ভারতকেশরী গৌতম তথাগত
ভিক্খু
জন্মেছিলেন সিদ্ধার্থ গৌতম,
মানব শিশু যেভাবে জন্মায়,
উপলব্ধি করলেন সমাজ জীবন পর্যুদস্ত,
মিথ্যার চোখ রাঙানি,
মানবচিত্ত শৃঙ্খলিত।
মানবচিত্তে মুক্তি আনার দুর্বার আকাঙ্ক্ষায় গতিমান।
অবশেষে সত্যকে খোঁজ,
পেলেন দুঃখের কুঞ্চিকা।
আলোকিত সত্যকে আপন সত্ত্বায় ধারণ করলেন।
আবির্ভূত হলেন তথাগত রূপে।
তাঁর আবাস হলো বোধি ভূমি আর বোধি আকাশ।
আবিষ্কৃত কুঞ্চিকা পীড়িত মানুষের হাতে তুলে দিলেন, চত্তারি অরিযসচ্চানি-
আছে দুঃখ,
আছে দুঃখের কারণ,
পরিত্রাণ পাওয়া যাবে দুঃখ থেকে,
দুঃখ থেকে উত্তরণের উপায়ও আছে।
অতঃপর মানুষ দুঃখ লাঘবের অভীষ্টে।
উচ্চারণ করলেন জগতের তাবৎ ধর্মগ্রন্থগুলোর 'অনাবশ্যকতা'।
ঈশ্বর-মানব সম্পর্কের বিরামচিহ্ন একেঁ দিলেন,
মানবিক শক্তিতে ঈশ্বরকে করলেন নিষ্ক্রিয়।
ঈশ্বরের পদতল থেকে জেগে উঠার ছড়ি তুলে দিলেন মানুষের করে।
মুক্ত বায়ুর স্বাদ দিলেন শ্রেণী নির্বিশেষে।
শেখালেন আত্মনিয়ন্ত্রণের পথ।
হল কর্মমুখরিত জগৎ-সংসার।
নিশ্চিহ্ন করলেন ব্যক্তিকেন্দ্রিক গুরুবাদ।
দীক্ষা গ্রহণ হলো 'অন্ধত্বে সমর্পণ'।
বললেন প্রশ্নহীনতা যেন এক 'মানবিক দায়িত্বের বরখেলাপ'।
আপামর জনগণ আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান হলো।
ব্রাহ্মণকে এক বাহুতে,
অন্য বাহুতে করলেন শূদ্রকে আলিঙ্গন।
কুলবধূকে আশীর্বাদে যেই উচ্চারণ,
সেই মুখেই একজন পুরসুন্দরীকেও বরাভয়।
যে বাক্যে সমাজপতিকে আহ্বান,
অস্পৃশ্যকেও সেই বাক্যের দ্যোতনা।
আজন্ম লব্ধ সুবিধাবাদ শূলে চড়ালেন,
জাগরিত করলেন সাম্যবাদ।
গণশিক্ষার অঙ্কুরোদগমে সুশৃঙ্খল,
পরিচ্ছন্ন এবং ধর্মনিরপেক্ষ
মহাবিহার শিক্ষায়তণ।
মুক্ত শিক্ষা সংস্কৃতি বিঘোষিত দিগ্বিদিক।
বিদ্যার্থী আর পরিব্রাজক জ্ঞান আহরণে বিপদসংকুল পথ মাড়িয়ে মহাবিহারের শরণাপন্ন।
তাঁর দর্শনে অনুরক্ত, হেলেনেস্টিক বুদ্ধিবৃত্তিক তাবর দর্শনবেত্তা।
তাঁর জনকল্যাণকামী দর্শন আর সাম্যবাদ,
সিল্ক রুটের পথ বেয়ে পৌঁছে,
পশ্চিমে আলেকজান্দ্রিয়া, ম্যাসিডোনিয়া, গ্রীস, সিরিয়া হেলেনেস্টিক বিশ্বের সুসভ্য জনপদে;
বিকশিত দূরপ্রাচ্যের প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে।
তাঁর মানবিক বোধশক্তি জাগরণের সূচনাকাল,
অ্যাক্সিয়াল যুগের মাহেন্দ্রক্ষণে।
গ্রীসিয় সাম্যবাদ, পারস্যের জরথুস্ট্রবাদ, ব্যাবিলনের হেরাক্লিতাসবাদ,
চৈনিক কুনফুসিয়বাদ ও তাওবাদ জনকল্যাণকামী সমাজব্যবস্থায় কলরবমূখর।
বেদ-বেদাঙ্গ-উপনিষদের কুয়াশাচ্ছন্ন আর অতিপ্রাকৃত চক্রের পাঁকে,
বনবাসী মুনি-ঋষি।
বৈপ্লবিক আদর্শের অভিঘাত;
অসার চক্রটিতে বুদ্ধের চরম আঘাত।
অভ্রভেদী উচ্চতার ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, জনকল্যাণ আর যুক্তিবাদী দর্শন,
বিশ্বের চলমান সভ্যতার মহান অ্যাক্সিয়াল আন্দোলনকে,
উচ্চতর শিখরে পৌঁছে দিলেন বুদ্ধ গৌতম।
ভারতবর্ষও হলো অ্যাক্সিয়াল জ্যোতির দ্যোতি।
মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে উন্নীত করালেন,
বিশ্বসভ্যতার উজ্জ্বলতম 'অ্যাক্সিয়াল জ্যোতির' গৌরবোজ্জ্বল আসনে।
সুমহান কর্মযজ্ঞের উদ্ঘাতা,
ভারতকেশরী বুদ্ধ মানবপুত্র গৌতম।
No comments:
Post a Comment