সুমনপাল ভিক্ষু
"কারও প্রতি ঘৃণাভাব এবং ঈর্যা পোষন করলে জীবনে কোনোরূপ আনন্দ লাভ করা সম্ভব নয়। ঈর্যা ব্যক্তির মনের শান্তিকে বিনষ্ট করে দেয়।"
-- বি. অনু. টী. পৃ: ২৩ !!
প্রাণীকূল তথা মনুষ্য জীবন দুঃখ দ্বারা সম্পূর্ণভাবে পরিপূর্ণ। এখানে সুখ নামক তথাকথিত মরিচীকার অনুসন্ধান করা অর্থহীন। কারণ সুখ বলে কোনোও বিষয়ই নেই। তবুও মানুষ সুখের সন্ধানে নানাবিধ অনৈতিক কর্মে লিপ্ত হয় এবং তার মধ্যে সুখের সন্ধান করে। দুঃখ পরিপূর্ণ কুঙ্ভের ন্যায় স্থিত থাকে শূন্য কখনই হয় না।
জীবন এবং জগতের সমস্যা কার্য- কারণ শৃঙ্খলা হতে উৎপন্ন হয় আর কার্য- কারণ শৃঙ্খলা নিরুদ হলে প্রকৃত অর্থে দুঃখ মুক্তি লাভ হয়৷ এই মনুষ্য কোনরূপ স্বতন্ত্র একক নয়, যাকে "আমি" বলে গণ্য করা হয়, তা প্রকৃত অর্থে বঞ্চস্কন্ধের সমুচ্চয় মাত্র। যা অনিত্য, দুঃখ তথা অনাত্বা হয়।
তবে এখানে প্রশ্ন আসতেই পারে যে স্বামী শিবানন্দ জীবন দর্শনের সঙ্গে উপরিউক্ত কথাগুলি আক্ষরিক অর্থে কতটা প্রাসঙ্গিক। এর উত্তরে বশবো না কোনো ভাবেই তা প্রাসঙ্গিক নয় বরং বিপরীত ধর্মী। তাহলে পুণ: প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে কেনই বা তাঁর জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা কারণ তিনি তো এদেশে বা বহিঃবিশ্বে নতুন কোনো দর্শন বা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন নি। এখানে এই সকল প্রশ্নের উত্তর গুলিকে তাহলে এইভাবে পর্মায় ক্রমে আলোচনা তথা বিশ্লেষণ করা হোক, হয়তো তার মধ্যেই এই বিষয় সমূহের উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে।
স্বামী শিবানন্দের জন্ম ১৮৯৬ সালের ৮ আগষ্ট। জন্মস্থান অধুনা বাংলাদেশের (তৎকালীন বৃটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি'র অন্তর্গত) সিলেট অঞ্চলে। তিনি ছিলেন একটি হিন্দু পরিবারের সন্তান। সেই অর্থে সীমাহীন দারিদ্রতা ছিল তাঁর জীবনের নিত্য সঙ্গী। প্রথমযুদ্ধ কালে তাঁর বয়স ছিল ১৮ বৎসর (প্রথমযুদ্ধ ১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই) অর্থাৎ এই বৈষ্ণব সাধনাকারী ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, আন্তর্জাতিক অপেক্ষায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯ সাল), রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী, সুভাসচন্দ্র বসু, দেশভাগের মর্মান্তিক ইতিহাস ইত্যাদি সকল গুরুত্বপূর্ণ- অগুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাঁর বর্তমান নিবাস ভারতের উত্তরপ্রদেশ স্থিত বারাসীর শিবানন্দ আশ্রম। স্বামী শিবানন্দ বর্তমানে ১২৪ বৎসর বয়সক (পৃথিবীর দীর্ঘতম বয়সক ব্যক্তি) একজন হিন্দু যোগাচার্য। প্রচার বিমুখ এই সাধক সম্পর্কে সর্বপ্রথম আলোকপাত করা হয় ১৯৯১ সালে (উত্তরপ্রদেশ হতে প্রকাশিত অধুনা লুস্ত হিন্দি সাপ্তাহিক 'প্রয়াণ সমাচার' নামক পত্রিকা)। পরবর্তী সময়ে বারানসী'র 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা' হতে প্রকাশিত 'ভারতের সহারা মোগী (১৪ খন্ড) নামক গ্রন্থে তাঁর সাধক জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
স্বামী শিবানন্দ প্রচারের আলোকে আলোকিত হন ২০১৪ সালে। এই সময় হতে তাঁর নানাবিধ সাক্ষাৎকার, যোগ চর্চা ইত্যাদি বিষয়গুলি জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে বহুলভাবে প্রচারিত হতে থাকে। তিনি বৈদ্যুতিন মাধ্যম গুলিকে নানাভাবে বলেছেন 'জীবন সাধারণ ভাবে অতিবাহিত করা উচিত'। অর্থাৎ পরিমিত আহার, নিয়মিত যোগাভ্যাস, অলসতা পরিহার সহ প্রত্যুষে শয্যাত্যাগ ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রে তাঁর কথাগুলিকে বহুলভাবে বিজ্ঞাপনের স্থানে উন্নীত করা হল অর্থাৎ এর সঙ্গে যুক্ত করা হল নিরামিষ আহার ও তথাকথিত সনাতনী সাধন ভজনের বিষয়গুলি কে। এক্ষেত্রে আলোচনা হতেই পারে যে তাহলে কি নিরামিষ আহার গ্রহন করলেই কি দীর্ঘজীবন লাভ করা সম্ভব? এর উত্তর হবে না বিজ্ঞান তা বলে না। তবে একথা বলা যায় যে সঠিক পদ্ধতিতে যেগসাধনা এবং পরিমিত আহার ইত্যাদি গ্রহনের দ্বারা দীর্ঘজীবন ধারণ করা সম্ভব হতে পারে। ভারতবর্ষের প্রাচীন যোগ বিজ্ঞানের গ্রস্থগুলিকে অধ্যয়ন করলে দীর্ঘজীবন লাভের বিষয়টি আরও পরিস্কার হবে। এপ্রসঙ্গে ড. নাগেন্দ্র নাথ উপাধ্যায় রচিত 'বৌদ্ধ যোগ-সাধনা এবং সাহিত্য' গ্রন্থ টি অতীব প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণও বটে।
যাই হোক, স্বামী শিবানন্দ মহারাজের কর্ম জীবন তথা আধ্যাথিক চিন্তা ইত্যাদি বিষয়গুলিকে সম্যক ভাবে অনুশীলন ইত্যাদি দ্বারা আমরা দুঃশ্চিন্তা হীন নতুন জীবন ধারণের বিষয় গুলিকে অনুসরণ এবং অনুগমন করতে পারি। কারণ এক্ষেত্রে বিশুদ্ধি জীবন চর্চার ক্ষেত্রটি অন্তত অনেকটা সুস্থ, স্বাভাবিক এবং উন্নত হবে। তাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাভাব পোষণ করে বলতে হয়-
"হে বিরাট নদী,
আদৃশ্য নিঃশব্দ তব জল
অবিচ্ছিন্ন অবিরল°°°°°°!"
No comments:
Post a Comment