বুদ্ধের দৃষ্টিতে প্রজা পালন
ভিক্ষু সুমনপাল
বুদ্ধ গণপ্রজাতন্ত্র শাক্যরাজ্যে যাওয়ার পর শাক্য রাজাদের আন্তরিক আহ্বানে শাক্য সন্হাগারে (সংসদে) উপস্থিত হয়ে কিভাবে সত্যিকার অর্থে সদুপায়ে প্রজাতান্ত্রিক শাসন পরিচালনা করতে হয় তার উপায় নির্দেশ করেছেন। তারা জিজ্ঞাসা করেছিলেন- "রাষ্ট্র পরিচালনায় কিংবা রাজনীতিতে কিংবা প্রজা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আপনার দেশিত মার্গ কিভাবে অনুসরণ করব।" বুদ্ধ প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন- ''শাসন না করে" ।
তারা বললেন- সবিস্তারে ব্যাখ্যা করুন।
প্রথমত আপনাদের মধ্যে যে ধ্যান ধারণা আছে আমরা শাসন করবো তা আপনাদের অন্তর থেকে ত্যাগ বা নির্মূল করতে হবে। ত্যাগ করতে হবে আপনার শাসকের দাম্বিকতা ধ্যান ধারণা। দ্বিতীয়ত হলো আপনার অন্তরে জাগাতে হবে, তা হলো মৈত্রী, পিতৃ কর্তব্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। কর্মচক্রে আপনি রাজা হন বা রাজা হয়েছেন তাহলে আপনি প্রজাদের অশ্রুপাত মোছিয়ে তাদের দুঃখ দূর করতে পারেন।
এই কৃত কর্তব্য আপনি-আপনারা নিজ নিজ গৃহে সম্পাদন করছেন প্রতিনিয়ত যেমন করে থাকেন একজন পিতা, তাহলে শাসক হয়ে কেন প্রজাদের প্রতি পিতৃ কর্তব্য সম্পাদন করতে পারেন না। কারণ আপনারা নিজেদের প্রজা থেকে ভিন্ন বা উচ্চ মনে করে থাকেন।
আর এই জন্যেই আপনারা জিজ্ঞাসা করছেন জাগ্রত এবং ন্যায়োচিত শাসক কি করে হতে হয় বা হওয়া উচিত। কিন্তু এই প্রশ্ন আপনারা জিজ্ঞাসা করেন না যে, যখন আপনারা পিতা হয়েছেন বা পিতা হন। আমাদের বা আপনাকে পিতার কর্তব্য কেমন হতে হবে তা সবাই জানেন কারণ ওখানে আত্মভাব সদা বিদ্যমান। সন্তানের প্রতি পিতার কর্তব্য জানেন কিন্তু শাসক হয়ে প্রজার প্রতি কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পাদন করতে জানেন না, তাহলে পিতার ন্যায় এই আন্তরিক ভাবকে আর একটু প্রসারিত করুন, এই প্রজা আপনার সন্তান তুল্য, সবাই আপনার আপনজন সকলের দুঃখ নিজের দুঃখ ভেবে সেভাবে শাসন করুন। সবাইকে ন্যায়, সুখ ও আনন্দ দেওয়ার যে মার্গ বা ক্ষমতা আপনাদের মধ্যে প্রাপ্ত হয়েছে তা শুধু মাত্র শাসক হিসেবে থেকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে দেবেন না। শারীরিক ও মানসিক রোগে সমস্ত মানব পীড়িত, দুঃখ দুর্দশায় জর্জরিত। কিন্তু তাদের আপনি-আপনারা সামাজিক অর্থনৈতিক ন্যায় দিয়ে তাদের মানব জীবনকে সুখময় করে দিতে পারেন।
তৎক্ষণাৎ শাক্য গণরাজ্যের রাজারা বুদ্ধকে শাক্যদের রাজা হতে অনুরোধ করেন। বুদ্ধ তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন আমাকে শাক্য রাজ্যে গণ্ডিতে আবদ্ধ না থেকে ধরিত্রীর মানবতাকে জাগাতে হবে যাতে সকলে মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করতে পারে।
No comments:
Post a Comment