bodhinidhi.blogspot.com

Followers

Blog Archive

  • ►  2025 (16)
    • ►  May (11)
    • ►  March (3)
    • ►  January (2)
  • ►  2024 (23)
    • ►  December (4)
    • ►  September (1)
    • ►  August (5)
    • ►  July (4)
    • ►  June (9)
  • ►  2023 (28)
    • ►  November (4)
    • ►  October (3)
    • ►  September (2)
    • ►  August (6)
    • ►  July (2)
    • ►  June (1)
    • ►  April (3)
    • ►  February (6)
    • ►  January (1)
  • ►  2022 (27)
    • ►  December (8)
    • ►  August (8)
    • ►  May (2)
    • ►  April (2)
    • ►  February (2)
    • ►  January (5)
  • ▼  2021 (18)
    • ►  December (4)
    • ▼  July (13)
      • BODHI-NIDHI SANGHARAMA SANTHAGARA
      •  / সুনীতি পাঠক //একটি বিশালগাছ মাথা যার আকাশে ঠেকে...
      • প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্র
      •  হিন্দি, ইংরেজি অবশ্যই শিখবো কিন্তু জোড় করে চাপিয়ে...
      •  
      •  বড়ুয়ারা যতদিন উপযুক্ত গুরু চয়ন করতে জানবে না এবং ...
      •  মধু পূর্ণিমা ও বুদ্ধোপদেশমধু পূর্ণিমা বৌদ্ধদের ন...
      •  বুদ্ধের দৃষ্টিতে প্রজা পালনভিক্ষু সুমনপালবুদ্ধ গণ...
      •  "প্রবারণার"--বহুজন হিতায়-সুখায় ও মানবীয় দৃষ্টিভঙ্...
      •  "প্রবারণা"--বহুজন হিতায়-সুখায় ও বোধিতে উত্তরণ ভিক...
      •  Good morning all. Today we are here to address an...
      • The deadly Corona Virus also known as Covid-19 has...
      • Vipassana Meditation and Pandemic Situation (Treat...
    • ►  May (1)
  • ►  2019 (8)
    • ►  June (1)
    • ►  April (2)
    • ►  March (1)
    • ►  January (4)
  • ►  2018 (6)
    • ►  October (2)
    • ►  September (2)
    • ►  February (1)
    • ►  January (1)
  • ►  2017 (1)
    • ►  March (1)
  • ►  2016 (15)
    • ►  December (2)
    • ►  November (2)
    • ►  October (1)
    • ►  September (1)
    • ►  July (9)
  • ►  2014 (9)
    • ►  July (5)
    • ►  February (4)
  • ►  2013 (9)
    • ►  August (2)
    • ►  July (1)
    • ►  June (2)
    • ►  May (4)

About Me

My photo
Sumanapal Bhikkhu
View my complete profile

Friday, July 23, 2021

BODHI-NIDHI SANGHARAMA SANTHAGARA

 BODHI-NIDHI    

B-benevolence

O-optimism

D-dedication

H-honesty

I-intelligence

N-non-violence

I-integrity

D-delectable

 H-humanity

 I-intuition.

“We have to be optimistic and joyous in our endeavour to save humanity by virtue of wisdom emanating from honesty, non violence and fraternity.”

 

SANGHARAMA

S-Sage
A-Absolute
N-Non-violence 
G-Good governance

H-Holiness 
A-Angstrom 
R -Righteousness
A-Altogether
M-Magnitude
A-Adroitness

“Residence for monastic’s who are owing to absolute holiness and practitioner of positive adroitness, non-violence, righteousness, humanitarian dignity, universal ethics, and unity.”

 

SANTHAGARA


S –Satisfied

A -Accompany

N -Noble

T -Thought

H- Human

A -Ability

G –Giant

 A -Abode

R –Reconstruction

 A -Altruistic

“The point of satisfaction Comes with the absolute noble thoughts when human being acquires the ability to have a gracious abode full of reconstructive altruism.”



https://bnswcassociation-nalandajournal.weebly.com/social-events.html

 

 

Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:37 AM No comments:

 / সুনীতি পাঠক //

একটি বিশালগাছ মাথা যার আকাশে ঠেকেছে । 
সুনীতিকুমার পাঠক। বৌদ্ধ জ্ঞানের  সংরক্ষণ সংস্কৃতি কিরকম ? কিভাবে তা স্মৃতি থেকে অক্ষরবদ্ধ করা হয়েছে ? পুথির পাতায় লিপিবদ্ধ সেই জ্ঞান  মোনাস্ট্রির গ্রন্থাগারে গ্রন্থাগারে জমা পড়েছে । কিভাবে তা শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে জ্ঞানার্থীদের তৃষ্ণা নিবারণ করেছে। যা হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তা কিভাবে দেশে দেশান্তরে রূপে রূপান্তরে প্রবাহিত হয়ে চলেছে সে বিষয়ে জানার জন্য ঘন্টা দুয়েকের একটি সাক্ষাৎকার ।
মনে হল সমুদ্র সাঁতরে এলাম। সুমনপাল ভিক্ষু ছিলেন মুখ্য ভূমিকায়। আমরা দুতিনজন ছিলাম টোকার কাজে। সুনীতি পাঠকের বয়স বেশি নয়। মাত্র ৯৫ বছর। অনর্গল বলে গেলেন। শ্লোকের পর শ্লোক ,শাস্ত্রের পর শাস্ত্র। তিনি জ্ঞানবৃদ্ধ  জ্ঞানের পরিমাপে ও বয়ঃক্রমে । মানসিক ও শারীরিক সামর্থ্যে তরুণ আজও। এক আত্মীয় শিশুকে দেখতে এসেছিলেন। শান্তিনিকেতনী ঐতিহ্য মেনে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন রঙিন উত্তরীয়। উত্তরীয় দিয়ে বরণ করলেন সেই নতুন অভ্যাগতকে। আমরা অবাক !
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:33 AM No comments:

প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্র

 প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্র একটি ফুল্লকুসুমিত বৃক্ষ সদৃশ এবং প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে রসধারা সংগ্রহে রচিত হয়েছে পরবর্তীকালের চিকিৎসা শাস্ত্র । চিকিৎসকদের সমাজে জনপ্রিয়তা ছিল । সংস্কৃত শব্দ বৈদ্য পালিতে বেজ্জ, চিকিৎসা-তিকিচ্ছা, ভীষক-ভিসক্কো এবং শল্যবিদ-সল্লকত্তো বা surgeon। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি সম্পন্ন চিকিৎসকদের নাম পালি সাহিত্যে পাওয়া যায়; যাঁরা চিকিৎসা শাস্ত্রে ভারতের কৃতিত্ব তুলে ধরেছেন।এঁরা চিকিৎসকদের পূর্বাচার্য ছিলেন "তিকিচ্ছানং পুব্বকা আচরিয"। এঁদের মধ্যে জীবক ছিলেন বৌদ্ধ চিকিৎসা জগতে একটি নক্ষত্র প্রতিভা। তিনি রাজগৃহের রূপজীবা শালবতীর পুত্র ।মানবধর্মের উম্মোচনে এবং সর্বোপরি চিকিৎসকোচিত অজস্রগুণের সমারোহে তিনি ছিলেন পরম প্রতিভার আগ্নেয় সাক্ষর।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে জ্ঞান ও মানব কল্যাণের সংযোজন ঘটিয়ে তিনি সে যুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসের সমুন্নত মহিমায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন । মানব সভ্যতার যা কিছু উৎকৃষ্ট উপাদান, উজ্জ্বল আবিষ্কার ও উত্তরাধিকার ভারতীয় মনীষীদের ধ্যানে, জ্ঞানে, মননে এবং কর্মে তা অনুরণিত । বিশ্বমানবের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষার বার্তাবাহীরূপে তা দেশে দেশে পরিভ্রমণ করেছে। ভারতীয় চিকিৎসা বিদ্যার মধ্যেও বিবৃত হয়ে আছে বিশ্বমৈত্রী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রীতির পরিচয় ।

বৌদ্ধ যুগের চিকিৎসা বিজ্ঞান কুলকুণ্ডলীর ম্যাজিক, তান্ত্রিক সাধনার রোডম্যাপের স্কেচ এবং ভারতীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের উত্তরাধিকার জীবক।  বুদ্ধকে জীবক চিকিৎসা করতে পেরে অমরত্ব পেয়েছেন। বৌদ্ধ সাহিত্যে সর্বত্র  জীবকের প্রোজ্জ্বল উপস্থিতি বিদ্যমান ।
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:31 AM No comments:

 হিন্দি, ইংরেজি অবশ্যই শিখবো কিন্তু জোড় করে চাপিয়ে দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না । তারা যদি বাংলায় আসে বাংলা ভাষা শিখে আসুক, ইংরেজি ভাষা শিখে আসুক তাই না, নিজের মাতৃভাষা আর কতো নিঃশেষ হবে দেখতে থাকবো, এই করে কতো মাতৃভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার পরিসংখ্যান দিয়ে শেষ করা যাবে না ।

--------
এক প্রকারের ভাষা-সন্ত্রাস,  যেটা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে করতে চেয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক  পারেনি । পূর্ববঙ্গের শিক্ষক, ছাত্র, যুবক, সর্বস্তরের নরনারী প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল ।
---------
প্রতিবাদে গর্জে উঠোন আপামর সকলে ।মানব না, প্রতিবাদ,  প্রতিরোধ চাই ।
--------
নিজের মাতৃভাষা আগে, অন্য ভাষা শিখবো কি শিখবো না, সেটা যে শিখতে চায় তাঁর উপর নির্ভর করবে, কিন্তু  চাপিয়ে দেওয়া বরদাস্ত নয়।
--------
ভাষা ঋণ সব ভাষায় আছে,  কে কতটুকু ব্যবহার করে তার উপর নির্ভর করবে । বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি লেখক হুমায়ূন আজাদ সবসময় খাঁটি বাংলায় বক্তৃতা এবং সাক্ষাত্কার দিতেন, তাঁর ইউ টিউব দেখতে পারেন ।
--------
কেউ বলছেন না বাংলা আবশ্যিক করতে হবে গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত, কিন্তু সবাই বলছেন হিন্দি, ইংরেজি পড়লে ক্ষতি কি, ক্ষতি কথা একবারও বলিনি, বলেছি জোড় করে চাপিয়ে দেওয়া কেনো বরদাস্ত করা হবে? যে  বা যাঁরা শিখতে চান তাঁরা শিখতে পারেন ।
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:30 AM No comments:

 

আলোর ফেরিওয়ালা ড. সুমনপাল :  গেরুয়া বসনে জ্ঞানী সুজন
এস. জ্ঞানমিত্র ভিক্ষু 
:::::::::::::::::::
দুই বাংলার প্রতিথযশা গবেষক, লেখক, অনুবাদক, প্রত্নতাত্ত্বিক, প্রাচীন লিপি বিজ্ঞান বিশারদ, হিন্দি-ইংরেজী-সংস্কৃত-পালি-চায়নিজ-তিব্বতী ভাষায় পারদর্শীতা সম্পন্ন বাঙালী বৌদ্ধ ভিক্ষু ভদন্ত ড. সুমনপাল ভিক্ষু। তিনি আমাদের সময়ের এক আলোর ফেরিওয়ালা। উত্তুঙ্গ ব্যক্তিত্বের অধিকারী এই বৌদ্ধ ভিক্ষু বিবিধ বিষয়ে অসাধারণ পারঙ্গমতা অর্জন করেছেন, যা বর্তমান সময়ের, তাঁর সমকালীন বাঙালি বৌদ্ধ ভিক্ষুসঙ্ঘের মধ্যে অনন্যই বলা চলে। অনুজদের প্রতি তাঁর স্নেহ, বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি গারবতা, শিক্ষানবীশদের প্রতি নিঃস্বার্থ পৃষ্ঠপোষকতা, বিদ্ব্যৎজনদের প্রতি গৌরব, রোগাতুরদের প্রতি সেবাপরায়ণতা, অতিথি বাৎসল্যতা, নিরভিমানীতা, কৃতজ্ঞপূজারী প্রভৃতির মিশেলে এক ‘যথার্থ মানুষ’ ড. ভিক্ষু সুমনপাল।
 
এই কৃতি মানুষটি চট্টগ্রাম জেলাস্থ রাঙ্গুনিয়া থানার কর্ণফুলী বিধৌত শিলক গ্রামে ০৭ অক্টোবর ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ, ২২ আশ্বিন, ১৩৮৬ বঙ্গাব্দ, রবিবার জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম (শিক্ষক) দুলাল বড়ুয়া ও মাতার নাম সঞ্জু রাণী বড়ুয়া। তাঁর গৃহিনাম ছিল শুভাশিস বড়ুয়া। নিজগ্রাম শিলক ডাউলিং প্রাইমারী বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ চুকোনোর পর তিনি শিলক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান হতে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক ও ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে রাঙ্গুনিয়া কলেজ হতে উচ্চতর দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ব্রহ্মচর্য পন্থা অবলম্বন করেন এবং ‘সুমনপাল’ নামধারণ করেন। অতঃপর তিনি কলকাতাস্থ সংস্কৃত কলেজ হতে ২০০০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম শ্রেণিতে বি.এ. (সম্মান) পালি বিভাগ হতে উত্তীর্ণ হন। উল্লেখ্য, এ সময় তিনি বাংলা ভাষা সাহিত্য ক্লাস করতে গিয়ে বিখ্যাত প্রেসিডেন্সী কলেজেও শিক্ষা গ্রহণ করেন; কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগ হতে এম.এ. এবং ২০১১ খ্রিস্টাব্দে 'Buddhism in Chaina: Introduction to 10th Century A.D' শিরোনামে অভিসন্দর্ভ রচনা করে পি.এইচ.ডি.ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে চাইনিজ, তিব্বতী ও হিন্দি ভাষা কোর্সে ডিপ্লোমা ডিগ্রী নেন। এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হতে Manuscriptology(পাণ্ডুলিপি বিজ্ঞান) ও Palaeography (প্রাচীন লিপি বিজ্ঞান [প্রত্নভূগোল])’র উপর ডিপ্লোমা করেন। তিনি সুত্র-বিনয়-অভিধর্ম বিশারদ উপাধিও অর্জন করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে জাতীয় শিক্ষাবৃত্তি এবং Indian Council for Cultural Relations হতে দুই দুই বার শিক্ষাবৃত্তি লাভ করেন।

অল্প বয়সেই তিনি বহুবিধ প্রতিভার সাক্ষর রেখে সমাজ ও সদ্ধর্মের সেবা করে চলেছেন। তিনি ভারতের বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে অনুষ্ঠিত বহু সেমিনারে অংশগ্রহণ ও গবেষণামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি U.G.C.  (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন) আয়োজিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেমিনারে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এছাড়াও ষোলটি জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মশালায় যোগদান করেন। 

ড. সুমনপাল ভিক্ষু Asiatic Society, Indian History Congress, পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, Institute of Historical Studies, শান্তি নিকেতন আম্বেদকর বুদ্ধিষ্ট ওয়েলফেয়ার মিশন প্রভৃতি বিখ্যাত সংস্থা’র আজীবন সদস্য, এবং পণ্ডিত ধর্মাধার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও বিদর্শন শিক্ষা কেন্দ্র, কলকাতা’র গভর্নিং বডির সদস্য। 

এ পর্যন্ত তাঁর বারটি গবেষণামূলক প্রকাশনা ও ত্রিশটি সম্পাদকীয় প্রকাশনা এবং আটটি গ্রন্থ সমীক্ষা বিদ্যমান। তিনি দুই বাংলায় সমাদৃত গবেষণামূলক বার্ষিক সাময়িকী ‘নালন্দা’র বর্তমান সম্পাদক। এছাড়াও তিনি ‘বোধিনিধি’ পত্রিকা ও প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক হিসেবে এবং বোধিনিধি সোস্যাল ওয়েলফেয়ার কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন, কলকাতা'র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে রত।

ড. সুমনপাল ভিক্ষু কর্তৃক অনুবাদিত, সম্পাদিত ও গবেষণাকৃত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- (যেগুলোর নাম সংগ্রহ করতে পেরেছি)

পালি হতে অনূদিত-
১.‘থেরী অপাদান’, 
২.‘অনাগত বংশ’, 
৩.‘বিভঙ্গ’, 
৪.‘জাতক নিদান’, 
৫.‘বিশুদ্ধিমার্গ’,  
৬.‘চুল্লবর্গ’, 
৭.‘কর্মবাচা’,
৮.‘চুল্লবংশ’, 
৯.‘সদ্ধম্মোপায়ন’, 
১০.‘দীপবংশ’, 
১১.‘সংযুক্ত নিকায়’-৫ম খণ্ড; প্রভৃতি

ইংরেজী হতে অনূদিত- 
১২.‘জীবন’ (মূল- মাস্টার শিন্ উইন), ১৩.‘আধুনিক কালে সামাজিক সমস্যা এক অধ্যয়ন’ (মূল- মাস্টার শিন্ উইন)প্রভৃতি; 

হিন্দি হতে অনূদিত-
১৪.‘তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম’ (মূল- রাহুল সাংকৃত্যায়ন) অনুবাদ করেন প্রভৃতি । 

গবেষণামূলক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো-
১৫.‘শিক্ষা প্রসঙ্গে’, 
১৬. ‘বুদ্ধের নীতি তত্ত্ব’; 
১৭.‘প্রাচীন ভারতে ভৌত রসায়ন বিজ্ঞান’ (ড.আশা দাশের সাথে যৌথ ভাবে), 
১৮.'আনন্দ স্থবির, অঙ্গুলিমাল স্থবির ও বুদ্ধঘোসোৎপত্তি- জীবন চরিত', 
১৯. 'মহান ভিক্ষুত্রয়ের জীবন চরিত', 
২০.'বিমল স্রোতে শাসনতিলক বিমলজ্যোতি', 
২১.'অনাগত বুদ্ধ মৈত্রেয়', 
২২.'বঙ্গীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু সঙ্ঘ ও গৃহী বৌদ্ধ সঙ্ঘের প্রগতির লক্ষ্যে' প্রভৃতি । 

সম্পাদিত গ্রন্থগুলো হল-
২৩. ‘মধ্যম নিকায়’ (অখণ্ড সংস্করণ), 
২৪.‘বৌদ্ধ ভারত’, 
২৫.‘বুদ্ধদেব’, 
২৬.‘বৌদ্ধদের দেবদেবী’, 
২৭.‘অশোক লিপি’, 
২৮.‘ধর্মপদ’, 
২৯.‘মহাযান বৌদ্ধ ধর্ম’, 
৩০.‘বালাবতার’, 
৩১. ‘সুবোধালঙ্কার’, 
৩২.‘চরিয়া পিটক’, 
৩৩. ‘পাচিত্তিয় পালি’, 
৩৪.‘মহাসতিপট্ঠান’, 
৩৫.‘গৃহী বিনয়’, 
৩৬.‘অভিধর্মার্থ সংগ্রহ’, 
৩৭.‘থেরী গাথায় নারী জীবন’, 
৩৮.‘কচ্চায়ন ব্যাকরণ’, 
৩৯.‘অমল বড়ুয়া প্রবন্ধ সংগ্রহ’, 
৪০.‘সুত্ত নিপাত’, 
৪১.‘প্রেত বত্থু’, 
৪২.‘বিমান বত্থু’, 
৪৩.‘সদ্ধর্ম সহচর’, 
৪৪.‘বিদর্শন ভাবনা অনুশীলন’, 
৪৫.‘ধাতুকথা’  
৪৬. 'নালন্দা' 
৪৭.'বোধিনিধি' প্রভৃতি; 

কবিতা সঙ্কলন- ৪৮.‘বৌদ্ধায়ন’ ও ৪৯. The Path Finder;

ওপার বাঙলার খ্যাতিমান বৌদ্ধ ব্যক্তিত্বগেণর জীবনী সঙ্কলন- ৫০.‘বোধিরশ্মি’ প্রভৃতি। এবং পিএইচডি অভিসন্দর্ভ (প্রকাশিত) ৫১.Buddhism in Chaina: Introduction to 10th Century A.D'

এছাড়াও তিনি শতাধিক ইংরেজী-বাংলা প্রবন্ধ রচয়িতা যেগুলো ভারত-বাংলাদেশ সহ বিশ্বের দেশের জার্নালে প্রকাশিত।

পণ্ডিত ড. সুমনপাল ভিক্ষু মহোদয় বর্তমানে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষা বিভাগে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা রত। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় কত ছাত্র-ছাত্রী যে উপকৃত হয়েছে, কত ছাত্র-ছাত্রী যে শিক্ষা উচ্চতর পর্যায়ে যাবার ক্ষেত্রে সহায়তা পেয়েছে তা উল্লেখযোগ্য অবশ্যই। এই ছাত্রবান্ধব ভিক্ষুটি ছোটখাট সাদামাটা দেহবল্লরী নিয়ে চষে বেড়ান সারা কলকাতা বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও বৌদ্ধবিদ্যার বিকাশে। কত সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, কত চিত্র প্রদর্শনী, বৌদ্ধ বিদ্যা ও সংস্কৃতির কল্যাণে-বিকাশে যে তিনি দিন-রাত এক করে ছুটে বেড়ান তা না দেখলে বিশ্বাস করাও কঠিন। সদ্ধর্মের কল্যাণে ভান্তের নিরোগ-দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।
ReplyReply allForward
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:29 AM No comments:

 বড়ুয়ারা যতদিন উপযুক্ত গুরু চয়ন করতে জানবে না এবং উপযুক্ত গুরুর সান্নিধ্যে গমন করবে না, উপযুক্ত আদেশ উপদেশ শিরোধার্য করতে শিখবে বা মেনে চলবে না  -- এবং সমাজকে সঠিক ও যথাযথ নেতৃত্ব দিতে পারবে না, অপারগতা স্বীকার করে নেতৃত্ব সেচ্ছায় সরে আসবে না এবং নেতৃত্ব মেনে নেবে না, ততদিন বড়ুয়ারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না । কিছু বড়ুয়া আছে, কিছু কেনো অধিকাংশ বড়ুয়ারা যেসব গুরুরা গুরুচিত  ভূমিকা পালন না করে তুমি ভালো বলে নিজের আঁকের গোছায়, আর আঁকের গোছাতে গিয়ে সমাজ সদ্ধর্মের সমূহ বিপদ আর ধ্বংসের দিকে নিমজ্জিত করছে, তুমি ভালো বলে বলেই বড়ুয়ারা তাঁদের কোন বিচার বিশ্লষণ না করে অন্ধ ভাবে মেনে নেয়, এবং সেই গুরু না বুঝে নিজের ওজন না বুঝে সমাজের হিত-অহিত । আর যাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার নূন্যতম যোগ্যতা নেই তারা সেই সব গুরুদের শিখণ্ডী করে নেতা হয়ে আর সমাজের শিরোমণি হয়ে সমাজ, জাতি, সম্প্রদায়, সদ্ধর্মকে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে কলুষিত করছে । এই বিপদ আরো বেশি করে ঘনীভূত হচ্ছে, যতদিন যাচ্ছে তা আরো চেপে বসেছ, সমাজ ও জাতির প্রগতিকে মহাকালের সময় সীমা পর্যন্ত অতিক্রম করে যাচ্ছে ।

Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:28 AM No comments:

 মধু পূর্ণিমা ও বুদ্ধোপদেশ


মধু পূর্ণিমা বৌদ্ধদের নিকট অত্যন্ত পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। বুদ্ধের জীবনের ঐতিহাসিক ঘঠনাপ্রবাহের মধ্যে মধু পূর্ণিমা অন্যতম। ত্যাগ ও ঐক্যের মহিমায় সমুজ্জল এদিনটি। বৌদ্ধরা মধু পূর্ণিমাকে অতি শ্রদ্ধার সাথে পালন করার তাৎপর্যের দুটো দিক পরিলক্ষিত হয়। প্রথমটি সেবা ও ত্যাগ, অন্যটি সৌর্হাদ্য, সম্প্রীতি ও সংহতির। ত্যাগের মহিমা হলো পারিলেয্য বনের বানর কর্তৃক বুদ্ধকে মধু দান ও হস্তিরাজ কর্তৃক সেবা প্রদান। আর সৌর্হাদ্য ও সংহতি হলো কৌশম্বীর (বর্তমান এলাহাবাদ)  ঘোষিতারামে বিবাদমান ভিক্ষু সংঘের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা।

কৌশম্বীর ঘোষিতারামে বুদ্ধ অবস্থানকালীন সময়ে ভিক্ষুদের জীবন যাপনে বিনয়ের ছোট্ট একটা অনুসঙ্গ নিয়ে ভিক্ষু সংঘের মধ্যে সূচিত হয়েছিল বিরোধ, বিবাদ এবং বিভাজন। দ্বিধাবিভক্ত ভিক্ষু সংঘের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় তথাগত বুদ্ধ কম্ভুকণ্ঠে ভিক্ষু সংঘের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন–’হে ভিক্ষুগণ! বিরোধ সম্যক জীবন ধারার অপমৃত্যু ঘটে। সংঘের একতা বিনষ্ট হয়। তবু এ বিরোধের অবসান হয় না।’

বুদ্ধ বিবাদমান ভিক্ষু সংঘের মধ্যে মৈত্রী স্থাপনের চেষ্টা করলেন বটে কিন্তু বুদ্ধের প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় মান-অভিমানের কারণে আত্মকলহে লিপ্ত হয়ে পড়ে। বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘের এ অবস্থা দেখে "একো চরে খগ্গবিসানো কপ্পো" একাকী থাকার নীতি গ্রহণ করলেন এবং  সিদ্ধান্ত নিলেন কৌশাম্বী ছেড়ে পারিলেয্য বনে অবস্থান করবেন। বুদ্ধ ভিক্ষু সংঘের বিবাদমান কলহের কারণে দশম বর্ষাবাস অধিষ্ঠান পারিলেয্য বনে করলেন।

পারিলেয্য বনে বুদ্ধের আগমনে বনরাজি বিচিত্র শোভাবরী, কথিত আছে পারিলেয্য বন থেকে বুদ্ধ যখন ভিক্ষান্ন সংগ্রহে বের হতেন হস্তিরাজ বুদ্ধের পাত্রটি আপন শুণ্ডে বহন করে জনসাধারণের গমনাগমনের পথ পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন। পুনরায় বুদ্ধের ভিক্ষা চর্যা শেষ হলে ফেরার পথে আগুবাড়িয়ে নিয়ে আসতেন। এও কথিত আছে হস্তিরাজ বুদ্ধের স্নানের জলের ব্যবস্থা করতেন এবং অন্যান্য হিংস্র জন্তুদের হাত থেকে রক্ষার জন্য সারা রাত পাহারায় রত থাকতেন। বন থেকে নানা রকম ফলমূল সংগ্রহ করে বুদ্ধকে দান করতেন। ঠিক অনুরূপভাবে বানরও স্বকীয় দল ত্যাগ করে বুদ্ধের সেবায় রত হলেন।
 তখন উপাসক উপাসিকাগণ কৌশম্বীর ঘোষিতারামে গিয়ে দেখলেন বুদ্ধ বিহারে নেই এবং  উপাসক উপাসিকা সকলে জানতে চাইলেন বুদ্ধ কোথায়? কোন উত্তর নেই বিবাদমান ভিক্ষুগণের মধ্যে। ভিক্ষুসংঘের নিরবতা পরিলক্ষিত করে উপাসক উপাসিকারা সন্ধান পেলেন যে, ভিক্ষুসংঘের বিরোধ ও বিবাদের কারণে বুদ্ধ ঘোষিতারাম ছেড়ে পারিলেয্য বনে অবস্থান করছেন। ভিক্ষুসংঘের অবিদ্যা ও অহমিকা দেখে বুদ্ধ একাকী চলার নীতি গ্রহণ করেছেন। উপাসক উপাসিকারা ভিক্ষুসংঘের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন, যদি বুদ্ধ কৌশাম্বীতে ফিরে না আসেন তাহলে সংঘ সান্নিধ্য পরিত্যাগ করবেন। উপাসক উপাসিকাদের কারণে ভিক্ষুসংঘের মধ্যে সম্যক চেতনার উন্মেষ হলো এবং তাঁরা তাঁদের ভুল বুঝতে পারলেন এবং তাঁদের মধ্যে সম্প্রীতির বাতাবরণ সৃষ্টি হলো। উপাসক উপাসিকাদের আহ্বানে বিবাদমান ভিক্ষুসংঘ সমস্ত বিভেদ বিসংবাদ ভুলে পারিলেয্য বনে উপনিত হলেন  বুদ্ধকে ফিরিয়ে আনতে। ভিক্ষুসংঘ বললেন–’ভন্তে, আমরা সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এবং ভুলত্রুটি অপনোদন করে অন্ধবিবর থেকে আলোর সম্পাতে উত্তরণ ঘটিয়েছি। সমস্ত ভুলত্রুটি সংশোধন করে  সংঘের মধ্যে পুনরায় ঐক্য ও সংহতি স্থাপন করেছি পুনরায় মৈত্রী বারিতে অবগাহন করেছি। ভন্তে এবার প্রত্যাবর্তন করুন কৌশম্বীর ঘোষিতারামে।' 
বুদ্ধ ভিক্ষুসংঘের ঐক্য ও সংহতি দেখে বর্ষাবাসান্তে পারিলেয্য বন ছেড়ে কৌশাম্বীর ঘোষিতারামে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। বুদ্ধ সে সময় ভিক্ষুসংঘকে উপদেশোক্তি করলেন– ’মূর্খেরা জানে না তাদের কখন মৃত্যু হবে, যখন তা জানতে পারে, তখন সকল কলহের অবসান ঘটে।’
পারিলেয্য বনে বুদ্ধ অবস্থানের সময় ভাদ্র পূর্ণিমা তিথিতে গভীর অরণ্য  থেকে বানর একটি মধুমক্ষিকা সহ মৌচাক সংগ্রহ করে শ্রদ্ধাপ্লুত চিত্তে বুদ্ধকে দান করেন। পারিলেয্য বনে বুদ্ধকে হস্তিরাজ কর্তৃক সেবা ও বানরের মধু দান বৌদ্ধ সাহিত্য তথা  ইতিহাসে এক গুরুত্ববহ ঘটনা। এই পূর্ণিমার দিন উপাসক উপাসিকারা বিহারে এসে বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে মধু ও নানা রকম ভৈষজ্য ঔষধাদি দানাদি কর্ম করে থাকেন।
ইতিমধ্যে কৌশাম্বী থেকে মহতি ভিক্ষুসংঘ বুদ্ধ সেবক আনন্দ বুদ্ধ দর্শনে পারিলেয্য বনে গেলেন এবং  বনে বুদ্ধকে একা দেখে আনন্দ মর্মাহত হলেন। দুঃখগ্রস্ত আনন্দকে বুদ্ধ উপদেশোক্তি করলেন—’যদি তুমি জ্ঞানী, সদাচারী, পণ্ডিত ও ধীর ব্যক্তিকে বন্ধু রূপে লাভ কর, তাহলে সকল বাঁধাবিঘ্ন অতিক্রম করে সানন্দে তাঁর অনুগমন করবে। আর যদি তুমি জ্ঞানী, সদাচারী ও পণ্ডিত বা ধীর ব্যত্তিকে বন্ধু রূপে না পাও , তাহলে বিজিত রাষ্ট্রত্যাগী রাজা অথবা অরণ্যে মাতঙ্গহস্তীর ন্যায় একাকী বিচরণ করবে, কখনও পাপাচরণ করবে না।”
অজ্ঞ মানুষের বেশীর ভাগ অশান্তির মূল হল অহংকার । অহংকার থেকেই কেবল মনে করে পৃথিবীতে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। এই মিথ্যা অহমিকা থেকে কলহ, বিবাদ, ঝঞ্ঝাট ইত্যাদি। বুদ্ধ পারিলেয্য বনে একাকী চলার নীতি গ্রহণ করে বিবাদমান অজ্ঞতাপূর্ণ, মোহাচ্ছন্ন ভিক্ষুদের শিক্ষা দিয়েছিলেন। 
বুদ্ধকে বনের হস্তিরাজ কর্তৃক সেবা ও বানরের মধু দান ছিল তাঁদের একান্ত শ্রদ্ধা ও ত্যাগের বহিঃপ্রকাশ। তীর্যক প্রাণীর ত্যাগ ও সেবার কারনে বুদ্ধ একাকী পারিলেয্য বনে অবস্থান করতে সক্ষম হয়েছিলেন নিঃসন্দেহে বলা চলে। ফলস্বরূপ বিবাদমান ভিক্ষুসংঘের মধ্যে অনৈক্য ও কলহের অবসান, সাম্য- মৈত্রীর উষ্ণ প্রস্রবণ বাহিত হয়। নিরঞ্জন ফল্গুধারায় স্নাত হয় আসমুদ্র হিমাচল।

বি: দ্র: এখানে প্রশ্ন আসতে পারে সবার মধ্যে তীর্যক প্রাণী কি করে সেবা করতে বা বুঝতে পারে, একটা কথা আমাদের স্মরণে থাকা উচিত সেটা হলো সিদ্ধার্থ বুদ্ধ ছিলেন রাজপুত্র (ছোট গণরাজ্যের প্রধানকেও রাজা বলা হতো) সেই কারনে তাঁকে সমস্ত শিল্প শিক্ষায় পারদর্শীতা অর্জন করতে হয়েছিল এবং সেই সুবাদে তিনি Animal Psychology বিদ্যাও লাভ করেছিলেন। সেই কারনে বনে প্রকৃতি এবং বন্য প্রাণীদের সঙ্গে অবাধ বিচরণ সম্ভব হয়েছিল। আর বাদ বিসংবাদ নিরসন ও সাম্য মৈত্রী এসব কিছুই বুদ্ধ সিদ্ধার্থ শিশু থেকে কিশোর, কিশোর থেকে তরুণ, তরুণ থেকে যৌবনে পদার্পণ করতে করতেই আপন বুদ্ধিমত্তা তথা আচার্যদের প্রাপ্ত হয়েছিলেন, সে সবের সম্যক ধারণা বা ইতিহাস তাঁর জীবনী থেকেই উপলব্ধ হয়। এক কথায় সর্বজীবের মৈত্রী করুণা শিশুকাল থেকেই তাঁর মানসে রেখাপাত হয়েছিল। এখানে অত্যোক্তি না করাই বাঞ্চনীয় বলে মনে করি।
ReplyReply allForward
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:25 AM No comments:

 বুদ্ধের দৃষ্টিতে প্রজা পালন

ভিক্ষু সুমনপাল

বুদ্ধ গণপ্রজাতন্ত্র শাক্যরাজ্যে যাওয়ার পর শাক্য রাজাদের আন্তরিক আহ্বানে শাক্য সন্হাগারে (সংসদে) উপস্থিত হয়ে কিভাবে সত্যিকার অর্থে সদুপায়ে প্রজাতান্ত্রিক শাসন পরিচালনা  করতে হয় তার উপায় নির্দেশ করেছেন। তারা জিজ্ঞাসা করেছিলেন- "রাষ্ট্র পরিচালনায় কিংবা  রাজনীতিতে কিংবা প্রজা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আপনার দেশিত মার্গ কিভাবে অনুসরণ করব।" বুদ্ধ প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন- ''শাসন না করে" ।
তারা বললেন- সবিস্তারে ব্যাখ্যা করুন। 
প্রথমত আপনাদের মধ্যে যে ধ্যান ধারণা আছে আমরা শাসন করবো তা আপনাদের অন্তর থেকে ত্যাগ বা নির্মূল করতে হবে। ত্যাগ করতে হবে আপনার শাসকের দাম্বিকতা ধ্যান ধারণা। দ্বিতীয়ত হলো আপনার অন্তরে জাগাতে হবে, তা হলো মৈত্রী, পিতৃ কর্তব্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। কর্মচক্রে আপনি রাজা হন বা রাজা হয়েছেন তাহলে আপনি প্রজাদের অশ্রুপাত মোছিয়ে তাদের দুঃখ দূর করতে পারেন। 
এই কৃত কর্তব্য আপনি-আপনারা নিজ নিজ গৃহে সম্পাদন করছেন প্রতিনিয়ত যেমন করে থাকেন একজন পিতা, তাহ‌লে শাসক হয়ে কেন প্রজাদের প্রতি পিতৃ কর্তব্য সম্পাদন করতে পারেন না। কারণ আপনারা নিজেদের প্রজা থেকে ভিন্ন বা উচ্চ মনে করে থাকেন।
আর এই জন্যেই আপনারা জিজ্ঞাসা করছেন জাগ্রত এবং  ন্যায়োচিত শাসক কি করে হতে হয় বা হওয়া উচিত। কিন্তু এই প্রশ্ন আপনারা জিজ্ঞাসা করেন না যে,  যখন আপনারা পিতা হয়েছেন বা পিতা হন। আমাদের বা আপনাকে পিতার কর্তব্য কেমন হতে হবে তা সবাই জানেন কারণ ওখানে আত্মভাব সদা বিদ্যমান। সন্তানের প্রতি পিতার কর্তব্য জানেন কিন্তু শাসক হয়ে প্রজার প্রতি কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পাদন করতে জানেন না, তাহ‌লে পিতার ন্যায় এই আন্তরিক ভাবকে আর একটু প্রসারিত করুন, এই প্রজা আপনার সন্তান তুল্য, সবাই আপনার আপনজন সকলের দুঃখ নিজের দুঃখ ভেবে সেভাবে শাসন করুন। সবাইকে ন্যায়, সুখ ও আনন্দ দেওয়ার যে মার্গ বা ক্ষমতা আপনাদের মধ্যে প্রাপ্ত হয়েছে তা শুধু মাত্র শাসক হিসেবে থে‌কে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে দেবেন না। শারীরিক ও মানসিক রোগে সমস্ত মানব পীড়িত, দুঃখ দুর্দশায় জর্জরিত। কিন্তু তাদের আপনি-আপনারা সামাজিক অর্থনৈতিক ন্যায় দিয়ে তাদের মানব জীবনকে সুখময় করে দিতে পারেন।  
তৎক্ষণাৎ শাক্য গণরাজ্যের রাজারা বুদ্ধকে শাক্যদের রাজা হতে অনুরোধ করেন। বুদ্ধ তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন আমাকে শাক্য রাজ্যে গণ্ডিতে আবদ্ধ না থে‌কে ধরিত্রীর মানবতাকে জাগাতে হবে যাতে সকলে মুক্তির স্বাদ আস্বাদন করতে পারে।
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:24 AM No comments:

 "প্রবারণার"--বহুজন হিতায়-সুখায় ও মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গি।

ভিক্ষু সুমনপাল

সিদ্ধার্থ গৌতম কোন কাল্পনিক চরিত্র নয়, নয় কোন অদৃশ্য স্থান চ্যুত অলৌকিক সত্ত্বা। ইতিহাসের পটভূমিকায় তাঁর অবস্থান। সে সময়ের আর্থসামাজিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর আবির্ভাব এবং  মধ্যমপন্হা আবিষ্কার ও উপহার।বলতে গেলে এক নতুন দিকনির্দেশনা।

সেই নতুন দিশার পরিপূর্ণতায় ও  ত্রৈমাসিক কর্ম সাধনার আবর্তিত রূপ প্রবারণা। 'প্রবারণা’ শব্দের অর্থ  আহ্বান, ত্যাগ, ভিক্ষুসংঘের বর্ষাবাস পরিসমাপ্তি, বর্ষাবাস ত্যাগের কার্য অথবা শিষ্টাচার, প্রায়শ্চিত্ত অর্থে প্রযুক্ত।  

‘মহাস্হবির শান্তরক্ষিত’ মহোদয় প্রণীত পালি-বাংলা অভিধানে ‘পবারণা’ বা ‘প্রবারণা’ শব্দটির অর্থ উল্লেখিত রয়েছে যথাক্রমে নিমন্ত্রণ, আহ্বান, মিনতি, অনুরোধ, নিষেধ, ত্যাগ, শেষ, সমাপ্তি প্রভৃতি। অতএব, ‘প্রবারণা’ শব্দটি বারণ করা, নিষেধ করা, পরিত্যাগ করা, সমাপ্ত করা, অর্থে সমধিক প্রয়োগসিদ্ধ শব্দ হিসেবেও ব্যবহৃত। কিন্তু শিক্ষার পরিসমাপ্তি নয়, কারণ শিক্ষার পরিসমাপ্তি হতে পারে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত সত্ত্বা বোধিচিত্তে উত্তরণ ঘটছে। বরং প্রবারণা হল ইন্দ্রিয়সমূহের স্থূলতা থেকে সূক্ষ্মতর সংযমতার ও নীতি আদর্শের শিক্ষা যা মানব কল্যাণে প্রচার করা।

বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুগণ তাঁদের দোষত্রুটি অপর ভিক্ষু তথা সংঘের নিকট প্রকাশ তথা প্রায়শ্চিত্ত বিধানের আহ্বান জানায়; এমনকি     জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে তার জন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করা - এটিই হলো প্রবারণার পরিপূর্ণতা।

প্রবারণা চতুর্দশী অথবা পঞ্চদশী তিথিতে সম্পাদন করতে হয়। বিনয়ে 
চার প্রকার প্রবারণা কর্মের বিধান আছে। যথা (১) ধর্ম বিরুদ্ধ বর্গের (সংঘের একাংশ) প্রবারণা, (২) ধর্ম বিরুদ্ধ সমগ্র সংঘের প্রবারণা, (৩) ধর্মানুকুল বর্গের প্রবারণা এবং (৪) ধর্মানুকুল সমগ্র সংঘের প্রবারণা। 

ভিক্ষুদের মধ্যে সংঘটিত ক্ষুদ্রাণুক্ষুদ্র অপরাধ স্বীকার করে ভবিষ্যতে ত্রুটিমুক্ত থাকার অঙ্গীকার করা প্রবারণার উদ্দেশ্য। কাজেই প্রবারণার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়কে সংক্ষেপে বলা যায় অন্যায় বা অকুশলকে বর্জন এবং ন্যায় বা কুশলকে বরণ করার অঙ্গীকার। 

এখানে আর এক‌টি প্রতিপাদ্য বিষয় যা উল্লেখ না করলে বুদ্ধের গুরুত্ব লঘু হয়ে যায়, সেটি হল বুদ্ধের সাংঘিক জীবন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং জাতি, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণী নির্বিশেষে সবার জন্য উম্মুক্ত ছিল। এবং বুদ্ধের সাংঘিক জীবনে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, সাম্য ও ঐক্য স্হাপন। এক কথায় বলা যায় ভিক্ষুসংঘের একটি বিনয়িক অবশ্যিক আচরণীয় বিধি। 

ভিক্ষুসংঘ মহাকারুণিক বুদ্ধের 
কল্যাণধর্ম ‘‘চরথ ভিক্খবে চারিকং, বহুজন হিথায় বহুজন সুখায়। লোকানুকম্পায় অত্থায় হিতায় সুখায়........ , দেসেথ ভিক্খবে, ধম্মং আদি কল্যাণং, মজ্ঝে কল্যাণং, পরিযোসান কল্যাণং। সাত্থং সব্যঞ্জণং কেবল পরিপুণ্ণং পরিসুদ্ধং ............." ।

তাঁর অমেয় মৈত্রী বাণী দ্বারা জগৎ জয় এবং তাঁর এই মন্ত্রে স্নাত হয়েছিল আসমুদ্র হিমাচল। তাঁর বোধিজ্ঞান ভারতভূমির সীমানা পেরিয়ে বন্দিত দেশ দেশান্তরে। 

তাঁর নির্দেশ ‘বহুজন হিতায় বলতে জাগতিক বা পার্থিব সমৃদ্ধি, হিত কিংবা মঙ্গল বার্তা আর দ্বিতীয়টি আধ্যাত্মিক সুখ শান্তি ইত্যাদি। আর সমগ্র প্রাণী তথা মানব কল্যাণার্থে আদিতে - কল্যাণযুক্ত ধর্ম বলতে (দান) ওয়েলফেয়ার ইকোনমি অর্থাৎ কল্যাণযুক্ত অর্থনীতি কেমন হবে, মধ্য - কল্যাণযুক্ত ধর্ম বলতে (শীল) মানুষের মধ্যে নৈতিকতা সদাচার জীবন যাপনের কর্মকুশলতা ও অন্তে - কল্যাণযুক্ত ধর্ম বলতে (জ্ঞান বা প্রজ্ঞা) উন্নত জ্ঞান সম্প্রযুক্ত চিন্তা চেতনার উন্মেষ ঘটানো। যা সদর্থক বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক লক্ষণ শুধুই পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধিতার নির্যাস খোঁজা। কিংবা এও চর্যার উপযুক্ত নির্দেশনা শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা নিরবিচ্ছিন্ন অনুশীলনে উন্নত সোপানের বা প্রগতির কুঞ্চিকা খোঁজা। 

বুদ্ধের এই কল্যাণধর্মের আর এক‌টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা হলো মৈত্রীর বাতাবরণে সকলকে সিক্ত করা। এক কথায় বলতে হয় আত্মকল্যাণ ও পরার্থে নিজেকে সঁপে দেওয়া। সকলের প্রতি সম্প্রীতি, সদ্ভাব ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে স্নাত হওয়া। ভিক্ষুদের দিক বিদিক ছড়িয়ে পরার আর একটি কারণ হলো ভিক্ষুসংঘের হাত ধরে প্রতিবেশী রাজ্য তথা দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করা। যেমনটি আমরা দেখতে পাই মঘধ রাজা বিম্বিসার ও তক্ষশীলা রাজা পুক্করোসাতি উভয়ের মধ্যে বুদ্ধবাণী আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। পরবর্তীতে দেখা যায় রাজা পুক্করোসাতি বুদ্ধের সংঘভুক্ত হয়েছিলেন।
                      (১)
বি. দ্র. বৌদ্ধ নিকায়, শাস্ত্র, ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে গেলে বুদ্ধের জীবনীতে বেশ কিছু গরমিল ও অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। তা কিন্তু যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করা একান্ত অপরিহার্য। যা পণ্ডিত বেদনীয় ও উত্তর প্রজন্মের ধ্যানধারণায় মরিচিকার প্রলেপ মুক্ত সংশয় দূর করতে সক্ষম হবে।

আমাদের হাতের কাছে যে বুদ্ধ জীবনী উপলব্ধ হয় তা বুদ্ধের পরিনির্বাণের পাঁচশত বছর পর রচিত হয়। সেই রচনার কৃতিত্বও কিন্তু সর্বাস্তিবাদ সম্প্রদায়ের প্রাপ্য। কেননা বুদ্ধ জীবনী রচনার ধারাবাহিকতায় ইতিহাস তথা কালের প্রেক্ষিতে যে পাঁচটি বুদ্ধ জীবনী পাই তা বিভিন্ন পরম্পরার ঐতিহ্যমণ্ডিত জীবনী গ্রন্হ। যা সিদ্ধার্থ গৌতম তথা বুদ্ধ জীবনীর আধার। 

এসবের মধ্যে দ্বিতীয় শতাব্দীতে অশ্বঘোষ বিরচিত "বুদ্ধচরিত" ২৮ সর্গে মহাকাব্যটি বুদ্ধের প্রথম জীবনী গ্রন্হ। 

তৃতীয় শতাব্দীতে "সর্বাস্তিবাদী" নিকায়ের দ্বারা রচিত "ললিতবিস্তর" বুদ্ধের দ্বিতীয় জীবনী গ্রন্থ। 

চতুর্থ শতাব্দীতে "মহাসাংঘিক লোকোত্তরবাদ" নিকায়ের ঐতিহ্যের "মহাবস্তু" নামক অপর একটি জীবনী গ্রন্থ উপল‌দ্ধ হয়।

তৃতীয় হতে ষষ্ঠ শতাব্দীতে ধাপে ধাপে "ধর্মগুপ্তক" নিকায়ের ঐতিহ্যের "অভিনিষ্ক্রমণ সূত্র" বুদ্ধের অপর এক‌টি সুবিশাল জীবনী গ্রন্হ। 

পঞ্চম শতাব্দীতে আচার্য বুদ্ধঘোষ বিরচিত "থেরবাদ" ঐতিহ্যের "নিদানকথা" সর্বশেষ জীবনী গ্রন্থ। যা প্রায় বুদ্ধের পরিনির্বাণের এক হাজার বছর পর।

আমাদের এটা ভুলে গেলে চলবে না তিনি ছিলেন রক্ত মাংসে গড়া একজন পরিপূর্ণ ও আধুনিক মানুষ।  তাঁর প্রতিটি কথায়, কর্মে ও চিন্তা চেতনায় চির সমুজ্জ্বল। 

বৌদ্ধ সাহিত্যের অংশ বিশেষ জাতক, মহাপদান সুত্ত, আচরিয়ভূত সুত্ত ইত্যাদি গ্রন্থে বুদ্ধের কিছু অংশ বিশেষ পাওয়া গেলেও পূর্ণাঙ্গ জীবনী পিটক সাহিত্যে কোথাও উপল‌দ্ধ নয়। বিভিন্ন সময়ে উপলব্ধ ও ঐতিহ্যপূর্ণ জীবনীগ্রন্থে বেশির ক্ষেত্রেই অলৌকিক বা মিথ ও অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়েছে।    

বর্তমান সময়েও যদি আমরা লক্ষ করি দেখব যে কোন মানুষের ক্ষেত্রে সহজেই মিথ কাহিনী জুড়ে দেয় জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে। ঠিক তদ্রুপ  "ললিতবিস্তর ও মহাবস্তু" প্রভৃতি গ্রন্থে বুদ্ধকে লোকোত্তর বা দেবাতিদেব কিংবা সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে, যেন তাঁর অবস্থান পার্থিব জগতের থেকে উর্দ্ধে।

এসব কল্পকাহিনী থাকা সত্ত্বেও উল্লেখিত গ্রন্থগুলি থেকে অতিপ্রাকৃত কাহিনীগুলিকে বাদ দিয়ে এবং ত্রুটিমুক্ত করে সাধারণ ও যৌক্তিক বিবরণগুলিকে সংগ্রহ করে বুদ্ধ জীবনের পরিশীলিত বিভিন্ন দিক আলোকপাত করা একান্ত বাঞ্চনীয়। 

অলৌকিক কল্পকাহিনী মধ্যে থেকে খুব অল্পসংখ্যক তথ্য ও ইতিহাস নির্ভর হলেও বুদ্ধের ঐতিহাসিকতা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না।
                         (২)
বি. দ্র. আমরা থেরবাদ বৌদ্ধরা বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলির বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একটা বিশ্বাস বুদ্ধ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে মাতৃদেবীকে অভিধর্ম দেশনা করার জন্যে অদৃশ্য লোকে গমন করেছিলেন এবং তিন মাস পর সেখান থেকে পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন। 

স্বাভাবিকভাবে এখন প্রশ্ন আসে বুদ্ধ স্ববিরোধী কথা উপস্থাপন করছেন। যেমন আমরা পিটক সাহিত্যের সর্বত্রই দেখতে পাই ভিক্ষুসংঘ অষ্ট পুদ্গল যুক্ত পরিপূর্ণ মুক্ত ও শুদ্ধ। এবং আরো দেখতে পাই বুদ্ধের মুখনিঃসৃত বাণী শ্রবণ করার সঙ্গে সঙ্গেই অরহত্ত্ব ফলে উপনীত হন। এবং এও আমরা অবগত যে বুদ্ধ তাঁর "পঠম ধম্ম দেসনা" পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুদের প্রথম পরিবেশন করেন। 

কারণ তাঁরা ধ্যানে জ্ঞানে উন্নত ও পরিপূর্ণ পরিশুদ্ধ। সেই কারণে উরুবেলা থেকে দীর্ঘ পথ পরিভ্রমন করে সারনাথ উপনীত হন। তখন কেন তিনি তাঁর প্রথম উপলব্ধ জ্ঞানের আলোকসম্পাত মাতৃদেবীকে দেশনা করেন নি। কেন তিনি পঞ্চবর্গীয় অনুগামিবৃন্দদের চয়ন করলেন। 

সোতাপত্তি, সকদাগামী, অনাগামী, অরহৎ গণ যদি ধ্যানে জ্ঞানে উন্নত হন এবং অদৃশ্য সত্ত্বা যদি তাঁদের পূজা সৎকার বন্দনা করেন, তাঁরা যদি বুদ্ধের বাণী শ্রবণ করা মাত্রই দুঃখের অন্তসাধন করতে পারেন, তাহলে বুদ্ধ তাঁর ভিক্ষুদের অভিধর্ম দেশনা না করে অ্যাননোন বা অদৃশ্য স্থানে কেন গমন করলেন। 

বৌদ্ধ সাহিত্যে ও পিটক সাহিত্যের এই দ্বৈততা ও স্ববিরোধী ঘটনাবলী ও কথোপকথন এগুলি বুদ্ধ পরবর্তী ভিন্ন সম্প্রদায় বুদ্ধ তথা বৌদ্ধধর্মের বিকৃতির সুস্পষ্ট প্রমাণ। 

থেরবাদ সাহিত্য তথা পিটক সাহিত্যে কোথাও বুদ্ধ বলেন নি যে তিনি মাতৃদেবীকে মুক্ত করার জন্যে সশরীরে অদৃশ্য স্থানে আরোহণ করেছিলেন। এসব বুদ্ধ পরবর্তী পিটক বহির্ভূত কল্পিত ঘটনা মাত্র। এই কল্পকাহিনীর মধ্যে ইঙ্গিত সূক্ষ্মভাবে রেখে গেছেন, তা হলো  বুদ্ধ ও তাঁর প্রবর্তিত ভিক্ষুসংঘের গুরুত্ব খাটো করা জন্য, নচেৎ বুদ্ধকে অতিমাত্রায় দেবতাতিদেব বানানো  অথবা তাঁর প্রতি অতি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছেন কিংবা বুদ্ধ মাতৃদেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ পোষণ করেছেন হয়তো তার অভিব্যক্তির সূক্ষ্ম ছোঁয়া এছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
                         (৩)
বি. দ্র. বুদ্ধ এমন এক পরিপূর্ণ ও পরিশীলিত আধুনিক মানুষ ছিলেন যে, বর্গীর আক্রমণ দেখিয়ে ঘুম পাড়ান নি, কিংবা ললিপপ চুষিয়ে কান্না থামান নি, অদৃশ্য দুর্গতির ভয়ও দেখায় নি আবার অদৃশ্য সুযোগ সুবিধাও দেখায় নি। এখানে বুদ্ধের সঙ্গে অন্যান্য তথাকথিত প্রেরিত ব্যক্তিবর্গের ফারাক। "অত্তসরণা ন অঞ্ঞসরণা," "তুম্হে কিচ্ছং আতপ্পং অক্খতরো তথাগতো"।এখানে বুদ্ধ তাঁর সরণও নিতে বলেন নি। "কম্মদাযাদ ও কম্মপটিসরণা" করতে উদ্ধুদ্ধ করেছেন। 

দুঃখের আগুন নিভিয়ে সেই ভষ্মের উপরে শান্তির ঠিকানা নির্মাণ করাই বুদ্ধ জীবন পন্হা। সেই শান্তির ঠিকানা সবার জন্য উম্মুক্ত। কারো করুণা নির্ভর করে সেখানে পারি জমাতে হয় না। আপন চেষ্টায় স্বকীয় বলে উত্তরণ ঘটানো যায়। জটিল জীবন যন্ত্রনার গ্রন্হি থেকে বেরুনোর পথ বুদ্ধ পন্হা। এককথায় তাঁর পথ মুক্তবুদ্ধির পথ, স্বাধীন চিন্তার ও মননশীলতার পথ।


Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:23 AM No comments:

 "প্রবারণা"--বহুজন হিতায়-সুখায় ও বোধিতে উত্তরণ 


ভিক্ষু সুমনপাল

সিদ্ধার্থ গৌতম কোন কাল্পনিক চরিত্র নয়, নয় কোন অদৃশ্য স্থান চ্যুত অলৌকিক সত্ত্বা। ইতিহাসের পটভূমিকায় তাঁর অবস্থান। সে সময়ের আর্থসামাজিক পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর আবির্ভাব এবং  মধ্যমপন্হা আবিষ্কার ও উপহার।বলতে গেলে এক নতুন দিকনির্দেশনা।

সেই নতুন দিশার পরিপূর্ণতায় ও  ত্রৈমাসিক কর্ম সাধনার আবর্তিত রূপ প্রবারণা। 'প্রবারণা’ শব্দের অর্থ  আহ্বান, ত্যাগ, ভিক্ষুসংঘের বর্ষাবাস পরিসমাপ্তি, বর্ষাবাস ত্যাগের কার্য অথবা শিষ্টাচার, প্রায়শ্চিত্ত অর্থে প্রযুক্ত।  

‘মহাস্হবির শান্তরক্ষিত’ মহোদয় প্রণীত পালি-বাংলা অভিধানে ‘পবারণা’ বা ‘প্রবারণা’ শব্দটির অর্থ উল্লেখিত রয়েছে যথাক্রমে নিমন্ত্রণ, আহ্বান, মিনতি, অনুরোধ, নিষেধ, ত্যাগ, শেষ, সমাপ্তি প্রভৃতি। অতএব,  "প্র" উপসর্গের সঙ্গে "বারণ" শব্দ যোগে  ‘প্রবারণা’ শব্দটি বারণ করা, নিষেধ করা, পরিত্যাগ করা, সমাপ্ত করা, অর্থে সমধিক প্রয়োগসিদ্ধ শব্দ হিসেবেও ব্যবহৃত। কিন্তু শিক্ষার পরিসমাপ্তি নয়, কারণ শিক্ষার পরিসমাপ্তি হতে পারে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত সত্ত্বার বোধিচিত্তে উত্তরণ ঘটছে। অর্থাৎ অশৈখ্যে উপনীত হচ্ছে। বরং বলা যায় প্রবারণা হল ইন্দ্রিয়সমূহের স্থূলতা থেকে সূক্ষ্মতর সংযমতার ও নীতি আদর্শের শিক্ষা যা মানব কল্যাণে বিতরণ করা।

বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুগণ তাঁদের দোষত্রুটি অপর ভিক্ষু তথা সংঘের নিকট প্রকাশ তথা প্রায়শ্চিত্ত বিধানের আহ্বান; এমনকি জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে কোনো অপরাধ হয়ে থাকলে তার জন্যও ক্ষমা প্রার্থনায় প্রবারণার পূর্ণতা।

প্রবারণা চতুর্দশী অথবা পঞ্চদশী তিথিতে সম্পাদন করতে হয়। বিনয়ে 
চার প্রকার প্রবারণা কর্মের বিধান আছে। যথা (১) ধর্ম বিরুদ্ধ বর্গের (সংঘের একাংশ) প্রবারণা, (২) ধর্ম বিরুদ্ধ সমগ্র সংঘের প্রবারণা, (৩) ধর্মানুকুল বর্গের প্রবারণা এবং (৪) ধর্মানুকুল সমগ্র সংঘের প্রবারণা। 

এখানে শাস্ত্রের কিছু ঘটনাবলী বা কাহিনীর অবতরণা না করে কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়ের আলোচনার অবকাশ রাখবো। সেই ঘটনাবলী বা কাহিনী সকলের গোচরিভূত সুতরাং চর্বিত চর্বন না করাই বাঞ্চনীয় হবে বলে মনে করি।

ভিক্ষুদের মধ্যে সংঘটিত ক্ষুদ্রাণুক্ষুদ্র অপরাধ স্বীকার করে ভবিষ্যতে ত্রুটিমুক্ত থাকাই প্রবারণার উদ্দেশ্য। কাজেই প্রবারণার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়কে সংক্ষেপে বলা যায় অন্যায় বা অকুশলকে বর্জন এবং ন্যায় বা কুশলকে বরণ করার অঙ্গীকার। 

আরও এক‌টি প্রতিপাদ্য বিষয় যা উল্লেখ না করলে বুদ্ধের গুরুত্ব লঘু হয়ে যায়, সেটি হল বুদ্ধের সাংঘিক জীবনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন যা জাতি, বর্ণ, গোত্র, শ্রেণী নির্বিশেষে সবার জন্য উম্মুক্ত ছিল। এবং বুদ্ধের সাংঘিক জীবনে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান, সাম্য ও ঐক্য স্হাপন। এক কথায় বলা যায় ভিক্ষুসংঘের একটি বিনয়িক ও সৌজন্যমূলক আবশ্যিক আচরণীয় বিধি। 

ভিক্ষুসংঘ মহাকারুণিক বুদ্ধের 
কল্যাণধর্ম ‘‘চরথ ভিক্খবে চারিকং, বহুজন হিতায় বহুজন সুখায়। লোকানুকম্পায় অত্থায় হিতায় সুখায়.... , মা একেন দ্বে অগমিত্থ। দেসেথ ভিক্খবে, ধম্মং আদিকল্যাণং, মজ্ঝেকল্যাণং, পরিযোসানকল্যাণং। সাত্থং সব্যঞ্জণং কেবল পরিপুণ্ণং পরিসুদ্ধং .............।" 

তাঁর অমেয় মৈত্রী বাণী দ্বারা জগৎ জয় এবং তাঁর এই মন্ত্রে স্নাত হয়েছিল আসমুদ্র হিমাচল। তাঁর বোধিজ্ঞান ভারতভূমির সীমানা পেরিয়ে বন্দিত দেশ দেশান্তরে। 

তাঁর নির্দেশ ‘বহুজন হিতায়' বলতে জাগতিক বা পার্থিব সমৃদ্ধি, হিত কিংবা মঙ্গল বার্তা আর দ্বিতীয়টি আধ্যাত্মিক সুখ শান্তি ইত্যাদি। আর সমগ্র প্রাণী তথা মানব কল্যাণার্থে; 
আদিতে - কল্যাণযুক্ত ধর্ম বলতে (দান) ওয়েলফেয়ার ইকোনমি অর্থাৎ কল্যাণযুক্ত অর্থনীতি কেমন হবে, এবং সম্পদের সুষম বন্টনের দিকে আলোকপাত করেছেন। আমরা ভিক্ষু বিনয়ে দৃষ্টিপাত করলে দেখি, ভিক্ষুগণ কোন কিছু সঞ্চয় করতে পারে না, কিন্তু অঙ্গুত্তর নিকায়ের বালাম সুত্তে দানের ক্ষেত্র এবং   
দানের তারতম্য তথা উন্নত ক্ষেত্রে দান দিতে উদ্বুদ্ধ করছেন, এই কথার তাৎপর্য উপলব্ধি করলেই জানা যায় দানের সুষম বন্টনের প্রয়োজনীয়তা।
সে সময়ের আর্থসামাজিক কথা  বিবেচনা করে বুদ্ধ এই বিজ্ঞপ্তি দিকে দিকে বিঘোষিত করিয়েছিলেন। 

মধ্য - কল্যাণযুক্ত ধর্ম বলতে (শীল) মানুষের মধ্যে নৈতিকতা সদাচার জীবন যাপনের কর্মকুশলতা। সামাজিক স্হিতিশীলতা, সদ্ভাবপূর্ণ, বৈরীতাহীন সুষ্ঠু জীবন যাপনের প্রয়াস ও প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

অন্তে - কল্যাণযুক্ত ধর্ম বলতে (জ্ঞান বা প্রজ্ঞা) উন্নত জ্ঞান সম্প্রযুক্ত চিন্তা চেতনার উন্মেষ ঘটানো। যা সদর্থক বৈশিষ্ট্যজ্ঞাপক লক্ষণ শুধুই পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধিতার নির্যাস অনুসন্ধান করা। কিংবা এও চর্যার উপযুক্ত নির্দেশনা শীল, সমাধি, প্রজ্ঞা নিরবিচ্ছিন্ন অনুশীলনে উন্নত সোপানের বা প্রগতির কুঞ্চিকা খোঁজা। 

বুদ্ধের এই কল্যাণধর্মের আর এক‌টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা হলো মৈত্রীর বাতাবরণে সকলকে সিক্ত করা। এক কথায় বলতে হয় আত্মকল্যাণ ও পরার্থে নিজেকে সঁপে দেওয়া। সকলের প্রতি সম্প্রীতি, সদ্ভাব ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে স্নাত হওয়া। ভিক্ষুদের দিক বিদিক ছড়িয়ে পরার আর একটি কারণ হলো ভিক্ষুসংঘের হাত ধরে প্রতিবেশী রাজ্য তথা দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করা। যেমনটি আমরা দেখতে পাই মগধ রাজ বিম্বিসার ও তক্ষশীলা রাজ পুক্করোসাতি উভয়ের মধ্যে বুদ্ধবাণী আদান প্রদানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সুসম্পর্ক তৈরী হয়েছিল। পরবর্তীতে দেখা যায় রাজা পুক্করোসাতি রাজপাট ত্যাগ করে বুদ্ধের সংঘভুক্ত হয়েছিলেন।

                  পরিশিষ্ট (১)
বৌদ্ধ নিকায়, শাস্ত্র, ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে বলতে গেলে বুদ্ধের জীবনীতে বেশ কিছু গরমিল ও অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়। তা কিন্তু বিবেকের কষ্টিপাথরে যাচাই করা একান্ত অপরিহার্য। যা পণ্ডিত বেদনীয় ও উত্তর প্রজন্মের ধ্যান ধারণায় মরিচিকার প্রলেপ মুক্ত সংশয় দূর করতে সক্ষম হবে।

এই যুক্তি বিষয়ে কালাম সূত্রে, বুদ্ধ কিছু বিষয়ে শোনা মাত্র বিশ্বাস করতে অথবা অন্ধের মত বিশ্বাস করতে বারণ করেছেন, 
সেগুলি হলো -

* জনশ্রুতি হয়ে আসছে সেগুলি গ্রহণ বা বর্জন করবেন না -"মা অনুস্সবেন"।
* পরম্পরাগত বা ঐতিহ্যগত বলে বিশ্বাস করবেন না -"মা পরম্পরায়"।
* এরূপ প্রবাদ আছে বলে বিশ্বাস করবেন না -"মা ইতিকিরায"।
* শাস্ত্রে আছে বলে বিশ্বাস করবেন না -"মা পিটকাসম্পাদনে"।
* যুক্তি ও তর্ক সিদ্ধ বলে বিশ্বাস 
করবেন না কারণ অনেক সময় অপযুক্তিও হতে পারে -"মা তক্কহেতু"।
* অনুমান বশতঃ বলে বিশ্বাস 
করবেন না -"মা নযহেতু"।
* এই কারণে এরূপ ঐ কারণে এরূপ হয় না -"মা আকার পরিবিতক্কেন"।
* নিজের মতের সঙ্গে মিল অমিল সত্য অসত্য বলে গ্রহণ করবেন না -"মা দিট্ঠি-নিজ্ঝানক্খনতিযা"।
* কোন বক্তার বাগ্মীতায় বিমুগ্ধ হয়ে কোন কিছু গ্রহণ করবেন না -"মা ভব্বরূপতায"।
* কোন গুরুজন বা ধর্মগুরুর প্রতি শ্রদ্ধাসম্পন্ন হয়ে কোন কিছু বিশ্বাস 
করবেন না -"মা সমণো ন গরূতি"। 

এর থেকেই বোঝা যায় বুদ্ধ কেমন প্রগতিশীল ছিলেন এবং ব্যক্তি ও বাক্ স্বাধীনতায় কতটা উদারনীতি অবলম্বন করতেন। 

আমাদের হাতের কাছে যে বুদ্ধ জীবনী উপলব্ধ হয় তা বুদ্ধের পরিনির্বাণের পাঁচশত বছর পর রচিত হয়। সেই রচনার কৃতিত্বও কিন্তু "সর্বাস্তিবাদ" সম্প্রদায়ের প্রাপ্য। কেননা বুদ্ধ জীবনী রচনার ধারাবাহিকতায় ইতিহাস তথা কালের প্রেক্ষিতে যে পাঁচটি বুদ্ধ জীবনী পাই তা বিভিন্ন পরম্পরার ঐতিহ্যমণ্ডিত জীবনী গ্রন্হ। যা সিদ্ধার্থ গৌতম তথা বুদ্ধ জীবনীর আধার। 

এসব জীবন চরিতের মধ্যে, দ্বিতীয় শতাব্দীতে অশ্বঘোষ বিরচিত "বুদ্ধচরিত" ২৮ সর্গে মহাকাব্যটি বুদ্ধের প্রথম জীবনী গ্রন্হ। 

তৃতীয় শতাব্দীতে "সর্বাস্তিবাদী" নিকায়ের দ্বারা রচিত "ললিতবিস্তর" বুদ্ধের দ্বিতীয় জীবনী গ্রন্থ। 

চতুর্থ শতাব্দীতে "মহাসাংঘিক লোকোত্তরবাদ" নিকায় ঐতিহ্যের "মহাবস্তু" নামক অপর একটি জীবনী গ্রন্থ উপল‌দ্ধ হয়।

তৃতীয় হতে ষষ্ঠ শতাব্দীতে ধাপে ধাপে "ধর্মগুপ্তক" নিকায় ঐতিহ্যের "অভিনিষ্ক্রমণ সূত্র" বুদ্ধের অপর এক‌টি সুবিশাল জীবনী গ্রন্হ। 

পঞ্চম শতাব্দীতে আচার্য বুদ্ধঘোষ বিরচিত "থেরবাদ" নিকায় ঐতিহ্যের "নিদানকথা" সর্বশেষ জীবনী গ্রন্থ। যেটি প্রায় বুদ্ধের পরিনির্বাণের এক হাজার বছর পর রচিত।

আমাদের এটা ভুলে গেলে চলবে না তিনি ছিলেন রক্ত মাংসে গড়া একজন পরিপূর্ণ ও আধুনিক মানুষ।  তাঁর প্রতিটি কথায়, কর্মে ও চিন্তা চেতনায় চির সমুজ্জ্বল। 

বৌদ্ধ সাহিত্যের অংশ বিশেষ জাতক, মহাপদান সুত্ত, আচরিয়ভূত সুত্ত, অরিযপরিযেসনা সুত্ত, পব্বজ্জা সুত্ত ইত্যাদি গ্রন্থে বুদ্ধের কিছু অংশ বিশেষ পাওয়া গেলেও পূর্ণাঙ্গ জীবনী পিটক সাহিত্যে কোথাও উপল‌দ্ধ নয়। বিভিন্ন সময়ে উপলব্ধ ও ঐতিহ্যপূর্ণ জীবনীগ্রন্থে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অলৌকিক বা মিথ ও অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়েছে।    

বর্তমান সময়েও যদি আমরা লক্ষ করি দেখব যে কোন মানুষের ক্ষেত্রে সহজেই মিথ কাহিনী জুড়ে দেয় জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে। ঠিক তদ্রুপ  "ললিতবিস্তর ও মহাবস্তু" প্রভৃতি গ্রন্থে বুদ্ধকে লোকোত্তর বা দেবাতিদেব কিংবা সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রের সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে, যেন তাঁর অবস্থান পার্থিব জগতের থেকে উর্দ্ধে।

এসব কল্পকাহিনী থাকা সত্ত্বেও উল্লেখিত গ্রন্থগুলি থেকে অতিপ্রাকৃত কাহিনীগুলিকে বাদ দিয়ে এবং ত্রুটিমুক্ত করে সাধারণ ও যৌক্তিক বিবরণগুলিকে সংগ্রহ করে বুদ্ধ জীবনের পরিশীলিত বিভিন্ন দিক আলোকপাত করা একান্ত বাঞ্চনীয়। 

অলৌকিক কল্পকাহিনী মধ্যে থেকে খুব অল্পসংখ্যক তথ্য ও ইতিহাস নির্ভর হলেও বুদ্ধের ঐতিহাসিকতা নিয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না।

                পরিশিষ্ট (২)
আমরা থেরবাদ বৌদ্ধরা বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলির বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একটা বিশ্বাস বুদ্ধ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে মাতৃদেবীকে অভিধর্ম দেশনা করার জন্যে অদৃশ্য লোকে গমন করেছিলেন এবং তিন মাস পর সেখান থেকে অবতরণ করেন। 

স্বাভাবিকভাবে এখন প্রশ্ন আসে বুদ্ধ স্ববিরোধী কথা উপস্থাপন করছেন। যেমন আমরা পিটক সাহিত্যের সর্বত্রই দেখতে পাই ভিক্ষুসংঘ অষ্ট পুদ্গল যুক্ত পরিপূর্ণ মুক্ত ও শুদ্ধ সিদ্ধ। এবং আরো দেখতে পাই বুদ্ধের মুখনিঃসৃত বাণী শ্রবণ করার সঙ্গে সঙ্গেই অরহত্ত্ব ফলে উপনীত হন। এবং এও আমরা অবগত যে বুদ্ধ তাঁর "পঠম ধম্ম দেসনা" পঞ্চবর্গীয় ভিক্ষুদের প্রথম পরিবেশণ করেন। 

কারণ তাঁরা ধ্যানে জ্ঞানে উন্নত ও পরিপূর্ণ পরিশুদ্ধ। সেই কারণে উরুবেলা থেকে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় সারনাথ উপনীত হন। তখন কেন তিনি তাঁর প্রথম উপলব্ধ জ্ঞানের আলোকসম্পাত মাতৃদেবীকে দেশনা করেন নি। কেন তিনি পঞ্চবর্গীয় অনুগামিবৃন্দদের চয়ন করলেন। 

সোতাপত্তি, সকদাগামী, অনাগামী, অরহৎ গণ যদি ধ্যানে জ্ঞানে উন্নত হন এবং অদৃশ্য সত্ত্বা যদি তাঁদের পূজা সৎকার বন্দনা করেন, তাঁরা যদি বুদ্ধের বাণী শ্রবণ করা মাত্রই দুঃখের অন্তসাধন করতে পারেন, তাহলে বুদ্ধ তাঁর ভিক্ষুদের অভিধর্ম দেশনা না করে অ্যাননোন বা অদৃশ্য স্থানে কেন গমন করলেন। 

বৌদ্ধ সাহিত্যে ও পিটক সাহিত্যের এই দ্বৈততা ও স্ববিরোধী ঘটনাবলী ও কথোপকথন এগুলি বুদ্ধ পরবর্তী ভিন্ন সম্প্রদায় বুদ্ধ তথা বৌদ্ধধর্মের বিকৃতির সুস্পষ্ট প্রমাণ। 

থেরবাদ সাহিত্য তথা পিটক সাহিত্যে কোথাও বুদ্ধ বলেন নি যে তিনি মাতৃদেবীকে মুক্ত করার জন্যে সশরীরে অদৃশ্য স্থানে আরোহণ করেছিলেন। এসব বুদ্ধ পরবর্তী পিটক বহির্ভূত কল্পিত ঘটনা মাত্র। এই কল্পকাহিনীর মধ্যে ইঙ্গিত সূক্ষ্মভাবে রেখে গেছেন, তা হলো  বুদ্ধ ও তাঁর প্রবর্তিত ভিক্ষুসংঘের গুরুত্ব খাটো করা জন্য, নচেৎ বুদ্ধকে অতিমাত্রায় দেবতাতিদেব বানানো  অথবা তাঁর প্রতি অতি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছেন কিংবা বুদ্ধকে অকৃতজ্ঞ হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন যে নিজের জন্মধাত্রী মাকে ভুলেই গেছেন, কিংবা এখানে তাঁকে স্বার্থপর হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন, কিংবা বুদ্ধ মাতৃদেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ পোষণ করেছেন এসব সুপ্ত ও  সূক্ষ্ম অভিব্যক্তির ছোঁয়া ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।

                  পরিশিষ্ট (৩)
বুদ্ধ এমন এক পরিপূর্ণ ও পরিশীলিত আধুনিক মানুষ ছিলেন যে, বর্গীর আক্রমণ দেখিয়ে ঘুম পাড়ানি গান শোনান নি, কিংবা ললিপপ চুষিয়ে কান্না থামান নি, অদৃশ্য দুর্গতির ভয়ও দেখায় নি আবার অদৃশ্য সুযোগ সুবিধাও দেখায় নি। এখানে বুদ্ধের সঙ্গে অন্যান্য তথাকথিত প্রেরিত ব্যক্তিবর্গের ফারাক। "অত্ত-দীপ বিহরথ, অত্ত-সরণ ন অঞ্ঞসরণ, ধম্ম-দীপ বিহরথ, ধম্ম-সরণ, ন অঞ্ঞ-সরণ"। কিংবা মহাপরিনির্বাণ সূত্রের স্বগতোক্তি "তুম্হে কিচ্ছং আতপ্পং অক্খতরো তথাগতো"। এখানে বুদ্ধ তাঁর সরণও নিতে বলেন নি। "কম্মদাযাদ ও কম্মপটিসরণা" করতে বুদ্ধ সদা উদ্ধুদ্ধ করেছেন। দসধম্ম সুত্তে ধ্বনিত আত্মনিয়ন্ত্রন, কর্ম যদি উত্তরাধিকারী হয় এবং কর্ম যদি প্রতিসরণ হয় তাহলে কেউ কাউকে পরিত্রাণ দিতে পারে না বা কোথাও গমনোপযোগী হতে পারে না।

মাতা পিতার প্রতি কতঞ্ঞুতা হয়ে মঙ্গল সুত্তের মাতাপিতু উপট্ঠানং এর মর্মার্থের যথোপযুক্ত প্রয়োগ ও প্রতিফলন ঘটাতে হবে, তবেই হবে মাতাপিতার প্রতি যথার্থ কৃতজ্ঞতা ও ঋণ মুক্ত হওয়া যায়। 

পরিশেষে বলা যায় দুঃখের অনল শিখা নির্বাপন করে সেই ভষ্মের উপরে শান্তির ঠিকানা নির্মাণ করাই বুদ্ধ জীবন পন্হা। সেই শান্তির ঠিকানা সবার জন্য উম্মুক্ত। কারো করুণা নির্ভর করে সেখানে পারি জমাতে হয় না। আপন চেষ্টায় স্বকীয় বলে উত্তরণ ঘটানো যায়। জটিল জীবন যন্ত্রনার গ্রন্হি থেকে বেরুনোর পথই বুদ্ধ পন্হা। এককথায় তাঁর পথ মুক্তবুদ্ধির পথ, স্বাধীন চিন্তার ও মননশীলতার পথ।
Posted by Sumanapal Bhikkhu at 9:22 AM No comments:
Newer Posts Older Posts Home
Subscribe to: Posts (Atom)