আচার্য সুনীতিকুমার পাঠক সমীপে,
মহামান্য আচার্য, আপনি শতাব্দীর সমান বয়সী। বিদ্যার দেবতা শুভকারী গণেশ আর দেবী সারদা আপনাকে নিত্য কৃপা করেন। ভগবান বুদ্ধের প্রদর্শিত মার্গের আপনি অক্লান্ত পান্থ। দেবী সরস্বতীর কাব্যবনে আপনার অবাধ গতায়াত– পরমহংস। জীবনমন্থনজাত বিষ নিজে পান করে নিত্য জগতজনের জন্য আপনি করুণার অমৃতধারা বর্ষণ করে চলেছেন। আপনার ক্ষণিক সান্নিধ্য যাঁরা পেয়েছেন তাঁদের হৃদয়ে যে আপনার আসন চিরস্থায়ী পাতা হয়ে রয়েছে।
আপনার সদা-জাগ্রত স্মৃতিমান অবদূতকল্প জীবনচর্যার সঙ্গেই অন্বিত ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন কাল থেকে প্রবাহিত বুধমণ্ডলীর বোধিচর্চার ধারা যা আপনাকে তাঁদের উত্তরসাধকরূপে চিহ্নিত করেছে। সকলের বোধিলাভের জন্য আপনার যে নিত্য অপেক্ষা তা বোধিসত্ত্বচর্যার আভাস দেয়। মৈত্রী, করুণা, মুদিতা আর উপেক্ষার সমন্বয়ে আপনার উজ্জ্বল দৃষ্টি জ্যোর্তিময়লোকে প্রসারিত। জীবনের কান্না-হাসির দোলার মধ্যে নিবাত নিষ্কম্প্র শিখার মতোই আপনার আত্মদীপ ও আত্মদ্বীপ হয়ে থাকা। সাধকের জীবন অনুরক্তির দুর্লভ মেলবন্ধনে গড়া আপনার মানসলোক।
মহাকালের কাছে প্রার্থনা আপনি আলোয় উদ্ভাসিত হোন। আর যেহেতু আলো স্বভাবতই প্রকাশমান, সেই আলো আমাদের দূরযানী দৃষ্টি প্রদান করবে। আমরা সেই আলোর গানের সঙ্গে মহাকবি রবীন্দ্রনাথের জীবনদৃষ্টি আমাদের ছুঁয়ে থাকুক–
“ধরণীর পরে শিথিল-বাঁধন
ঝলমল প্রাণ করিস্ যাপন,
ছুঁয়ে থেকে দুলে শিশির যেমন
শিরীষ ফুলের অলকে!
মর্ম্মর টানে ভরে’ ওঠ্ গানে
শুধু অকারণ পুলকে!”
আপনার উদ্দেশে বিস্ময়বিমুগ্ধ প্রণাম ছাড়া আর কীই বা করার আছে।
প্রণাম।
No comments:
Post a Comment