Saturday, December 3, 2022

দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া এক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা

 দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া এক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা       


 দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া'র পঞ্চম পূর্বপুরুষ :

বৈদ্যনাথ বড়ুয়া শিলক গ্রামের (বৈদ্যনাথ ও মিনাগাজী এতদ্অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপনকারী বলে ধারনা করা হয়।) বৈদ্যনাথ বড়ুয়া'র চার পুত্র। তন্মধ্যে দ্বিতীয় জন হলেন শীতল চন্দ্র বড়ুয়া। তৃতীয় পুরুষে ১৫ ছেলে ও পাঁচ জন মেয়ের মধ্যে শীতল চন্দ্র বড়ুয়া'র দ্বিতীয় ছেলের প্রজন্মের তৃতীয় জন ভূবন মোহন বড়ুয়া।  ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্টিত কোদালা চা বাগানের প্রথম মেশিন ম্যান হিসেবে কর্মরত  অবস্থায় ভূবন মোহন বড়ুয়া ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১২ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। ভূবন মোহন বড়ুয়া'র তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে প্রথম সন্তান হিমাংশু বিমল বড়ুয়া, (সুষেন বড়ুয়া, ও ক্ষীরোদ প্রসাদ বড়ুয়া) প্রজন্মের তৃতীয়। তাঁর একমাত্র সন্তান দুলাল চন্দ্র  বড়ুয়া বর্তমান প্রজন্ম।

দুলাল চন্দ্র  বড়ুয়ার মাতৃকূল :

শিলক ইউনিয়নভুক্ত ফিরিঙ্গীরখীল নিবাসী অবন্ন কুমার বড়ুয়া'র তৃতীয় সন্তান তথা কণ্যা পাখি রাণী বড়ুয়া হলেন দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া'র সুযোগ্যা মাতা। 

দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া'র জন্ম ১৮৬৭ শকাব্দ ১৩৫১ বঙ্গাব্দ, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ ২৯ জুন। অবন্ন কুমার বড়ুয়া'র দুই ছেলে ও দুই মেয়ে; যথাক্রমে - রাম লাল, পারুল বালা, পাখি রাণী ও সুখেন্দু বড়ুয়া।  রাম লাল বড়ুয়া'র পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁরা হলেন - সন্তোষ,  প্রফুল্ল, রত্নমনি, বরুণ,  মঞ্জু  ও কানন বড়ুয়া। প্রত্যেকেই বিভিন্নক্ষেত্রে কর্মরত। সুখেন্দু বড়ুয়া ভারতে স্থায়ী বসবাসরত অবস্থায় ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। পারুল বালার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁরা হলেন প্রদীপ, নন (ডাক নাম), তপন ও মঞ্জু।

দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া'র পিতা তৎকালীন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে চাকুরীস্থল বার্মায়  গমন করেন ও শ্রুতি অনুসারে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে তথায় দেহত্যাগ করেন। দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া'র মাতা পাখি রাণী ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া চট্টগ্রাম বিমান বন্দর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে বহাল থাকা অবস্থায় জরায়ু ক্যান্সারে তার মাতা মৃত্যুবরণ করেন।

দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া'র শিক্ষা আরম্ভ  :

ঠাকুর মা বিমলা বালার তত্ত্বাবধানে বাল্যকাল অতিক্রম এবং ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ১৭ মার্চ শিলক ডাউলিং  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গমন ও বিদ্যালয়ে গমন ও বিদ্যারম্ভ। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণী ও ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ২য় শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায় বাংলা ভাষা আন্দোলনে মিছিল করার অপরাধে ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ বরাক বাঁশের পাকা কঞ্চি দিয়ে প্রচণ্ড প্রহারে কাবু হয়ে যায়। তাঁর ভাষ্যমতে "তৎকালীন মিছিলের নেতার সাথে জিজ্ঞাসাবাদে আমার প্রথম বোধদয় হয়, আমরা নাকি বাংলায় কথা বলতে পারবো না।" [তৎকালীন একটি স্লোগান, পাকিস্তানের কি দুর্ভাগ্য, নুরুল আমিন কি মন্ত্রীর যোগ্য] যদিও তখন স্কুলে নিয়মিত উর্দু পাঠ শুরু হয়ে গেছে।

তিনি ৩য় শ্রেণীতে উর্ত্তীন হয়ে সম্ভবত ১৭ই ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পূজার দিন শুভ হলকর্ষণ উৎসবের মাধ্যমে চাষের কাজে হাতেখড়ি যা ১৯৬৫ সালে এইচ. এস.সি পাশের  পর স্যার আশুতোষ কলেজে বি. এস. সি তে ভর্তি হয়ে হোস্টেলে চলে যাওয়ার আগের দিন পর্যন্ত নিরন্তর করে গিয়েছেন।

৪র্থ শ্রেণীতে/পর্যন্ত প্রতি বাংলা মাসের প্রথম সপ্তাহে বাবা (সুষেন চন্দ্র) বাণিজ্যে যাওয়ার প্রাক্কালে কেবল কান্নায় জোরেই বাবার কোলে উঠার সুযোগ হতো। (তিনি ছোটবেলা থেকে পিতার আদর থেকে বঞ্চিত ছিলেন, পিতার আদর কি জিনিষ তিনি অনুভব করাকে পারেন নি, কারন তাঁর ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুবাদে রেঙ্গুন পোস্টিং ছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষে আবার যোগদান করেছিলেন তারপর থেকে আরও ফিরে আসেননি।) তাই তিনি নিজের কাকা কে পিতা হিসেবে পেয়েছিলেন। কোলে না নিলেও বাবার অন্তর তাঁর প্রতি স্নেহ কানায় কানায় যে পরিপূর্ণ ছিল তা পরবর্তীতে কাগজে কলমে প্রমাণ হয়েছে। সুষেন চন্দ্র বড়ুয়া  তাঁর সমুদয় সম্পত্তি দুলাল চন্দ্র বড়ুয়ার  নামে উইল করে গেছেন (যদিও তাঁর নিজের তিন কণ্যা সন্তান ছিলো।)

তিনি পঞ্চম শ্রেণীতে উঠেই প্রথমবারের মত বড়দের সাথে ষষ্ট শ্রেণীতে পাঠরত কাকা সুবোধ বড়ুয়া সহ বড়দের সাথে স্কুল জোনাল ফুটবল খেলার সুযোগ লাভ করে। এতে প্রথম দিনই বড়দের সাথে ফুটবল খেলে যথেষ্ট সুনামের অধিকারী হয়। বলতে গেলে পড়াশুনোর পাশাপাশি তিনি খেলাধুলোয় সমান পারদর্শী ছিলেন। 

তিনি সপ্তম শ্রেণীতে পাঠরত অবস্থায় আলহাজ্ব মেহেরুজ্জামান সওদাগরের প্রথম ছেলে জনাব মোঃ হাশেম এর প্ররোচনার গোপনে একাধিক স্থানে রাজনৈতিক নেতার নিকট রাজনীতির নেতার নিকট রাজনীতির ক্লাসে অংশগ্রহণ এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য পদ গ্রহণ করে। অষ্টম শ্রেনীতে প্রচুর পড়াশোনা সত্ত্বেও জুনিয়র বৃর্ত্তি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। 

১৯৬২ সালে পাকিস্তান শিক্ষা কমিশনের প্রদান হামুদুর রহমান নতুন কারিকুলাম বা পাঠ্যক্রম প্রণয়ন ও প্রকাশ করেন। যাতে উল্লেখ থাকে যে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ( মাসরিকি পাকিস্তান) মোট ২৫ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকবে এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাসিক ২৫/- হারে বেতন দিতে হবে। এতে সমগ্র দেশের ছাত্রবৃন্দ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

উচ্চ শিক্ষা আরম্ভ :

 ১৯৬১ সালে ঢাকা বোর্ডে ৯ম শ্রেনীর নাম রেজিষ্ট্রেশনের জন্য লিখিত জন্ম তারিখে ভুলক্রমে বয়স ১৪ বছরের কম হওয়াতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সিভিল সার্জন দ্বারা শারীরিক তদন্তে বর্তমান জন্মতারিখ ১৯ জুলাই,  ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ নির্ধারিত হয়, যা বর্তমানেও চলমান। যা উপরোক্ত তদন্তে হাজিরা দিতে গেলে শিক্ষা  কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তৎকালীন ডি.সি'র নিকট স্মারক লিপি দেয়ার বিক্ষোভ মিছিলে কাজেম আলি স্কুল থেকে ষ্টেটব্যাংক পর্যন্ত অংশগ্রহন করে এবং গুডস্ হিল, আন্দরকিল্লা ও মুললিম, হাই স্কুল গেট পর্যন্ত পুলিশের সাথে ০৩ বার সংঘর্ষ হয় যাতে তাঁরা ০২ জন মার খেলেও  ৩য় বারে পুলিশকে প্রচন্ড মার দিয়ে  সম্পূর্ন হটিয়ে দেয় এবং  মিছিল থেকে গ্রেফতারকৃত নেতাদের উদ্ধার করে স্মারকলিপি প্রদান করেতে সক্ষম হয়, শেষ পর্যন্ত সরকার স্কুলের সংখ্যা বাতিল করতে বাধ্য হয, ঐ পাঠ্যক্রম বা কারিকুলাম অনুযায়ী সমগ্র দেশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রথম বারের মত এস.এস.সি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয় এবং তাঁর ব্যাচ প্রথম বারের মত নবম শ্রেণীতে বাংলা প্রথম পত্র, ইংরেজী প্রথম পত্র, সাধারণ গণিত, ও নতুন সংযোজিত সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে কানুনগো পাড়া কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং পাশ করে ১০ম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তী ১৯৬৩ সালে অবশিষ্ট ০৬ টি বিষয়ে (বাংলা ২য়, ইংরেজী ২য়, পালি ১ম ও ২য়, বিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২য় বিভাগে এস.এস.সি পাশ করেন। ঐ বৎসর ১৯৬৩ সালে রাঙ্গুনীয়া মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া  এইচ.এস.সি বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু ঐ বছরই কাপ্তাই বাঁধ চূড়ান্ত রূপদানের পূর্ব মুহুর্তে তাঁর বাবার তিনশত মন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নৌকার মাল ডুবে যায়। যার শোকে তিনি দুই বছর পর্যন্ত এতবেশি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন যে, দুলাল চন্দ্র বড়ুয়াকে পুরো, পরিবারের দায়-দায়িত্ব বহন করতে হয় এবং চাষবাসের পুরো কর্মকান্ড চালিয়ে ফকিরাঘাট দিয়ে কর্ণফুলী পার হয়ে দৈনন্দিন কলেজের ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে হত এবং ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাশ বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ইতোমধ্যে তাঁর পিতা অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠলে মামা মনিন্দ্র লাল বড়ুয়া'র জিম্মাতে কানুনগো পাড়া স্যার আশুতোষ কলেজে বি. এস.সি ভর্তি হন। সেখানে বৌদ্ধ ছাত্রাবাসে থাকার ব্যবস্থা হয়। যার যাবতীয় খরচাদি তাঁর ছোট কাকা  পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রাক্তন সার্জেন্ট ক্ষীরোধ প্রসাদ বড়ুয়াই বহন করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, ১৯৬৭ সালে বি.এস.সি পরীক্ষার প্রথম দিনই সিলেবাস বইয়ের বহিভূর্ত প্রশ্ন থাকার কারণে পরীক্ষাদানে বিরত থাকে এবং যথারীতি অকৃতকার্য হয়। ১৯৬৭ সালে ৪ঠা সেপ্টেম্বর তাঁর পিসি মৌফুলার দেবর এবং প্রধান শিক্ষক বাবু মিলন প্রভাষ বড়ুয়া'র আহ্বানে শিক্ষাপাঠ শিলক দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। ঐ বছরেই জমিদার ক্ষেত্র মোহন দাশ, উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাবু মুকুল বড়ুয়া, জনাব হাফেজ আহমেদ চৌধরী (ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী), দুলাল চন্দ্র বড়ুয়া নিজে, তাঁর মাসি আভা রাণী (মৃত), পিসী বীণা রাণী বড়ুয়া'র সমন্বয়ে মাত্র ৬৯ জন ছাত্রী নিয়ে (একমাত্র জয়নাব বেগম একজন মুসলিম) শিক্ষক ইউনিয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন (বর্তমান নাম শিলক হামিদ শরীফ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়)। তাঁরা সকলেই স্কুলে ১৩ মাস বিনা বেতনে শিক্ষকতা চালিয়ে যান। পরিবারের বিমল কাকা, মামা মুনিন্দ্র বাবু  কাকাদের  একাধিক জনের চাপে একান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও দ্বিতীয় বার বি.এস.সি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং প্রস্তুতির অভাবে অকৃতকার্য হয়ে যায়। ১৯৬৯ সালে মরিয়ম নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন এবং পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাঙ্গুনীয়া মহাবিদ্যালয় হতে আবার বি.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং ২য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

মুক্তি যুদ্ধে অংশগ্রহণ :

১৯৭০ সালের মাঝামাঝি আবার  গ্রামের বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে এই স্কুল থেকেই আরও ৩০ জনকে সংগঠিত করে যেখানে মোঃ সেলিম একমাত্র মুসলিম সহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং সফলতার সাথে নিজগ্রাম সহ পুরো ইউনিয়নকে বহিঃশত্রু এবং রাজাকারের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সমর্থ হন। উল্লেখ্য যে যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পর তাদের  ৩০জনকে তাঁর কাকা সাজেন্ট ক্ষীরোধ প্রসাদ, পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত কাকা মোক্ষদা রঞ্জন বড়ুয়া দুই জনেই তাদেরকে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। ৪ঠা এপ্রিল, ১৯৭১ আমাদের গ্রামে ১৫ মিনিট সময়ের জন্য যুদ্ধ সংগঠিত হয়। মাত্র ০৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও মুক্তিযোদ্ধার সাথে ঠিকতে না পেরে কর্ণফুলীনদীতে নেমে পিছু হটে এবং পালিয়ে যায়। তন্মধ্যে দুলাল চন্দ্র বড়ুয়াকে লক্ষ করে একজন শিলক গ্রামের ব্যুহচক্র হাটের পূর্ব প্রান্ত থেকে গুলি চালালে দুলাল চন্দ্রের সামনে থাকা বরাক বাঁশের ঝাড়ের কারণে দুলাল চন্দ্র বেঁচে যান। পরবর্তীতে তিনি কৌশলে রাইফেল কেড়ে নিতে সক্ষম হন। এতে পাঠান সৈন্য হতভম্ব হয়ে পড়ে এবং তাঁর কাছে প্রাণ ভিক্ষা চায়। কী কারণে যেন তিনি তার অস্ত্র ফেরৎ দেন, সেটা তাঁর স্মরন নেই।পরদিন সকালে সে একটি স্টেনগান নিয়ে তাঁর কর্মস্থল বালিকা স্কুলে পাহারা দেওয়ার জন্য উপস্থিত হয় যা পুরো যুদ্ধকালই চলে। এ ছাড়া প্রথম দিনেই সেই পাঠান সৈন্যের তথ্যমতে শিলক গ্রামে আর কোন পাকিস্তানি হামলা হয়নি। গ্রামে মাত্র দুই জন রাজাকার ছিল। একজনের ডাকনাম লেদা, যে মুক্তিওয়ালা আছে বলে ভূয়া খবর দিয়ে ৮ জন পাঞ্জাবী সৈন্য নিয়ে গ্রামের পশ্চিম পাড়ায়  অধ্যক্ষ গোপাল দাশের বাড়ির উঠানে উপস্থিত হলে খবর ভূয়া প্রমাণ হয় এবং ঐখানেই পাঞ্জাবী সৈন্য লেদাকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া অপর রাজাকার নটুয়াখিলার বলাল মিয়া কে ১৭ ডিসেম্বর গ্রামের বিশাল জনতা ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত ডাকেরমুড়ার কাঁটা বন থেকে ধরে টেনে হিছড়ে এনে স্থানীয় ফুলতলীর হাটে বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে। ১৩ ডিসেম্বর ভোরে খবর আসে যে, দুইশতের বেশি পাকিস্তানী সৈন্য দুটি খোলা ট্রাকে চন্দ্রঘোনা থেকে বান্দরবান যাবে। এর ১ঘন্টা পরে খবর আসে যে আপাতত সৈন্যরা যাচ্ছে না। কিন্তু সকাল ১০ টায় আবার পাকা খবর আসে যে,  ৯২ জন সৈন্য দুইটি বেসরকারি ট্রাকে করে বান্দরবান যাবে এবং ০৬ জনের একটি সশস্ত্র অগ্রবর্তী চাকমা রাজাকার দল বান্দরবান সড়ক বেয়ে পদব্রজে রাস্তার নিরাপত্তা বর্ণনা দিতে দিতে অগ্রসর হয়। পদুয়া সারাসিয়া বরাবর ধৈল্যাঘোনা খামারে পূর্ব থেকে দুলাল বড়ুয়া তথা তাদের একটি ট্রানজিট ক্যাম্প ছিল যাতে মোট বার জন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ছিল। সকাল ১০টা নাগাদ দুলাল বড়ুয়া ঐ ক্যাম্পে পাকা এবং নিশ্চিত খবর পাঠায় এবং সে ক্যাম্প থেকে প্রস্তুতি নিয়ে প্রায় এক মাইল দক্ষিণে হাইট্টা মুড়ার মোড়ে ঘনপাতা বিশিষ্ট ধারমারা (লোহা কাঠ গাছ) গাছের দুই নির্ধারিত ডালে ক্যাপ্টেন করিমের নির্দেশনায় ০২ জন মুক্তিযুদ্ধো যাদের প্রত্যেকের নিকট চার প্রকারের দুইটি করে অস্ত্র প্রস্তুত রেখেই অবস্থান নেন। ইতোমধ্যে রাজাকার দল ঝাস্কা খালের পাড়ে অবস্থিত বাঙ্গাখালিয়া বাজারে পৌঁছে রাস্তার পূর্ব নিরাপত্তা সংকেত তাদের ওয়াকিটকির মাধ্যমে ট্রাকের সৈন্য দলে প্রেরণ করে। সংকেত পাওয়ার পর সৈন্যবাহী ট্রাক দুটি বান্দরবান সড়ক ধরে নির্বিঘ্নে এগ্রিয়ে যেতে থাকে। ঢংনালা এলাকা পার হয়ে তাদের দুই মুক্তিযোদ্ধাকে পূর্ব প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা মোতাবেক আক্রমণের চুড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হয়। পূর্ব কথিত হাউট্রামুড়ার মোড়ের দুই পাশে দুই ট্রাক উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপরে অবস্থানরত দুই যোদ্ধা প্রতিটি ট্রাকে এক সাথে দু'টি করে গ্রৈনেড হামলা চালায় এবং এতেই কাজ হয়ে যায়। একজন মাত্র সৈন্য লাফ দিয়ে নিচে পড়ে পাশ্ববর্তী শ্যাম দত্তের খড়ের গাদায় আশ্রয় নেয়। তাদের  মুক্তিযোদ্ধারা দৌড়ে সেখানে উপস্থিত হয় এবং গান পাউডারের সাহেয্যে খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয় যাতে ঐ সৈন্য পুড়ে মারা যায়। তাদের মুক্তিযোদ্ধাগণ তৃপ্তিতে ধৈল্লাঘোনা ক্যাপ ত্যাগ করে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সরফ ভাটার বড়খোলা পাড়ার ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। পরদিন ১৪ই ডিসেম্বর ওখান থেকে কর্ণফুলী পার হয়ে বেতাগী ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মধ্যে দিয়ে বরবর্তী ঘাঁটিতে পৌঁছায়। সেদিনই রাঙ্গুনিয়া কলেজে ঘাঁটি ও বান্দরবান থেকে  প্রায় শ'খানেক পাকিস্তানি সৈন্য শিলক কোদালা চা বাগান ঘাঁটিতে উপস্থিত হয়। পরদিন সন্ধ্যা ৭টায় ০৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য বাগানের মুদি দোকানের কর্মরত তার কাকাতো ভাই আশিষকে নিয়ে দুলাল বড়ুয়াকে ধরবার জন্য তার বাড়িতে অভিযান করেন। পথমধ্যে চন্দ্রঘোনা পেপার মিলের কর্মচারীদের সঙ্গে দেখা হওযার কারণে তিনি খবর পেয়ে যান এবং তার বাবা ও কাকাকে নিয়ে বিলের (ক্ষেত-জমি) পথে   লুকিয়ে পড়ে  এবং বেঁচে যান। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর সকালে পাকিস্তানি সৈন্য অভিযানে বের হয়ে দুলাল বড়ুয়ার বাড়ির পাশে আসলে তাকে পাহারা দেয়া পাঠান সৈন্যটি দলের কমান্ডারকে বলে, "উহাপর মাত যাও" উহা হামারা উস্তাদকা মাকান হ্যায"। তার এই কথায় সৈন্যদলটি দক্ষিণমুখী মিনাগাজী টিলার দিকে অগ্রসর হয় এবং সরফ ভাটার বর্তমান ব্রিজঘাট পার হয়ে যায়। ১৫ ডিসেম্বর দুলাল বড়ুয়া ও তার মুক্তিযোদ্ধারা অনুমান করলেন যে, তারা বিজয়ের কাছাকাছি এসে পড়েছে । কিন্তু পরদিনই, অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর যে বিজয় অর্জিত হবে তা মোটেও ভাবিনি। যাই হোক ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে খবর পেলাম রাঙ্গুনিয়া কলেজ ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা চট্টগ্রাম শহরে চলে গেছে। এই ভাবে বাংলাদেশের বিজয় হয়।তাঁকে আমি একাধিক বার বলেছি আর জিজ্ঞাসা করেছিলাম তুমি মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিলে না কেনো, কেনো তোমার প্রাপ্য সম্মান নেবে না বা নিলে না। তার প্রত্যুত্তর বলেছেন কোন সন্তান যদি তার পিতা মাতাকে সেবার বিনিময়ে সম্মানের প্রত্যাশী হয়, তার চাইতে, তার খারাপ না হোক ভাল হতে পারে না। সেকারণে আমি কোনদিন সনদ পাওয়ার দরখাস্ত করিনি তার প্রত্যাশাও করিনি। 

তাঁর সতীর্থ ও সহপাঠীবৃন্দ :

১৯৭২ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিউটের ২ বছর মেয়াদি স্নাতককোত্তর শ্রেনীতে ভর্তি হন। অল্প দিনের মধ্যেই বৌদ্ধ ছাত্র হিসেবে অধ্যাপক ড. রবীন্দ্র বিজয় বড়ুয়া'র বাসায় ড. রাষ্ট্রপাল মহাথেরোর নিমন্ত্রন উপলক্ষে উপস্থিত হন। সেখানে তার মতই ঢাকার মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজে এম.বি.বি.এস অধ্যায়নরত ডাক্তার প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়াও উপস্থিত ছিলেন। এবং এখানেই তার সাথে পরিচয় হয়। এরপর থেকে পরবর্তী পুরো ২ বছর প্রভাত বাবুর সঙ্গে নিয়মিত দেখা সাক্ষাত,  আলাপ ইত্যাদি কর্মকান্ডের মাধ্যমে ক্রমেই ঘনিষ্টতা বৃদ্ধি পায়, যা আজও বিদ্যমান এবং দুলাল বড়ুয়া ও তার সহধর্মিণীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তার কথায়-  "আমি এখনও ডাক্তার প্রভাত বাবুর সান্নিধ্যে থাকলে নিজেকে অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করি।" এম.এড শেষ বর্ষের শুরুতে পিঙ্গলা/পাইরোল গ্রামের এম.এড শিক্ষার্থী ধর্মরক্ষিত তার সঙ্গে জগন্নাথ ছাত্রাবাসে একই বিছানায় পুরো ১বছর অতিক্রম করি। ধর্মরক্ষিত অত্যন্ত সংযত জীবনব্রতী এবং মিতভাষী ছিলেন। তিনি কমলাপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করে অবসর গ্রহণ করা পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে অতিবাহিত করেন এবং বর্তমানে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা দানে রত আছেন।

পেশাগত জীবন ও দাম্পত্য জীবন :

ঢাকার পলাশী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তিনি ৩ মাস শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি যথেষ্ট সম্মান লাভ করেন। এবং শিক্ষকতা দীর্ঘারিত করার প্রস্তাব আসলেও ঘর কাতুরে হওয়ায় স্নাতকোত্তর শিক্ষা ডিগ্রি অর্জন করে চট্টগ্রাম ফিরে নিজ ইউনিয়নভুক্ত কোদালা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে অব্যাহতি নিয়ে কিছু মাসাধিক কাল নৌ বাহিনীতেও কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৬ই জুন তারিখে রাউজান থানাধীন আবুরখীল গ্রামের সম্ভ্রান্ত প্রাণকৃষ্ণ মহাজনের কনিষ্ট পুত্রের  প্রথমা কণ্যা শ্রীমতি সন্জু রাণী বড়ুয়া'র সঙ্গে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সমগ্র দক্ষিণ রাঙ্গুনীয়ায় তার বিবাহ অনুষ্ঠানে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ বাতির আলোকসজ্জা করা হয়। ইতোমধ্যে তার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ লাভের সুযোগ হয়। এবং যথারীতি সেখানে যোগদান করেন। ইতোমধ্যে তার প্রথম সন্তান ১৩৮৩বঙ্গাব্দে ১৯ শে ভাদ্র (৫ সেপ্টেম্বর) ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ রোববার সকাল ৯ টায় শ্রীমান শুভাশিষ বড়ুয়া পৃথিবীর আলোয় চোখ মেলে তার উপস্থিতি জানান দেয়। 

তার পরিচয় এখন মাতৃ-পিতৃ ঋণ শোধকারী গৃহত্যাগী বৌদ্ধ ভিক্ষু ড. সুমনপাল ভিক্ষু। তিনি বর্তমানে ভারতের কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পালি বিভাগে ও ভাষা বিভাগে তিব্বতি, চইনিজ এবং (যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৬-১৭) সফলতার সঙ্গে পাঠদান করে চলেছেন। তাছাড়াও ২০১৭-১৮ কোলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলেও চাইনিজ ভাষায় পাঠদান করেছেন। তার পাশাপাশি নবগ্রাম হীরালাল পাল কলেজে, হুগলি,  বাংলা বিভাগে অতিথি প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত আছেন। এছাড়াও রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর বুড্ডিস্ট স্টাডিজে, মেম্বার অফ গর্ভনিংবডি  হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। 

পেশাগত উন্নতি ও উচ্চতর বেতনের উদ্দেশ্যে ১৯৭৭ সনের মে মাসে ২ তারিখ চট্টগ্রাম ইপিজেট সংলগ্ন সেইলরর্স কলোনিতে নব প্রতিষ্টিত বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। ১৯৮০ সালে এই স্কুলের প্রথম এস.এস.সি পরীক্ষায় ২০ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে এবং দাউদকান্দি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক সারাদেশে মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২০ তম স্থান অধিকার করে উর্ত্তীন হয়। মোজাম্মেল হক যথারীতি এইচ. এস.সি প্রথম বিভাগে পাশের পর বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীতে নিয়মিত ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করে। এবং পদোন্নতি ক্রমে বর্তমানে রিয়ার এডমিরাল পদে কর্মরত আছেন। তাঁর যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতায় ৩বছর পর্যন্ত বি.আই.ডব্লিউ.টি.সি'র চেয়ারম্যান থাকার সময় কোনো নৌযান দূর্ঘটনা ঘটে নি। এই স্কুলে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষদান কাল তার শিক্ষকতা জীবনের উজ্জ্বল সময়। "বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী পরিচালিত বিদ্যালয়ের কঠিন নিয়ম-কানুন এর অনুশীলন এ আমার জৈবিক শৃঙ্খলা ও কর্মকাণ্ড নতুন ভাবে পরিশীলিত হয়। এই স্কুলে বহুসংখ্যক মানসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রী তৈরি করতে সমর্থ হই। ১৯৭৮ সালে তার দ্বিতীয় সন্তান হিমানিশ বড়ুয়া, ১৯৮১ সালে তৃতীয় সন্তান ক্ষমাশিস বড়ুয়া (মিঠু) এবং ১৯৮৩ সালে তার একমাত্র কন্যা শ্রীলা বড়ুয়া (টিয়া) জন্মগ্রহন করেন। ১৯৮৪ সালে অক্টোবরেই আমি চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। ১৯৮৮ সালে স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষক একজন ছাত্রকে নির্বাচনী পরিক্ষায় অকৃতকার্য বিষয়ের উত্তরপত্রে পাশ নম্বর দেয়ার বাদানুবাদে বহু তর্ক বিতর্কের পর চাকুরীই করবে না এই মানসিকতায় বাড়ি চলে আসি।" ১৯৮৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমার পঞ্চম সন্তান কামনাশীস বড়ুয়া'র জন্ম হয়। ১৯৯০ সালের ১৮ এপ্রিল মিটু মাত্র ১০ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করে।

গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসার পর নিজ ইউনিয়নের ফুলতলি হাটের পাশে নব প্রতিষ্ঠিত এম শাহ আলম চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানেও কমিটি গঠনের ঝামেলায় চাকুরী ছেড়ে দেন এবং পারিবারিক ভাবে চাষের কাজে মনোযোগ দেয়। কিন্তু ওই বছরই পর পর তিনবার বন্যার কারণে চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এবং বাবার পরার্মশে আবার চাকুরির চেষ্টা করেন। ১৯৯০ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম সিটি এলাকার পূর্ব সীমায় অবস্থিত পূর্ব বাকলিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করাকালীন তিনি সমস্ত জমিজমা বন্ধক রেখে এই পরিপূর্ণতার রূপ দিয়েছেন, কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পান নি। 

১৯৯১ সালের ২২ নভেম্বর তার ষষ্ট সন্তান পূর্ণাশিস জন্মগ্রহণ করে। ১৯৯৮ সালে স্কুলটি সিটি করপোরেশন এর অধিভূক্ত হয় ১৯৯৯ সালের ১ জানুয়ারী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এর পরিচালনায় কর্ণফূলী নদীর দক্ষিণ পারে শিকলবাহা ইউনিয়ন এর খোয়াজ নগরে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে আইযুব বিবি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়। ২০০১ সালেই প্রতিষ্ঠাকালীন আর্থিক হিসাব নিকাশ এর সমস্যায় চাকুরী স্থগিত করা হয়। যা আজ পর্যন্ত তিনি কোনোরূপ নিষ্পত্তি করেন নি। মিথ্যা অভিযোগ দায়ভার নিতে অস্বীকার করেন এবং কোন প্রকার পেনশন নেবে না বলে সংকল্পবদ্ধ অর্থাৎ তিনি আজীবন শিরদাঁড়া সোজা করে চলার পাত্র, কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। 

২০০৬ সালে ২২ মে হতে বর্তমান কর্মস্থল কদমমোবারক এম.ওয়াই উচ্চ বিদ্যালয়ে অদ্যাবধি সিনিয়র টিচার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আজ ১৫ নভেম্বর ২০২২ প্রয়াত হলেন।

অনুলিখন: 
সুমনপাল ভিক্ষু, 
অক্ষর বিন্যাস: শরনানন্দ ভিক্ষু ও জ্ঞানমিত্র (নিপুন)

No comments:

Post a Comment