জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ক্লিনিক্যাল রোগতত্ত্ববিদ এবং চিকিৎসা শিক্ষাবিদ, মানবিক ও পরোপকারী ব্যক্তিত্ব, আমার পরম কল্যাণমিত্র, যাঁর কাছে ব্যক্তিগত ভাবে ঋণী, যিনি আমার পিতা মাতাকে অক্লান্ত সেবা চিকিৎসা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়ে চলেছেন, যিনি ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতেও হাসপাতালে ছুটে গেছেন আমার মায়ের অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত যাবতীয় সুবিধা অসুবিধার খোঁজ খবর প্রতিনিয়ত নিয়েছেন, প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়ার জন্মদিন আজ।
বড়ুয়া বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রথম ব্যক্তি যিনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হয়েছিলেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি)-এর উপাচার্য হিসেবে চার বছর দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হতে কৃতিত্বের সাথে মেডিসিন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিপসম (জাতীয় রোগ প্রতিরোধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান) হতে জনস্বাস্থ্য বিষয়ে দু'পর্বের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া ১৯৮৬-১৯৮৭ সালে ১ বৎসরের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ভারত, থাইল্যাণ্ড ও ইন্দোনেশিয়াতে শিশু, চর্ম বিভাগ ও মেডিকেল এডুকেশন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ফেলোশিপ ও প্রশিক্ষণ লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল হতে ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজী বিষয়ে ১৯৯৬সালে গ্রেডেড ডিপ্লোমা এবং ১৯৯৭ সালে থিসিস সহ এমএমএসসি (মাস্টার্স অব মেডিকেল সায়েন্স) ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৮৩ সালে হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও স্নাতকোত্তর প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৮ বছর অধ্যাপনা ও চিকিৎসা গবেষণা কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া দেশ বিদেশে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রায় ৩৫টি গবেষণা ও জাতীয় স্বাস্থ্য কর্মসূচি মূল্যায়নমূলক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
এছাড়া তিনি ২০১১ সালে অবসরের পর চমেক, চট্টগ্রাম ও ফৌজদার হাট নার্সিং কলেজে রোগতত্ব ও রিসার্স ম্যাথোডলজী বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন। কর্মজীবনে তিনি বিসিএস, স্বাস্থ্য (ক্যাডারে) স্থায়ী সংস্থাপন পদালী'তে যোগদান করে বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ৩২ বছরের অধিককাল কর্তব্য পালন করেন।
২০০৪ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্স এমপিএইচ এর কোর্স কোঅর্ডিনেটর ও বিভাগীয় প্রধান-এর দায়িত্ব পালন করেন এবং বিগত আড়াই দশক যাবৎ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সহ চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) স্নাতক ও এমডিএমএস এবং এমপিএইস কোর্সে পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক, এমবিডিসি ও জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও কুষ্ঠরোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডাইরেক্টর হিসেবে কর্মসূচির জাতীয় টার্গেট অর্জনে সাফল্য অর্জন করেন।
তাঁর প্রায় ৩০টি মেডিকেল ও সামাজিক চিকিৎসা বিষয়ক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ দেশ বিদেশে জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার আনুকূল্যে ১০টির অধিক গাইডলাইন, স্টাডি গাইড ও ট্রেনিং মডিউল এ রিসোর্স পার্সন হিসাবে অবদান রেখেছেন। স্বাস্থ্য বিষয়ক তিনি ৫০টির অধিক প্রবন্ধ, সংক্রামক ব্যাধি নামক একটি পুস্তিকা, জীবন সত্য বিষয়ক পুস্তিকা অনুবাদ, ছাত্র জীবন থেকে বিভিন্ন স্মরণিকা সম্পাদনা, সদ্ধর্ম, সমাজ ও উন্নয়ন সর্ম্পকিত ৪০টির অধিক বাংলায় তার রচিত প্রবন্ধ বিভিন্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফ্রান্স, ব্রাজিল, মেক্সিকো, থাইল্যাণ্ড ও ফিলিপাইনসহ কয়েকটি দেশে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও কুষ্ঠরোগ উচ্ছেদ কর্মসূচি সাফল্য ও জনগণের ভাবমূর্তি তুলে ধরেন।
ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া এসএসসিতে কয়েকটি বিষয়ে ডিস্টিংশান নিয়ে এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থান লাভ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক জনকল্যাণ সমিতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের আজীবন সদস্য, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, আন্তর্জাতিক এপিডেমিওলজিকেল এ্যাসোসিয়েশন-এর সদস্য ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব টিউবারকুলোসিস এন্ড লাংগ ডিজিসেস-এর সদস্য। প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব মেডিকেল এডুকেশন (১৯৯৪-৯৬); প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক (১৯৯৪-৯৬) ও প্রাক্তন সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সোসাইটি অব কমিউনিটি মেডিসিন; প্রাক্তন সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ কিডনী ফাউন্ডেশন (২০০১-২০০৩), সভাপতি, প্রিয়রত্ন-বুদ্ধদত্ত-সংঘরক্ষিত স্মৃতি ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ডক্টরস এসোসিয়েশন (বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন) ও বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন ফর এডভান্সমেন্ট অব ট্রপিকেল এণ্ড ইনফেকশাস ডিজিসেস, চট্টগ্রাম এর দায়িত্ত্ব পালন করেন।
এছাড়া দেশ বিদেশের অনেক ধর্মীয়, সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত আছেন। স্বাস্থ্যসেবায় যেকোন মানুষের কল্যাণে যুগ যুগ ধরে তিনি নিরলসভাবে সহযোগিতা করে আসছেন।
১৯৫৪ সালের ৩০ মার্চ বাঁশখালী পৌরসভা সদরস্থ উত্তর জলদী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি-সম্পাদক- প্রয়াত সোমেশ চন্দ্র বড়ুয়া এবং প্রয়াত অনিলা বড়ুয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া
No comments:
Post a Comment