bodhinidhi.blogspot.com

Followers

Blog Archive

  • ►  2025 (16)
    • ►  May (11)
    • ►  March (3)
    • ►  January (2)
  • ►  2024 (23)
    • ►  December (4)
    • ►  September (1)
    • ►  August (5)
    • ►  July (4)
    • ►  June (9)
  • ►  2023 (28)
    • ►  November (4)
    • ►  October (3)
    • ►  September (2)
    • ►  August (6)
    • ►  July (2)
    • ►  June (1)
    • ►  April (3)
    • ►  February (6)
    • ►  January (1)
  • ►  2022 (27)
    • ►  December (8)
    • ►  August (8)
    • ►  May (2)
    • ►  April (2)
    • ►  February (2)
    • ►  January (5)
  • ▼  2021 (18)
    • ▼  December (4)
      • ধুতাঙ্গ ব্রত ও বিনয় সাহিত্যে মহাচোর
      • গ্রন্হ সমীক্ষা
      •  পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর রোগের মধ্যে একটা হল নিজেকে ...
      • BUDDHIST MINDFULNESS
    • ►  July (13)
      • BODHI-NIDHI SANGHARAMA SANTHAGARA
      •  / সুনীতি পাঠক //একটি বিশালগাছ মাথা যার আকাশে ঠেকে...
      • প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্র
      •  হিন্দি, ইংরেজি অবশ্যই শিখবো কিন্তু জোড় করে চাপিয়ে...
      •  
      •  বড়ুয়ারা যতদিন উপযুক্ত গুরু চয়ন করতে জানবে না এবং ...
      •  মধু পূর্ণিমা ও বুদ্ধোপদেশমধু পূর্ণিমা বৌদ্ধদের ন...
      •  বুদ্ধের দৃষ্টিতে প্রজা পালনভিক্ষু সুমনপালবুদ্ধ গণ...
    • ►  May (1)
  • ►  2019 (8)
    • ►  June (1)
    • ►  April (2)
    • ►  March (1)
    • ►  January (4)
  • ►  2018 (6)
    • ►  October (2)
    • ►  September (2)
    • ►  February (1)
    • ►  January (1)
  • ►  2017 (1)
    • ►  March (1)
  • ►  2016 (15)
    • ►  December (2)
    • ►  November (2)
    • ►  October (1)
    • ►  September (1)
    • ►  July (9)
  • ►  2014 (9)
    • ►  July (5)
    • ►  February (4)
  • ►  2013 (9)
    • ►  August (2)
    • ►  July (1)
    • ►  June (2)
    • ►  May (4)

About Me

My photo
Sumanapal Bhikkhu
View my complete profile

Wednesday, December 29, 2021

ধুতাঙ্গ ব্রত ও বিনয় সাহিত্যে মহাচোর


সুমনপাল ভিক্ষু

 অর্থকথা আচার্য বুদ্ধঘোষ তথা ভিক্ষু নাগসেনের ধর্মকথায় ধুতাঙ্গ বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন- "সাধারণের মন সদা চঞ্চল-বিক্ষুদ্ধ। এই অস্থিররতা কেন? লোভ-দ্বেষ-মোহ তথা অবিদ্যা আর তৃষ্ণার তাড়নায়। সুখ, শান্তি, বিমুক্তি ও নির্বাণের বিমল আনন্দ লাভের পথে এই অন্তরায় সমূহের সংক্ষিপ্তত নাম ক্লেশ বা ‘কিলেস’। বুদ্ধ এই ক্লেশকে মার বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই মার প্রাণীকুলকে অহরহ দুঃখ তাপে ক্ষত বিক্ষত করে বলেই মার। এই ক্লেশ-মারকে “ধুনন” ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করণে যে শীল সংযমতা অনুশীলন অপরিহার্য তারই নাম ধুতাঙ্গ”। ধুত শব্দের অর্থ বিশুদ্ধভাবে ধোয়া। ধুতাঙ্গ হচ্ছে চিত্তের অবিদ্যা, তৃষ্ণা , ক্লেশাদি নীবরণ ও সংযোজনকে তুলোর ন্যায় ধুনন নিধুনন করবার বিশুদ্ধভাবে ধোয়ার অঙ্গকে বুঝায়। ধুতাঙ্গ অনন্ত, অসীম, আয়ত, বিপুল, বিস্তৃত, নির্মল, অতুল্য, অপ্রতিরূপ, অপ্রতিভাগ, অতি উত্তম, শ্রেষ্ঠ, প্রধান, মহৎ ও মহান হয়ে থাকে। ধুতাঙ্গ উচ্চতর শীল সংযম ও ত্যাগের অঙ্গ। ধুতাঙ্গ শীল মনের পাপমল বিধৌতকরণে উৎকৃষ্ট ঔষধের ন্যায় কাজ করে। স্মৃতি সংযম রক্ষার জন্য, সংশয় সমুচ্ছেদের জন্য, তৃষ্ণা পিপাসা নিবারণের জন্য, শ্রামণ্য ফল বৃদ্ধি প্রাপ্তির জন্য, ক্লেশমল ধৌত করার জন্য, ধর্মজ্ঞান অর্জনের জন্য, চার প্রকার স্রোত উত্তরণের জন্য, নির্বাণ সুখ লাভের নিমিত্ত, জন্ম, জরা, ব্যাধি, মরণ, শোক, পরিদেবন, দুঃখ, ভয় নিবারণের জন্য, শ্রমণ্য গুণ সমূহ রক্ষার নিমিত্ত, অসন্তোষ ও কুচিন্তা রোধ করার জন্য, সমথ, বির্দশন, মার্গ, ফল ও নির্বাণ দর্শনের জন্য, মারকে পরাস্ত করার জন্য, লোভ-দ্বেষ-মোহ তথা অবিদ্যাদি যন্ত্রণা হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য, সপ্ত বোধ্যঙ্গ সহ সাইত্রিশ প্রকার বোধিপক্ষীয় ধর্ম আয়ত্বের জন্য, প্রভৃতি গুণরাশি আয়ত্ব করতে ধুতাঙ্গাদি সাহায্য করে।

শীল পালনের প্রতি অধিষ্ঠান গ্রহণের প্রতি আন্তরিক থাকা। পঞ্চশীল পালন করব এই অধিষ্ঠানের মধ্যে স্থির থাকা এটাও ধুতাঙ্গ। একাধিক বছরের জন্য অষ্টশীল নেওয়া এই বছরের মধ্যে কোন প্রকার ইতস্ততা না করে আন্তরিকভাবে শীলের প্রতি ব্রত পালনের প্রতি আস্থা উৎপন্ন করাই ধুতাঙ্গ। বুদ্ধ অনেক শীলের ব্যাখ্যা করেছেন যেগুলির প্রতি সাধারণ পুদগলের ধারনা নেই।
যেমন:-
১। পঞ্চশীল
২। অষ্টশীল
৩। দশশীল
৪। দশ সুচরিতা শীল
৫। দশ চারিত্র শীল
৬। দশ বারিত্রশীল
৭। প্রাতিমোক্ষশীল
৮। ইন্দ্রিয় সংবরনশীল
৯। ইন্দ্রিয় পারিশুদ্ধিশীল
১০। প্রত্যয়সন্নিশ্রিত শীল
১১। আজীব পরিশুদ্ধশীল
১২। ১৩ প্রকার ধুতাঙ্গশীল
১৩। ১৪ প্রকার খন্ধকব্রতশীল
১৪। ৮২ প্রকার মহাব্রতশীল
১৫। ক্ষুদ্রশীল, মধ্যম শীল ও মহাশীল ভেদে শীল অনেক প্রকার রয়েছে (ব্রহ্মজাল সূত্র)।
এখানে ১৩ প্রকার ধুতাঙ্গের মধ্যে :-
১। পাংশু কুলিক ধুতাঙ্গ
২। ত্রৈচীবরিক ধুতাঙ্গ
৩। পিণ্ডপাতিক ধুতাঙ্গ
৪। সপদানচারিক ধুতাঙ্গ
৫। একাসনিক ধুতাঙ্গ
৬। পাত্রপিণ্ডিক ধুতাঙ্গ
৭। খল্লপচ্ছ ভতিক ধুতাঙ্গ
৮। আরণ্যিক ধুতাঙ্গ
৯। বৃক্ষমুলিক ধুতাঙ্গ
১০। মুক্তগগন তলে বাস ধুতাঙ্গ
১১। শ্মশানিক ধুতাঙ্গ
১২। যথাসন্থাতিক ধুতাঙ্গ
১৩। নৈসজ্জিক ধুতাঙ্গ।
কথিত আছে, বুদ্ধের সাথে মহাকাশ্যপের চীবর বিনিময় হয়। বুদ্ধের চীবর মহাকাশ্যপকে দেওয়া হয়, মহাকাশ্যপের চীবর বুদ্ধকে প্রদান করা হয়। মহাকাশ্যপ নতুন শ্রমন হওয়ার সাতদিন পর চার প্রতিসম্ভিদা সহ অরহত্ব ফল লাভ করেন। তখন মহাকাশ্যপ ভগবানের নিকট হতে তের প্রকার ধুতাঙ্গ ব্রত গ্রহণ করেন।
বুদ্ধ ভিক্ষুদের বলতেন চার স্মৃতি প্রস্থান সাধনা ভাবনা ছাড়া জীবন ব্যাপী শুধুমাত্র ধুতাঙ্গ শীল পালন করে কোন ভিক্ষু শ্রমন যদি মারা যায় কোন লাভ হবে না, সংস্কার উৎপন্ন হবে সত্য, যদি বিদর্শন ভাবনা না থাকে তাহলে শ্রোতাপত্তি, সকৃদাগামি, অনাগামি, অরহত হতে পারবে না। ভিক্ষুদের বুদ্ধ অনেক সময় বলতেন, আমি যে এত শীলের ব্যাখ্যা করেছি; চার ঈর্যাপথ চারস্মৃতি প্রস্থান অর্থাৎ বিদর্শন ভাবনা যখন অনুশীলন করা হয় তখন সমস্ত শীল তার হাতের মুঠোয় চলে আসে, শীল বিশুদ্ধি না হলে সঠিক বিদর্শন হবে না।
মহাকাশ্যপ অরহত্বফল লাভ করে ভিক্ষুত্ব জীবনের করণীয় কর্তব্য শেষ করেন মনের প্রশান্তির জন্য মাতৃজাতি যেমন দেহের বা অঙ্গের অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে গলার হার অথবা সোনার গয়না কিংবা সাজ সজ্জা করেন, অনুরূপ মহাকাশ্যপও অতিরিক্ত ধর্মের বিষয় হিসাবে ১২টি ধুতাঙ্গ ব্রত পালন করতেন। (কারণ ধুতাঙ্গের প্রকারভেদ লক্ষ্য দেখা যাবে যে কোন ভিক্ষু বা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়, যেমন ৯ এবং ১০ এক সঙ্গে পালন করা কোন মতেই সম্ভব হতে পারে না, যে কোন ধুতাঙ্গ ব্রত পালনকারী)। কাউকে দেখানোর জন্য, তিনি কখনোই বলেননি যে আমি অমুখ শ্মশানে আছি অমুক দিন অমুক গ্রামে পিণ্ডাচরণে যাব, অমুখ অনুষ্ঠানে যোগদান করব। এই সমস্ত কথা মুখে আসার সাথে সাথে অন্তরায় সৃষ্টি হয় এবং ধুতাঙ্গ অধিষ্ঠানের ব্রতকর্ম নষ্ট হয়। বিনয়কর্ম ছাড়া আর অন্য কোন অনুষ্ঠানে ঐ ভিক্ষু যোগদান করতে পারবেন না। ধুতাঙ্গ পালনকারী ভিক্ষু পিণ্ডাচরণে আসবে এই কথা কেউ না জানে মত মাত্র ১০/১২ পরিবার থেকে পিণ্ডাচরণ করতে পারবেন। কারো নিকট কিছু খাদ্য দ্রব্য ভাত, তরকারী, ফলমুল, এক মুষ্টি মুড়ি, কদলী বা কলা বাড়ীতে থাকলে দিতে পারলে দান হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন, তাতে আপত্তি নেই। দান যদি পাওয়া না যায় তাহলে পাত্র ধুয়ে জল পান করবেন। আগামীকাল তোমাদের গ্রামে পিণ্ডাচরণের জন্য আসব এই খবর কোন সেবকও দিতে পারবে না। বিনা খবরে অর্তকিতভাবে পিণ্ডাচরণে যেতে হবে, আগে থেকে জানাজানি হয়ে গেলে ধুতাঙ্গের অধিষ্ঠান শেষ হয়ে যায়। কোন কোন ধুতাঙ্গ দায়কের নিকট থেকে জায়গা জমি দান হিসাবে পাওয়ার জন্য আবেদন নিবেদন করে। জায়গা জমি তো দূরের কথা। দায়কের দেওয়া কোন কিছুই গ্রহণ করতে পারবে না। গ্রামে দান পাত্র বসাতে পারবেনা। পথে ঘাটে পরে থাকা ময়লা আর্বজনা থেকে কুড়িয়ে সংগ্রহ করে এগুলি ব্যবহার করবে।
কিন্তু বর্তমান অন্য চিত্র দেখতে পাচ্ছি বুদ্ধ বা বৌদ্ধ মতের পরিপন্হি। আজকাল এও দেখা যাচ্ছে যাঁরা ধ্যান সাধক আছেন নিজেদের আচার্য বলে জাহির করেন তাঁরাও নানাভাবে সমাজে মিথ্যা চর্যার আশ্রয় নিচ্ছেন বিপথে চালিত করছেন। এসব ভিক্ষুকে বিনয় সাহিত্যে মহাচোর বলে আখ্যায়িত করেছেন। মহাচোর বলতে বুদ্ধ কাদের বুঝিয়েছেন; যে সকল ভিক্ষু, বুদ্ধ শাসনে সংঘের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভূমি, বিহার ও দ্রব্যাদি গৃহীদের মন তোষণে দিয়ে থাকে, তেমন ভিক্ষুকে বুদ্ধ শাসনে মহাচোর বলা হয় এবং যে সকল ভিক্ষু এই বুদ্ধ শাসনে ধ্যান, সমাধি, মার্গ -ফল ইত্যাদি লাভ না করেও লাভ- সৎকার প্রত্যাশী হয়ে এসকল লাভ করেছে বলে আত্মপ্রশংসা করে থাকে এবং নিজেকে আমি ধ্যান শিক্ষক, ধ্যানাচার্য, আমি এতটা কোর্স করেছি, এত দিনের কোর্স করেছি; এবং দেবতা-ব্রহ্মা-মার এ সকলের সাথে তার জানা পরিচয় ও প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ইত্যাদি আছে বলে, ঠকবাজ ও প্রবঞ্চনামূলক আচরণ করে থাকে; তেমন ভিক্ষুই বুদ্ধ শাসনের সবচেয়ে হীন, মহাচোর বলে আখ্যায়িত হয়। আর তেমন মহাচোর শাসনে পারাজিকা প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করে ভগবান চতুর্থ পারাজিকা শিক্ষা প্রজ্ঞাপিত করেছেন।
মহাপ্রাজ্ঞ অর্হৎ ভদন্ত নাগসেন রাজা মিলিন্দকে বলেছিলেন–মহারাজ ধুতাঙ্গ গুণরাজির দ্বারা যারা বিশুদ্ধ হননি তাদের ধর্মজ্ঞান লাভ হয় না। যেমন, জল সেচন ব্যতীত বীজ সমূহের অন্কুরোদ্গম হয় না, সেরূপ ধুতাঙ্গ গুণরাজি দ্বারা যাদের আত্নশুদ্ধি হয় নি তাদের ধর্মজ্ঞান সম্ভব নয়।
“বিশুদ্ধ মার্গ” গ্রন্থের ধুতাঙ্গ বর্ণনায় আছে—“আরণ্যিক ধুতাঙ্গের অনুকূল কোনো খোলা জায়গা যদি শ্নাশান হয়, তাহলে একজন ভিক্ষু একবারে সবগুলো ধুতাঙ্গ পালন করতে পারে। ভিক্ষুণীদের শিক্ষাপদে আরণ্যিক ও খলুপচ্ছাভত্তিক এই দুটো ধুতাঙ্গ নিষিদ্ধ। অবভোকাশিক, বৃক্ষমূলিক, শ্মশানিক এই তিনটি ধুতাঙ্গ রক্ষা করাও তাদের জন্য কঠিন। কারণ ভিক্ষুণীরা দ্বিতীয় কোনো সঙ্গী ছাড়া একা বিহার করতে পারে না। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় কোন সমমনা সঙ্গী পাওয়াও কঠিন। আর পাওয়া গেলেও একসাথে বাস করা থেকে মুক্ত হতে পারে না। এভাবে যে উদ্দেশ্যে ধুতাঙ্গ পালন করার কথা, সে উদ্দেশ্য পূরণ হয় না এভাবে পালন করতে না পারায় পাঁচটি ধুতাঙ্গ বাদ দিয়ে ভিক্ষুণীদের জন্য আটটি ধুতাঙ্গ বলে জানতে হবে। উপরোক্তভাবে ত্রিচীবরিক বাদ দিয়ে বাদবাকি বারটি ধুতাঙ্গ শ্রামণদের জন্য, আর সাতটি হচ্ছে শিক্ষামনা ও শ্রামণেরীদের জন্য বলে জানতে হবে। উপাসক/উপাসিকাদের জন্য একাসনিক ও পাত্রপিণ্ডিক এই দুটো হচ্ছে উপযুক্ত ও পালনযোগ্য"।
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 10:46 PM No comments:

Sunday, December 19, 2021

গ্রন্হ সমীক্ষা

 বিজ্ঞাপন নিয়ে

ড. চন্দন বাঙ্গাল

'বিজ্ঞাপন' বিষয়টি অতীব জটিল অথচ গুরুত্বপূর্ণ একটি গণজ্ঞাপন অথবা 'বিশেষভাবে জ্ঞাপন' কিংবা সেই আশ্চর্য   প্রদীপ যা মানবজীবনের প্রতিটি রঙ্গবিতানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেমন বলা যেতে পারে আবার না বলেও বলা যেতে পারে......।

'কাঁধে বন্দুক, তালিবানি আমোদ নো-এন্ট্রি! অন্তর্দ্বন্ধ? জালালাবাদ, ফুল বদল গ্রহরত্ন! কুমোরটুলি' মৌসুমি অক্ষরেখা বৈধ বাল্যবিবাহ? কাণ্ডারী হুশিয়ার কিংবা দুই হুজুরের গপ্পো.......প্যাসিরাসের জন্য জীবন দর্শন হেলমেট নেই কেষ্ট বাহুবলী উপাচার্য নিভৃতির কাব্য ডিজিটাল হোডিং।

ড. চন্দন বাঙ্গালের 'বিজ্ঞাপন নিয়ে' নামক কৃষকায় অথচ মূল্যবান একটি গ্রন্হ প্রকাশিত হয়েছে ২০২১' এর জুলাইতে প্রকাশক 'অক্ষর বৃত্ত'। বিজ্ঞাপন জগতের নানা অজানা এবং মূল্যবান তথ্য উঠে এসেছে ছবির মতো। বিজ্ঞাপন সৃষ্টি, প্রয়োজন, অপ্রয়োজন ইত্যকার বিষয়গুলিকে লেখক কোলাজ শিল্পীর ন্যায় সমাজের ক্যানভাসে বিক্ষিপ্ত করে সাজিয়েছেন। সামাজিক বিষয় সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল বিজ্ঞাপনের উপস্থিতিতে প্রতিদ্বন্ধী হয়ে উঠেছে তাও চন্দন বাবুর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হয়ে উঠেছে এক দুর্মূল্য প্যাপিরাস। তিনি তাঁর লেখায় বিজ্ঞাপনের শিশুকাল হতে পরিণত হয়ে ওঠার যে সুদীর্ঘ যাত্রাপথ, তাও তুলে ধরেছেন। বিজ্ঞাপন জগতে সত্যজিৎ রায়, ঋতুপর্ণের ভাবনা গুলিও উপহার দিয়েছেন কৌতুহলী পাঠককে। তবে নারায়ণ কবে নাম, রেবতীভূষণ, শৈল চক্রবর্তী কিংবা পি সি এল' প্রমুখের বিজ্ঞাপন চর্চার সুদীর্ঘ পরিশ্রম না জানি কোন এক অজ্ঞাত কারণে এই গ্রন্হে আলোচিত হয় নি, হয়তো গ্রন্হভার বৃদ্ধির কারণে লেখক বিষয়টিকে উহ্য রেখেছেন।

তবে বিজ্ঞাপনের অনেক ইতিহাস যেভাবে তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন, তা সত্যই বিষ্ময়ের এক অনুভূতি নির্মাণ করে। গ্রন্হের প্রচ্ছদ পরিকল্পনায় কোন নান্দনিক তথ্য দৃষ্ট হয় না। প্রচ্ছদ নিয়ে আরও ভাবনা চিন্তার অবকাশ হয়তো ছিল। তবুও বলতে পারি সব নিয়ে সংগ্রহটি হয়ে উঠেছে পাঠকের ভাবানার দর্পন। সর্বোপরি গ্রন্হের পৃষ্ঠা সংখ্যা ১১২, কিন্তু লেখক কোনো অর্থেই গ্রন্হটিকে সমাপ্তির বন্ধনে আবাদ করেন নি তাই সংকলনটি কবির ভাষায় বলতে পারি 'হেমন্তের অরণ্যে  আমি পোষ্টম্যান'।
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 4:43 AM No comments:

Tuesday, December 7, 2021

 পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর রোগের মধ্যে একটা হল নিজেকে 'প্রমাণ' করার চেষ্টা'

'আমি ভাল মানুষ', এটা প্রমাণ করতে গিয়ে অনেক লোক নিজেকে শেষ করে দেয় ..... অনেকে নিজেকে একটা ভালত্বের চাদরে মুড়ে ফেলার চেষ্টা করে , আবার অনেকে বিরাট ভুলও করে বসে ।
ছোটোবেলা থেকেই ভুল শেখানো হয় আমাদের "লোকে ভাল বললেই তুই ভাল । দেখবি বেশ একটা ভাল লাগার ফিলিং হবে "
কিন্তু এইটুকু বলতে ভুলে যায় তাঁরা যে সেই লোকগুলো কারা ? কে ভাল বললে প্রমাণ হবে যে আমি ভাল ?? নাহ উত্তর নেই..!! যারা বললে প্রমাণ হবে, তারা যে ভাল সেইটা কে বলবে ?? ..!!
আমরা সব সময় উদগ্রীব হয়ে থাকি certificate পাওয়ার জন্যে । কে আমাকে ভাল certificate দিল.....!! Certificate থাকলেই যে ভাল job হয় না, এ তো আমাদের জানাই আছে .....
যেদিন নিজের সামনে দাঁড়িয়ে চোখ না নামিয়ে, গলা না কাঁপিয়ে বলতে পারব, কারোর কোনো ক্ষতি করিনি, মানুষের দুর্ভোগের দিনে এগিয়ে যাই, মানুষকে তার 'প্রাপ্য' সম্মান দিয়ে থাকি, সেইদিন বুঝব আমি ভাল মানুষ..!
লোকে কি বলল, তাই নিয়ে সব সময় জীবন চলে না । কারণ লোক পাল্টায়, তাদের মানসিকতা পাল্টায়, আমার status পাল্টায়, সময় পাল্টায়, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়, কিন্তু মনে রাখব 'যা পাল্টায় না', তা হল আমার নিজেকে দেখার অন্তরের চোখ.....!! সে চোখে দেখি বরং.....!!
স্বপ্ন জগৎ,,,,,,,,,
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 2:20 AM No comments:

BUDDHIST MINDFULNESS

 

SUMANAPAL BHIKKHU

In Buddhism mindfulness is the path that enables us to gain complete knowledge and awareness of our suffering and to attain enlightenment in the process. Mindfulness makes us less egotistical and becomes an instrument of gaining a clearer idea about the state of no self. 

Mindfulness means the habit of bringing our attention to the present moment without evaluation. This skill has to be developed by meditation and other trainings exclusively designed for this purpose. Mindfulness derives from sati a significant element of Buddhist tradition.  

Mindfulness works in three ways. Firstly it keeps us alert about our present occupation, helps us to recognize all the skilful and unskilful qualities arising in our mind, and then finding a way to get rid those qualities that hinder our concentration.

In order to develop mindfulness the various schools of Buddhism practise different kinds of meditation mainly samatha meditation. In this technique of meditation the meditator stays alert to the present moment, observing and then releasing thoughts and makes no attempt to chase them.

Mindfulness can also be defined as a type of of meditation which makes the meditator aware of what he or she is sensing at the present moment without the use of the faculty of judgment. Mindfulness meditation takes the help of a host of other things such as control in breathing, the use of guided imagery, and other practices that enables the body and mind to relax, decrease in tension and anxiety.

The aim of mindfulness is to control our response to the world. The present is the most important period and the practice of mindfulness teaches us to observe our surroundings but not evaluate anything. Though experiencing emotions is important it is equally important to let them go. From this we can conclude that mindfulness is a state and not a trait. We can improve it by certain techniques but those should not be confused with mindfulness itself. The renowned mindfulness teacher Jon Kabut Zin advises us to focus our attention consciously on 'right here, right now'. 

There are some techniques which we can use to increase our mindfulness. In short they are as follows: a. Pay attention b. Live in the moment c. Accept yourself. d. Focus on your breathing.

In the modern age psychologist and psychiatrists are using Buddhist mindfulness in order to help people suffering from different psychological problems such as depression, stress, anxiety and drug addiction. Programmes based on mindfulness have been adopted within schools, hospitals, prisons veteran centres and other environments.

Mindfulness meditation is one of the most important elements of the Buddha's the noble eightfold path to end suffering and instill wisdom. Ultimately the mindfulness of both Buddhism and psychology is to understand the nature of self and to obtain spiritu al well being.

 

Posted by Sumanapal Bhikkhu at 2:12 AM No comments:

Friday, July 23, 2021

BODHI-NIDHI SANGHARAMA SANTHAGARA

 BODHI-NIDHI    

B-benevolence

O-optimism

D-dedication

H-honesty

I-intelligence

N-non-violence

I-integrity

D-delectable

 H-humanity

 I-intuition.

“We have to be optimistic and joyous in our endeavour to save humanity by virtue of wisdom emanating from honesty, non violence and fraternity.”

 

SANGHARAMA

S-Sage
A-Absolute
N-Non-violence 
G-Good governance

H-Holiness 
A-Angstrom 
R -Righteousness
A-Altogether
M-Magnitude
A-Adroitness

“Residence for monastic’s who are owing to absolute holiness and practitioner of positive adroitness, non-violence, righteousness, humanitarian dignity, universal ethics, and unity.”

 

SANTHAGARA


S –Satisfied

A -Accompany

N -Noble

T -Thought

H- Human

A -Ability

G –Giant

 A -Abode

R –Reconstruction

 A -Altruistic

“The point of satisfaction Comes with the absolute noble thoughts when human being acquires the ability to have a gracious abode full of reconstructive altruism.”



https://bnswcassociation-nalandajournal.weebly.com/social-events.html

 

 

Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:37 AM No comments:

 / সুনীতি পাঠক //

একটি বিশালগাছ মাথা যার আকাশে ঠেকেছে । 
সুনীতিকুমার পাঠক। বৌদ্ধ জ্ঞানের  সংরক্ষণ সংস্কৃতি কিরকম ? কিভাবে তা স্মৃতি থেকে অক্ষরবদ্ধ করা হয়েছে ? পুথির পাতায় লিপিবদ্ধ সেই জ্ঞান  মোনাস্ট্রির গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারে জমা পড়েছে । কিভাবে তা শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে জ্ঞানার্থীদের তৃষ্ণা নিবারণ করেছে। যা হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তা কিভাবে দেশে দেশান্তরে রূপে রূপান্তরে প্রবাহিত হয়ে চলেছে সে বিষয়ে জানার জন্য ঘন্টা দুয়েকের একটি সাক্ষাৎকার ।
মনে হল সমুদ্র সাঁতরে এলাম। সুমনপাল ভিক্ষু ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়। আমরা দুতিনজন ছিলাম টোকার কাজে। সুনীতি পাঠকের বয়স বেশি নয়। মাত্র ৯৫ বছর। অনর্গল বলে গেলেন। শ্লোকের পর শ্লোক ,শাস্ত্রের পর শাস্ত্র। তিনি জ্ঞানবৃদ্ধ  জ্ঞানের পরিমাপে ও বয়ঃক্রমে । মানসিক ও শারীরিক সামর্থ্যে তরুণ আজও। এক আত্মীয় শিশুকে দেখতে এসেছিলেন। শান্তিনিকেতনী ঐতিহ্য মেনে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন রঙিন উত্তরীয়। উত্তরীয় দিয়ে বরণ করলেন সেই নতুন অভ্যাগতকে। আমরা অবাক !
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:33 AM No comments:

প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্র

 প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্র একটি ফুল্লকুসুমিত বৃক্ষ সদৃশ এবং প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে রসধারা সংগ্রহে রচিত হয়েছে পরবর্তীকালের চিকিৎসা শাস্ত্র । চিকিৎসকদের সমাজে জনপ্রিয়তা ছিল । সংস্কৃত শব্দ বৈদ্য পালিতে বেজ্জ, চিকিৎসা-তিকিচ্ছা, ভীষক-ভিসক্কো এবং শল্যবিদ-সল্লকত্তো বা surgeon। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি সম্পন্ন চিকিৎসকদের নাম পালি সাহিত্যে পাওয়া যায়; যাঁরা চিকিৎসা শাস্ত্রে ভারতের কৃতিত্ব তুলে ধরেছেন।এঁরা চিকিৎসকদের পূর্বাচার্য ছিলেন "তিকিচ্ছানং পুব্বকা আচরিয"। এঁদের মধ্যে জীবক ছিলেন বৌদ্ধ চিকিৎসা জগতে একটি নক্ষত্র প্রতিভা। তিনি রাজগৃহের রূপজীবা শালবতীর পুত্র ।মানবধর্মের উম্মোচনে এবং সর্বোপরি চিকিৎসকোচিত অজস্রগুণের সমারোহে তিনি ছিলেন পরম প্রতিভার আগ্নেয় সাক্ষর।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞান ও মানব কল্যাণের সংযোজন ঘটিয়ে তিনি সে যুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসের সমুন্নত মহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন । মানব সভ্যতার যা কিছু উৎকৃষ্ট উপাদান, উজ্জ্বল আবিষ্কার ও উত্তরাধিকার ভারতীয় মনীষীদের ধ্যানে, জ্ঞানে, মননে এবং কর্মে তা অনুরণিত । বিশ্বমানবের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষার বার্তাবাহীরূপে তা দেশে দেশে পরিভ্রমণ করেছে। ভারতীয় চিকিৎসা বিদ্যার মধ্যেও বিবৃত হয়ে আছে বিশ্বমৈত্রী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির পরিচয় ।

বৌদ্ধ যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞান কুলকুণ্ডলীর ম্যাজিক, তান্ত্রিক সাধনার রোডম্যাপের স্কেচ এবং ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের উত্তরাধিকার জীবক।  বুদ্ধকে জীবক চিকিৎসা করতে পেরে অমরত্ব পেয়েছেন। বৌদ্ধ সাহিত্যে সর্বত্র  জীবকের প্রোজ্জ্বল উপস্থিতি বিদ্যমান ।
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:31 AM No comments:

 হিন্দি, ইংরেজি অবশ্যই শিখবো কিন্তু জোড় করে চাপিয়ে দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না । তারা যদি বাংলায় আসে বাংলা ভাষা শিখে আসুক, ইংরেজি ভাষা শিখে আসুক তাই না, নিজের মাতৃভাষা আর কতো নিঃশেষ হবে দেখতে থাকবো, এই করে কতো মাতৃভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার পরিসংখ্যান দিয়ে শেষ করা যাবে না ।

--------
এক প্রকারের ভাষা-সন্ত্রাস,  যেটা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে করতে চেয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক  পারেনি । পূর্ববঙ্গের শিক্ষক, ছাত্র, যুবক, সর্বস্তরের নরনারী প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল ।
---------
প্রতিবাদে গর্জে উঠোন আপামর সকলে ।মানব না, প্রতিবাদ,  প্রতিরোধ চাই ।
--------
নিজের মাতৃভাষা আগে, অন্য ভাষা শিখবো কি শিখবো না, সেটা যে শিখতে চায় তাঁর উপর নির্ভর করবে, কিন্তু  চাপিয়ে দেওয়া বরদাস্ত নয়।
--------
ভাষা ঋণ সব ভাষায় আছে,  কে কতটুকু ব্যবহার করে তার উপর নির্ভর করবে । বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি লেখক হুমায়ূন আজাদ সবসময় খাঁটি বাংলায় বক্তৃতা এবং সাক্ষাত্কার দিতেন, তাঁর ইউ টিউব দেখতে পারেন ।
--------
কেউ বলছেন না বাংলা আবশ্যিক করতে হবে গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত, কিন্তু সবাই বলছেন হিন্দি, ইংরেজি পড়লে ক্ষতি কি, ক্ষতি কথা একবারও বলিনি, বলেছি জোড় করে চাপিয়ে দেওয়া কেনো বরদাস্ত করা হবে? যে  বা যাঁরা শিখতে চান তাঁরা শিখতে পারেন ।
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:30 AM No comments:

 

আলোর ফেরিওয়ালা ড. সুমনপাল :  গেরুয়া বসনে জ্ঞানী সুজন
এস. জ্ঞানমিত্র ভিক্ষু 
:::::::::::::::::::
দুই বাংলার প্রতিথযশা গবেষক, লেখক, অনুবাদক, প্রত্নতাত্ত্বিক, প্রাচীন লিপি বিজ্ঞান বিশারদ, হিন্দি-ইংরেজী-সংস্কৃত-পালি-চায়নিজ-তিব্বতী ভাষায় পারদর্শীতা সম্পন্ন বাঙালী বৌদ্ধ ভিক্ষু ভদন্ত ড. সুমনপাল ভিক্ষু। তিনি আমাদের সময়ের এক আলোর ফেরিওয়ালা। উত্তুঙ্গ ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই বৌদ্ধ ভিক্ষু বিবিধ বিষয়ে অসাধারণ পারঙ্গমতা অর্জন করেছেন, যা বর্তমান সময়ের, তাঁর সমকালীন বাঙালি বৌদ্ধ ভিক্ষুসঙ্ঘের মধ্যে অনন্যই বলা চলে। অনুজদের প্রতি তাঁর স্নেহ, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি গারবতা, শিক্ষানবীশদের প্রতি নিঃস্বার্থ পৃষ্ঠপোষকতা, বিদ্ব্যৎজনদের প্রতি গৌরব, রোগাতুরদের প্রতি সেবাপরায়ণতা, অতিথি বাৎসল্যতা, নিরভিমানীতা, কৃতজ্ঞপূজারী প্রভৃতির মিশেলে এক ‘যথার্থ মানুষ’ ড. ভিক্ষু সুমনপাল।
 
এই কৃতি মানুষটি চট্টগ্রাম জেলাস্থ রাঙ্গুনিয়া থানার কর্ণফুলী বিধৌত শিলক গ্রামে ০৭ অক্টোবর ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ, ২২ আশ্বিন, ১৩৮৬ বঙ্গাব্দ, রবিবার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম (শিক্ষক) দুলাল বড়ুয়া ও মাতার নাম সঞ্জু রাণী বড়ুয়া। তাঁর গৃহিনাম ছিল শুভাশিস বড়ুয়া। নিজগ্রাম শিলক ডাউলিং প্রাইমারী বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকোনোর পর তিনি শিলক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান হতে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক ও ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে রাঙ্গুনিয়া কলেজ হতে উচ্চতর দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ব্রহ্মচর্য পন্থা অবলম্বন করেন এবং ‘সুমনপাল’ নামধারণ করেন। অতঃপর তিনি কলকাতাস্থ সংস্কৃত কলেজ হতে ২০০০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণিতে বি.এ. (সম্মান) পালি বিভাগ হতে উত্তীর্ণ হন। উল্লেখ্য, এ সময় তিনি বাংলা ভাষা সাহিত্য ক্লাস করতে গিয়ে বিখ্যাত প্রেসিডেন্সী কলেজেও শিক্ষা গ্রহণ করেন; কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগ হতে এম.এ. এবং ২০১১ খ্রিস্টাব্দে 'Buddhism in Chaina: Introduction to 10th Century A.D' শিরোনামে অভিসন্দর্ভ রচনা করে পি.এইচ.ডি.ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে চাইনিজ, তিব্বতী ও হিন্দি ভাষা কোর্সে ডিপ্লোমা ডিগ্রী নেন। এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হতে Manuscriptology(পাণ্ডুলিপি বিজ্ঞান) ও Palaeography (প্রাচীন লিপি বিজ্ঞান [প্রত্নভূগোল])’র উপর ডিপ্লোমা করেন। তিনি সুত্র-বিনয়-অভিধর্ম বিশারদ উপাধিও অর্জন করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে জাতীয় শিক্ষাবৃত্তি এবং Indian Council for Cultural Relations হতে দুই দুই বার শিক্ষাবৃত্তি লাভ করেন।

অল্প বয়সেই তিনি বহুবিধ প্রতিভার সাক্ষর রেখে সমাজ ও সদ্ধর্মের সেবা করে চলেছেন। তিনি ভারতের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে অনুষ্ঠিত বহু সেমিনারে অংশগ্রহণ ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি U.G.C.  (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন) আয়োজিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেমিনারে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এছাড়াও ষোলটি জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মশালায় যোগদান করেন। 

ড. সুমনপাল ভিক্ষু Asiatic Society, Indian History Congress, পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, Institute of Historical Studies, শান্তি নিকেতন আম্বেদকর বুদ্ধিষ্ট ওয়েলফেয়ার মিশন প্রভৃতি বিখ্যাত সংস্থা’র আজীবন সদস্য, এবং পণ্ডিত ধর্মাধার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও বিদর্শন শিক্ষা কেন্দ্র, কলকাতা’র গভর্নিং বডির সদস্য। 

এ পর্যন্ত তাঁর বারটি গবেষণামূলক প্রকাশনা ও ত্রিশটি সম্পাদকীয় প্রকাশনা এবং আটটি গ্রন্থ সমীক্ষা বিদ্যমান। তিনি দুই বাংলায় সমাদৃত গবেষণামূলক বার্ষিক সাময়িকী ‘নালন্দা’র বর্তমান সম্পাদক। এছাড়াও তিনি ‘বোধিনিধি’ পত্রিকা ও প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক হিসেবে এবং বোধিনিধি সোস্যাল ওয়েলফেয়ার কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, কলকাতা'র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে রত।

ড. সুমনপাল ভিক্ষু কর্তৃক অনুবাদিত, সম্পাদিত ও গবেষণাকৃত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- (যেগুলোর নাম সংগ্রহ করতে পেরেছি)

পালি হতে অনূদিত-
১.‘থেরী অপাদান’, 
২.‘অনাগত বংশ’, 
৩.‘বিভঙ্গ’, 
৪.‘জাতক নিদান’, 
৫.‘বিশুদ্ধিমার্গ’,  
৬.‘চুল্লবর্গ’, 
৭.‘কর্মবাচা’,
৮.‘চুল্লবংশ’, 
৯.‘সদ্ধম্মোপায়ন’, 
১০.‘দীপবংশ’, 
১১.‘সংযুক্ত নিকায়’-৫ম খণ্ড; প্রভৃতি

ইংরেজী হতে অনূদিত- 
১২.‘জীবন’ (মূল- মাস্টার শিন্ উইন), ১৩.‘আধুনিক কালে সামাজিক সমস্যা এক অধ্যয়ন’ (মূল- মাস্টার শিন্ উইন)প্রভৃতি; 

হিন্দি হতে অনূদিত-
১৪.‘তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম’ (মূল- রাহুল সাংকৃত্যায়ন) অনুবাদ করেন প্রভৃতি । 

গবেষণামূলক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো-
১৫.‘শিক্ষা প্রসঙ্গে’, 
১৬. ‘বুদ্ধের নীতি তত্ত্ব’; 
১৭.‘প্রাচীন ভারতে ভৌত রসায়ন বিজ্ঞান’ (ড.আশা দাশের সাথে যৌথ ভাবে), 
১৮.'আনন্দ স্থবির, অঙ্গুলিমাল স্থবির ও বুদ্ধঘোসোৎপত্তি- জীবন চরিত', 
১৯. 'মহান ভিক্ষুত্রয়ের জীবন চরিত', 
২০.'বিমল স্রোতে শাসনতিলক বিমলজ্যোতি', 
২১.'অনাগত বুদ্ধ মৈত্রেয়', 
২২.'বঙ্গীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু সঙ্ঘ ও গৃহী বৌদ্ধ সঙ্ঘের প্রগতির লক্ষ্যে' প্রভৃতি । 

সম্পাদিত গ্রন্থগুলো হল-
২৩. ‘মধ্যম নিকায়’ (অখণ্ড সংস্করণ), 
২৪.‘বৌদ্ধ ভারত’, 
২৫.‘বুদ্ধদেব’, 
২৬.‘বৌদ্ধদের দেবদেবী’, 
২৭.‘অশোক লিপি’, 
২৮.‘ধর্মপদ’, 
২৯.‘মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম’, 
৩০.‘বালাবতার’, 
৩১. ‘সুবোধালঙ্কার’, 
৩২.‘চরিয়া পিটক’, 
৩৩. ‘পাচিত্তিয় পালি’, 
৩৪.‘মহাসতিপট্ঠান’, 
৩৫.‘গৃহী বিনয়’, 
৩৬.‘অভিধর্মার্থ সংগ্রহ’, 
৩৭.‘থেরী গাথায় নারী জীবন’, 
৩৮.‘কচ্চায়ন ব্যাকরণ’, 
৩৯.‘অমল বড়ুয়া প্রবন্ধ সংগ্রহ’, 
৪০.‘সুত্ত নিপাত’, 
৪১.‘প্রেত বত্থু’, 
৪২.‘বিমান বত্থু’, 
৪৩.‘সদ্ধর্ম সহচর’, 
৪৪.‘বিদর্শন ভাবনা অনুশীলন’, 
৪৫.‘ধাতুকথা’  
৪৬. 'নালন্দা' 
৪৭.'বোধিনিধি' প্রভৃতি; 

কবিতা সঙ্কলন- ৪৮.‘বৌদ্ধায়ন’ ও ৪৯. The Path Finder;

ওপার বাঙলার খ্যাতিমান বৌদ্ধ ব্যক্তিত্বগেণর জীবনী সঙ্কলন- ৫০.‘বোধিরশ্মি’ প্রভৃতি। এবং পিএইচডি অভিসন্দর্ভ (প্রকাশিত) ৫১.Buddhism in Chaina: Introduction to 10th Century A.D'

এছাড়াও তিনি শতাধিক ইংরেজী-বাংলা প্রবন্ধ রচয়িতা যেগুলো ভারত-বাংলাদেশ সহ বিশ্বের দেশের জার্নালে প্রকাশিত।

পণ্ডিত ড. সুমনপাল ভিক্ষু মহোদয় বর্তমানে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা বিভাগে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা রত। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় কত ছাত্র-ছাত্রী যে উপকৃত হয়েছে, কত ছাত্র-ছাত্রী যে শিক্ষা উচ্চতর পর্যায়ে যাবার ক্ষেত্রে সহায়তা পেয়েছে তা উল্লেখযোগ্য অবশ্যই। এই ছাত্রবান্ধব ভিক্ষুটি ছোটখাট সাদামাটা দেহবল্লরী নিয়ে চষে বেড়ান সারা কলকাতা বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও বৌদ্ধবিদ্যার বিকাশে। কত সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, কত চিত্র প্রদর্শনী, বৌদ্ধ বিদ্যা ও সংস্কৃতির কল্যাণে-বিকাশে যে তিনি দিন-রাত এক করে ছুটে বেড়ান তা না দেখলে বিশ্বাস করাও কঠিন। সদ্ধর্মের কল্যাণে ভান্তের নিরোগ-দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।
ReplyReply allForward
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:29 AM No comments:

 বড়ুয়ারা যতদিন উপযুক্ত গুরু চয়ন করতে জানবে না এবং উপযুক্ত গুরুর সান্নিধ্যে গমন করবে না, উপযুক্ত আদেশ উপদেশ শিরোধার্য করতে শিখবে বা মেনে চলবে না  -- এবং সমাজকে সঠিক ও যথাযথ নেতৃত্ব দিতে পারবে না, অপারগতা স্বীকার করে নেতৃত্ব সেচ্ছায় সরে আসবে না এবং নেতৃত্ব মেনে নেবে না, ততদিন বড়ুয়ারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না । কিছু বড়ুয়া আছে, কিছু কেনো অধিকাংশ বড়ুয়ারা যেসব গুরুরা গুরুচিত  ভূমিকা পালন না করে তুমি ভালো বলে নিজের আঁকের গোছায়, আর আঁকের গোছাতে গিয়ে সমাজ সদ্ধর্মের সমূহ বিপদ আর ধ্বংসের দিকে নিমজ্জিত করছে, তুমি ভালো বলে বলেই বড়ুয়ারা তাঁদের কোন বিচার বিশ্লষণ না করে অন্ধ ভাবে মেনে নেয়, এবং সেই গুরু না বুঝে নিজের ওজন না বুঝে সমাজের হিত-অহিত । আর যাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার নূন্যতম যোগ্যতা নেই তারা সেই সব গুরুদের শিখণ্ডী করে নেতা হয়ে আর সমাজের শিরোমণি হয়ে সমাজ, জাতি, সম্প্রদায়, সদ্ধর্মকে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে কলুষিত করছে । এই বিপদ আরো বেশি করে ঘনীভূত হচ্ছে, যতদিন যাচ্ছে তা আরো চেপে বসেছ, সমাজ ও জাতির প্রগতিকে মহাকালের সময় সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করে যাচ্ছে ।

Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:28 AM No comments:

 মধু পূর্ণিমা ও বুদ্ধোপদেশ


মধু পূর্ণিমা বৌদ্ধদের নিকট অত্যন্ত পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। বুদ্ধের জীবনের ঐতিহাসিক ঘঠনাপ্রবাহের মধ্যে মধু পূর্ণিমা অন্যতম। ত্যাগ ও ঐক্যের মহিমায় সমুজ্জল এদিনটি। বৌদ্ধরা মধু পূর্ণিমাকে অতি শ্রদ্ধার সাথে পালন করার তাৎপর্যের দুটো দিক পরিলক্ষিত হয়। প্রথমটি সেবা ও ত্যাগ, অন্যটি সৌর্হাদ্য, সম্প্রীতি ও সংহতির। ত্যাগের মহিমা হলো পারিলেয্য বনের বানর কর্তৃক বুদ্ধকে মধু দান ও হস্তিরাজ কর্তৃক সেবা প্রদান। আর সৌর্হাদ্য ও সংহতি হলো কৌশম্বীর (বর্তমান এলাহাবাদ)  ঘোষিতারামে বিবাদমান ভিক্ষু সংঘের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা।

কৌশম্বীর ঘোষিতারামে বুদ্ধ অবস্থানকালীন সময়ে ভিক্ষুদের জীবন যাপনে বিনয়ের ছোট্ট একটা অনুসঙ্গ নিয়ে ভিক্ষু সংঘের মধ্যে সূচিত হয়েছিল বিরোধ, বিবাদ এবং বিভাজন। দ্বিধাবিভক্ত ভিক্ষু সংঘের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তথাগত বুদ্ধ কম্ভুকণ্ঠে ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন–’হে ভিক্ষুগণ! বিরোধ সম্যক জীবন ধারার অপমৃত্যু ঘটে। সংঘের একতা বিনষ্ট হয়। তবু এ বিরোধের অবসান হয় না।’

বুদ্ধ বিবাদমান ভিক্ষু সংঘের মধ্যে মৈত্রী স্থাপনের চেষ্টা করলেন বটে কিন্তু বুদ্ধের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় মান-অভিমানের কারণে আত্মকলহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘের এ অবস্থা দেখে "একো চরে খগ্গবিসানো কপ্পো" একাকী থাকার নীতি গ্রহণ করলেন এবং  সিদ্ধান্ত নিলেন কৌশাম্বী ছেড়ে পারিলেয্য বনে অবস্থান করবেন। বুদ্ধ ভিক্ষু সংঘের বিবাদমান কলহের কারণে দশম বর্ষাবাস অধিষ্ঠান পারিলেয্য বনে করলেন।

পারিলেয্য বনে বুদ্ধের আগমনে বনরাজি বিচিত্র শোভাবরী, কথিত আছে পারিলেয্য বন থেকে বুদ্ধ যখন ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বের হতেন হস্তিরাজ বুদ্ধের পাত্রটি আপন শুণ্ডে বহন করে জনসাধারণের গমনাগমনের পথ পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন। পুনরায় বুদ্ধের ভিক্ষা চর্যা শেষ হলে ফেরার পথে আগুবাড়িয়ে নিয়ে আসতেন। এও কথিত আছে হস্তিরাজ বুদ্ধের স্নানের জলের ব্যবস্থা করতেন এবং অন্যান্য হিংস্র জন্তুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সারা রাত পাহারায় রত থাকতেন। বন থেকে নানা রকম ফলমূল সংগ্রহ করে বুদ্ধকে দান করতেন। ঠিক অনুরূপভাবে বানরও স্বকীয় দল ত্যাগ করে বুদ্ধের সেবায় রত হলেন।
 তখন উপাসক উপাসিকাগণ কৌশম্বীর ঘোষিতারামে গিয়ে দেখলেন বুদ্ধ বিহারে নেই এবং  উপাসক উপাসিকা সকলে জানতে চাইলেন বুদ্ধ কোথায়? কোন উত্তর নেই বিবাদমান ভিক্ষুগণের মধ্যে। ভিক্ষুসংঘের নিরবতা পরিলক্ষিত করে উপাসক উপাসিকারা সন্ধান পেলেন যে, ভিক্ষুসংঘের বিরোধ ও বিবাদের কারণে বুদ্ধ ঘোষিতারাম ছেড়ে পারিলেয্য বনে অবস্থান করছেন। ভিক্ষুসংঘের অবিদ্যা ও অহমিকা দেখে বুদ্ধ একাকী চলার নীতি গ্রহণ করেছেন। উপাসক উপাসিকারা ভিক্ষুসংঘের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, যদি বুদ্ধ কৌশাম্বীতে ফিরে না আসেন তাহলে সংঘ সান্নিধ্য পরিত্যাগ করবেন। উপাসক উপাসিকাদের কারণে ভিক্ষুসংঘের মধ্যে সম্যক চেতনার উন্মেষ হলো এবং তাঁরা তাঁদের ভুল বুঝতে পারলেন এবং তাঁদের মধ্যে সম্প্রীতির বাতাবরণ সৃষ্টি হলো। উপাসক উপাসিকাদের আহ্বানে বিবাদমান ভিক্ষুসংঘ সমস্ত বিভেদ বিসংবাদ ভুলে পারিলেয্য বনে উপনিত হলেন  বুদ্ধকে ফিরিয়ে আনতে। ভিক্ষুসংঘ বললেন–’ভন্তে, আমরা সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এবং ভুলত্রুটি অপনোদন করে অন্ধবিবর থেকে আলোর সম্পাতে উত্তরণ ঘটিয়েছি। সমস্ত ভুলত্রুটি সংশোধন করে  সংঘের মধ্যে পুনরায় ঐক্য ও সংহতি স্থাপন করেছি পুনরায় মৈত্রী বারিতে অবগাহন করেছি। ভন্তে এবার প্রত্যাবর্তন করুন কৌশম্বীর ঘোষিতারামে।' 
বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘের ঐক্য ও সংহতি দেখে বর্ষাবাসান্তে পারিলেয্য বন ছেড়ে কৌশাম্বীর ঘোষিতারামে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। বুদ্ধ সে সময় ভিক্ষুসংঘকে উপদেশোক্তি করলেন– ’মূর্খেরা জানে না তাদের কখন মৃত্যু হবে, যখন তা জানতে পারে, তখন সকল কলহের অবসান ঘটে।’
পারিলেয্য বনে বুদ্ধ অবস্থানের সময় ভাদ্র পূর্ণিমা তিথিতে গভীর অরণ্য  থেকে বানর একটি মধুমক্ষিকা সহ মৌচাক সংগ্রহ করে শ্রদ্ধাপ্লুত চিত্তে বুদ্ধকে দান করেন। পারিলেয্য বনে বুদ্ধকে হস্তিরাজ কর্তৃক সেবা ও বানরের মধু দান বৌদ্ধ সাহিত্য তথা  ইতিহাসে এক গুরুত্ববহ ঘটনা। এই পূর্ণিমার দিন উপাসক উপাসিকারা বিহারে এসে বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে মধু ও নানা রকম ভৈষজ্য ঔষধাদি দানাদি কর্ম করে থাকেন।
ইতিমধ্যে কৌশাম্বী থেকে মহতি ভিক্ষুসংঘ বুদ্ধ সেবক আনন্দ বুদ্ধ দর্শনে পারিলেয্য বনে গেলেন এবং  বনে বুদ্ধকে একা দেখে আনন্দ মর্মাহত হলেন। দুঃখগ্রস্ত আনন্দকে বুদ্ধ উপদেশোক্তি করলেন—’যদি তুমি জ্ঞানী, সদাচারী, পণ্ডিত ও ধীর ব্যক্তিকে বন্ধু রূপে লাভ কর, তাহলে সকল বাঁধাবিঘ্ন অতিক্রম করে সানন্দে তাঁর অনুগমন করবে। আর যদি তুমি জ্ঞানী, সদাচারী ও পণ্ডিত বা ধীর ব্যত্তিকে বন্ধু রূপে না পাও , তাহলে বিজিত রাষ্ট্রত্যাগী রাজা অথবা অরণ্যে মাতঙ্গহস্তীর ন্যায় একাকী বিচরণ করবে, কখনও পাপাচরণ করবে না।”
অজ্ঞ মানুষের বেশীর ভাগ অশান্তির মূল হল অহংকার । অহংকার থেকেই কেবল মনে করে পৃথিবীতে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। এই মিথ্যা অহমিকা থেকে কলহ, বিবাদ, ঝঞ্ঝাট ইত্যাদি। বুদ্ধ পারিলেয্য বনে একাকী চলার নীতি গ্রহণ করে বিবাদমান অজ্ঞতাপূর্ণ, মোহাচ্ছন্ন ভিক্ষুদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। 
বুদ্ধকে বনের হস্তিরাজ কর্তৃক সেবা ও বানরের মধু দান ছিল তাঁদের একান্ত শ্রদ্ধা ও ত্যাগের বহিঃপ্রকাশ। তীর্যক প্রাণীর ত্যাগ ও সেবার কারনে বুদ্ধ একাকী পারিলেয্য বনে অবস্থান করতে সক্ষম হয়েছিলেন নিঃসন্দেহে বলা চলে। ফলস্বরূপ বিবাদমান ভিক্ষুসংঘের মধ্যে অনৈক্য ও কলহের অবসান, সাম্য- মৈত্রীর উষ্ণ প্রস্রবণ বাহিত হয়। নিরঞ্জন ফল্গুধারায় স্নাত হয় আসমুদ্র হিমাচল।

বি: দ্র: এখানে প্রশ্ন আসতে পারে সবার মধ্যে তীর্যক প্রাণী কি করে সেবা করতে বা বুঝতে পারে, একটা কথা আমাদের স্মরণে থাকা উচিত সেটা হলো সিদ্ধার্থ বুদ্ধ ছিলেন রাজপুত্র (ছোট গণরাজ্যের প্রধানকেও রাজা বলা হতো) সেই কারনে তাঁকে সমস্ত শিল্প শিক্ষায় পারদর্শীতা অর্জন করতে হয়েছিল এবং সেই সুবাদে তিনি Animal Psychology বিদ্যাও লাভ করেছিলেন। সেই কারনে বনে প্রকৃতি এবং বন্য প্রাণীদের সঙ্গে অবাধ বিচরণ সম্ভব হয়েছিল। আর বাদ বিসংবাদ নিরসন ও সাম্য মৈত্রী এসব কিছুই বুদ্ধ সিদ্ধার্থ শিশু থেকে কিশোর, কিশোর থেকে তরুণ, তরুণ থেকে যৌবনে পদার্পণ করতে করতেই আপন বুদ্ধিমত্তা তথা আচার্যদের প্রাপ্ত হয়েছিলেন, সে সবের সম্যক ধারণা বা ইতিহাস তাঁর জীবনী থেকেই উপলব্ধ হয়। এক কথায় সর্বজীবের মৈত্রী করুণা শিশুকাল থেকেই তাঁর মানসে রেখাপাত হয়েছিল। এখানে অত্যোক্তি না করাই বাঞ্চনীয় বলে মনে করি।
ReplyReply allForward
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:25 AM No comments:

 বুদ্ধের দৃষ্টিতে প্রজা পালন

ভিক্ষু সুমনপাল

বুদ্ধ গণপ্রজাতন্ত্র শাক্যরাজ্যে যাওয়ার পর শাক্য রাজাদের আন্তরিক আহ্বানে শাক্য সন্হাগারে (সংসদে) উপস্থিত হয়ে কিভাবে সত্যিকার অর্থে সদুপায়ে প্রজাতান্ত্রিক শাসন পরিচালনা  করতে হয় তার উপায় নির্দেশ করেছেন। তারা জিজ্ঞাসা করেছিলেন- "রাষ্ট্র পরিচালনায় কিংবা  রাজনীতিতে কিংবা প্রজা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আপনার দেশিত মার্গ কিভাবে অনুসরণ করব।" বুদ্ধ প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন- ''শাসন না করে" ।
তারা বললেন- সবিস্তারে ব্যাখ্যা করুন। 
প্রথমত আপনাদের মধ্যে যে ধ্যান ধারণা আছে আমরা শাসন করবো তা আপনাদের অন্তর থেকে ত্যাগ বা নির্মূল করতে হবে। ত্যাগ করতে হবে আপনার শাসকের দাম্বিকতা ধ্যান ধারণা। দ্বিতীয়ত হলো আপনার অন্তরে জাগাতে হবে, তা হলো মৈত্রী, পিতৃ কর্তব্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। কর্মচক্রে আপনি রাজা হন বা রাজা হয়েছেন তাহলে আপনি প্রজাদের অশ্রুপাত মোছিয়ে তাদের দুঃখ দূর করতে পারেন। 
এই কৃত কর্তব্য আপনি-আপনারা নিজ নিজ গৃহে সম্পাদন করছেন প্রতিনিয়ত যেমন করে থাকেন একজন পিতা, তাহ‌লে শাসক হয়ে কেন প্রজাদের প্রতি পিতৃ কর্তব্য সম্পাদন করতে পারেন না। কারণ আপনারা নিজেদের প্রজা থেকে ভিন্ন বা উচ্চ মনে করে থাকেন।
আর এই জন্যেই আপনারা জিজ্ঞাসা করছেন জাগ্রত এবং  ন্যায়োচিত শাসক কি করে হতে হয় বা হওয়া উচিত। কিন্তু এই প্রশ্ন আপনারা জিজ্ঞাসা করেন না যে,  যখন আপনারা পিতা হয়েছেন বা পিতা হন। আমাদের বা আপনাকে পিতার কর্তব্য কেমন হতে হবে তা সবাই জানেন কারণ ওখানে আত্মভাব সদা বিদ্যমান। সন্তানের প্রতি পিতার কর্তব্য জানেন কিন্তু শাসক হয়ে প্রজার প্রতি কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পাদন করতে জানেন না, তাহ‌লে পিতার ন্যায় এই আন্তরিক ভাবকে আর একটু প্রসারিত করুন, এই প্রজা আপনার সন্তান তুল্য, সবাই আপনার আপনজন সকলের দুঃখ নিজের দুঃখ ভেবে সেভাবে শাসন করুন। সবাইকে ন্যায়, সুখ ও আনন্দ দেওয়ার যে মার্গ বা ক্ষমতা আপনাদের মধ্যে প্রাপ্ত হয়েছে তা শুধু মাত্র শাসক হিসেবে থে‌কে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে দেবেন না। শারীরিক ও মানসিক রোগে সমস্ত মানব পীড়িত, দুঃখ দুর্দশায় জর্জরিত। কিন্তু তাদের আপনি-আপনারা সামাজিক অর্থনৈতিক ন্যায় দিয়ে তাদের মানব জীবনকে সুখময় করে দিতে পারেন।  
তৎক্ষণাৎ শাক্য গণরাজ্যের রাজারা বুদ্ধকে শাক্যদের রাজা হতে অনুরোধ করেন। বুদ্ধ তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন আমাকে শাক্য রাজ্যে গণ্ডিতে আবদ্ধ না থে‌কে ধরিত্রীর মানবতাকে জাগাতে হবে যাতে সকলে মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করতে পারে।
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:24 AM No comments:
Newer Posts Older Posts Home
Subscribe to: Posts (Atom)