দান সংস্কৃত ও পালি শব্দ যা ভারতীয় দর্শনগুলিতে উদারতা, দান বা ভিক্ষা দেওয়ার গুণকে বোঝায়। দান হল উদারতা গড়ে তোলার অভ্যাস। এটি কষ্ট বা প্রয়োজনে একজন ব্যক্তিকে দান করার রূপ নিতে পারে।
বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ৫.২.৩ পদে উল্লেখ করেছে যে, একজন ভাল, উন্নত ব্যক্তির তিনটি বৈশিষ্ট্য হল আত্মসংযম, সমস্ত সংবেদনশীল জীবনের প্রতি সহানুভূতি বা ভালবাসা এবং দান। তিনটি প্রধান গুণাবলী শিখুন -আত্মসংযম, দান এবং সমস্ত জীবনের জন্য করুণা। तदेतत्त्रयँ शिक्षेद् दमं दानं दयामिति—বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ৫.২.৩,। সামাজিক জীবনের প্রকৃতির কথা উল্লেখ করে, যে দান একটি ভাল কর্মের একটি রূপ যা ভবিষ্যতের পরিস্থিতি এবং পরিবেশকে প্রভাবিত করে। শুয়ান জ্যাং, ভারতে চীনা তীর্থযাত্রী, তার সপ্তম শতাব্দীর খ্রিস্টীয় স্মৃতিচারণে অনেক "পুণ্য-সালাস" (মঙ্গল, যোগ্যতা, দানের ঘর) বর্ণনা করেছেন।
বৌদ্ধ চিন্তাধারায়, দান প্রদানকারীর মনকে পরিশুদ্ধ ও রূপান্তরিত করার প্রভাব রয়েছে। দান করার মাধ্যমে উদারতা বিকশিত হয় বস্তুগত সম্পদের অভিজ্ঞতা এবং সম্ভবত সুখী অবস্থা লাভ করে। পালি মূলে দীঘাজানু সূত্রে, উদারতা (সেখানে পালি শব্দ চাগ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে, যা দানের সমার্থক হতে পারে) চারটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দান একটি পারমিতা বা "পারফেকশন" এর দিকে নিয়ে যায়, দানপারমিতা। এটি অননুমোদিত এবং নিঃশর্ত উদারতা।দান, বা উদারতা, উভয় বস্তুগত উপায়ে দেওয়া যেতে পারে। আধ্যাত্মিক দান- বা মহৎ শিক্ষার উপহার, যা ধম্ম-দান নামে পরিচিত, বুদ্ধ অন্য সব উপহারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
দীযতী’তি দানং ' যা দেওয়া হয় তা হচ্ছে দান। দানের সাথে স্বত্ব ও স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে না। তা ছাড়া দান হচ্ছে সৎ চেতনা প্রসূত। অতএব অন্তরে দান চেতনা জাগ্রত রাখতে হয়। মানবজীবনে দানের গুরুত্ব অপরিসীম। দানের দ্বারা মানুষের চিত্ত উদার হয় ত্যাগ শক্তি বৃদ্ধি পায়। দানের মাধ্যমে দুস্থ অসহায়দের প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব সৃষ্টি হয়। মনের মধ্যে কুশল চেতনা উৎপন্ন করে দান দেওয়া উচিৎ। এ কুশল চেতনা উৎপন্ন করাই চিত্তসম্পত্তি। এ সম্পর্কে বুদ্ধ বলেছেন, ‘চেতনাহং ভিক্খবে কম্মং বদামি’। অর্থাৎ (হে ভিক্ষুগণ) ‘চেতনা থেকে উৎপন্ন সৎ কাজই হল কর্ম।
সমগ্র প্রাণী তথা মানব কল্যাণার্থে আদিতে - কল্যাণযুক্ত ধর্ম বলতে (দান) ওয়েলফেয়ার ইকোনমি অর্থাৎ কল্যাণযুক্ত অর্থনীতি। অঙ্গুত্তর নিকায়ের বালাম সুত্তে দানের ক্ষেত্র এবং দানের তারতম্য তথা উন্নত ক্ষেত্রে দান দিতে উদ্বুদ্ধ করছেন, এই কথার তাৎপর্য উপলব্ধি করলেই জানা যায় দানের সুষম বন্টনের প্রয়োজনীয়তা। সে সময়ের আর্থসামাজিক কথা বিবেচনা করে বুদ্ধ এই বিজ্ঞপ্তি দিকে দিকে বিঘোষিত করিয়েছিলেন।
ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর খ্যাতনামা গ্রাম। প্রয়াত বেনীমাধব বড়ুয়াকে স্মরণাঞ্জলী দেওয়ার মানসে তাঁর সহধর্মিনী ও তাঁর সন্তান গণের পিতৃ পূজার আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই। মাননীয় সংঘরাজ শাসনশোভন জ্ঞানভানক ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির ও আঞ্চলিক সংঘ প্রধান সুগতশ্রী মহাস্থবির, ভদন্ত শান্তরক্ষিত মহাস্থবির, ভদন্ত এল ধর্মরত্ন মহাস্থবির, ভদন্ত বিনয়শ্রী স্থবির, ভদন্ত জ্যোতির্ময় ভিক্ষু, প্রমুখ যাঁরা শুভেচ্ছা বাণী দিয়ে সংঘদান স্মারককে সৌষ্ঠব বৃদ্ধি করেছেন। এবং নিপুন বড়ুয়ার "দান, দাতা, পুদ্গলিক দান, সঙ্ঘদান ও দানফলের তারতম্য" প্রবন্ধটি উপাদেয়। কৃশকায় হলেও স্মারকটি অন্যমাত্রায় গুরুত্ববহন করে। প্রকাশক সঞ্জীব কুমার বড়ুয়া উপযুক্ত কর্ম সম্পাদন করেছেন। তাঁর প্রতি অকৃত্রিম মেত্তা জ্ঞাপন করে, দুটো কথার ইতি টানলাম। অলং ইতি বিত্থারেণ।
সুমনপাল ভিক্ষু
No comments:
Post a Comment