Sunday, July 20, 2025

বিবেকানন্দের চেতনায় বুদ্ধ

 

বিবেকানন্দের চেতনায় বুদ্ধ

সুমনপাল ভিক্ষু

 

পশ্চিমে যখন বুরনুফ (Bournouf), সেনার (Senart) ওল্ডেনবার্গ গাইগার (Geiger) রিস রিস ডেভিডস্ দম্পতি বৌদ্ধধর্ম নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখন প্রশ্ন উঠেছিল-বৌদ্ধ মতবাদকে কি 'ধর্ম' আখ্যা দেওয়া যায়? ঈশ্বর বা দেবদেবীতে বিশ্বাস যদি ধর্মের লক্ষণ হয়, তবে হিন্দু ধর্ম অবশ্যই ধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ধর্ম নয়। বুরনুফের মতে তা হল 'a moral system without a god' ওল্ডেনবার্গের ভাষায়: 'a faith without a god', কিন্তু এমিল দুর্গাইম (Durkheim) The Elementary forms of Religious life'- বলছেন: ধর্মের প্রধান লক্ষণ হল-a sense of the sacred', বুদ্ধের ধর্মে ধর্ম সম্প্রদায় অর্থে ব্যবহৃত হয়নি। নৈতিকতা মানবতাই ধর্মের নামান্তর। বুদ্ধ তাঁর প্রবর্তিত ধর্মকে 'সদ্ধন্ম' বলে উল্লেখ করেছেন। সদ্ধম্ম বলতে বৌদ্ধিক আচার আচরণ করা এবং egoless হতে বলা হয়েছে।

বুদ্ধ বিবেকানন্দের কর্মের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়েছে ভারতবর্ষের মূল বাণী-"বসুধৈব কুটুম্বকম" অর্থাৎ সমস্ত পৃথিবীই আমার আত্মীয়। যখনই আমি কাউকে আমার চেয়ে আলাদা দেখি বা ভাবি, তখনই আমি অধর্মাচরণ করি। সাধারণের কাছে বিবেকানন্দের পরিচয়-তিনি মহামানব বুদ্ধের একান্ত অনুগত। তাই বিবেকানন্দ একসময় বলেছিলেন....... "আমি একমাত্র কর্ম বুঝি-পরোপকার, বাকী সমস্ত কুকর্ম। তাই বুদ্ধের পদানত হই।"

স্বামী বিবেকানন্দ তথাগত বুদ্ধের জীবন কর্মে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে তাঁকে জগতের শ্রেষ্ঠ লোকগুরু বলেছেন। বুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর অন্তরের শ্রদ্ধা যে কত গভীর ছিল, বিভিন্ন বক্তৃতায় বিবেকানন্দের অজস্র উক্তিই সে কথা প্রমাণ করে। বিবেকানন্দের মতে বুদ্ধই একমাত্র কর্মযোগের শিক্ষা সম্পূর্ণরূপে কার্য্যে পরিণত করেছিলেন। তিনি ছাড়া জগতের অন্যান্য মহাপুরুষরা সকলেই বাহ্য প্রেরণার বশে নিঃস্বার্থ কর্মে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। তাঁরা কেউ বলেছেন, তাঁরা ঈশ্বরের অবতার, আবার কেউ বলেছেন, তাঁরা ঈশ্বরের প্রেরিত বার্তাবহ। কেবল বুদ্ধই বলেছেন যে ঈশ্বর সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত শুনে লাভ নেই। আত্মা সম্পর্কীয় সুক্ষ্ম মতবাদ বিচার করাও অর্থহীন। ভাল হওয়া এবং ভাল কাজ করাই আসল কথা। সেটাই মানুষের মুক্তির পথ।

ইতিহাসে বুদ্ধ এমন একটি চরিত্র, যিনি নিজগুণেই সকলের উর্দ্ধে বিরাজ করেছেন। তিনি একদিকে শ্রেষ্ট দর্শন প্রচার করেছেন, আবার ক্ষুদ্রতম ছাড়াই কেবল সৎকর্ম করে গেছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন, মানুষ এমন ভাবে কর্ম করতে পারলে সেও বুদ্ধ হবে এবং জগতের স্বরূপ পরিবর্তিত করতে পারবে। বিবেকানন্দ বলেছেন, "বুদ্ধ আমার ইষ্ট' আমার ঈশ্বর। তাঁহার ঈশ্বরবাদ নাই, তিনি নিজেই ঈশ্বর, আমি খুব বিশ্বাস করি।" সমস্ত জীবন, কিসে অপরের কল্যাণ হয়, এটাই ছিল তাঁর চিন্তা। সে কারণেই তাঁর জীবনীকাররা সঠিকভাবেই লিখেছেন, "বহুজন হিতায়, বহুজন সুখায়" তাঁর জন্ম লুম্বিনী। বনে গিয়ে ধ্যান করেছেন। তাও নিজের মুক্তির জন্য নয়। কোন মানুষের এত দুঃখ? এর উত্তর খুঁজতেই তাঁর যত আকুতি। কশাঘাত করে মানুষের কর্মতৎপরতা বাড়াতেই তাঁর আবির্ভাব। তিনি বলেছেন সৎ হতে, রিপুচয় ক্ষয়ন করতে। তিনি আরো বিশ্বাস করতেন যে বুদ্ধের পর থেকেই ভারতবর্ষে তাঁর প্রচারিত ত্যাগ বৈরাগ্য এবং বিষয় বিতৃষ্ণাই ধর্মের চরম লক্ষ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।

বিবেকানন্দের মতে ভারতবর্ষে যে সমস্ত সন্ন্যাসীদের মঠ ইত্যাদি দেখা যায়, সেগুলো প্রায় সবই আসলে ছিল বৌদ্ধদের। বুদ্ধের হাতেই প্রকৃত সন্ন্যাসাশ্রমের সূত্র পাত্র হয়েছিল। তিনি সন্ন্যাসাশ্রমের মৃতকল্পে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। মনুষ্যজাতির মধ্যে তিনিই জগৎকে প্রথম সর্বাঙ্গসম্পন্ন নীতি বিজ্ঞান শিক্ষা দিয়েছিলেন। সকলের মঙ্গলের জন্যই তিনি মঙ্গলময় জীবন যাপন করতেন, মানুষকে ভালবাসার জন্যই তিনি তাদের ভালবাসতেন, তাছাড়া তাঁর অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। বুদ্ধের জন্মের আগে দেশে না ছিল কোন বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়। জনসাধারণের জন্য হাসপাতাল, পশু চিকিৎসালয় প্রভৃতির প্রশ্নই ওঠে না। স্থাপত্য বিদ্যারও তেমন কোন প্রসার তখন ঘটে নি। এসব তাঁরই প্রত্যয়। তাঁর জন্মের আগে দেশে ছিল তালপাতার পুঁথিতে বাঁধা কিছু ধর্মতত্ত্ব, সেটাও মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের আওততায়। বুদ্ধ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে তা কেমন করে কাজে লাগাতে হবে, সেটাই দেখিয়ে দিলেন।

দেহধারীদের মধ্যে বিবেকানন্দ বুদ্ধকেই একমাত্র প্রকৃত জ্ঞানী মনে করেছেন। এসব কিছুরই মূল কারণ, বিবেকানন্দ বুদ্ধের জীবন কর্মের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর অভিষ্ঠ লক্ষ্য তিনিও তথাগত বুদ্ধের মত মনে করতেন। প্রত্যেক মানুষই তাঁর সুকর্মের দ্বারা মহামানবে পরিণত হতে পারেন। সে কারণেই তিনি বলেছেন-Perfection does not come from belief on faith, perfection comes through the disintenested performence of action.

বুদ্ধই প্রথম প্রখর যুক্তি উদার মানবিকতা অবলম্বনে এমন একটা ধর্মমত রচনা কলেন, যা ব্রাহ্মণ্য কর্মকাণ্ডকে প্রবল চ্যালেঞ্জ জানাল। তিনি শুধু অপচয়ী হিংসাশ্রয়ী যজ্ঞবিধির বিরোধীতা করলেন না, ব্রাহ্মণ্য সৃষ্টিতত্ত্ব এবং স্রষ্টা ব্রহ্মাকে উপহাস করে বৈদিক দেবতত্ত্ব উড়িয়ে দিতে চাইলেন। 'অমবট্ট সুত্তে তিনি যেভাবে জাতিভেদ খণ্ডন করেছেন তা আর্য বর্ণাশ্রম মেনে নিতে পারে না। "সুত্তনিপাতে', হতে জানা যায় "জাতি দ্বারা কেহ ব্রাহ্মণ হয় না, জাতি দ্বারা কেহ অব্রাহ্মণও হয় না, কর্ম দ্বারা ব্রাহ্মণ হয়, কর্ম দ্বারাই অব্রাহ্মণ হয়।" আরও- যিনি বিদ্যাচরণসম্পন্ন, তাঁর যে জাতি হোক না কেন, তিনি শ্রেষ্ঠ।" আবার অন্যদিকে সব লোকাচার মেনে নিয়েছেন।

তথাগত বুদ্ধ এর জীবন, কর্ম বাণী স্বামী বিবেকানন্দকে যে কতটা প্রভাবিত করেছিল তা আমরা বুঝতে পারি পাশ্চাত্যের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর প্রদত্ত বক্তৃতায়। ১৮৯৩ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর শিকাগোর ধর্মমহাসভায় তিনি বলেছিলেন যে হিন্দু ধর্মের দুটো ভাগ কর্মকাণ্ড জ্ঞানকাণ্ড। সন্ন্যাসীরাই জ্ঞানকাণ্ডের আলোচনা করেন। এই জ্ঞানকাণ্ডের কোন জাতিভেদ নেই। ভারতবর্ষে উঁচু নীচু সব বর্ণের মানুষই সন্ন্যাসী হতে পারেন। সন্ন্যাস ধর্মে জাতিভেদের কোন স্থান নেই। জাতিভেদ কেবলই সামাজিক ব্যবস্থা। গৌতমবুদ্ধ মহান সন্ন্যাসী ছিলেন। পৃথিবীতে তিনি প্রথম ধর্মপ্রচারক।

সকলের বিশেষ করে অজ্ঞান দরিদ্রের ওপর তাঁর যে অসাধারণ সহানুভূতি সেটাই তাঁকে গৌরবের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাঁর শিষ্যদের মধ্যে ব্রাহ্মণ, অব্রাহ্মণ সবাই ছিলেন। তাঁর আমলে সংস্কৃত ভারতের কথ্য ভাষা ছিল না। সেটা ছিল তখন সাধারণগত পুঁথি পুস্তকের ভাষা। বুদ্ধের কোন কোন ব্রাহ্মণ শিষ্যরা তাঁর উপদেশগুলি সংস্কৃত ভাষায় অনুবাদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্বয়ং বুদ্ধের তাতে আপত্তি জানিয়ে ছিল। তিনি বলেছিলেন "আমি দরিদ্রের জন্য, জনসাধারণের জন্য আসিয়াছি, আমি জনসাধারণের ভাষাতেই কথা বলিব।" সে কারণে প্রায় সমস্ত উপদেশ যে সময়কার কথ্যভাষা 'পালি'-তে লিপিবদ্ধ।

১৮৯৪ সালের ১৯শে মার্চ আমেরিকা যুক্ত রাষ্ট্রের ডেট্রয়েট শহরে বক্তৃতা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দ বললেন- বুদ্ধ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ অবতার। তিনি কারও নিন্দে করেন নি। নিজের জন্য কিছু দাবীও করেন নি। প্রত্যেককে নিজ নিজ চেষ্টায় মুক্তিলাভ করতে হবে, এটাই ছিল তাঁর বিশ্বাস এবং উপদেশ। পরিনির্বাণ শয্যায় তিনি বলেছিলেন "কাহারও উপর নির্ভর করিও না। নিজের মুক্তি নিজেই সম্পাদন কর।" অত্তাহি অত্তনো নাথো, অত্তহি অত্তনোগত্যি।

বক্তৃতায় স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন- যে বুদ্ধ পৃথিবীর সমস্ত মানুষের উপর মাথা তুলে গাঁড়িয়ে আছেন। তিনি ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যাঁর সম্পর্কে কি শত্রু, কি মিত্র-কেউ কখনো বলতে পারেন নি যে সকলের হিতের জন্য ছাড়া তিনি কখনো নিঃশ্বাস নিয়েছেন বা একটুকরো রুটি মুখে দিয়েছেন। বুদ্ধ ঈশ্বরের অস্তিত্ব কখনও প্রচার করেন নি। তাঁর শিষ্যেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আমরা সৎ কেন হব?" বুদ্ধ উত্তরে বলেছিলেন "কারণ তোমরা উত্তরাধিকার সূত্রে সদ্ভাব পেয়েছ। তোমাদেরও উচিত পরবর্তীদের জন্য কিছু সদ্ভাব রেখে যাওয়া। মানুষ মানুষে এবং মানুষে প্রাণীতে অসাম্যের বিরুদ্ধে বুদ্ধ ছিলেন মূর্ত প্রতিবাদ। তিনি বলতেন সকল প্রাণীই সমান। তাঁর শিক্ষা সৎ হও, সৎ কাজ কর, যদি ঈশ্বর থাকেন, সাধুতার দ্বারা তাঁকে লাভ কর। যদি ঈশ্বর না থাকেন, তথাপি সাধুতাই শ্রেষ্ঠ লক্ষ্য।

তিনি আরো বলেছিলেন যে, বৌদ্ধধর্মে নিষ্কাম কর্মের ভাবই বেশী প্রবল। তখনকার অবিরত দার্শনিক বিচার, জটিল অনুষ্ঠান পদ্ধতি, বিশেষ করে জাতিভেদের উপর তিনি অত্যন্ত বিরক্ত ছিলেন। তিনি এমন এক ধর্ম প্রচার করেছিলেন যাতে সকাম ভাবের লেশমাত্র ছিল না। তাছাড়া দর্শন এবং ঈশ্বর সম্বন্ধে নানা রকম প্রচলিত মতবাদ সম্বন্ধেও তিনি আলোচনা করতে চাইতেন না। সে বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন তিনি। ঈশ্বর আছেন কিনা- সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন "ওসব আমি কিছু জানি না" মানুষের প্রকৃত কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন, "ভাল কাজ কর এবং ভাল হও (Do good, Be good)"

বিবেকানন্দ বলেছেন যে "জগতের আচার্যদের মধ্যে একমাত্র বুদ্ধের কাজ- কোন রকম বাইরের অভিসন্ধি ছিল না। অন্য মহাপুরুষরা সকলেই নিজেদের ঈশ্বরাবতার বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু বুদ্ধ সবসময়েই বলেছেন। কেউ তোমাকে মুক্ত হতে সাহায্য করতে পারবে না। নিজের সাহায্য নিজে কর। নিজের চেষ্টার দ্বারা নিজের মুক্তি অন্বেষণ সাধন করো।" তিনি ছিলেন সব রকম কামনা অভিসন্ধিবর্জিত। তিনি সব সময় জাগতিক সুখ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের পথে পথে ভিক্ষা করে ক্ষুধা নিবৃত্তি করতেন। তিনিই একমাত্র মহাপুরুষ, যিনি যজ্ঞে পশুহত্য নিবারণের জন্য পশুদের বদলে নিজের জীবন বিসর্জনের জন্য সব সময় প্রস্তুত ছিলেন।

বিবেকানন্দে মতে বুদ্ধ ছিলেন কর্মযোগীর আদর্শ। তিনি সৎ কাজের দ্বারা যে উচ্চমার্গে আরোহণ করেছিলেন, তেমনি সৎ কাজ দিয়ে প্রত্যেক মানুষই আধ্যাত্মিকতার চরণ শিখরে আরোহণ করতে পারে। বিশ্বাস বিবেকানন্দের ছিল। অনেকের পক্ষে একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে পারলে সাধনার পথ সহজ হয়। কিন্তু বুদ্ধের জীবনালোচনায় স্পষ্টই প্রতীত হয় যে কোন ব্যক্তি যদি আদৌ ঈশ্বরে বিশ্বাসী না হয়, সে যদি কোন সম্প্রদায়ভুক্ত না হয় অথবা কোন মন্দির ইত্যাদিতে না যায়, এমন কি প্রকাশ্যে নাস্তিক বা জড়বাদীও হয় তবু সে চরম অবস্থা লাভ করতে পারে তার সৎ কর্মের দ্বারা। "বয় ধম্ম সংখারা অল্পমাদেন সম্পাদেথ"

"প্রাণবন্ত ধর্ম" সম্বন্ধে এক বক্তৃতায় স্বামী বিবেকানন্দ বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন যে গৌতম বুদ্ধের জন্মের সময় ভারতবর্ষে সামাজিক অসাম্য পৃথিবীর যে কোন অঞ্চল থেকে হাজার গুণ বেশী ছিল। পুরোহিত সম্প্রদায় ছিলেন প্রায় সর্বেসর্বা। তাদের খেয়াল খুশীই সমাজকে চালিত করত। বিবেকানন্দের মতে বুদ্ধই একমাত্র মহাপুরুষ যিনি নিজের দিকে কিছুমাত্র না তাকিয়ে সমস্ত উদ্যম পরহিতে নিয়োগ করেছিলেন। মানুষের দুঃখ কষ্টের কারণ অনুসন্ধানের জন্য তিনি জীবনের সমস্ত সুখভোগ বিসর্জন দিয়েছিলেন। যে যুগে পণ্ডিত এবং পুরোহিতরা ঈশ্বরের স্বরূপ নিয়ে বিতর্কে ব্যপ্ত, বুদ্ধ তখন কেউ যা খেয়াল করে নি, জীবনের সেই বিপুল বাস্তব সত্য আবিষ্কার করলেন-দুঃখের অস্তিত্ব, আমরা প্রত্যেকে অপরকে ডিঙিয়ে যেতে চাই, কারণ আমরা স্বার্থপর আর সমস্ত অনিষ্টের কারণ এই স্বার্থপরতা। মানুষ নিঃস্বার্থপরতা দিয়েই সকল অশুভ জয় করা সম্ভব।

বুদ্ধের আর্বিভাবের আগে ভারতের চিন্তাজগতও ছিল বিভক্ত। জাতিভেদ প্রথায় তখন সমস্ত সমাজ আচ্ছন্ন। পৌরোহিত্য শাসন সমস্ত জাতির কাঁধে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। বুদ্ধের আবির্ভাব সেই সময়েই। তাঁর প্রবর্তিত ধর্মকে ধর্মবিষয়ক সামাজিক সংস্কারের একটি চরম প্রয়াসরূপে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। তিনি সকলকে বললেন, "কলহ বন্ধ করো, পুঁথিপত্র তুলে রাখ, নিজের পূর্বাতাকে বিকাশ করে তোল।"

বিবেকানন্দের মতে বুদ্ধ ছিলেন এমন একজন মহাপুরুষ যাঁরা জীবনের সমস্ত চিন্তা এবং কাজই মানুষের হিত সাধনের উদ্দেশ্যে চালিত হত। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বললেন, বুদ্ধ জনৈক রাজার যজ্ঞে বলিদানের উদ্দেশ্যে আনীত মেষযূথকে বাঁচাবার জন্য নিজেকে যুপকাষ্ঠের নিক্ষেপ করার প্রস্তাবের কথা, দুঃখ সন্তপ্ত মানুষের ক্রন্দনে ব্যথিত এই মহাপুরুষ কিভাবে নিজের স্ত্রী-পুত্রকে ত্যাগ করেন সে কথা। কিন্তু ব্রাহ্মণ্য কর্মকান্ডই ছিল তাঁর আসল প্রতিপক্ষ। 'কূটদন্তে সুত্তে' তিনি যজ্ঞবিধির যে নিন্দা করেছিলেন তার তুলনা নেই। এর মধ্যে অহিংসা তো ছিলই, তদুপরি ছিল আর্থিক অপচয়-বিরোধিতা, কোনও উন্নয়শীল অর্থনীতি এত ঘৃতের শ্রাদ্ধ আর অজস্র পশুবধের প্রশ্রয় দেবেনা। স্মরণ রাখতে হবে যে, পশু তখনও মূল্যবান মূলধন। যজ্ঞের ব্যয় তোলা হত প্রজাদের উপর কর বসিয়ে। সেটা বন্ধ করতে পারলে মূলধন বাঁচবে, সাধারণের শোষণও কমবে। কিন্তু এখানেও মনস্তত্ত্ববিদ বুদ্ধ মুখোমুখি সংঘর্ষ এড়ালেন বিকল্প যজ্ঞের ব্যবস্তা করে। প্রব্রজ্যিতদের দান সংঘের জন্য বিহার নির্মাণ, শরণ গ্রহণ পঞ্চশীল পালন করা বা পঞ্চশীলের বিপরীত যা কিছু আছে সেসবের ত্যাগই বিকল্পযজ্ঞশ্রেষ্ঠ যজ্ঞ এবং সে যজ্ঞ অবশ্যই তন্নহা বা তৃষ্ণাত্যাগ। এখানে প্রব্রজ্যিতদের দান এই জন্যই বুদ্ধ করতে বলেছেন যে দান করলে প্রব্রজ্যিতগণ সম্পদের সুষম বণ্টন করতে পারবে।

ক্যালিফোর্নিয়ার শেকস্পীয়ার ক্লাবে ১৯০০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী এক ধর্মলোচনায় স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, বৌদ্ধধর্ম জগতের সার্বভৌম ধর্মের প্রথম অভিবক্তি। বৌদ্ধধর্মের পূর্বেও ভারতে এবং অন্যান্য নানা ধর্মের আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু সেগুলি মোটামুটি নিজ নিজ জাতির পরিধির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। হিন্দু, ইহুদি, পারসী, প্রভৃতি প্রাচীন জাতির প্রত্যেকেরই মহান ধর্ম ছিল। কিন্তু সে সবই মোটেই উপর জাতি বিশেষের নিজস্ব ধর্ম। সার্বভৌম ধর্ম নয়। বৌদ্ধধর্মের অভ্যুত্থান ধর্ম জগতে প্রথম এক বিপুল বৈপ্লবিক পরিবর্তন। যে ধর্মের জন্মলগ্নের কয়েক শতাব্দীর মধ্যে বৌদ্ধ শ্রমণগণ নগ্নপদে মুণ্ডিতমস্তকে তৎকালীন সভ্যজগতের প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। বুদ্ধের অল্প কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই ভারতবর্ষের বাইরের নানা দেশ ছাড়াও মূল ভারত ভূখণ্ডে বৌদ্ধধর্ম এক সময়ে দেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষকে সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত করেছিল।

বিবেকানন্দের মতে বৌদ্ধ ধর্মের রাজনৈতিক এবং সামাজিক দিক তার ধর্ম এবং আচরণ থেকে অনেক বেশী আকর্ষণীয়। বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি সেই মহান ধর্মগুরু বুদ্ধের আবির্ভাবের সময় ভারতবর্ষের অবস্থা সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোকপাত করেছেন সেদিনের ভারতবর্ষে এক বহুবিস্তৃত বিরাট ধর্ম সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রসঙ্গক্রমে তিনি নিজের মত ব্যক্ত করে বললেন যে, স্বাধীনতাই মূল কথা। দেহ, মনে আত্মায় পূর্ণ মুক্তি। পূর্ণ বন্ধন হীনতাই তাঁর আজীবন কামনা। এই বন্ধন-হীনতাতেই বুদ্ধের সাথে তার একাত্মতা।

স্বামী বিবেকানন্দ আরো বললেন যে বুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সকলেই নিঃসন্দেহ। শত্রু মিত্র সকলেই তাঁর কথা লিখে গেছেন। তাছাড়া মহাপুরুষদের জীবনের সঙ্গে যত কাহিনী, যত অলৌকিক গল্প উপাখ্যানজড়িত হয়, সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে বাইরের কাহিনীগুলোর অন্তরালে প্রত্যেকেরই একটা নিয়ম সত্তা, একটা আভ্যন্তরীণ স্বকীয়তা থাকে। কিন্তু বুদ্ধের জীবনে কোন স্তরে, কোন সময়ে স্বকীয় প্রয়োজনে কোন প্রয়াস দেখা যায় নি। জন্মলগ্ন থেকেই বুদ্ধ ছিলেন এত পবিত্র। এত নির্মল যে তাঁর শ্রীমুখ দর্শন যে লোক করেছে, সেই আনুষ্ঠানিক ধর্ম পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করে পরিত্রাণ লাভ করেছে।

বিশ্বভ্রাতৃত্বের মহান প্রবক্তা ছিলেন বুদ্ধ তাঁর কথাই ছিল যে আর্য-অনার্য নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষেরই অধিকার রয়েছে ধর্মের উপর, স্বাধীনতার উপর। তাই সে অধিকারের ক্ষেত্রে সকলকেই তিনি আহ্বান করেন। বাস্তববুদ্ধি সম্পন্ন হতেই তিনি সকলকে উপদেশ দিতেন। সকলেরই উচিৎ সৎ হওয়া পবিত্র হওয়া। বুদ্ধের যে বৈশিষ্ট্য বিবেকানন্দের মতে তাঁকে সব থেকে বেশী আকৃষ্ট করেছিল, তা হল তাঁর দৃঢ়তা, মহত্ব এবং স্বচ্ছ চিন্তাশক্তি। তাঁর মস্তিষ্কে কোন জটিলতা ছিল না। যখন পৃথিবীর সকল ঐশ্বর্য তাঁর পাদমূলে তখনও তাঁর মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখা যায় নি। সব সময়ই তিনি নিজেকে সাধারণ মানুষ বলে মনে করতেন।

বুদ্ধের বিজ্ঞান সম্মত বাণী ছিল যে কোন শাস্ত্র গ্রন্থই প্রামাণ্য হিসাবে ধরে নেবার কোন কারণ নেই তা সে যতই প্রাচীন হোক, শুধু পূর্বপুরুষদের উক্তি বলে কোন কথা বিশ্বাস করা অথবা দশজন লোক বিশ্বাস করে বলে কোন মতবাদ গ্রহণ করা, কোনটাই উচিত নয়। প্রত্যেকটি জিনিস পরীক্ষা করে বা উপযুক্ত ভাবে যাচাই করেই গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া যদি কোন কিছু আত্মহিত বহুজনের হিতকর বলে মনে হয় তা হলে সেটি সকলের মধ্যে বিতরণ করাই সঠিক।

বুদ্ধকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাজ্ঞবান দার্শনিক হিসাবে অভিহিত করে বিবেকানন্দ বলেছেন, যে তিনি দেবতা নন, দানব নন, দেবদূতও নন। তিনি কেবল একজন দৃঢ়চিত্ত প্রাজ্ঞ ব্যক্তি-যাঁর মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষই নিখুঁত, পরিপুষ্ট এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সতেজ ক্রিয়াশীল। কোন মোহ নেই, নেই কোন ভ্রান্তি, যা কিনা বুদ্ধের প্রকৃত স্বরূপ। প্রবল ব্রাহ্মণ্যশক্তির অত্যাচারের কাছে তিনি কখনো মাথা নত করেন নি। সর্বত্রই সহজ স্বাভাবিক। দুঃখীর দুঃখে তিনি দুঃখী, তাঁদের সাহায্যে তিনি মুক্ত হস্ত। সর্বত্রই সেই এক প্রাজ্ঞ মনীষী। এক সবল শক্তিমান পুরুষ।

বিবেকানন্দ বুদ্ধের কর্মপন্থা এবং সংগঠন সম্পর্কে বলেছেন বুদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে শিষ্যবর্গকে একত্র করে নূতন একটি সংঘ গঠন করেছিলেন। যীশুখৃষ্টের জন্মের সাড়ে পাঁচশ বছরের আগে সেই সংঘে ভোটপত্রের মাধ্যমে নিজেদের মতামত জানাবার প্রথা পর্যন্ত গৃহীত হয়েছিল। গণতান্ত্রিকভাবে গঠিত সেই সংঘ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী যা দেশ বিদেশের বিভিন্ন সেবামূলক কাজের উৎস পরিণত হয়েছিল।

যীশুখৃষ্টের জন্মের দেড়শ বছর আগে আবির্ভাব হয়েছিল সম্রাট অশোক। পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিকরা তাঁকে দেবোপম সম্রাট বলে আখ্যাত করেছিলেন। তিনি সম্পূর্ণরূপে বুদ্ধের মতবাদ গ্রহণ করে সর্বকালের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্রাট হিসেবে নিজেকে প্রতিপন্ন করেন। মহামতি সম্রাট অশোক চিকিৎসালয় স্থাপন করেছিলেন শুধু মানুষের জন্য নয়, পশুদের জন্যও। যা ছিল পৃথিবীতে প্রথম। তাঁর নির্দেশ ছিল যখন কোন গৃহপালিত পশু বৃদ্ধ অকর্মণ্য হয়ে যাবে এবং তার মনিব যদি সেই পশুটিকে আর প্রতিপালন করতে না পারে, তখন তাকে পশু চিকিৎসালয়ে পাঠিয়ে দিতে হবে। কোন মতেই হত্যা করা চলবে না।

জীবনের প্রতি এই ভালোবাসাও সম্রাট, বুদ্ধের উপদেশ থেকেই গ্রহণ করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের মতে বৌদ্ধ ধর্ম ছাড়া পৃথিীতে আর কোন ধর্মই রক্তপাতে না করে এক পা- অগ্রসর হতে সক্ষম হয় নি। কেবল মাত্র মস্তিষ্ক দিয়ে সহস্র লক্ষ্য মানুষকে ধর্মরস আস্বাদন করানো অন্য কোন ধর্মের পক্ষেই সম্ভব হয়নি।

এখানে উল্লেখ করতে হয় "শুধু মস্তিষ্ক দিয়ে নয়, বৌদ্ধধর্ম যে দেশে গেছে, সেখানেই তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে সম্মান দিয়েছেন। বৌদ্ধধর্ম একটি বার্তাই বহন করে নিয়ে গেছে সর্বত্র সেটি হল পার্থিব জগতে কি করে নৈতিকতা চর্চার মধ্য দিয়ে মহৎ হওয়া যায়।"

১৯০০ সালের ১৮ই মার্চ সানফ্রান্সিসকোতে স্বামী বিবেকাননন্দ ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে বৌদ্ধধর্মের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কথা বললেন। বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মধ্যে বৌদ্ধরাই প্রথম নিজ ধর্মের সীমাবদ্ধ পরিধির মধ্যে সন্তুষ্ট না থেকে দূর দূরন্তে ছড়িয়ে পড়েছিলেন। পূর্ব-পশ্চিম উত্তর-দক্ষিণ সর্বত্রই তাঁরা ভ্রমণ করেছেন। দুর্গম দেশ তথা নিষিদ্ধ দেশ, তিব্বত থেকে শুরু করে চীন, মঙ্গোলীয়া, জাপান, কোরিয়া, ব্রহ্ম, শ্যাম, পূর্বভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ হয়ে সুদুর রাশিয়া, পোল্যান্ড এবং আরো অনেক পাশ্চাত্য ভূখণ্ডেও তাঁরা গিয়েছিলেন ধর্ম প্রচারের জন্য। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শিক্ষার ফলে কুসংস্কার এবং পুরোহিতদের অপকৌশলগুলিও দূর হতে সাহায্য করেছিল।

গণতন্ত্র এবং সাম্যের কথা অনেকেই বলে, কিন্তু একজন যে আর একজনের সমান কথা সে জানবে কি করে? এজন্য তার দরকার সুস্থ মস্তিষ্ক এবং নিরর্থক ভাবমুক্ত পরিষ্কার মন। সমস্ত অমার সংস্কারকে ভেদ করে অন্তরের গভীরে যে শুদ্ধ সত্য আছে, তাতেই তার মনকে ভরিয়ে দিতে হবে। তখনই সে জানবে যে পূর্ণতা সমগ্র শক্তি তার মধ্যে আগে থেকেই রয়েছে-অন্য কেউ এগুলি তাকে দিতে পারে না। এই বোধ জন্মালেই সে মুক্ত হয়। সে তখন অনুভব করে প্রত্যেক তার মত পূর্ণ এবং অন্যের উপর কোন রকম দৈহিক মানসিক বা নৈতিক ক্ষমতা জাহির করার কিছু থাকে না। তার চেয়ে ছোট কেউ থাকতে পারে, এভাবেই সে ত্যাগ করে তখনই সে বলতে পারে সাম্যের কথা। আর বুদ্ধের উপদেশই তাকে দেয় এই শিক্ষা। বুদ্ধের আবির্ভাবের সময় ভারতবর্ষের সাধারণ জনগণকে সমস্ত রকম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হত। 

বুদ্ধের ছিল মেধা, শক্তি উন্মুক্ত আকাশের মত অনন্ত হৃদয়। তিনি কারও ওপর কোন আধিপত্য বিস্তার না করে মানুষের মানসিক পার্থিব সব রকম বন্ধনকে চূর্ণ করতে চাইলেন। লোকের কেন এত দুঃখ তা তিনি জেনেছিলেন, আর এই দুঃখ নিবৃত্তির উপায়ও তিনি আবিষ্কার করে ছিলেন। সব কিছুর সমাধান করে নির্বিচারে সকলকেই উপদেশ দিয়ে তিনি বোধিলব্ধ শান্তি উপলব্ধি করতে তাদের সাহায্য করেছিলেন। বিবেকানন্দের ভাষায় এই মহাপুরুষই মহামানব বুদ্ধ।

ধর্মের বাড়াবাড়ির মূলোচ্ছেদ করে অতিশয় স্পষ্ট সত্যকে বুদ্ধ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর সমস্ত উপদেশাবলীর মধ্যে মানব-মৈত্রীই অন্যতম। তিনি ছিলেন সাম্যের আচার্য। 'অহং' বলে কিছু নেই আছে শুধু চিন্তা প্রবাহ, একটির পর আর একটি সংকল্প। এই চিন্তা বা সংকল্পের কর্তা কেউ নেই। দেহ অনুক্ষণ পরিবর্তিত হচ্ছে। মন এবং বুদ্ধিও পরিবর্তিত হচ্ছে। সুতরাং 'অহং' নিছকই ভ্রান্তি। যত স্বার্থপরতা তা এই মিথ্যা 'অহং' কে নিয়েই বুদ্ধের মতে আচার অনুষ্ঠান সবই ভুল। জগতে আদর্শ মাত্র একটাই। সব মোহকে বিনষ্ট করা। যা সত্য, কেবল তাই থাকবে। সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ হলেই অহং এর বিনাশ ঘটবে।

বিবেকানন্দ বলেছিলেন হিন্দুরা তাদের ঈশ্বর ছাড়া আর সব কিছুই ত্যাগ করতে পারে। ভক্তি ঈশ্বরকে তাঁরা আঁকড়ে থাকবেই। আর বুদ্ধের শিক্ষায় ঈশ্বর বলে কেউ নেই।

মানুষ ঈশ্বরকে ভালবাসত। কিন্তু মানুষ ভাইদের কথা ভুলে গেল। ঈশ্বরের জন্য সে নিজের জীবন পর্যন্ত বলি দিত, আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে ঈশ্বরের নামে সে নরহত্যাও করত। এই ছিল তখন জগতের অবস্থা। ঈশ্বরের মহিমার জন্য তারা পুত্র বিসর্জন দিত। দেহ লুণ্ঠন করত। অজস্র জীব হত্যা করত এবং এই পৃথিবীকে রক্তস্রোতে প্লাবিত করত ঈশ্বরেরই জয়ধ্বনি দিয়ে। কিন্তু বুদ্ধই তাদের ঈশ্বরের অপর মূর্তি মানুষের দিকে ফিরে তাকাতে শেখালেন। তিনি বললেন মানুষকেই ভালবাসতে হবে। সেটাই হল সর্বশ্রেণীর মানুষের জন্য গভীর প্রেমের প্রথম প্রবাহ।

সত্য যেন সত্যেরই মতো ভাস্বর থাকে, এটিই ছিল বুদ্ধের কাম্য। কোন আপসের প্রয়োজন নেই। কোন কুসংস্কার মূলক আচারের কাছে তা সে যতই প্রাচীন হোক মাথা নত করবার দরকার নেই। যুক্তিহীন শাস্ত্রগ্রন্থ এবং ধর্মীয় মন্ত্র তন্ত্র তিনি অস্বীকার করেছেন। বুদ্ধের শিক্ষা ছিল-ঈশ্বর বলে কিছু নেই, মানুষই সব। ঈশ্বর সম্পর্কে প্রচলিত সমস্ত মনোভাবকে তিনি অস্বীকার করেছিলেন। তাঁর মতে এই মনোভাব মানুষকে দুর্বল কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে। ঈশ্বর সম্পর্কে অন্য ধারণা মানুষের মনকে দুর্বল করে তোলে, করে তোলে পরনির্ভরশীল। মানুষ যদি মনে করে কত গুলো শব্দই হচ্ছে পূজা, তা হলে সে পূজা অর্থহীন। তাতে কোনই ফল পাওয়া যায় না।

নিরশ্বরবাদী বৌদ্ধরা কখনই জীবসেবাকে ঈশ্বরসেবার উপায় হিসেবে দেখেন নি। বিবেকানন্দের বেদান্তের বিঘোষিত ব্যাখ্যায় ঈশ্বর সেবাই হলো আসল লক্ষ্য, মনুষ্যসেবা তার উপায় মাত্র। এই ঈশ্বর হলেন জীবাত্মারূপী পরমাত্মা বা ব্রহ্মা। বিবেকানন্দের বহু উদ্ধৃত যে বাণী- "জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর" অর্থাৎ জীবসেবার মাধ্যমে শিবসেবা। মূর্তিপূজার মতোই জীবসেবাও হলো ঈশ্বর আরাধনার অন্যতম উপায়। এই জীবসেবার আদর্শ এক অতি কৃত্রিম আদর্শ, অন্তত খাঁটি জীবসেবার আদর্শ তা নয়। উল্লিখিত তর্ক বিচার থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বুদ্ধ হৃদয় বেদান্তের পক্ষে একই ছত্রতলের সঙ্গী হওয়ার সম্ভব নয়। প্রতিটি চিন্তা ধারার এক নিজস্ব যুক্তি শৃঙ্খলা আর তাৎপর্য থাকে। মোচড় দিয়ে সেই যুক্তি তাৎপর্য বদলাতে গেলে চিন্তায় শিথিলতাও নানা বৈপরীত্য দোষ দেখা দেয়। বিবেকানন্দের বেলায়ও তা ঘটেছে।

বস্তুত বুদ্ধ হৃদয়ই বৌদ্ধ নৈতিকতার উৎস। জাতক কাহিনী সমূহে যে মস্ত কথাটা বলতে চাওয়া হয়েছে তা হলো এই যুগ যুগ ধরে সম্যকসম্বুদ্ধ পরমকারুণিক বুদ্ধ সব জীবের মধ্য দিয়ে ক্রম প্রকাশমান। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জাতক এর এই বক্তব্য আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের দ্বারাও সমর্থিত। মানুষ মনুষ্যের প্রাণী পারস্পারিক ভালোবাসা সাহায্য করার প্রবণতা অনেকটা তাদের সহজাত প্রবৃত্তি। উক্ত প্রবৃত্তি প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে আর নিজেদের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা নিচয়কে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। মাধ্যাকর্ষণ নিয়ন্ত্রিত প্রকৃতির কাছ থেকে প্রকৃতিজাত জীবকূল জীবজগত থেকে বিবর্তিত মানুষ এই পারস্পরিক আকর্ষণ ভালোবাসার প্রবৃত্তি লাভ করেছে। একটা ধারাবাহিকতা বরাবর অনুসৃত হয়ে এসেছে। মনুষ্য-নৈতিকতার উৎস সন্ধান করতে হবে সেইখানে।

বুদ্ধবচন শীল সাধনার দ্বারা মানুষের সহজাত সৎ-প্রবৃত্তিগুলিকে দৃঢ়তর করার কথাও বলেছে। যথাসাধ্য আচরণ করে একটা শীল রক্ষা করতে হবে এবং এই শীল সাধনা বা আচরণের মধ্য দিয়ে আমাদের চরিত্র গড়ে উঠবে। শীলগুলির অন্যতম একটি হলো। পানং হানে অর্থাৎ প্রাণী হত্যা করবে না। তার বৃহত্তর প্রকাশ ঘটেছে বুদ্ধবাণী অনুসরণকারীদের এই অভিলাষের মধ্য দিয়ে সবে সত্তা সুখিতা হোজ্ব, অবেরা হোন্তু, অব্যাপ্যা হোন্ত, সুখী অত্তানং পরিহরন্তু (সকল প্রাণী সুখি হোক, শত্রুহীন হোক, অহিংসিত হোক, সুখে কালযাপন করুক) বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ নিরত প্রতিদিন নিজেদের জীবপ্রেমের শীলটি সুচারুরূপে পালন করেন। এই অভিমুখে চিত্তকে ব্যাপ্ত করার বাসনা তাই হলো 'মেত্তিভাবনা' বা মৈত্রী ভাবনা।

প্রাচীন ভারতীয় সমাজের নৈতিক ঐশ্বর্যের উৎস বেদ-বেদান্তের চিন্তাধারা নয় এবং এর পুনরুদ্ধারে বর্তমান নৈতিক সংকটের যুগে চারিত্রিক উন্নতির পথ উন্মুক্ত হবে না। সমাকলীন ভারতবাসীদের প্রাচীন যুগের কাছে নৈতিক অনুপ্রেরণা পেতে হলে, মুখ ফেরাতে হবে বৌদ্ধ ভারতবর্ষের প্রতি। বর্ণাশ্রমজনিত জাতিভেদ অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে বৌদ্ধ সংঘের সামাজিক সাম্য বৌদ্ধ কর্মবাদ মধ্যপন্থার অনুশীলনে একদিকে যেমন আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ গঠনে আনুকূল্য দেখাতে পারে, অপর দিকে আবার তেমন তার পরাত্মাসমতাবাদ পরমাত্মা পরিবর্তনবাদ একটা সুষ্ঠু সমাজসেবার দর্শন রচনায় আমাদের পথপ্রদর্শক হতে পারে।

প্রার্থনা মানে কোন যাদু মন্ত্র নয়। কোন রকম পরিশ্রম না করে তা শুধু উচ্চারণ করলেই ফল পাওয়া যায় না। সকলকেই পরিশ্রম করতে হবে। একজন কঠোর শ্রম করবে আর একজন শুধু কয়েকটি কথা বারবার উচ্চারণ করে ফল লাভ করবে তা কখনো সত্য হতে পারে না।

ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডানার শেক্সপিয়ার ক্লাবে স্বামী বিবেকানন্দের ভাষণ, ফেব্রুয়ারি , ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ,

১।  মহান মানুষ গৌতম বুদ্ধ  মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার জীবন সম্বন্ধে আপনাদের অধিকাংশ লোক জানেন।

২।  তিনিই  প্রথম বর্ণ ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন - সেই অসাধারণ আন্দোলন !

৩।  বুদ্ধ বলেছেনঃ  আমি মানুষের মধ্য একজন মানুষ।

৪।  অধ্যাবসী হয়ে নিজে নিজের মুক্তি অর্জন করো। তোমরা সবাই আমার মত একজন মানুষ। আমি তোমাদের মত ছাড়া অন্য কেউ নই আজকে আমি যে মানুষ - নিজেই খেটে তাকে তৈরি করেছি।  বুদ্ধের মৃত্যুর আগে তিনি এই কথা বলে গিয়েছেন।

৫।  সবকিছুই পরীক্ষা - টেস্ট করে গ্রহণ কর। যদি দেখো তুমি যা গ্রহণ করেছ- সেগুলি অনেক মানুষের কল্যাণ হবে, তাহলে সেটিকে সবার মধ্যে বিলি করে দাও। এই কথাগুলি বলার পর শিক্ষকের মৃত্যু হয়।

৬।  পৃথিবীর মধ্য গৌতম বুদ্ধর থেকে বড় যৌতিক দার্শনিক পৃথিবী দেখে নাই। তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ যৌক্তিকতার শিক্ষক। 

এই মানুষটি কখনোই খাম- খেয়ালী ব্রাহ্মণদের কাছে আত্মসমর্পণ করেননি। সে কখনোই মাথা নত করেননি !

৭।  আপনারা জানেন তিনি আত্মাকে অস্বীকার করেছেনতিনি কখনো চিরস্থায়ী বলে কোন জিনিস বিশ্বাস করেননি। 

৮।  ভগবান নেই, আত্মা নেই, নিজের পায়ে দাঁড়াওভালোর জন্য ভালো কাজ করো- শাস্তির ভয়ে অথবা অন্য কোথাও যাওয়ার জন্য নয় যুক্তিযুক্ত হয়ে দাঁড়াও এবং কোন নিজের উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ কোরোনা।  অসাধারণঅসাধারণ !

৯।  শিক্ষককে একজন প্রশ্ন করে।  "মানুষের কি থাকে?" শিক্ষক উত্তর দেন, সবকিছু সবকিছু- কিন্তু মানুষের মধ্যে কি আছে? শরীর নয়- আত্মা নয় যা থাকার কেবলমাত্র  চরিত্র। এই চরিত্র যুগ যুগ থাকবে। 

১০। বিনা রক্ত ক্ষয়ে বৌদ্ধ ধর্ম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম এক পা- এগোতে পারেনি - কেবলমাত্র বুদ্ধি দিয়ে কোন ধর্ম এক লক্ষ  লোক নিজের ধর্মে পরিবর্তিত করতে পারেনি।

বিবেকানন্দ বলেন যে সারা জীবন তিনি বুদ্ধের অনুরাগী। সমস্ত চরিত্রের চেয়ে বুদ্ধের প্রতিই তাঁর শ্রদ্ধা বেশী। সবাই নিজের জন্য ঈশ্বরকে খুঁজেছে। কিন্তু বুদ্ধ নিজের জন্য সত্যলাভের চেষ্টা করেন নি। তিনি সত্যের সন্ধানে করেছেন মানুষের দুঃখে কাতর হয়ে। তাঁর কোন ভাবাবেগ ছিল না। ছিল না কোন কুসংস্কার। তিনি বারংবার নিজেকেই সত্যানুসন্ধান আর অনুভব করতে বলেছেন। তারপর তা বহুজনের পক্ষে কল্যাণকর মনে হলে মানুসের মধ্যে বিতরণ করতে। চিত্ত নির্মল এবং স্বচ্ছ হলেই সত্য প্রতিভাত হবে।

বিবেকানন্দ বলেন যে বুদ্ধ এমন কি অন্তিমকালেও নিজের প্রতিষ্ঠার জন্য কোন দাবী করেন নি। তিনি ছিলেন উপলব্ধির এক নামান্তর। লোক শিক্ষকদের মধ্যে তিনিই মানুষকে আত্মবিশ্বাসী হতে সবচেয়ে বেশী শিক্ষা দিয়েছেন। কেবল মিথ্যা 'অহং' এর বন্ধন থেকে মানুষের মুক্তির উপায়ের কথা বলেন নি, অদৃশ্য ঈশ্বরের উপর নির্ভরতা থেকে মুক্তির কথা বলেছেন। মুক্তির সেই অবস্থা যাকে তিনি নির্বাণ বলতেন তা লাভ করার জন্য প্রত্যেককেই আহ্বান করেছেন। একদিন সে অবস্থায় সকলেই উপনীত হবে, এবং সে নির্বাণে উপনীত হওয়াই মনুষ্য-জীবনের চরম স্বার্থকতা। মোটের উপর বুদ্ধ বাণী বর্তমান ভারতের প্রয়োজনের সঙ্গে মিলিয়ে বিবেকানন্দের কর্মপ্রণালী স্থির হয় আর ১৮৯৭ যে প্রথম সপ্তাহে আলোচিত রামকৃষ্ণ মিশনের ভাবী কার্যপ্রণালী তারই আলোকে নির্দিষ্ট হল। এর সঙ্গে বৌদ্ধ সংঘের কিছু পার্থক্য রয়েছে। বুদ্ধ সংঘকে বৃজির মতে পুরো সাধারণতন্ত্রের ছাঁচে গড়তে চেয়েছিলেন, কোন বিহারাধিপতি বা পরিচালক নিযুক্ত করে যাননি। তাঁর শেষ উপদেষ্টা 'আত্মদীপ ভব' কিন্তু বিবেকানন্দ বিপরীত চিন্তা করলেন একজন প্রধান পরিচালক থাকা চাই। সকলকে তাঁর উপদেশ মেনে চলতে হবে। তাঁরপর একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সার্বিক শৃঙ্খলার মধ্যেও ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্যই যে সমস্ত সমাজের মূল চালিকাশক্তি হতে পারে, সে ব্যাপারে স্বামীজি সম্যক উপলব্ধি করেন। বিবেকানন্দ আরো বলেন, খাঁটি সত্যকার জীবন, দেবমানবই পথ দেখাবেন। অসংখ্য খাঁটি মানুষের সম্মিলিত প্রয়াসে সমাজটাকে পাল্টাতে হবে। শত শত বুদ্ধ তৈরি করে ভারতের অগণিত পদদলিত মানুষকে উদ্ধার করতে হবে। তিনি বলেন, অন্তত প্রেম করুণাকে বুকে নিয়ে শত শত বুদ্ধের আবির্ভাব প্রয়োজন 'বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য আত্মনিবেদিত প্রাণের প্রয়োজন। অনেক কাল আগে লক্ষ-লক্ষ্য পদদলিতের পবিত্রাতারূপে বুদ্ধের মতো অসংখ্য বুদ্ধ ভারতে তৈরি হবে। এই ছিল স্বামী বিবেকানন্দের মনোকামনা। স্বামী বিবেকানন্দ বুদ্ধকে প্রথম জীবনে যেভাবে দেখেছেন পরবর্তী জীবনে তাঁর চেয়ে ভালোরূপে উপলব্ধি করেছেন তার আর তাঁর রচনা সম্ভার প্রথম এবং সপ্তম খণ্ড পাঠ করলে প্রতীয়মান হয়। যাই হোক তাঁর উপলব্ধিতে, চিন্তা চেতনায় বুদ্ধের উপস্থিতি সদাসর্বদা জাগ্রত ছিল এবং বুদ্ধের দেখানো মার্গে পাড়ি দিয়ে আলোক সম্পাতে পৌঁছাতে সদাসচেষ্ট ছিলেন।

গ্রন্থঋণ

১। অধ্যাপক অরূপ ভট্টাচার্য, (সম্পাদক) বিজ্ঞান ভাবনায় স্বামী বিবেকানন্দ, রোহিনী নন্দন, কোলকাতা, ২০১৪।

২। আশীষ লাহিড়ী, স্বামী বিবেকানন্দ বাঙালির সেকিউলার বিবেক, অবভাস, কোলকাতা, ২০১২।

৩। চিরশ্রী বন্দোপাধ্যায়, ইতিবাচক নায়ক বিবেকানন্দ, কোলকাতা বইমেলা, ২০১২।

৪। উজ্জ্বল কুমার মজুমদার, বিবেকানন্দ জীবন শিল্প, পারুল প্রকাশনী, কোলকাতা, ২০১৪।

৫। প্রণবেশ চক্রবর্তী, ভারতের প্রথম সমাজতন্ত্রী বিবেকানন্দ, ভস্তক, ১৯৯৩।

৬। শ্রী বীরেন্দ্র চন্দ্র সরকার, শ্রী রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সর্বধর্ম-সমন্বয় (তাত্ত্বিক পর্যালোচনা), শ্রীবরেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অশোক রোড, গাঙ্গুলীবাগান, কোলকাতা, ১৯৮১।

৭। ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, . এম. এস. নাম্বুদিরিপাদ, জ্যোতি বসু, বিনয় চৌধুরী, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, গোপাল হালদার, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অমলেন্দু দে, হেমন্ত কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, জ্যোতি ভট্টাচার্য, বিনা ঘোষ, স্বামী বিবেকানন্দ মার্কসবাদীদের দৃষ্টিতে, ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, কোলকাতা, ২০১২

৮। প্রব্রজিকা বেদান্তপ্রাণা (সম্পাদক), মহিমা তব উদ্ভাসিত, ধর্মমহাসভা, শতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ, শ্রী সারদা মঠ, দক্ষিণেশ্বর ১৯৯৪।

৯। স্বামী বিবেকানন্দ, আমার ভারত-অমর ভারত, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্ক, কোলকাতা, ১৯৮৬।

১০। সুব্রত গুপ্ত, বিবেকানন্দের অর্থনৈতিক চিন্তা, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্ক, কোলকাতা, ১৯৮৪।

১১। সুরজিৎ দাশগুপ্ত, বিবেকানন্দ বৌদ্ধধর্ম ইসলাম, রূপালী, কোলকাতা, ২০১৪।

১২। সান্ত্বনা দাশগুপ্ত, বিবেকানন্দের সমাজ-দর্শন, উদ্বোধন কার্যালয়, কোলকাতা, ২০০৯।

১৩। সুধীর কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, মানিক মুখোপাধ্যায়, জীবিতেশ চক্রবর্তী, (সম্পাদক), বাঙ্গালার মনীষা, (দ্বিতীয় খণ্ড), শরৎ পাবলিশিং হাউস, কোলকাতা, ১৯৮৭।

১৪। স্বামী বিবেকানন্দ, মনীষীদের চোখে, প্রকাশক স্বামী লোকেশ্বরানন্দ, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউশন অব কালচার গোলপার্ক, কোলকাতা, ১৯৯৪।

১৫। স্বামী রঙ্গনাথানন্দ, ভগবান বুদ্ধ আমাদের ঐতিহ্য, উদ্বোধন কাৰ্য্যালয়, কোলকাতা, ২০০২।

১৬। Mongalmoy Sarker, SWAMI VIVEKANANDA-HIS PRESENT-TIME RELEVANCY, Internaitonal Society for Intercul-tural Studies and Research, Kolkata, India, 2015.

১৭। Swami Vivekananda, ON HIMSELF, Advaita Ashrama, Kolkata, 1963.

১৮। Subhas Chandra Saha, Swami Vivekananda and Swami Abhedananda on Buddha and Buddhism, Maha Bodhi Society of In-dia, Kolkata, 2013.

১৯। হার্বাট স্পেন্সার (মূলগ্রন্থ), স্বামী বিবেকানন্দ (অনুবাদ) শিক্ষা, উদ্বোধন কার্যালয়, কোলকাতা, ১৯৮১।

২০। অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, (সম্পাদক), এবং এই সময়, উত্থক, কোলকাতা, ১৮১৮।

২১। অমরচন্দ্র কর্মকার, (সম্পাদক), মনোভূমি, (সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা), কোলকাতা, ২০১২।

২২। জ্যোতিকা ওয়াঘেলা, মৌমেন্দ্র শঙ্কর দে সরকার, . তুষার কান্তি ব্যানার্জী, (সম্পাদক) বহুরূপে সম্মুখে তুমি: বিবেকানন্দ, আর্ট পাবলিশিং, কোলকাতা, ২০১৪।

২৩। তাপস ভৌমিক, (সম্পাদক), নানা বিবেকানন্দ, কোরক, কোলকাতা, ২০১২।

২৪। সমরেন্দ্র মৈত্র, (সম্পাদক) চতুষ্কোণ, কার্যালয়, কোলকাতা, ২০১১।

২৫। প্রবীর কুমার মজুমদার, (সম্পাদক), নবকল্লোল, দেব সাহিত্য কুটীর, কোলকাতা, ২০১১।

২৬। স্বামী নির্জরানন্দ, (সম্পাদক), উদ্বোধন, স্বামী বিবেকানন্দের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী বিশেষ সংখ্যা, ৯০তম বর্ষ, ১ম সংখ্যা, উদ্বোধন কার্যালয়, কোলকাতা, ১৩৯৪।

২৭। হর্ষ দত্ত, (সম্পাদক), দেশ, বিবেকানন্দ, এবিপি প্রাঃ লিমিটেড, কোলকাতা, ২০১৩।

২৮। সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়, (সম্পাদক), স্মরণিকা, পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ, কোলকাতা, ২০১২।

 

No comments:

Post a Comment