শুভাশিস বড়ুয়া
‘জাতকে’ – পালি
“ত্রিপিটকে’র” সুত্ত পিটকের অন্তর্গত ‘ক্ষুদ্দকনিকায়ের’ দশম গ্রন্থ। ‘জাতক’- মূলত
একটি কথাসাহিত্য। এতে বৌদ্ধ পরম্পরানুসারে বুদ্ধের পূর্ব জন্মের ঘটনাবলী আলোচিত
হয়েছে। জাতক মূলত গাথায় রচিত। পরবর্তীকালে এই জাতক গদ্যাকারে রচিত হয়েছে। যে কোন
সাহিত্য উদ্দেশ্যহীন ভাবে রচিত হয় না এবং সাহিত্য রচনার সেই প্রচেষ্টাও কখনোই
ব্যর্থ হয় না। এই সাহিত্য সৃষ্টির পশ্চাতে যেমন সেই যুগের প্রক্ষাপট এক মহান ভূমিকা
রূপে কাজ করে; তেমনি অন্যদিকে সাহিত্যিক তথা লেখকদের সমাজের প্রতি যে কর্তব্য তারও
প্রকাশ ঘটে এই সাহিত্য রচনারই মধ্য দিয়ে।
সাহিত্যের ভিত্তি ভূমি
মূলত জীবনের পটভূমিকায় তৈরী হয়। সাহিত্য যেহেতু সমাজের দর্পণ, সেহেতু সাহিত্যিক
যখন সাহিত্য রচনায় ব্রতী হন তখন তিনি তাঁর জীবন অভিজ্ঞতার সাথে সমাজ-জীবনের
চিত্রকে মিশিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করেন। অতএব সাহিত্যকে মর্মস্পর্শি হতে গেলে যা
অপরিহার্য তা হল মানুষ এবং সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা; তাঁর সামাজিক চেতনার
প্রখরতা, এবং বহমান সমাজের প্রতি সে উন্মুখ সমাজের জন্যই সে সমর্পিত। জাতকের
জীবনস্পর্শি স্বরূপকে উদ্ঘাটিত করার উদ্দেশ্য সামাজিক চেতনার প্রখরতা সকলের সামনে
উন্মোচন করা।
উপরে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে
কোন মহান সাহিত্যের সৃজন উদ্দেশ্য বিহীন হয় না। জাতকের রচনাও উদ্দেশ্য বিহীন নয়;
বরং ঐ রচনার পটভূমিতে সমাজের প্রতি এক মহান দায়িত্ব ও ভাবনার প্রভাব রয়েছে। সে
ভাবনার দুটি মূল উদ্দেশ্য হল- এক. সেই সময়কার মানবীয় এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলাকে মানব
সমাজে সুপরিচিত করানো। এই বিশৃঙ্খলা থেকে সচেতন করা। দুই. তথাগত বুদ্ধের বুদ্ধত্ব
প্রাপ্তির পূর্বে তাঁর পূর্ব জন্মের বৃত্তান্ত এবং তাঁর মুখনিঃসৃত বাণীর দ্বারা
মানবজীবন ও সমাজের কার্যনীতি নির্ধারণ করা। এই সমস্ত কার্যাবলী সম্পাদন করার জন্য
মানুষকে সামাজিক ভাবে উৎসাহিত করা।
জাতক চেতনার মূলকেন্দ্রঃ
মানব এবং সমাজঃ-
জাতকের রচনা কবে হয়েছিল
তা নিয়ে বিদ্বৎজনদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। কিন্তু এর চেতনার মূলে যে সমাজ তা
খ্রীষ্ট পূর্ব পঞ্চম বা ষষ্ঠম শতাব্দীকালীন সমাজ২, সেই সমাজ নিজের
বিচার বুদ্ধির বিবৃতির কারণে মৌখিক ভাষায় আকন্ঠ ডুবে থাকতো এবং আত্ম-বিস্মৃত হওয়ার
জন্য তার থেকে বেরিয়ে আসার কোন পথ দেখতো না। বস্তুত লালসা এবং ভোগবাদের পর্দা দিয়ে
নিজেদের চোখ বাঁধা থাকতো। যেমন অন্ধ মানুষ বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য অন্যের উপর নির্ভর
করে থাকে, তেমনি এরা আরও পাপের গহ্বরে নিমজ্জিত হয়ে যেত; ‘নিশ্চয়ত’- জাতক কথায় বলা
হয়েছে যে, মানুষের এই চিত্র রচনা কোন রচনাকারীর কল্পনা প্রসূত নয়, বরং এর পশ্চাতে
তৎকালীন সমাজেরও প্রভাব রয়েছে। পরিস্থিতির প্রভাব সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ভাবে আলোচনা
করা হয়েছে। মানুষের বিবৃতি ও সমাজ বিশৃঙ্খলাকেই এ গ্রন্থ গভীর ভাবে ভাবায়।
জাতক গ্রন্থে তৎকালীন
সমাজের ... পরিস্থিতির চিত্র পাওয়া যায়। বস্তুত পাশ্চাত্যকালীন সমাজের মানুষের
পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয় ছিল। সতন্ত্রতা, মানবিকতা, ভয়, মানুষের প্রতি মানুষের
অবিশ্বাস এবং ঈর্ষা ও সংঘর্ষের বীজ এই বিকল্পনীয় চেতনার মধ্যে মানুষ আবদ্ধ থাকতো।
ফল স্বরূপ নিজের অস্তিত্বকে বিস্মৃত হয়ে সুস্থ ভাবে বাঁচার পরিবর্তে যুদ্ধ, কলহ, ও
সন্ত্রাসের জীবন বেছে নিয়েছিল। সেখানে স্বার্থ, লিপ্সা ও বিশ্বাসঘাতকতা এত বেশী
জটিলতা সৃষ্টি করেছিল যে চারিত্রিক পরিস্থিতির দৃষ্টিকোন থেকে এ দশা পশুদের থেকেও
ঘৃণ্যতম হয়ে পড়েছিল। “সচ্চকির জাতক”৩- বিশ্বাসঘাতক রাজকুমার এই সমস্ত
মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করতো। যে ঘোর বিপত্তির সময় সামনে উপস্থিত নিজের উপকারী
তপস্বীকেও নিজের ইছার আগুনে দগ্ধ করতেও পিছুপা হত না। যখন ঐ বিপদের সময় সঙ্গে থাকা
অন্যান্য প্রহরীরাও নিজেদের উপকারীর উপকার শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতো। ফল সরূপ
মানুষের ইচ্ছায় উপকারী তপস্বীর দ্বারা এই সত্য ঘোষিত হয়েছিল যে –
“সচ্চং কিরেক্মাহংসু নরা একচ্চিয়া ইধ।
কটঠং বিপ্লবিতং সেয়্য়ো নত্ববেকোচ্চিয়েন
নরো”।।
গরহিত জাতক এই সমস্ত
মানুষের কলহ ও সংগ্রাম পূর্ণ জীবনের স্বার্থক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে বাঁদেরর
মুখে বর্ণনাকরে জাতক রচনা-সার মানব জীবনকে পশুর চেয়েও হীনরূপে দেখিয়ে তার
যথার্থরূপ প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন।৪ জাতকে যেখানে মানব জীবন
ঈশ্বর বা প্রকৃতির দান বলে বর্ণনা করা হয়নি বরং মানুষই সর্বেসর্বা। সমাজের রচনা
স্বয়ং মানুষের দ্বারাই হয়। তৎকালীন সমাজের অধীন মানুষ স্বয়ং নিজের দ্বারা এই
সামাজিক ও আর্থিক ও ধর্মীয় বিড়ম্বনার সৃষ্টি করেছিল। যেখানে স্বয়ং আপন সৃষ্টি
কর্তাকে নিজের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি করে ফেলেছে। জাতক কথাকে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ
করলে জানা যায় যে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা অত্যন্ত বিস্ফোরক ছিল। এই বিশৃঙ্খল অবস্থা
সমাজের সর্বত্র ব্যপ্ত হয়েছিল। সমাজে জাতপাত ও বর্ণ বিদ্বেষ যত বাড়ছিল; মানবতা বোধ
ততই ক্ষুন্ন হচ্ছিল। রাজতন্ত্রের কালো ছায়ায় সমস্ত সমাজ আচ্ছাদিত ছিল। রাজনৈতিক,
আর্থিক উৎপীড়ন ও তার সঙ্গে আত্মমর্যাদা বোধের প্রভাবের বীজ সামান্য মানুষ রূপে হীন
ভাবনায় বেঁচে ছিল। ধর্মের নামে নিরর্থক কর্মকান্ড, নৈতিকতার নামে মূর্খতা এবং
বিশ্বাসের প্রচলন তথা সুসংগত সামাজিক বিধানের স্থান বর্জন ও নিয়ন্ত্রণ জাতক কালীন
সমাজের ত্রাস ছিল। লোকের চিন্তন-চেতনা-ভাবনা এতটাই বিকার গ্রস্থ এবং দূষিত হয়ে
গিয়েছিল যে তাদের ভিতরে বিচার্য উদারতার স্থানে সংকীর্ণতা এবং অনুদারতা ভাব
নিজেদের মধ্যে পোষণ করত। জাতি ভেদ শ্রেণী ভেদ তথা জন্ম গ্রহণের উপরেও
স্পৃশ্য-অস্পৃশ্যের দূষিত ভাবনা সমাজের একতা ভাব দ্বিখন্ডিত করে দিয়েছিল। অবশ্য
পরিণতিতে সহস্র জাতি এবং উপজাতিদের সংকীর্ণতা বোধ সমাজকে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার
দিকে অগ্রসর করেছিল। সমাজে জন্মের কারণে বর্ণের অধীন মানুষদের উপর শ্রেণী জাত
বিভাজনের প্রভাব পড়ত। যেখানে ক্ষত্রিয় কুলে জন্ম নেওয়া মানুষদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি
বলে স্বীকৃতি দেওয়া হত। ব্রাক্ষ্মণদের স্থানও অনেক উপরে ছিল। ব্রাক্ষ্মণ কুলে জন্ম
নেওয়া ব্যক্তি ব্রাক্ষ্মণের আধিপত্য বজায় রাখত অথবা রাখত না। যদি সে মূঢ় হত তবে সে
লোভের দ্বারা পরিচালিত হয়ে অথবা নিজের জীবিকার জন্য অত্যন্ত নিচ কাজ করার থেকেও
পিছুপা হতনা।৫ তখন কেবল মাত্র ব্রাক্ষ্মণ কুলে জন্ম নেওয়ার
জন্য সে বহু আদর ও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে পরিচিত হত। উল্লেখ করা যায় যে, এই বর্ণ
এবং শ্রেণী গত বিভেদ তৎকালীন সমাজে শুধুমাত্র প্রভাবিত ছিল। সমাজে শূদ্র অথবা দলিত
কুলে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের স্থান অত্যন্ত নীচে ছিল। ‘দীন জাতি’ সম্বোধনে সম্বোধিত
এই দলিত বর্গ অসীম অত্যাচার সহ্য করত, দলিতদের অত্যন্ত ঘৃনিত কাজ করতে হত। এদের না
ছিল কোন সামাজিক প্রতিষ্ঠা, না দেওয়া হত কোন সামাজিক স্বীকৃতি। উচ্চ বর্ণিয়
জাতিদের এদের সঙ্গে খাওয়া-দেওয়া, ওঠা-বসা, স্পর্শ করা নিষিদ্ধ ছিল। সংভূত জাতক৭ তথা মাতঙ্গ জাতক৮ দলিত শূদ্র এবং চন্ডালদের
শোচনীয়, মর্মস্পর্শী চিত্র বর্ণিত হয়েছে। পুনরায় সমাজে প্রতিষ্ঠা নিয়ে বর্ণের
মধ্যে কেবল শ্রেষ্ঠ এবং হীন এই ভেদ ছিল না বরং পুরুষ এবং নারীর ভেদাভেদ অত্যন্ত
প্রবল ছিল। জাতক কথায় সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করলে তৎকালীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কথা
আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়। যেখানে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য নারীদের
সব সময় হেয়্য দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতা ছিল। এই সমাজে নারীকে শারীরিক ভোগ এবং সাময়িক
উপভোগের বস্তু হিসেবে দেখা হত।৯ নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে বজায় রাখার জন্য পুরুষ
প্রধান সমাজে নারীদের বিশ্বাসঘাতক, অবিশ্বাসী এবং ধূর্ত রূপে প্রতিপন্ন করার জন্য
সবসময় চেষ্টা করত। যাদের অশান্ত মন, তর্ক এবং দুর্জন প্রবৃত্তর কথা বিভিন্ন জাতকে
পাওয়া যায়। কুণাল জাতক নারীর প্রতি পুরুষদের হেয়্য দৃষ্টির তীব্রতা প্রদর্শন
করানোর জন্য নিম্ন বর্ণিত লোক জাতির উদাহরণ পাওয়া যায়। যা থেকে স্পষ্ট রূপে
প্রতীয়মান হয় যে, জাতকে বৌদ্ধ ধর্মের আলোকে দেখা যাচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মে মানবতাবাদী
চেতনার অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। উপরের বিবেচনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে জাতক কালীন
সমাজ অঘটনের পথে সঞ্চারিত ছিল। এই পরিস্থিতিতে সক্রান্তি কালীন মূল্য বিস্ময়কতা
এবং এই সময় মানবতার সংরক্ষণ তথা এর পরম্পরা.. মূল্য স্থাপন কেবলমাত্র উপেক্ষিতই
ছিল না বরং অনিবার্য ছিল। মানুষের সতন্ত্রতা ও বিবেকপূর্ণ সহযোগিতার জ্ঞান দেওয়া
অনিবার্য ভাবে প্রকাশিত ছিল। এর থেকে স্পষ্টত বোঝা যায় যে – এই বোধ শক্তির মধ্যেই
মানব অস্তিত্বের বাস্তবতা নিহিত ছিল। প্রসঙ্গত, স্মরণীয় সতন্ত্রতা ও বিবেকপূর্ণ
সহযোগ ঐক্যমত স্থাপনে সাহায্য করে। যে ঐক্য সৎ, যার অস্তিত্ব আছে, এই অস্তিত্বের
উদ্দেশ্য জাতক চেতনার অন্তর্গত মানব এবং সমাজের মানবতাবাদী আদর্শ নিরোপিত হয়েছে।
মানব আদর্শঃ- নিজের ও
সকলের মুক্তিঃ-
নিজের ও সকলের সমৃদ্ধি
মানুষের আদর্শ জাতকের সামাজিক চেতনার মূল উৎস। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বৌদ্ধ ধর্মের
মূল চেতনার সম্প্রসারনে জাতকে মানুষের আদর্শের প্রাপ্তিতে “ব্যক্তি নিজের এবং তার
আত্মনিষ্ঠতা”কে অতিক্রম করন কখনই স্বীকৃত হয়নি। কিন্তু এর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর
দেওয়া হয়েছে কি নিজের প্রতি সঠিক “দৃষ্টি” সংবরণ করা উচিত। আরও জানা যায় যে,
আত্মনিষ্ঠতা এক আন্তরিক অবস্থান এবং এক সচেতন আন্তরিক জীবন, যা মানুষের জীনের
ভিন্ন পরিস্থিতির উপর বিচার-বিশ্লেষণ করে তাকে বিবেচনার পথে নিয়ে যায়, সাথে সাথে
এই বিচারের আধারের উপর জীবনের নানা বিধ ক্রিয়াবিধি রূপান্তরিত করার পথও দেখায়। যা
আত্মনিষ্ঠ মানবতার ‘স্ব’ (নিজের) চিন্তন পথে নিয়ে যায়। নিশ্চয়তঃ জাতকে এই ‘স্ব’
নিজের বিষয়টি মহত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু জাতকে ‘স্ব’ বলতে কিছুই
নেই। ‘স্ব’ যখন ‘মোহ’ এর রূপ গ্রহণ করে নেয় তখন সেই পরিস্থিতে সকল মানব জাতির
প্রধান লক্ষ্য হয়ে পড়ে। এই মোহের গহ্বরে অহংকার আছে আর সেই অহংকারের ‘অস্তিত্ব’ ও
‘ব্যক্তি’র মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবধান সৃষ্টি হয়। এই অহংকারের কারণে ব্যক্তি নিজের
‘স্ব’ সব কিছু মেনে নিয়ে আপনার ‘অস্তিত্ব’কে ভুলন্ঠিত করে ফেলে। জাতকের মূল চরিত্র
বোধিসত্ত্বের আবির্ভাব মানুষের নিজের অস্তিত্বকে এই বিশালতার অভিজ্ঞান প্রদান করার
উদ্দেশ্যেই রচিত হয়েছিল। এর মাধ্যমে জাতক দ্বারা মানুষের সভ্যতার অভিজ্ঞতা প্রদান
করা হয়েছে। যে অহংকারের মোহ ক্ষণিক কাল। অহং’এর কারণে যদি কোন মোহ গ্রস্থ ব্যক্তির
চেতনা নিমজ্জিত হয় তথাপি যা সত্য তা হল এর নিরর্থকতাকে চিনে অহংকার বিসর্জন দেওয়াই
চরম সত্য, জাতক থেকে বোঝা যায় যে এই চেনার ও যা চেনা হয়ে যায় তার ‘অহং’ এর
নিরর্থকতার ‘স্ব’ বিলুপ্ত হয়, আর তখন ‘স্ব’ সমগ্র এর সাথে জুড়ে যায়। নিজের ও সকলের
সাথে যার যোগাযোগ অস্তিত্বের বিশালতার কারনেই সম্ভব হয়, এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তি
জগতের ‘নশ্বরতার’ অন্তর্নিহিত বিরাট চেতনার দর্শণ ও এর ‘নিপ্রয়াস প্রজ্ঞা’ প্রাপ্ত
হয়। জাতক দৃষ্টিতে বোধিসত্ত্ব এবং পরবর্তীকালে বুদ্ধের চেতনায় এই হল নিঃশ্রেয়স
প্রজ্ঞা।
উপরের আলোচনা হতে স্পষ্ট
হয় যে, জাতক দৃষ্টিতে ‘স্ব’ বোধ মানুষের শ্রেষ্ঠতম লক্ষণ। একে বিশৃঙ্খলিত করা যায়
না, আবশ্যকতা যদিও আছে তবু এর বিকাশ উন্নত করা একান্ত জরুরী। যে কারণে নিজের কথার
মূল নায়ক বোধিসত্ত্ব নিজের পরিকল্পনামত জাতকে মানুষের ‘স্ব’ সংরক্ষিত রাখার জন্য
এর পরমার্থ মূলক আদর্শ অনুসরণ করা হয়। বোধিসত্ত্বে সকল মানুষের প্রতি উপদেশ হল
‘ব্যক্তি সুখ’ নয় বরং ‘সামাজিক সুখ’। যেখানে সামাজিক সুখ কল্যাণময়ী অর্থের
পরিচায়ক। এর মধ্যে জাতক কথার সেবা, প্রেম, ত্যাগ, উদারতা প্রভৃতি পরার্থ মূলক
আদর্শের অনুসারী হয়। কেননা জাতক দৃষ্টিতে যে পরমার্থ মূলক আদর্শ মানবের আত্মচেতনার
উত্থানে বিশেষ সহায়ক, যার সাথে সকলের পরম একাত্মতার পথে নিয়ে যায়, যখন মানুষ
নিজেকে বিস্মৃত করে তখন এই বোধ হয় যে বর্তমানে পতিত হওয়ার চেয়ে কোথাও অধিক বিশাল
কিছু আছে। তখন তার নৈতিক চেতনার জ্ঞান প্রাপ্ত হয়। তখন আপন অস্তিত্বের মর্ম বুঝতে
পারে, স্বভাবতই তার বোধ শক্তির পরিবর্তন হয় এবং তার কামনার পরিবর্তন হয়। এবং তখন
সে কেবল মাত্র নিজের জন্য বাঁচে না বরং তখন তার জীবন সকল মানুষের মুক্তির জন্য
সমর্পিত হয়। তখন তার জীবনের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। কেননা তখন ‘সুখ’ ও ‘কল্যাণের’
সাথে এই ভেদাভেদের জ্ঞান প্রাপ্ত হয় যে কল্যাণময় জীবন সকলের প্রাপ্ত হওয়া উচিত।
সুখের সঙ্গে মানুষের তখনই সম্পর্ক স্থাপিত হয় যখন কল্যানের সঙ্গে তার সম্বন্ধ
স্থাপিত হয়। জাতক কথার মূল নায়ক বোধিসত্ত্ব এই মানব আদর্শের সাক্ষাৎ এক মূর্তি।
বোধিসত্ত্বের স্বয়ং .... হলেন যা নিজের নির্বাণ গতিকে স্থাগিত করে নেয় যতক্ষন না
মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত হতে না চায়। ততক্ষণ সকল জীবের নির্বাণের প্রতি অভিমুখ না
হয়। তার পূর্ব জ্ঞান তথা প্রজ্ঞা পাওয়ার জন্য তাঁকে অনেক জন্ম এই জন্য নিতে হয় যে
জীবের দুঃখ নিবৃত্তি পথ তৈরী করে তাদের পথ দেখায় ও লোক কল্যাণে নিয়োজিত থাকে।
সামাজিক আদর্শঃ মঙ্গল,
শান্তি, আনন্দঃ
জাতকের সামাজিক আদর্শ
সামাজিক মূল্যবোধের ‘প্রাপ্তি’ তে কেন্দ্রিভুত আছে। যা সর্বদা দ্রষ্টব্য যে
‘প্রাপ্তি’ তখনই সম্ভব হয় না যতক্ষন মানুষের স্ব-চেতনা, অহংকারের ভাবনা, স্থুল
জাগতিক বাসনা অতিক্রম করে ‘সমগ্রের’ সাথে একাত্ম হতে না পারে। যা মহত্বপূর্ণ হয় তা
হল ‘অহংকার বিহীন প্রজ্ঞা’। এই প্রজ্ঞায় স্থিত ব্যক্তির সামাজিক জীবন মঙ্গল,আনন্দ
আর শান্তিময় হয়ে যায়। নিজের সঙ্গে সমগ্রের মিলন হওয়ার পর নিজের ও সমগ্রের চেতনার
সঙ্গে সম্পূর্ণ সামাজিক মৈত্রী, করুণা ও লোকত্তর ভাবনায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর তখন
সকল সামাজিক বাতাবরণ মিত্রতায় গড়ে ওঠে। সামাজিক ব্যক্তিদের জীবন মঙ্গল, শান্তি ও
আনন্দোৎসবে ভরে উঠে। তখন ঐ সামাজিক ধাঁচের অন্তর্গত মৈত্রী ভাবনা বুদ্ধিকে অতিক্রম
করে হৃদয়ে প্রবেশ করে ও ঐ মৈত্রী পূর্ণ হৃদয় করুণার আধাঁরে পরিণত হয়। তখন মানব ঐ
রাজার মিত্র হয়ে যায়, যে নিজের স্বর্বস্য ত্যাগ করে ইচ্ছিত সত্যক্রিয়া প্রার্থনা
করার মাধ্যমে লোক করুণার ভাবনার দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং এই সত্যক্রিয়ার প্রভাব যেন
আমার দ্বারা কারোর মন বা শরীর যেন কষ্ট না পায়।
মনে রাখা দরকার যে, করুণা
হল প্রচেষ্টা সাপেক্ষ মনোবৃত্তি। এই প্রচেষ্টার মূল মার্গ হল মঙ্গল, শান্তি,
আনন্দ, করুণা, জীব সহ মানুষ মঙ্গলময় হয়ে থাকেন। কিন্তু যে লোক মাঙ্গলিক কার্যাদি
সম্পন্ন করেন তার কোন বন্ধন থাকে না। তিনি সুখেও আত্মতুষ্ট হন না দুঃখেও ভেঙ্গে পড়েন
না। ফল স্বরূপ সে উভয়কে অতিক্রম করে যায়। ফলে দ্বন্ধাতীত ব্যক্তির কাছে সকল কিছুই
আনন্দমুখর হয়ে উঠে। এই আনন্দকালে স্থিত প্রজ্ঞা ব্যক্তি সুখ ও দুঃখের মধ্যে সমভাবে
অবস্থান করেন। এই আনন্দময় ব্যক্তির প্রজ্ঞা প্রশান্ত হয়ে ওঠে। মনে রাখা উচিত
সুখ-দুঃখের চেতনা প্রতিটি ব্যক্তির মধ্যে দুটি ভিন্নভাবে তরঙ্গ রূপে সঞ্চারিত হয়,
এই ভাবে সামান্য চেতনা কম্পায়মান হয়ে ওঠে। এছাড়া আত্মচেতনায় একাত্ম হওয়া ব্যক্তি
মহা শান্তির অনুভূতিতে আচ্ছাদিত হয়ে ওঠে। এই আনন্দকালীন মানুষদের নিয়ে যে সমাজ
গঠিত হয় তা মঙ্গল, শান্তি আর আনন্দের আধারে পরিণত হয়। শান্তিমূলক সমাজে পরিণত হয়।
সমতা মূলক সামাজিক
প্রয়োজনীয়তাঃ
জাতকে নিজের ও সকলের
মুক্তি কামনার আদর্শ ও মঙ্গল, শান্তি, আনন্দ ও সামাজিক আদর্শের কথা জাতকে পাওয়া
যায়। এই আদর্শের উৎকর্ষতা এক সমতা মূলক সমাজ ব্যবস্থাতেই সম্ভব। যা সর্বদা লক্ষণীয়
যে, কোন উদার সামাজিক ব্যবস্থায় কুষিদ তথা বুনিয়াদি প্রেরণা যা হয় তার অন্তর্গত
মানুষ মনুষ্যত্বের বহু অজানা বিকাশকে কিছু কাল পর্যন্ত সম্ভব হয় এবং তার সামাজিক
সুবিধাও পাওয়া যায়। মানুষকে মানসিক আধ্যাত্মিক অথবা সামাজিক আর্থিক স্থিতির মধ্যে
থেকে একে আমরা মানবীয় সামাজিক ব্যবস্থা বলিনা। বস্তুত মানবীয় সামাজিক ব্যবহারের
অর্থই হল, এক এমনি ব্যবস্থা যা মানুষের চেতনার বিকাশের জন্য উপযুক্ত বাতাবরণ তৈরী
করে। মানুষ যে কিনা এক সামাজিক প্রাণী এই প্রকার সামাজিক ব্যবস্থা থেকে লোকের
কল্যাণের আদর্শের অনুশীলন করে নিজেকে উদ্ঘাটনের সম্ভাবনার এবং আপন শক্তির চরম
বিকাশ সাধন করে। এই সামাজিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণতা এক সমতা মূলক সামাজিক
ব্যবস্থাতেই সম্ভব, এমন ব্যবস্থা যার অবাধ লক্ষ্য হল যে এর সাংসারিক লক্ষের কারণ
এই প্রকার সামাজিক উদ্যোগের বিকাশ করা যেখানে জনসাধারণের নীতি, বৌদ্ধিক ও ভৌতিক
জীবনে এই পর্যায়ে পৌঁছায় যেখানে সকলের ভাল আর শান্তির অনুকূল হয়, কেননা যে অবস্থায়
প্রতিটি ব্যক্তির নিজের জীবন এবং নিজের স্বতন্ত্রতার বাস্তবিক রূপ দিতে সাহায্য
করে। জাতকের সামাজিক চেতনায় এই সমতামূলক সামাজিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে। এই
প্রবর্তনের পটভূমিতে একদিকে তৎকালীন সামাজিক বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য
মানুষ মুক্তিরই পথ খুঁজছিল; অন্যদিকে মহত্বপূর্ণ হল- বুদ্ধ ধর্মের চেতনার মধ্যে
প্রভাবশালী মানবতাবাদী বল। যা সর্বদা লক্ষ্যণীয় যে জাতক কথায় বৌদ্ধ ধর্মের
সম্পূর্ণ ছাপ রয়েছে তথা সম্পূর্ণ ধাঁচ বৌদ্ধ ধর্মের নৈতিক আদর্শের অনুসারী। সেই
নৈতিকতা যা মূলত মানবতাবাদী চেতনাকে অনুপ্রাণীত করে, জাতক রচনাকারদের সামনে ছিল
তৎকালীন বিশৃঙ্খলীত সমাজ কিন্তু এর অন্তরচেতনায় ছিল সেই আদর্শ সমাজ যেখানে মমতা
মূলক সমাজ ব্যবস্থার নিদর্শণ সেই ব্যবস্থা জাতি শ্রেণী ও বর্ণের এমন কোন বন্ধন ছিল
না যে মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে। সেই ব্যবস্থায় স্বয়ং বুদ্ধের এই উপদেশ
সার্থক হয় যে, জাতির কথা জিজ্ঞাসা না করে তার আচরণের কথা বল, কাঠ থেকে আগুন সৃষ্টি
হয়, নীচু কুলের পুরুষ ও কৃতিমান, জ্ঞানী ও পাপ রহিত মুণি হতে পারে ১৩ এটা এক এমন ব্যবস্থা
যেখানে জন্মের পর মানুষের উঁচু-নীচু বিভেদ হয় না। যা আগ্রাসন ইত্যাদি পাওয়ার জন্য
ক্ষত্রিয়কুল, ব্রাক্ষ্মণকুল, বৈশ্যকুল জন্মানোর প্রধান অন্তরায় হয় না বরং যে
মানুষের মধ্যে তার শ্রেষ্ঠতা, সৌমনতা ও অন্য সদ্গুণই প্রধান। ১৪ পুনরায় যে ব্যবস্থায় নারীকে
কেবলমাত্র বাসনা পূরণের বস্তু হিসেবে দেখা হত না, বরং যেখানে নারীকে পুরুষের
সহধর্মিনী রূপে দেখা হত, “মহাউন্মগ জাতকে” মহোসধের সেই বুদ্ধমুর্তি ভার্যার মত যে
নিজের পতিকে প্রতিটি বিপদ থেকে মুক্তি দিয়ে রক্ষা করে তার জীবনকে সুগম ও সার্থক
করে তুলেছিল।১৫ উল্লেখনীয় যে, কখনো কখনো দেখা যায় জাতক সমাজে
নারীকে ব্যাভিচারিনী ও দুঃশ্চরিতা রূপে দেখার প্রবণতা ছিল, আবার “সম্বুল জাতকে”
বর্ণিত নারীর সতিত্বের একটা গুণ হল- যে নিজের তেজের দ্বারা নিজের স্বামীকে ঘৃণ্য
থেকে ঘৃণ্যতর ব্যাধি থেকে মুক্ত করে একটি সুস্থ সুন্দর জীবন এনে দিত।১৬ আবার ঐ ব্যবস্থায় যেখানে
আর্থিক বিভেদে মানুষ মানুষের দাস নয়। সারাংশত কোন সমতা মূলক ব্যবস্থা যার আধার
স্বতন্ত্র, সৌমনতা ও বন্ধুত্ব।
কিন্তু বিশ্বে এমন সব
সমাজ ব্যবস্থা থাকা কি সম্ভব যেখানে কেবল আদর্শের উড়ান মাত্র নেই? নিশ্চয়ই নেই!
ব্যবহারিক পৃথিবীতে যে ব্যবস্থা সম্ভব, তার শর্ত হল মানুষ যে আত্ম-বঞ্চনাতে নিজেকে
আচ্ছাদিত করে রেখেছে যেখানে ছুটে পালিয়ে যাওয়া যায়, জাতক কথায় বর্ণিত বুদ্ধের
উপদেশের যে সর্বদা সুব্যক্ত হয়, সে যদি মানবতাকে এই লক্ষ্যে প্রাপ্ত করে তাহলে
মানুষকে নিজের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতা, ঘৃণা ও হিংসা অবলুপ্তি হবে। আর এর জন্য
যেটা গুরুত্বপূর্ণ পথ তা হল মিত্রতা এবং মৈত্রীর পথ। প্রখ্যাত চিন্তাবিদ্ এস.
রাধাকৃষ্ণন- বলেন যে যখন আমরা ভালোবাসী তখন আমাদের ঘৃণা ও শত্রুতার লেশমাত্র থাকে
না।১৭ সেই কারণে “রাজোবাদ
জাতকে”- কাশী নরেশের মহান গুণাবলী দেখে জনসাধারণকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে ক্রোধের চেয়ে
ক্ষমার, শত্রুতার চেয়ে মিত্রতার, তথা লোভের চেয়ে উদারতার মহৎ গুণ জানা চাই।১৮ বস্তুত জাতক চেতনায় যে ভাব
অপরিসীম মৈত্রীতে মানুষ মানুষের সাথে একাকার হতে পারলে তবেই উদাত্ত সামাজিক
ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় এবং এর জন্য অপরিহার্য হল যে, কেবলমাত্র মানুষের
জন্য নয় সকল জীবের জন্যই প্রেম সেবা ও ত্যাগের ভাবনা বিকশিত হওয়া উচিত।
রাধাকৃষ্ণান বলেছেন সত্যিকারের জীবন নিজের প্রেমকেই অভিব্যক্ত করে এবং এর লক্ষ্য
হয় মানুষকে একাত্ম করে স্থাপন করা।১৯ যে কারণ হল যে, “ঋকবেদ”-এ
সমস্ত মানব জাতির উদ্দেশ্যে উপদেশ দিয়েছে-
“ সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং
সং বো মনাংসি জানতাম্।
সমানো ব আকৃতিঃ, সমানো
হৃদয়ানি বঃ
সমানমস্তু ব মনো
যথা ব সুরাহাসতি”।
অর্থাৎ মিলে মিশে বলো,
মিলে মিশে কথা বলো। তোমার মন একই রূপ জানে। তোমার প্রচেষ্টা ও বল সাথে সাথে আছে,
তোমার হৃদয় একমত হোক। তোমার মন সংযুক্ত হোক, যেখানে আমরা সবাই সুখী হতে পারি।
উপসংহারে বলা যায় যে,
জাতকে তৎকালীন মানুষের সামাজিক স্থিতি এবং সমাজের বিশৃঙ্খলীত রুপের প্রতি দমন মূলক
দৃষ্টিপাতের প্রক্রিয়া। এই ভাবনায় প্রভাবিত এক এমন সমাজ ব্যবস্থার নির্মাণ যেখানে
মানবতা সুরক্ষিত। যেখানে মানবতার সামাজিক আর্থিক এবং ধার্মিক চেতনার বিকাশের জন্য
উপযুক্ত বাতাবরণের ভূমিকা বহন করে। অহিংসা, মানব সাতন্ত্রতা, সৌমনতা, সহঅস্তিত্ব
এবং বন্ধুত্বের মহৎ আদর্শের উপর অবস্থিত এই সমাজ ব্যবস্থায় জাতকের পরিকল্পনা
বাস্তবতার মানবতাবাদী আকাঙ্খারই প্রতীক।
অভিসন্ধির্ভ কুঞ্চিকাঃ
১. ‘পালি সাহিত্য কা ইতিহাস’ ভরত সিংহ উপাধ্যায় পৃ. ৩৫১
২. সচ্চংকির জাতক, সংখ্যা- ৭১, ১ম খন্ড, অনু. (হিন্দি) ভদন্ত আনন্দ
কৌযাল্যায়ন, পৃ.৪২০-
৪৩৫,
৩. প্রাগুক্ত, গরহিত জাতক, সংখ্যা-১১৯, ২য় খন্ড, পৃ.২৬২-২৬৩,
৪. শৃঙ্গাল জাতক, সংখ্যা-১১৩, প্রাগুক্ত, পৃ. ৮-৫১
৫. তিত্তির জাতক, সংখ্যা-৩৭, ১ম খন্ড, পৃ. ২৮৭
৬. চিত্ত স্মভুত জাতক, সংখ্যা – ৪৬৮, প্রাগুক্ত, ৪র্থ খন্ড, পৃ. ৫৬৮-৬০৮
৭. মাতঙ্গ জাতক, সংখ্যা- ৪৬৭, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৬৩-৫৬৭
৮. জাতক, সংখ্যা-৬১-৬৪, প্রাগুক্ত, ১ম খন্ড, পৃ.৩৭৮-৩৯৯।
৯.কুনাল জাতক, সংখ্যা- ৩-৫, প্রাগুক্ত, ৫ম খন্ড, পৃ.৫১০
১০. কনহ জাতক, সংখ্যা- ৪৪০, প্রাগুক্ত, ৪র্থ খন্ড পৃ. ৩৩৫
১১. পালি সাহিত্য কা ইতিহাস, প্রাগুক্ত, পৃ.৩৩৫
১২. প্রাগুক্ত, সুন্দ্রিক ভরদ্বাজ, প্রাগুক্ত, পৃ.৩৩৪
১৩. প্রাগুক্ত, তিত্তির জাতক, সংখ্যা- ৩৭, জাতক ১ম খন্ড, পৃ.২৮৭-২৮৯,
১৪. প্রাগুক্ত, মহাউম্মাগ জাতক,৫ম খন্ড,
১৫. প্রাগুক্ত, সম্বুল জাতক, পৃ.১৫৩
১৬. ধর্ম; তুলনাত্নক দৃষ্টি মেঁ. এস.রাধাকৃষ্ণান, পৃ.৭৫,
১৭. রাজোবাদ জাতক, সংখ্যা- ১৫১, জাতক ২য় খন্ড, পৃ.১৬৬
১৮. অঁক্যাসেন্যাল স্পীচেজ এন্ড রাইটিংস্ ১৯৫৬-৬২, এস. রাধাকৃষ্ণান, পৃ.৩২১
১৯. ঋগ্বেদ, ১০-১৯১।
No comments:
Post a Comment