার মানবিক আদর্শ এবং উক্ত রাজন্যবর্গ বৌদ্ধ মতাম্ববল হওয়ার কারণে জনগণ বৌদ্ধধর্মের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিল। তৎকালীন বৌদ্ধ রাজন্যবর্গের সহায়তার কারণে বৌদ্ধ বিহার তথা বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ (নালন্দা, বিক্রমশিলা, তদন্তপুর, জগদ্দল প্রমুখ) বিশেষভাবে সমৃদ্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় বৌদ্ধ পতাকাকে উড্ডীণ করেছিল। শুয়াং জাঙ্ প্রমুখ বহু অভ্যাগত এখানে এসে তাঁদের জ্ঞানপিপাসাকে নিবৃত করেছিলেন।

এই সময় বৌদ্ধধর্ম বাংলা হতে আরাকান অঞ্চলে পরিব্যাপ্ত হয়েছিল। বৌদ্ধধর্মের যোগে বাংলা তথা ভারতের সঙ্গে বহিঃবিশ্বের পুনঃ যোগসূত্র এযুগের স্মরণীয় ঘটনা।

মহীপালদের ষষ্ঠ রাজ্যাঙ্কে তাড়বাড়ি মহাবিহারবাসী শাক্যচার্য স্থবির সাধুগুপ্তের ব্যয়ে নালন্দাবাসী কল্যাণমিত্র চিন্তামণি 'অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা গ্রন্থের একখানি অনুলিপি প্রস্তুত করেছিলেন। সেই গ্রন্থের পুষ্পিকাতে লিখিত আছে:

"দেয়ধর্ম্মোয়ং প্রবরমহাযানসায়িনঃ তাড়িবাড়ী মহাবিহারীয় আবাস্থিতেন

শাক্যচার্য্যস্থবির সাধুগুপ্তস্য যাত্রে পুন্যন্তাভবত্যাচার্য্যোপাধ্যায়মাতা পিতৃপুরঙ্গমং কৃত্বা সকল্পসত্ত্বাশেরণুত্তরজ্ঞানফ শাবাশুয় ইতি।.... শ্রীনালন্দাবস্থিতকল্যাণ মিত্র চিন্তামনিকস্য লিখিত ইতি।।"

রামচরিত নামক গ্রন্থে পালরাজা রামপালকে রামায়ণের রামচন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। রামচরিত মূল টীকা তালপত্রে খৃষ্টীয় দ্বাদশ অথবা ত্রয়োদশ শতাব্দীর অক্ষরে লিখিত। রামচরিত'এর উপমাটি এইরূপে-

"সেই প্রবলপরাক্রমশালী নবপালের রামপাল নামক এক পুত্র জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি পাল-কুল্যমুদ্রোসিত শীতকিরণ চন্দ্ররূপে প্রতিভাত এবং সাম্রাজ্যলাভে খ্যাতিভাজন হইয়াছিলেন। রামচন্দ্র যেমন অনব লঙ্ঘন করিয়া, রাবনবধান্তে জনকনন্দিনী লাভ করিয়াছিলেন, রামপালদেব সেইরপ যুদ্ধার্নব সমুত্তীর্ণ হইয়া ভীম নামক ক্ষৌনীনায়কের বধসাধন করিয়া জনকভূমি বারেন্দ্রীলাভে ত্রিজগতে আত্মযশঃ বিস্তৃত করিয়াছিলেন। সম্ভবত সন্ধ্যাকর নন্দী স্বয়ং রামচরিচের টীকা গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। কারণ মধ্যাকরনন্দী রামপালের রাজ্যকালের ঘটনাসমূহ যতদূর পর্যন্ত অবগত ছিলেন, তা অপরের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না।

এই রাজন্যপর্বের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলায় বৌদ্ধধর্মের গৌরবরশ্মি ক্ষীণ হয়ে আসে। বৌদ্ধধর্মের প্রাণকেন্দ্র বৌদ্ধবিহারগুলি রাজকীয় পৃষ্টপোষকতার অভাবে ক্রমশঃ ধ্বংসের পক্ষে এগিয়ে যায়। এই সময় সেন বর্মণরাজগণের অভ্যুদয়'এর ফলে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম বেশ প্রতিপত্তি লাভ করে এবং বৈদিক পৌরানিক ধর্মানুষ্ঠান, আচার ব্যবহার পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে। পাল-চন্দ্র যুগে বৌদ্ধধর্ম রাজশক্তির যে সহায়তা লাভ করেছিল, সেন-বর্মণ যুগে সেই আনুকূল্য হতে বঞ্চিত হয়েছিল। পক্ষান্তরে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিল। একদিকে যেমন ব্রাহ্মণ্যবাদীদের অত্যাচার আবার অন্যদিকে অর্থাৎ ১১৯৯ খ্রীঃ (বাঙলার ইতিহাস, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, ১ম খণ্ড) তুর্কী সুলমানদিগের আক্রমণে প্রাচীন ওদন্তপুর, নালন্দা তথা বিক্রমাশীলা বৌদ্ধবিহার সমূহ ধ্বংসপ্রান্ত হলে বাংলার বৌদ্ধধর্মের সর্বাপেক্ষা গৌরবময় যুগের অবসান হয়।

যাইহোক, এক্ষেত্রে অনেকের মনে এই প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে যে রামচন্দ্র কবি ভারতী তথা ভক্তিশতকম্ এর সঙ্গে উপরোক্ত বিষয় সমূহের সম্পর্কই বা কি, প্রবাদ বাক্যের ভাষায় বলতে হয় 'কান টানলে যেমন মাথা আসে' ঠিক তেমনই বলা চলে রামচন্দ্র কবিভারতী' সঙ্গে অবশ্যই পূর্ব ইতিহাসের একটি যুক্তিসঙ্গত সম্পর্ক আছে নতুবা উক্ত ইতিহাস চর্ব্বনের প্রয়োজন কেন?

খৃষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে তদানীন্তন গৌড়বঙ্গের বেরবর্তী (?) গ্রামে রামচন্দ্র কবিভারতী জন্মগ্রহণ করেন। তবে বেরবর্তী গ্রাম সম্পর্কিত সঠিক কোনরূপে তথ্য পাওয়া যায় না, কিন্তু সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণের মতে এই গ্রাম বরেন্দ্রভূমিতে অবস্থিত ছিল। কথিত আছে রামচন্দ্র ব্রাহ্মণকূলে কাত্যায়ন গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাঁর মাতৃভূমি পরিত্যাগ পূর্বক লংকাদ্বীপে গমন করেন এবং তথায় বিশেষ প্রতিপত্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ভগবান বুদ্ধের প্রতি রামচন্দ্র কবি ভারতী' অগাধ শ্রদ্ধা তথা ভক্তি ছিল। 'ভক্তি শতকম্' গ্রন্থে তা অবিচলভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে-

"জগতের উপকারবিধানই বুদ্ধের পূজা এবং উহার অপকার সাধনই বুদ্ধের পীড়া। অমি জগতের অপকারী। হে জিন! তথাপি আপনার পাদপদ্ম-ভক্ত বলিয়া, পরিচয় প্রদান করিতে আমি লজ্জিত হইতেছি কেন?

নানাবিধ সংসারদুঃখ অবলোকনে ভীত হইয়া আমি অনেকবার আপনাকে প্রনাম করিতেছি। আমি গুরুতর তৃষ্ণা দ্বারা আক্রান্ত হইয়াছি। অতএব, হে জিন! কৃপাহস্ত প্রসারণ পূর্বক আমাকে ধরুন।'

পুত্র রাহুলের প্রতি কবিভারতী' ভক্তি ছিল অত্যন্ত প্রবল। তিনি বৃত্তরত্নাকর টীকাতে লিখেছেন-

"শ্রীমদ্রাহুলপাদ ত্রিপিটকাচার্য্যাদ্ গুবোর্নির্মূলং

বৌদ্ধং শাস্ত্রমধীত্য যস্তু শরণং রত্নত্রয়ং শিশ্রিয়ে।

যো বৌদ্ধাগমাচক্রবর্ত্তিমাবৌং লঙ্কেকশ্বরাক্সবন্ধকন্

শ্রীমাণির্হ সব্বশাস্ত্রনিপুনো ব্যাখ্যামিমং ব্যাতনোৎ।।

পুনঃ এইরূপে-

রাহুলনামা মুনিরিতি বিদ্ধান্ ষড়গুণভারী ত্রিপিটকধারী।

মৌর্য্যকুলাবিদ্ধপ্রভবসুধাংশু জন্মনি জন্মন্যপি মম্ মিত্রম্।। বৃত্তরত্নাকর পঞ্জিকা।

রামচন্দ্র কবিভারতী পুরাণ, ন্যায়শাস্ত্র, অলংকার ব্যাকরণ' অত্যন্ত সুপণ্ডিত ছিলেন। যেসময়কালে দ্বিতীয় পরাক্রমবাহু সিংহলের শাসনকর্তা ছিলেন, সেই সময় তিনি উক্ত নিতে গমন করেন। পরাক্রমবাহু (দ্বিতীয়) ১২৪০-১২৭৫ খৃঃ পর্যন্ত সিংহলের (বর্তমান শ্রীলংকা) শাসনকর্তা ছিলেন। রামচন্দ্র যে সময়কালে লংকা' উপস্থিত হন, সেই সময় বাংলা তথা ভারতবর্ষে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে বৃত্তরত্না করপঞ্জিকা' হতে অবগত করা যায় যে তিনি ১২৪৫ খৃঃ লংকাগমন করেছিলেন।

ভক্তিশতকম্ গ্রন্থের উপসংহারে কবি নিজ পরিচয় এইরূপে ভাবে প্রদান করেছিলেন-

"দেদীপ্যমান সূর্য্যবংশে আদিত্যস্বরূপ রাজাধিরাজেশ্বর লংকাধিপতি পরাক্রমরাহু এমন সুনীতিপূর্ব্বক পৃথিবী শাসন করিতেছিলেন, সেই সময়ে গৌড়দেদশীয় ব্রাহ্মণ পণ্ডিত শ্রীরামচন্দ্র কবিভারতী শ্রোতৃবর্গের ধর্মার্থমোক্ষ প্রদায়ক ভক্তিশতকম্ গ্রন্থের রচনা করেন।'

বৃত্তরত্নাকর পঞ্জিকা গ্রন্থে কবি তাঁর পরিচয় অত্যন্ত প্রাণোচ্ছলভাবে প্রকাশ করেছেন-

"ত্রিপিটকাচার্য পূজ্যপাদ গুরু শ্রীরাহুলের নিকট যিনি নিৰ্ম্মল বৌদ্ধ শাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়া রত্নত্রয়ের (বুদ্ধ, ধর্ম সঙ্ঘের) আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন, এবং যিনি লঙ্কেশ্বরের নিকট হইতে বৌদ্ধাগমাচক্রবর্ত্তী পদবী প্রান্ত হইয়াছিলেন, সেই সর্ব্বশাস্ত্র নিপুন শ্রীমান রামচন্দ্র কবিভারতী বৃত্তরত্নাকর-এর এই ব্যাখ্যা প্রণয়ন করিয়াছেন।"

"জগদুপকৃতিরের বুদ্ধপূজা

তদপকৃতিস্তব শোকনাথ পীড়া।

জিন জগদপকৃৎ কথং লজ্জে গদিতুমহং তব পাদপাদম্ ভক্তঃ।। ভক্তি শতকম্।

পুনঃ

"প্রণতিরিয়মনেকশস্তবাহং বহুভবদুঃখমবেক্ষ্য ভীতিভীতঃ।

ধর গুরুতরতৃষ্ণয়া পতন্তং জিন মম দেহি কৃপাকরাবলম্বম্।। ভক্তিশতকম্।

কবিভারতী নানাশাস্ত্রে বিশারদ, বুদ্ধিমান এবং পণ্ডিতাপ্রগণ্য ছিলেন। তিনি তাঁর কবিত্বের পুরস্কার স্বরূপ 'কবিভারতী' উপাধি লাভ করেছিলেন (শ্রীরাম চন্দ্র কবিভারতী', শ্রমণ পূর্ণানন্দ স্বামী) স্ব-প্রণীত গ্রন্থে তিনি এই স্বীকারোক্তি করেছেন-

"তর্কব্যাকরণশ্রুতিস্মৃতিমহাকাব্যাগমালঙ্কৃতি চ্ছন্দোজ্যোতিষনাটকার্থকথনাচার্য্যঃ সদগ্রেসরঃ। আর্যপন্ডিতবর্য্যনন্দনগুণস্তাগী কবীন্দ্রঃ ক্ষমী শ্রীবৌদ্ধাগমাচক্রবর্ত্তী ধরণীদেবঃ সমুজ্জ্বন্ততে।"

রামচন্দ্র কবিভারতী সিংহলে উপস্থিত কালে 'থের বাচিস্সার' (ভদন্ত রাহুলথের) সেই সময় সিংহলী বৌদ্ধভিক্ষুসংঘের সংঘরাজ ছিলেন। রামচন্দ্র এই মহান বৌদ্ধ ভিক্ষুর সান্নিধ্য লাভ করে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং অনতিবিলম্বে তাঁর প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। কবিভারতী তাঁর আচার্য্যকে অত্যন্ত সম্মান করতেন। এই কারণেই তাঁর অন্যতম রচনা 'বৃত্তরত্নাকর পঞ্জিকা' আচার্য্যের প্রতি তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন-

"রাহুল-নামা মুনির অতি বিদ্ধান......"

বৌদ্ধধর্মের মহান পণ্ডিত এবং ত্রিপিটক বিশারদ হলেও রামচন্দ্র কবিভারতী পালিভাষায় কোনরূপ গ্রন্থ রচনা করেন নি। তাঁর সমস্ত রচনাই ছিল সংস্কৃত ভাষায় ৩টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সেগুলি হল এইরূপ-ভক্তি শতকম্, বৃত্তরত্নাকর-পঞ্জিকা এবং বৃত্তমালা ভক্তি শতক। ভক্তিশতক বা ভক্তি শতকম্ গ্রন্থে ভগবান বুদ্ধ একমোদ্বিতীয়ম্ আচার্য, রক্ষক এবং মহাকারুণিক শাস্তা। গ্রন্থটির প্রাঞ্জল ভাষা তথা মার্জিত রীতির কারণে সিংহলে (বর্তমান শ্রীলংকা) তা যথেষ্ট সমাদৃত হয়েছে।

"দেবঃ শম্ভুনবৈরী হরিরপি রিপু কেবলী নো সম্পত্নো।

নোহদাসীনঃ স্বয়ম্ভু পুনরপরে তে পরে বাসবাদ্যাঃ।।

শাস্তা বুদ্ধো বন্ধুর্জগতি জনকো নৈকগোত্রৈক জাতিঃ।

কিন্তেসাং বীতরাগো ভপতি সকল বিদ্যঃ সুধীভিঃ সসেব্যঃ।।" ভক্তিশতকম্, ২ং শ্লোক।

এই শ্লোকের মাধমে অবগত হওয়া যায় যে তিনি নিছক আবেগ তথা মোহদ্ধতার বশবর্তী বুদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন নি। তাঁর মতে বুদ্ধ এবং ব্রহ্ম এক অভিন্ন। এক্ষেত্রে কোনরূপ ক্ষত পার্থক্য নেই। এই অর্থে রামচন্দ্রের বুদ্ধের স্বরূপ হল এইরূপ-

"চিদাকারং সূক্ষ্মং বিভূ বিশদমোকার রহিতং।

নিরীহং নীরূপং তিরবধি কৃপাবীজমজরম্।।

সমস্তঞং সর্বোপাধিরহিত মৈশাদ মৃতদং।

জিতানঙ্গৈঃ সেব্যাং ভবতু মম তদ্বস্তু শরনম।।" ৫নং শ্লোক।

ভক্তিশতকম্ কাব্যের বুদ্ধ একঅর্থে ব্রাহ্মণ্যদেবতা 'শিব' যিনি আশুতোষ, প্রসন্ন হাস্যে নিখিল ভয়হরণ, রাজরাজেশ্বর হয়েও অনাসক্ত, যিনি উমাস্বামী অথচ শান্ত, সমাহিত, স্থিতধী এবং মহাযানীদের করুণাঘন বুদ্ধ একত্রীভূত রূপ লাভকরেছে। যেমন-

"রূপং লোচনলোভং শ্রবণয়োরানন্দ সন্দোহদা বাণীবিশ্ববিমোক্ষজ্ঞকৃত্তব কৃপা বেশোহতি শান্ত'ব। পান্ডিত্যং প্রথিতং জগৎসু ভগবন সর্বজ্ঞনাম্নৈবতে সাম্প্রাজ্যস্য যৌবনে নিরসনে বৈরাগ্য সীমাসফুটম।।" ৯৪ নং শ্লোক।

এক্ষেত্রে বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি প্রায় একই ভাষায় তাঁর কাঙ্কিত দেবতার প্রতি বলেছেন-

"গণইতে দোষ গুণলেপ পত্তিবি।

জর তুহু করবি বিচার।।

তুহু জগন্নাথ জগত কহায়পি।

জগ বাহির নহ মুঞ্চি ছার।।"- বিদ্যাপতি, পৃষ্ঠা ৪৭৬।

তবে কবিভারতী বিদ্যাপতি' চেয়েও আর পরিষ্কৃত। তাই তিনি বিশ্বাস করেন-

"জগদুপকৃতিরেব বুদ্ধপূজা

তবপকৃত্রিপ্তর লোকনাথ পীড়া।।" ৩৩ নং শ্লোক।

কবিভারতীর জীবনে ভগবান্ বুদ্ধের প্রতি ভক্তি দীপস্তম্ভের শিখার ন্যায় জ্যোর্তিময়। এই অটল ভক্তি অন্তর্নিহিত সত্যের নির্ভীক নিশ্চল জ্যোর্তিময় দীপ্তি। এই দীপ্তি তাঁর চরিত্রে, কাব্যে এবং চিন্তায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। গঙ্গাপুরাণে যেমন ভগীরথ স্বর্গের মন্দাকিনীকে অনেক তপস্যার পুণ্য প্রভাবের বলে মর্তে আনয়ন করেছিলেন। ঠিক সেইভাবে 'ভক্তিশতকম্' কাব্যের মাধ্যমে কবিশেখর রামচন্দ্র ভক্তি এবং আত্মণিবদনের স্রোতপ্রবাহকে পাঠকের হৃদয়ে উপস্থিত করেছেন। সুতরাং এই অর্থে তাঁকে বৌদ্ধধর্মের ভক্তিবাদের 'দ্বিতীয় ভগীরথ' বলা যায়।

"সর্বজ্ঞ বস্ত্র সরসীরুহরাজহংসং

কুন্দেন্দুসুন্দররুচিং সুরবৃন্দবন্দ্যেম্।

সদ্ধর্মচক্র সহজং জনপারিজাতং

শ্রীদন্তধাতুমথলং প্রণমামি ভক্ত্যা।।" ১৯ নং শ্লোক।

বুদ্ধের রূপগুণ তথা কর্মের বিষয়টি কবির বর্ণনায় কান্তমণির আলোকের ন্যায় বিচ্ছুরিত হয়েছে। যেমন-

"তব গুণ কথনে তু যঃ প্রসন্নঃ

তমনুবিশন্তি মুনে গুণাত্মদীয়াঃ।

উদয়তি শশিনি প্রসন্নমিন্দু-

নলমিব তব কিরণাবলী তুষারঃ।।" ৭১ নং শ্লোক।

সংস্কৃত বৌদ্ধ সাহিত্যে বর্ণিত ভগবান বুদ্ধের করুণাময় বৈদ্যরাজ রূপ রামচন্দ্রের কাব্যে অত্যন্ত উজ্জ্বল রূপে প্রস্ফুটিত হয়েছে। তাই কবির উপলব্ধি এইভাবে ব্যক্ত হয়েছে-

"জগদুপকৃতিরের বুদ্ধপূজা

তবপকৃতিস্তব লোকনাথ পীড়া।

জিন জগাপেকৃৎ কথং লজ্জে

গদিতুমহং তব পাদপাভক্ত।।" অন্যত্র ৩৩ নং শ্লোক।

"....মদমৃত সম-বুদ্ধ-রত্ন-নাম

স্মৃতিরহিতং দিনমস্য মা তদন্ত।" ৪৭ নং শ্লোক।

বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস তাঁর আরাধ্য দেবতার পদে আত্মনিবেদন পূর্বক সমুচ্ছ্বসিত বন্দনাগীতি রচনা করেছেন

"শয়নে স্বপনে    নিদ্রা জাগরণে 

       কভু না পাসরি তোমা।

অবলার ত্রুটি।     হয় শতকোটি 

         সকলি করিবে ক্ষমা।

                 বৈষ্ণব মহাজন পদাবলী, ১ম।

জ্ঞানদাম প্রায় একইভাবে দেবাতর পদে নিজেকে সমর্পিত করে জীবনের অনবদ্য স্বার্থকথা গ্রহণ করতে চেয়েছেন-

"কী মোর ঘর।      দুয়ারের কাজ 

         লাজ করিবারে নারি। 

তিলেক বিচ্ছেদে।    লাখ পরমাদ 

          হিয়া বিদরিয়া মরি।

সে রাঙা চরণে।     আপনা বেচিনু 

            তিল তুলসী দিয়া।বৈষ্ণব মহাজন পদাবলী, ১ম।

 

রামচন্দ্র প্রকৃত অর্থে কোনরূপে কবিগোষ্ঠীর অন্তর্গত নন। স্বয়ং তিনি একটি অধ্যায়। ভাষা, বক্তব্য, উপমা, চিত্রকল্পে তিনি একটি স্বতন্ত্র দার্শনিকতার পরিচয় প্রদান করেছেন। যেমন

"মুর্দ্ধন বুদ্ধং নম ত্বং শ্রবণ শৃণু সদা ধৰ্ম্মামদ্বৈধবাদি-প্রোক্তং সর্ব্বজ্ঞরূপং নয়ন নিরূপমং পশ্য জিক্রয়াধ্রুিপদ্মম্ ঘ্রাণ ত্বং চার্কবন্ধোঃস্তুহি সখি রসনে শ্রীঘনং পূজরেথাঃ সিদ্ধং পানে ব্রজাঙ্গ জিনসদনমদস্তদগুণং চিত্ত চিন্তয়।২২ নং শ্লোক।

বৈষ্ণব কবি বিদ্যাপতি প্রায় একই ভাষায় তাঁর কাঙ্কিত দেবতার প্রতি বলেছেন

"গণইতে দোষ গুণলেস না পাত্তবি। জব তুহু করবি বিচার।" বিদ্যাপতি, পৃষ্টা ৪৭৬।

গীতগোবিন্দ' রচয়িতা জয়দেব গোস্বামী ভক্তিশতকম্'এর /১টি ভাবরস নিজগ্রন্থে সম্পৃক্ত করেছেন। যেমন রামচন্দ্র কবিভারতী তাঁর কাব্যের ৮৮তম শ্লোকে বর্ণনা করেছেন

"অথ সকলবিদং দয়াসমুদ্রং ত্রিভূবন কারণকারণং কুলীনম্। নিখিলগত মনস্ত মস্তিশান্তিং মুনিজন মানসহংসসমীশমীড়ে।।"

গীতগোবিন্দ-

"নিন্দসি যজ্ঞবিধেরহহ শ্রুতিজাতং। সদয়হৃদয়দর্শিত পশুঘাতম্।। কেশব ধৃতবুদ্ধশরীর জয় জগদীশ হরে।।"

ভাব-রসের সঙ্গে ভক্তিধারা শরণাগতির অনবদ্য সমন্বয়ে গঠিত এক মনোরম সৌরভের নিঃস্মরণ করে কবি রামচন্দ্র তাঁর ভক্তিশতকম্' কাব্যকে অমরত্ন প্রদান করেছেন। তিনি তাঁর আকাঙ্কিত দেবতা অর্থাৎ মহাকারুনিক বুদ্ধের সঙ্গে এক মুহূর্তের বিচ্ছেদ কল্পনা করেন নি। তাই তিনি উপলব্ধি করেছেন সদ্ধর্ম তাঁর অন্তরে লীন হয়ে আছে। আর সেই কারণেই তিনি বলেছেন

"অবিরতম্বলোকয়ামি বুদ্ধং গতরজসা মনসাপি চক্ষুসেব। স্বপিমি নিশি নিধায় যদ্ধৃদিত্বাং মম সমং বিরহজ্বয়াত এব।৪৬ নং শ্লোক।

ভক্তি শতকম্ কবি মহাকারুণিক বুদ্ধকে ভাগবতসত্তার জ্যোতিলোকে উপস্থাপন করেছেন। এই কাব্যে বুদ্ধ তাঁর মর্ত্যসীমার উর্দ্ধে দেবসিংহাসনে অধিষ্ঠিত।

"ত্রিভূবনমসকৃন্নিরূপযুষ্মত্ পদসরসীরুহরেনুমাশিতোহহম্। শরণময়ময়ঞ্চ দৈবতং মে গতিরপরা মম নাস্তি নাস্তি নাস্তি।।" ১৪ নং শ্লোক।

পুনঃ এইরূপে-

"সমজনি ভগবান্ স্বয়ং স্ম যস্মিন্ সকলমবোধি যত্র ধর্মচক্রম্। বিশদতরমদীপি যত্র যম্মি-ন্নমৃতিমপুরি তদপ্যহং নমামি।। ১৮ নং শ্লোক।

কল্পনা আনন্দ, উচ্ছ্বাস, অনুভূতি ভক্তি শতকম্'এর প্রতিটি পদের ছত্রে ছত্রে দৃষ্ট হয়েছে।

"পুনরপি শরণং ব্রজামি বুদ্ধং পুনরপি লোকগুরুং শুরু করোমি। পুনরপি কথয়ামি নৌমি বন্দে ত্বয়ি মম গৌতম! নৈব তৃপ্তিরাস্তে।।" ১৩ নং শ্লোক।

বৈদিক সাহিত্যে 'ভক্তি' শব্দের কোনরূপ সঠিক উল্লেখ দৃষ্ট হয় না। অনেত পণ্ডিতবর্গের মতে ভক্তিধর্ম পৌরাণিক যুগের সৃষ্টি। 'মুণ্ডক উপনিষদ' ভগবানের অনুগ্রহ লাভই ভক্তের পরম আশ্রয় বলা হয়েছে। 'যমবৈম বৃনুতে তেনৈব লভ্যঃ তস্যৈয আত্মা বিবৃনুতে তনু স্বাম' (..) তৈত্তিরীয় উপনিষদ' বলা হয়েছে, 'রসো বৈ সঃ। রসং হোবায়ং লবন্ধনন্দী ভবতি (.) সুতরাং এই অর্থে বলা যায় যে, সৎকরোষি যদশ্বাসি এবং সর্বকর্মফল ত্যাগং ততঃ কুরু' রামচন্দ্রের কাব্যে অত্যন্ত সুন্দরভাবে সমন্বিত লাভ করেছে।

"ইতি ভবদুপদেশতো বিদিত্বা তব পদপঙ্কজপূজনে রতোহস্মি। দৃঢ়য়তু ভগবন্ যুগে যুগে মে কুমতিসুদস্য ভবে ভবেহ্যভক্তিম্।।" ৭৫ নং শ্লোক।

অনুরূপভাবে

"স্থিরসপি ভগবান্ ক্ষণং তবোক্তো।

করচরণাদিদুগাদিবৈরিবর্গঃ।

....ত্বমিদমনাথমনীশ পাহি পাহি।।" ৭৬ নং শ্লোক।

আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি যে রামচন্দ্র কবিভারতী তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। যার মূল ভাষা ছিল সংস্কৃত। এই সময়কালে বাঙালী মণীষা সাহিত্য রচনার প্রশ্নে নূতন কোন স্বাক্ষর উপস্থাপন করতে পারেন নি। সর্বোপরি মৌলিক কাব্য তথা নাটক রচনার ক্ষেত্রে ১৩-১৪ শতাব্দী বিশেষভাবে আলোকপাত করে নি। এর মূল কারণ ছিল সমগ্র বাংলার বৌদ্ধধর্মের পতন, চন্দ্রবংশীয় কর্ণাটকদেশবাসী ক্ষত্রিয় বল্লালসেন'এর উত্থান, ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পুনঃ প্রাদুর্ভাব এবং মহম্মদ কমতিয়ার খলজি কর্তৃক বাংলায় ইসলামী শাসনতন্ত্রের প্রয়োগ। সুতরাং এই অর্থে বলা যায় যে রামচন্দ্র যে সময়কালে সিংহলে গমন করেন তখন বাংলা তথা ভারতবর্ষে সুলতানী শাসন (খলজি বংশ) সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এক্ষেত্রে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় এর মন্তব্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, "...আমি বহু পুঁথি লাভ করেছি, কিন্তু ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত কোন সংস্কৃত পুঁথির সন্ধান লাভ করিনি, কেবল নকল করা খানি পুঁথি অবলোকন করেছিল মাত্র।সম্ভবতঃ এই সময় বাঙালী সমাজ তুর্কী আক্রমণ এবং কৌলিন্য প্রথার আক্রমণে নুজ্ব হয়ে পড়েছিল। এই স্থনে উদানং এর নিন্মোক্ত গাথাটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ-

"সদ্ধিং চরসেকতো বসং মিসো অঞ্জনেন বেদগু,

বিদ্ধ পজহাতি পাপকং কোঞ্চো খীরপকোব নিম্নগন্তি। ৭৭।।" দ্বিধাপথ-সুতং, উদানং।

কবিভারতীর 'বৃত্তরত্নাকর পঞ্জিকা' ১২৪৫ খৃঃ সমাপ্ত হয়। সুব্রাহ্মণে নামক কোন এক ব্রাহ্মণপণ্ডিতের অনুরোধে ছন্দশাস্ত্র শিক্ষার্থীদের নিমিত্তে এই টীকা রচিত হয়েছিল। অপরদিকে কবির 'ভক্তিশতকম্' অষ্টোত্তরশত শ্লোকবিশিষ্ট বৌদ্ধভক্তি মূলক কাব্য। উক্ত গ্রন্থটি পাঠ করে পরম সন্তুষ্টচিত্তে রাজা কবিকে 'বৌদ্ধাথ চক্রবর্তী' উপাধিযুক্ত সমালংকৃত একটি স্বণকলস দান করেছিলেন। পরে কবি রাজমন্ত্রীর পদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন।

ভক্তিমূলক শতশ্লোকে বিরচিত কাব্য 'ভক্তিশতকম্'এর গুরুত্ব অপরিসীম। কামনা এবং ভোগের আকাঙ্খা এই কাব্য গ্রন্থে সম্পূর্ণভাবে বর্জিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ভক্তিশতকম্ কাব্যের মূল উৎস হল মুক্তির আকাঙ্খা। এই অর্থে রাজকবি হর্ষধনের ২৪ শ্লোকে (মালিনী ছন্দ) রচিত 'সুপ্রভ' বা 'সুপ্রভাত' নামক বুদ্ধ স্তোত্র বিশেষভাবে উল্লেখ্যনীয়। তবে এক্ষেত্রে ভাবের গভীরতায় তথা অকৃতিমতায় 'ভক্তিশতকম্' অসাধারণ।

মহেন্দ্রবদপৎ কনকপর্বতে সর্বতঃ

সদাতব মনোহরং স্ফুরতি সুপ্রভামণ্ডলম্। ৯৩ নং শ্লোক।

 

সহায়ক গ্রন্থসূচী:

১। বাংলায় বৌদ্ধধর্ম সংস্কৃতি, সুধাংশুবিমল বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা, কলকাতা, প্রকাশকাল ২০০৮।

২। বাঙ্গলার ইতিহাস, ১মখণ্ড, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দেজ পাবলিশিং, কলকাতা ১৪০৫ (তৃতীয় মুদ্রণ)

৩। ভক্তিশতকম্ বাঙালীর উত্তরাধিকার, সম্পাদনা সুমিত বড়ুয়া, কলিকাতা প্রকাশনী, কলকাতা, প্রকাশকাল ২০২৩।

৪। বৈষ্ণব পদাবলীর ইতিহাস, সমীরণ মজুমদার, ঐক্য প্রকাশনী, প্রকাশকাল ১৯৯১, পশ্চিম মেদিনীপুর।

৫। বঙ্গদেশ এবং ধর্ম, অরুণাভ সেনগুপ্ত, ঐক্য পত্রিকা, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯৮৯ (বার্ষিক সংকলন)

৬। উদানং (পালি-হিন্দি), পণ্ডিত মদনমোহন তিওয়ারী, বৌদ্ধভারতী, ১৯৯০, বারাণসী, উত্তরপ্রদেশ।

 

 

No comments:

Post a Comment