সুমনপাল ভিক্ষু
"ন তেন হোতি ধম্মট্ঠ য়েনত্থং সহসা নয়ে।
য়ো চ অত্থং অনত্থং চ উভো নিচ্ছেয্য পণ্ডিতো ।।
আসহস্সে ধম্মেন সমেন নয়তো পরে।
ধম্মস্স গুত্তো মেধাবী ধম্মট্ঠো তি পবুচ্চতি।।
রীতা বড়ুয়া'র "আত্মজা" (এক অনুরণন - এক অনুধ্যান), এক বিরাট জিজ্ঞাসা হতে পারে আবার নাও হতে পারে। কারণ তার মনে কখনও কখনও দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা উঁকি ঝুঁকি দিয়ে গেলেও তাদের স্হায়ী আসন সেখানে নেই। কেননা তার মনন স্বপ্ন কিম্বা চিন্তার কোলাজ গুলি বারংবার ইচ্ছাশক্তি দাবী করেছে। আর তাই স্বপ্নের হাতে নিজেকে সমর্পণ করে তিনি মহাপৃথিবীর জীবনের গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে চান -
"...... নিজের ক্রোড়ে।
তোমার শীতল শরীর
আগুনের উত্তাপে উত্তপ্ত হয়ে
জীবনের সমস্ত রাগ দ্বেষ হিংসাকে করেছ ধ্বংস।"
স্বপ্ন জীবনের এক অপূর্ব সম্পদ। তাকে বলতে বা ভাবতে একটুও দ্বিধা হয় না তার। শেলীর রোমান্টিসিজমের জন্ম যে কারণে : " আই ফ্যল্ আপন দ্য থ্রনস্ অফ্ লসইফ!" - সেই একই কারণে হয়তো রীতা বড়ুয়া কখনও কবি আবার এক লহময় তিনি তার কবিসত্ত্বাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মনে হয় তিনি বলতে চেয়েছেন জীবনানন্দের ভাষায় -
ভুলে যাও পৃথিবীর ঐ ব্যাথা -ব্যাঘাত -বাস্তব!
সকল সময়
স্বপ্ন - শুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
যাদের অন্তরে
আর এই শব্দ যুদ্ধের মধ্যেই ভূমিষ্ট হল তার 'আত্মজা'। মগজের কাজকে বাতিল করে দিয়ে নিরুত্তেজ অবসর উপভোগের আকাঙ্খা..... তা তো অবসরের গানেই পাওয়া যায়। কিন্তু মগজকে নির্বাসনে পাঠালে বিশ্বাসের যে একটা সুসংবাদ দৃঢ় ভিত্তি গড়তে হয় সেখানে রীতা বড়ুয়া তা করতে পারেন নি। কেননা সে চেষ্টাও তিনি করেন নি। মনে হয় তিনি হয়তো ইয়েটস্ এর মতো অতীত জগতে আর স্বপ্নের বস্তুতে শব্দ বোধের সৌন্দর্য খুঁজে পেয়েছেন কিম্বা তাতে সচেষ্ট হয়েছেন, কে বা বলতে পারে। হয়তো এমন একটি জগতের জন্যে আকাঙ্খা তার ব্যক্ত হয়েছে যখানে হৃদয়ের ইচ্ছা আর অনুভূতির ও কল্পনার ব্যবচ্ছেদ তৃপ্তি পেতে পারে!
" হে তথাগত,
কবে আসবে সেই মুহূর্ত
মাতৃকোল আলোকিত করে.... স্নাত করবে অশান্ত।"
এ-যুগে জীবনকে সহজভাবে গ্রহণ করবার আবেগ নিয়ে যারা জন্মগ্রহণ করে, জীবনের জটিলতার সংঘাতে 'বিশ্বাস' তাদের বিধ্বস্ত হতে বাধ্য। " সি বিড্ মি টেক্ লাইফ ইজি অ্যাজ দ্য গ্রাস গ্রোজ অন দ্য ওয়ারস্"- এখানে হয়তো অনেকে বলবেন বা বলতে বাধ্য হবেন, এ হল জীবন থেকে এক প্রকার পলায়ন। কিন্তু 'আত্মজা'র প্রশ্নে উত্তর হবে -' বাইরের জীবন থেকে এ হচ্ছে সত্যিকারের জীবনের মধ্যে পলায়ন।'
বাস্তবিক অর্থে একথা তার পক্ষে বলা স্বাভাবিক, কেননা তিনি অসংলগ্নতার পঙ্কে অবগাহন করেন নি, একটি স্বসম্পূর্ণ করে নিয়েছেন আবেগের তাড়নায় তা দৃশ্যের বিষয়ীভূত নয়, উপলব্ধির বিষয়ীভূত। স্বচেতন আবেগে তৈরী এই উপলব্ধি, ফলে তা দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের শিল্পভঙ্গী নির্মিত হতেই পারে।
" জাতিস্মর নই, তবু মনে হয়
ছিলাম, আমি নিশ্চয়ই ছিলাম
তথাগতের.....সাম্রাজ্য বিস্তার কালে।"
এ তার এক সম্পূর্ণ নতুন জগতে অভিযান। অথবা বলা যায়, সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টি নিয়ে এবার তার অভিযান। এখন আর চোখ তার স্বপ্ন মেদুর নয়, জিজ্ঞাসায় তা প্রখর। আর এই ব্যাখ্যা নিয়ে, গরিমার স্মৃতি নিয়ে তিনি যদি জীবনের সত্যিকারের সার্থকতা খুঁজতে চান তবে তিনি যুক্তির হাতে জীবনের নাগাল পাবেন অথবা নাও পেতে পারেন। কারণ তিনি এক্ষেত্রে অনুভূতির জগৎকে ভেঙে দিয়ে শক্তি, ইচ্ছাশক্তি ও ভাবাবেগকে গ্রহণ করেছেন। বুদ্ধেরও এই বোধ ও বিচার ছিল কিন্তু বুদ্ধ কি কবি?
"সেলে যথা পব্বত মুদ্ধনিট্ঠিতো যথাপি পস্সে সমন্ততো।
তথূপমং ধম্মময়ং সুমেধ পাসাদমারুম্হ সৃন্তচক্খু।
সোকাবতিন্নং অপেতসোকো অবেক্খস্সু জাতিজরাভিভূতং।" মজ্ঝিম নিকায়, ১.২।৮।।
No comments:
Post a Comment