Sunday, August 10, 2025

স্যার কে যেমন দেখা আমার

 স্যার কে যেমন দেখা আমার 

সুমনপাল ভিক্ষু

প্রফেসর ড. রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭। এম.এ (ট্রিপল), এম. ফিল, পিএইচ.ডি., সূত্রপিটক তীর্থ ভারতের অন্যতম বিদগ্ধ দার্শনিক-সমালোচক। একজন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত লেখক এবং চিন্তাবিদ, তার জীবনযাপনের পদ্ধতি প্রমাণ করেছে যে প্রকৃত জ্ঞান একজন ব্যক্তিকে নম্রতা দেয়। তিনি একজন অসামান্য শিক্ষক ছিলেন যিনি যেকোনো বিষয়ে যে কোনো জায়গায় পড়াতে পারতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ব্যক্তি। অনেকের কাছে তিনি সত্যিই ‘স্যার বা ‘মাস্টারমশাই’ ছিলেন। তিনি বিবি কলেজ আসানসোলের ইংরেজির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন। তাঁর প্রপিতামহ (মাতৃত্বকালীন) ছিলেন বিখ্যাত প্রাচ্যবিদ সংস্কৃত পণ্ডিত হর প্রসাদ শাস্ত্রী এবং তিনি ডক্টর বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের নাতি ছিলেন একজন বৌদ্ধ মূর্তিতত্ত্বের উপর। তিনি তাঁর দাদু কে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতেন। দাদুর বৌদ্ধ ধর্ম চর্চা ও চর্যা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন সেটি নিজ মুখে উচ্চারণ করেছিলেন। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই তিনি বৌদ্ধ সাহিত্যে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। 
   
ড. রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় অবিকল মহান অন্তর্দৃষ্টি, বুদ্ধিমত্তা, প্রতিভা এবং মানবিক মূল্যবোধ সহ বহুমুখী প্রতিভা ছিলেন।  তিনি একজন বহুভাষী কবি (ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃত এবং পালি ভাষায় দক্ষ), প্রশংসিত সম্পাদক, পণ্ডিত বুদ্ধিজীবী, উল্লেখযোগ্য গল্প লেখক, অনেক অজানা এবং অজ্ঞাত ব্যক্তিত্বের জীবনীকার, সমৃদ্ধ কণ্ঠের বিখ্যাত বক্তা এবং অনন্য চিন্তাবিদ ছিলেন।  তিনি আধুনিক নাটকের উপর তাঁর গ্রন্থের জন্য আশুতোষ মুখার্জি স্বর্ণপদক প্রাপক ছিলেন।  তিনি সাহিত্য, সাহিত্যের সমালোচনামূলক অনুমান, দর্শন, পুরাণ, ইতিহাস, ধর্ম, বৌদ্ধ অধ্যয়ন, সমাজতাত্ত্বিক দিক, শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, নগর অধ্যয়ন, রাজনীতি, নারীবাদ, নাটক ও সিনেমার মতো বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় একশত বই লিখেছেন এবং প্রকাশ করেছেন।  শত শত সমালোচনামূলক নিবন্ধ এবং কবিতা।  তিনি ছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অঙ্গনে উত্তর-আধুনিকতার অগ্রগামী লেখকদের একজন। তাঁর এম.ফিল.  প্রবন্ধটি মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে রামায়ণ অধ্যয়নের উপর, যখন তার ডক্টরেট থিসিসটি নন্দনতত্ত্বের আলোকে জাতক কাহিনীর উপর। এই কথাটি উপরে উল্লেখ করেছি, স্যার কে যখনই বৌদ্ধ বিষয়ক লিখতে অনুরোধ করতাম স্যার দ্বিতীয়বার চিন্তা করতেন না। বাংলাদেশে স্যারের দুখানা প্রবন্ধ ছাপানো হয়েছিল। স্যারের খুব ইচ্ছে ছিল একবার ঘুরে আসবে তা হয়ে ওঠেনি। 

আচার্য স্যার রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে আমি প্রথম দেখি ২০০৩ সালে যখন স্বাধীনতা সংগ্রামী ফনীভূষণ দাশ প্রয়াত হন তখন। ফনীভূষণ দাশ'র স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন, তাঁরই সহোদরা ডক্টর আশা দাশ'র আহ্বানে সেখানে উপস্থিত হয়েই স্যারের সঙ্গে প্রথম পরিচয় ঘটে। স্যারের সম্পর্কে অনেক শুনেছি ডক্টর আশা দি কাছে, তিনি আমার মাতৃসমা। তিনি জানতেন কি করে সন্তানকে বড় করতে হয়। সন্তান বা ছাত্রকে এগিয়ে দেওয়ার সেই কাজ তিনি অনলস ভাবে সম্পাদন করেছেন। তাঁরই কাছ থেকে স্যার রমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় পেয়েছেন। বলতে গেলে তাঁর কাছেও সেই ছাত্র তৈরির আর উত্তর প্রজন্ম তৈরি করতে হয় সেই নিপুণতা আর অদম্য প্রেরণা লাভে বঞ্চিত হইনি কেউই। 

হোমিওপ্যাথির ডিগ্রী (ডিএমএস)ও তার কৃতিত্ব ছিল। তিনি আমাকে হোমিওপ্যাথি প্রেসক্রাইভ করতেন সেভাবেই  সেবন করে আমি আরোগ্য লাভ করতাম। তাঁর কোনও বিষয়ে কোনও কমতি ছিল না। 
আইন বিষয়েও তার গভীর জ্ঞান ছিল। তাছাড়া তিনি একজন জ্যোতিষীও ছিলেন। জ্যোতিষী শাস্ত্র বিষয়েও অনেককে আমি স্যারের কাছে নিয়ে যেতাম। তাতে তাদের অনেক ফলপ্রসূ হয়েছিল। আমার মাসি মনির আয়ুষ্কাল নিয়ে যেতেন তথ্য তিনি সেটার অন্যতা হয়নি। এতো নিখুঁত ভাবে তিনি বলতেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

রমেশ স্যার ছিলেন বাংলার আন্ডারগ্রাউন্ড লিটারেচার মুভমেন্টের অগ্রগামী নেতা এবং একজন নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক। স্যার আন্ডারগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমাকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিলেন। কিভাবে অন্ত্যজ শ্রেণী থেকে সাহিত্য তথা লেখকদের তৈরি করতে হয় সেটা তৈরি করে দিয়েছেন। ভূগর্ভস্থ সাহিত্য (সাহিত্য) একটি শক্তিশালী দর্শন যা 'ভাষা আগে আসে এবং ধারণা পরবর্তী' নীতির উপর ভিত্তি করে।  এই আন্দোলন বাংলায় একটি নতুন সাহিত্য সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিল এবং প্রত্যেকের জন্য, বিশেষ করে বাংলার গ্রাম ও ছোট শহর উভয়ের অজানা কবিদের জন্য একটি সৃজনশীল স্থান তৈরি করেছিল। তিনি দ্বিভাষিক জার্নাল প্ল্যাটফর্মের সম্পাদক ছিলেন। আমার মতো একজন নগন্য মানুষকে তিনি প্ল্যাটফর্মের সহকারী সম্পাদক হওয়ার সুযোগ তিনি দিয়েছেন। তাঁর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আবদ্ধ রাখবো চিরকাল।

এছাড়াও তিনি সাহিত্য সম্পর্কিত কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে একটি Google গ্রুপ সেফিরাহ-এর নেতৃস্থানীয় আত্মা ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত সেফিরাহ গ্রুপে আমাকে লেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।  তিনি বলতেন তুমি লেখ ভুল হলে শিখতে পারবে আর আমি আছি। এই আমি আছি বলার লোভ আমি সব হাঁড়িয়ে ফেলছি। তাঁর কথামতো দু একটা লিখেছিলাম। তাতে দেখছি অনেক পণ্ডিত আর বিদ্ধান ব্যক্তিবর্গের লেখা সেখানে আমাকে মানায় না। তাই সরিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে।

তারপর কেটে যায় অনেকটা বছর প্রায় চার চারটা বছর। নিজে বেড়ে ওটার অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছি তাঁর থেকে দূরে থেকে। আবার ২০০৭ সালে তাঁকে খুব কাছ থেকে পাই। তাতেও সাঁকোর ভূমিকায় ছিলেন সেই আমার মাতৃসমা আশা দি। তখন ২০০৭ আমি পি এইচ ডি গবেষণার এনরোল্টমেন্ট করি, কাজ কিছুটা করে নিয়ে দিদির কাছে যাই সংশোধন করাতে। দিদি দেখে দেন অনেকটা, তারপর দিদি হটাৎ অসুস্থ হলেন। আবার কিছুটা করি দিদি তখন আমার সামনে স্যারকে ফোনালাপে বললেন আমি একজন ভিক্ষুকে পাঠাবো। স্যার তখনই বিনা বাক্য ব্যয়ে সম্মতি দিয়ে দিলেন। 

তাঁর বাসস্থান ছিল পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার বেলুড় মঠের কাছে বেলুড়ে। তিনি প্রেমের সাথে একজন হাঁটা বিশ্বকোষ এবং বিদ্যার দেবীর আশীর্বাদপুত্র হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন অসীম শক্তির ফোয়ারা এবং যে কাউকে করুণাময় হাতের প্রয়োজনে একজন পথপ্রদর্শক আত্মা। ভৌত জগৎ থেকে তাঁর চলে যাওয়া আমাদের সাহিত্য পরিবার ও সাহিত্যের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। যাঁরা তাঁর সান্নিধ্যে এসেছিলেন তাঁরা তাঁকে একজন আলোকিত আত্মা হিসেবে দেখতে পান। তাঁর সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক কিছু বলার আছে, তা সল্প পরিসরে এখানে বলে শেষ করা যাবে না। তাই তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেষ করছি। তাঁর আনাপান বায়ু স্তিমিত হয় ৪ আগস্ট ২০২৪, তাঁর নৈর্বাণিক সুখ উপলব্ধি হোক কামনা করি।

ভূমিকা, দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির

 


ভূমিকা


ওই মহামানব আসে।
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে
মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে ।।
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ,
নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক
এল মহাজম্মের লগ্ন।
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত
ধূলিতলে হয়ে গেল ভগ্ন।
উদয় শিখের ভাগে 'মাভৈঃ মাভৈঃ`
নবজীবনের আশ্বাসে।
'জয় জয় জয় রে মানব-অভ্যুদয়'
মন্দ্রি-উঠিল মহাকাশে। -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



জ্ঞানতাপস দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্হবির অঙ্গদেশরে বৌদ্ধ জগতের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং নিরবসাধক হিসেবে পরিচিত। তিনি একধারে জ্ঞানতপস্বী, সদা ব্রহ্মচারী, বিদ্যোৎসাহী এবং বৌদ্ধপন্ডিত ছিলেন। বৌদ্ধজাতির বিকাশের জন্য মননশীল কাজ করেও যিনি কখনই প্রচারের আলোতে উপস্থিত হন নি বা প্রচারের আলোতে না থেকেও তিনি স্বীয় জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। এক কথায় নিরলস চেষ্টা আর ধর্মীয় ভাবনার মাধ্যমে এবং ব্রহ্মচর্য সমন্বয়ে তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন বুদ্ধ শাসনের এক অকল্পনীয় ইতিহাস।


যো হবে দহরো ভিক্খু, যুঞ্জতি বুদ্ধসাসনে।
সো ইমং লোকং পভাসেতি, অব্ভা মুত্তো ব চন্দিমা। ৩৮২৷৷ -ধম্মপদ, ভিক্খু বগ্গো ।।


যে ভিক্ষু তাঁর সামান্য (ক্ষুদ্র) আয়ুতেই  ভগবান বুদ্ধের  উপদেশকে হৃদয়ঙ্গম করে নেন, তিনি এই সংসারে তাঁর প্রিয় আধ্যাত্মিক জ্ঞানপ্রকাশ ঠিক সেইভাবে প্রকাশিত করেন, যেমন ইমেল লেখচিত্র নাকি মেসেজ মেঘযুক্ত চন্দ্রমা গগনে প্রকাশিত হয়।


ধর্মপদের এই বাক্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেইঅর্থে তিনি ছিলেন মেঘযুক্ত আকাশে চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল।

প্রশ্ন হল, এমন একজন মহাতাপস'কে নিয়ে আমি কী লিখব? যতই তিনি বিস্মৃতির আড়ালে থাকুন, আমি মনে প্রাণে এও বিশ্বাস করি তাঁর মহান কৃতী তাঁকে জীবন্ত করে রাখবে মাটির পৃথিবীতে কেননা যে বা যারা তারা কৃপালাভে ধন্য হয়েছেন, তারা এই মহান জ্ঞান তাপস দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবিরের প্রতি থাকবেন কৃতজ্ঞা কোনো কিছুর বিনিময়েই তারা অকৃতজ্ঞ হবেন না।


সুপ্পবুদ্ধং পবুজ্ঝন্তি, সদা গোতমসাবকা
যেসং দিবা চ রত্তো চ, নিচ্চং বুদ্ধগতা সতি ॥২০১৬ ৷৷


যে সাধকের স্মৃতি দিবারাত্রি (২৪ ঘন্টা) বুদ্ধবিষয়ক হয়ে থাকেন, সে অর্থাৎ তিনি গৌতম (বুদ্ধ) শিষ্য সদৈব সাবধান(=প্রবুদ্ধ) হরে বিচরণ করেন (পকিন্নক বগ্গো)।

শেষ পর্যন্ত হলোও তাই। অল্পকারের তমিশ্রা ভেদ করে বিস্মৃতির আড়াল ভেঙ্গে এক অনাস্বাদিত প্রাপ্তির আলোর ঝর্ণায় স্নাত হলেন মহান জ্ঞানতপস্বী দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির। এই মহান প্রজ্ঞাবীর, সদাসর্বদা পুরস্কার- তিরস্কার-প্রত্যাশার বাইরে থেকে নিরলস ভাবে সাধনা সম্পূর্ণ করে বুদ্ধ শাসন ও বৌদ্ধ জাতির মর্যাদা রক্ষা করেছেন, গৌরব বৃদ্ধি করেছেন।


তিনি কখনই ব্যক্তি পূজার পক্ষপাত দুষ্ট হন নি, কেননা বৌদ্ধধর্মে ব্যক্তি-সত্তা' বা 'আমি' বলে কোনও কিছুকেই স্বীকার করা হয় না। তবে হয় বৈ কি, পুদ্গল'ই হল এই 'আমি'। কিন্তু এই পুদ্গলের বা 'আমি'র কোনও আসল সত্তা নেই, পঞ্চস্কন্ধকে অবলম্বন করে তার একটা ব্যবহারিক সত্তা মাত্র প্রতীত হয়। আসলে এই 'আমি' বা ব্যক্তিসত্ত্বার পিছনে কোনও আত্মা নেই, এই আমি আসলে 'নাম-রূপ' ছাড়া আর কিছুই নয়। নাম-রূপ হল জড় ও চেতন স্কন্ধ সমূহের সমবায়ে, প্রতিভাত লোকব্যবহারের উপযোগী একটা তৎকালীক সত্তা-প্রতীতি মাত্র। সুতরাং এই অর্থে তিনি ছিলেন 'আমিত্ব' বিহীন নিরব সাধক।
আমরা জানি বা না জানি, তিনি কখনই জীবন যুদ্ধে ভেঙে পড়েননি। কখনও বিমুখ হন নি তাঁর পথ ও সিদ্ধান্ত থেকে। কিন্তু তবুও তিনি সমৃদ্ধ করেছেন বৌদ্ধ জাতি এবং সমাজকে।


পামোজ্জ বহুলো ভিক্খু, পসন্নো বুদ্ধসাসনে।
অধিগচ্ছে পদং সন্তং, সঙ্খারূপ সমং সুখং ॥৩৮১।।


যে ভিক্ষু (ধর্মশ্রবণ পূর্বক) অত্যধিক হর্ষযুক্ত হন, যিনি বুদ্ধোপদেশ'এ শ্রদ্ধাশীল হন, তিনি শান্ত, সংস্কারকে উপশমনকারী সুখকর পদ। (নির্বাণ) শাভ করেন (ভিক্খু বগ্গো পঞ্চবীসতিমো)।

১৯ শতক' এর অন্তিম লগ্নে তৎকালীন অবিভক্ত বঙ্গদেশের (বর্তমান বাংলাদেশ) সুপ্রাচীন চৈত্যভূমি (চট্টগ্রাম)র এক প্রসিদ্ধ বুদ্ধ পল্লী (সাতবাড়ীয়া গ্রাম) তে এই মহান কর্মযোগী তথা জ্ঞানতাপস দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির জন্মগ্রহণ করেন। এই সময়কাল ছিল বৌদ্ধধর্মের পুনঃ জাগরণের কাল। মাত্র ১২ বৎসর বয়সকাল তিনি সদ্ধম্ম হিতৈষী পুণ্য  পুরুষ শ্রীমং ধর্মবংশ মহাস্থবি স্নেহ -সান্নিধ্য লাভ করে বুদ্ধ শাসনে নিজেকে গড়ে তোলার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাস্তবিক অর্থে একজন জ্ঞানতাপস। বুদ্ধ শিক্ষায় জ্ঞানার্জন'ই ছিল তাঁর একমাত্র সাধনা।


যম্হি সচ্চং চ ধন্মো চ, অহিংসা সংযমো দমো।
সবে বন্তমলো ধীরো, 'থেরো' ইতি পবুচ্চতি। ২৬১৷৷


যে সাধক পুরুষে সত্য, অহিংসা, শীল তথা ইন্দ্রিয় সংযম বিদ্যমান, তিনি'ই বিকাশরহিত (নির্মল), ধৈর্যশালী এবং 'স্হবির পদে শোভিত হন।

১৯২৯ খ্রীষ্টাবেরে ৩১ ডিসেম্বর , তিনি উপসম্পদা লাভ করেন এবং ভিক্ষু দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান' নামে অভিহিত হন। ভদন্ত দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির ছিলেন পশ্চাৎপদ বৌদ্ধ জাতিকে আধুনিক  বিদ্যা শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রশ্নে সদা খড়গ হস্ত। তাঁর মহান কর্মযজ্ঞ'কে বিশ্লেষণ করলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'লোকহিত' প্রবন্ধের কথা উঠে আসে। 'আমরা পরের উপর করব মনে করলেই উপকার করতে পারি না। উপকার করবার অধিকার থাকা চাই। যে বড়ো সে ছোটোর অধিকার অতি সহজে করতে পারে কিন্তু ছোটোর উপকার করতে হলে কেবল বড়ো হলে চলবে না, ছোটো হতে হবে, ছোটোর সমান হতে হবে। মানুষ কোনোদিন কোনো যথার্থ হিতকে ভিক্ষারূপে গ্রহণ করবে না, 'ঝানরূপেও নয়, কেবলমাত্র প্রাপ্য বলে গ্রহণ করতে পারবো'।

তিনি সকল সময় বিহার এবৎ বৌদ্ধ সমিতির নানাবিধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আন্তরিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই অর্থে তিনি ছিলেন একজন কর্মযোগী পুরুষ। জ্ঞান তপস্বী দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্হবির নানাবিধ বিদ্যাচর্চা এবং তুলনামূলক শাস্ত্র অনুশীলনে সর্বদা নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতেন। তিনি বাংলা, পালি, সংস্কৃত, ইংরেজী ব্যতীত তিব্বতী ভাষায়ও সুপণ্ডিত ছিলেন।

মায়ানমার' এর স্বাধীনতা লাভের পর তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উ. নু'এর ব্যবস্থাপনায় ষষ্ট বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি আয়োজন করা হয়। উক্ত মহাসঙ্গীতি'তে ভন্তে শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির আমন্ত্রিত অতিথিরূপে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই বিষয়টি পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) বৌদ্ধ জাতির নিকট অত্যন্ত শ্লাঘার বিষয়।


ধম্মারামো ধম্মরতো, ধম্মং অনুবিচিন্তয়ং।
ধম্মং অনুস্সরং  ভিক্খু, সদ্ধম্মো ন পরিহায়তি।। ৩৬৪।।


যে ভিক্ষু নিরন্তর ধর্মাচরণে নিয়োজিত থাকেন, ধর্মচিন্তন'রত থাকেন, ধর্মকে মনণ করেন, ধর্মকে অনুস্মরণ এবং অনুগমন করতে থাকেন, এইরূপে সাধক কখনই ভিক্ষুধর্ম হতে চ্যুত হন না।


তিনি ছিলেন অসীম সাহসী বীর্যবান এবং সিংহ বিক্রম পুরুষ। নিজের প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে সদ্ধম্ম এবং বৌদ্ধ জাতিকে বারংবার নানাবিধ বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলে। ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দে মুক্তি যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

ভগবান বুদ্ধ যেমন ভিক্ষুসংঘ স্থাপন করে অজ্ঞানীকে জ্ঞাণাহরণে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, বিশেষতঃ বিদর্শন-সাধনা পদ্ধতি প্রদান করে জীবন মুক্তির পথ উমুক্ত করে দিয়েছিলেন। সেই মহান আদর্শের একজন সুযোগ্য উত্তরসূরী ছিলেন কর্মযোগী দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির। তিনি তাঁর আচার্য ধর্মবংশ মহাস্থবির'এর জন-হিতৈষী কর্মযজ্ঞকে একনিষ্ঠ শিষ্যরূপে জীবনের অন্তিমলগ্ন পর্যন্ত ধারণ করেছিলেন। বিদ্যোৎসাহী এবং প্রজ্ঞাবান মহাতাপস দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির বৌদ্ধ সমাজ ও জাতির উন্নতি বিধানে সদা জাগ্রত ছিলেন । তিনি মনে করতেন, সে জাতি ধর্মশিক্ষার পাশা-পাশি প্রাশাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত নয়, সে জাতির কখনই আত্নপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।


সো করোহি দীপমত্তনো, খিপ্পং বায়ম পন্ডিতো ভব।
নিদন্তমলো অনঙ্গনো, ন পুন জাতিজরং উপেহিসি ॥ ২৩৮৷৷


অতএব তুমি স্বয়ৎ তোমার একটি দীপ (শরণ স্হল) নির্মান কর। °°°° সকল কার্য বুদ্ধিমত্তা পূর্বক সস্পন্ন কর। এইভাবে, তুমি নির্মল এবং নিঃশ্বাস হয়ে জন্ম-জরা'র জল হতে মুক্তিলাভ করবে (মলবগ্গো,ধম্মপদ)।

ভদন্ত দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির ছিলেন একজন ত্যাগদীপ্ত মহাপুণ্যবান সাধক ছিলেন মূল অর্থে ত্যাগের মহিমায় সম্পৃক্ত একজন বিরল ব্যক্তিত্ব। সংকীর্ণতা, আত্ন-অহংকার, আত্মাভিমান এবং আমিত্ব ভাব কখনই তাঁকে পরাভূত করতে পারে নি। তাই তিনি হয়ে উঠেছিলেন ত্যাগব্রতী পুণ্য পুরুষ। তাঁর ন্যায় উদারচেতা, অসাধারণ প্রতিভাশীল তথা সাহসী কর্মবীর বর্তমান সময়কালে অত্যন্ত দুর্লভ। কেননা, যে জাতি নিজের আত্মপরিচয়, ইতিহাস জানে না সে জাতি সত্যই বড় দূর্ভাগা। অর্থাৎ অতীতকে ভুলে যাওয়া সঠিক নয়, অতীত হতে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

"জ্ঞানের দুর্গম উর্জে উঠেছে সমুচ্চ মহিযায় যাত্রী তুমি,
যেথা প্রসারিত এর দৃষ্টির সীমায় সধনা শিক্ষার শ্রেণী "
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবিরের সহোদরের মেয়ে ঘরে নাতি সৌনাভ বড়ুয়ার উদ্ধৃতি বা তাঁর দেখা এবং মহাস্থবির মহোদয়ের আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন তা উপস্থাপন করলাম- 

 "দাদু ভান্তের আশীর্বাদ" -১৯৮০ সালের গোড়ার কথা। তখন আমি স্কুলে পড়ি, বয়স হবে বড়জোর দশ। শহর কলকাতার ভিড়ভাট্টা, ট্রাম আর বাসের ধোঁয়ার মধ্যেও আমাদের জীবনে কিছু ছোট ছোট দ্বীপের মতো মুহূর্ত থাকত—যেগুলো আজও স্মৃতির বাতিঘর হয়ে জ্বলছে।

সেদিন ক্লাস শেষে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে আমি সোজা চলে গিয়েছিলাম এন্টালির এক পুরোনো বাড়িতে—যেটি আমরা "পাখি দাদুর বাড়ি" বলে চিনতাম। এই নামকরণের কারণ ছিল স্পষ্ট—সেই বাড়ির বারান্দায় সারি সারি খাঁচা, তার ভিতর ময়না, বদ্রী, টিয়া, এবং আরও কত না রকম পাখি! তাদের কিচিরমিচিরে পুরো বাড়িটা যেন একটা ছোট্ট চিড়িয়াখানা। এই বাড়িতে সেদিন এসেছিলেন একজন বিশেষ অতিথি—আমার মায়ের জ্যাঠা, অর্থাৎ আমার দাদুর (মায়ের বাবা) দাদা। মা তাঁকে বলতেন "জ্যাঠা ভান্তে", আর আমরা, নতুন প্রজন্মের নাতি-নাতনিরা, বলতাম "দাদু ভান্তে"। তাঁর ভিক্ষু নাম ভদন্ত দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির। তিনি এসেছিলেন বাংলাদেশ থেকে, কয়েক দিনের পরিব্রাজনে। সেই সময় বাংলাদেশের ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম থেকে কেউ আসতেন মানেই অনেকটা দূরদেশ থেকে আগত কেউ—পার্থক্য শুধু ভৌগোলিক নয়, সাংস্কৃতিকও।

আমি যখন পৌঁছই, তখন তিনি বারান্দার কোণে বসে ছিলেন। এক হাতে একটি পাতলা কাঠের পুঁথি, আর অন্য হাতে মালা। তাঁর বসার ভঙ্গিমা, তাঁর চোখের গভীরতা, তাঁর শরীরী ভাষায় এমন কিছু ছিল—যা আজ বুঝতে পারি, তখনও অনুভব করেছিলাম। আমি একটু সংকোচ নিয়ে সামনে গিয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলাম। তিনি ধীরে, স্নেহভরে আমার মাথায় হাত রাখলেন। সেই আশীর্বাদের মুহূর্তটা আজও ভুলিনি। এক আশ্চর্য প্রশান্তি নেমে এসেছিল। যেন মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়া এক আলো আমাকে ঘিরে ফেলেছিল।

ভন্তে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির তখনও আমাদের পরিবারে এক শ্রদ্ধেয় আত্মীয় হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে পরে জেনেছি—তিনি শুধুমাত্র একজন পারিবারিক আত্মীয় নন, বরং বাংলার বৌদ্ধ ইতিহাসে এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। মা বলেছিলেন, তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম স্নাতক বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অন্যতম, এবং পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত। তাঁর ধর্মীয় ভাষণ, লেখা, এবং জীবনযাপন এতটাই গভীর ও নিরহংকার ছিল যে বহু বৌদ্ধ অনুগামী তাঁকে শিক্ষকতুল্য মনে করতেন। তিনি যেদিন এলেন, আমাদের পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের মধ্যে একধরনের নীরব উৎসাহ দেখেছিলাম। কেউ পুজোর মতো ফল, বাতাসা আর পান সাজিয়ে এনেছিলেন। কেউ বলছিলেন—“ভন্তে দাদা এসেছেন, আজ বাড়িটা যেন আশীর্বাদময় হয়ে উঠেছে।” তাঁর কণ্ঠে ছিল এক মৃদুতা, এক নিঃশব্দ শিক্ষার ধারা। তিনি বেশি কথা বলতেন না, কিন্তু চোখে মুখে এক অদ্ভুত গাম্ভীর্য ছিল, যেন কোনো গভীর শান্ত মহাসাগরের প্রান্তে বসে আছেন। সেই সময় আমি হয়তো বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝি—এমন মানুষরা জীবনে একবার আসেন, এবং চিরস্থায়ী ছাপ রেখে যান।

সেই দিনটি আমি আরও একটি কারণে মনে রাখি। তিনি আমার মায়ের জন্য একটি ছোট্ট নোট লিখে রেখেছিলেন। আজও মনে আছে, ছোট্ট একটি প্যাডে লিখেছিলেন—একটা শুভকামনার বার্তা, সম্ভবত কোনও ধর্মীয় উদ্ধৃতি। আমি তখন সেটি পড়তে পারিনি। কিন্তু তাঁর হাতের লেখা দেখে একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। যেন ঝরে পড়া মুক্তোর সারি—প্রতিটি অক্ষর নিখুঁত, পরিপাটি, ছন্দময়। তার পাশে আমার নিজের বাংলা লেখা ছিল ছেঁড়াখোঁড়া, অসমান আর বেসুরো। মনে পড়ে, শিশু মনের মধ্যে একটা চাপা লজ্জা কাজ করেছিল—লেখা এমনও হয়?

আজ ২০২৫ সাল। প্রায় অর্ধশতাব্দী কেটে গেছে সেই স্মৃতিময় বিকেলটির পর। সেই বাড়ি নেই, পাখিগুলো নেই, পাখি দাদুও আর নেই। কিন্তু এখনও কখনও কোনো বিহারে প্রণাম দিতে গেলে, বা কখনও কোথাও শান্তভাবে বসে থাকলে হঠাৎ করেই মনে পড়ে যায়—দাদু ভন্তের সেই আশীর্বাদের মুহূর্ত। পরে শুনেছি, তাঁর অনুগামীরা তাঁকে গুরুজী বলেই ডাকতেন। তিনি বহু উপদেশ ও ধর্মপাঠ দিয়েছিলেন বৌদ্ধ মহলে, কিন্তু কখনও প্রচারে আসেননি। তাঁর নাম এখনও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বৌদ্ধ মহলে সশ্রদ্ধ চেতনায় উচ্চারিত হয়।

আজ এই স্মৃতিচারণ শুধু একটি ব্যক্তিগত মুহূর্তের নস্টালজিয়া নয়—এটা একটি প্রজন্মান্তরের সেতুবন্ধ। আমার শৈশবের এক নিঃশব্দ দীপ্তি, এক আশীর্বাদ, যা সময়ের পরতে পরতে আমার জীবনে আলো ফেলে গেছে। তিনি শুধুমাত্র একজন সাধু পুরুষ ছিলেন না, তিনি আমাদের পরিবারের অহংকার। আমাদের দাদু ভান্তে, মা’র জ্যাঠা ভান্তে—যাঁর হাতের ছোঁয়া আমার ভেতরে চিরকাল থেকে যাবে।"

তাঁর ন্যায় মহাতাপস ১৯ শতকের অন্তিম ক্ষণে বঙ্গদেশের বৌদ্ধ জগতে জন্মগ্রহণ করে নি এবং শীঘ্রই যে জন্ম নেবে তাও আমার মনে হয়না। কারণ তিনি ছিলেন বৌদ্ধবিদ্যা বিশারাদ।' জ্ঞানতাপস দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবির ১৯৮০ খ্রীষ্টাব্দে, ২৩ নভেম্বর আকস্মিকভাবে কালকবলিত হন। তাঁর এই প্রয়াণে বৌদ্ধসমাজের এক মহানক্ষত্র নির্বাপিত হয়। 'সব মরণ নয় সমান,' এই কথটির  উৎপত্তিগত অর্থ হল 'সকল মৃত্যু সমান নয়'। কোনও কোনও মৃত্যু বুনো হাঁসের পালকের থেকে হালকা আর কোনও কোনও মৃত্যু হিমালয় পর্বতের থেকেও ভারী। ইতিহাস ও তো এই কথাই বলে।

তাঁর কথা আমার স্পষ্ট মনে নেই, ১৯৮০ সালের মে মাসে পাঁচ বছর বয়স, আমার বাবা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁকে সেই একবার দর্শন লাভ করেছিলাম। আশীর্বাদ পেয়েছিলাম,  বাবা ছোট বেলায় আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন পরিচয় করাতেন। তাঁর বুদ্ধ বন্দনা "দীপন" বইটি আমার বাবাকে দিয়েছিলেন।


কবি মোহিতলাল মজুমদার বলেছেন, 'জীবনের ফুল বড় হয়ে ফোটে মরণের উদ্যানে'। আর এটাই হল ব্রহ্মচর্য   এবং পুণ্য জীবনের সারতত্ত্ব অন্যভাবে বলতে হয় :

পৃথিবীর ওই অধীরতা
থেমে যায়- আমাদেরে হৃদয়ের ব্যাথা
দূরের ধুলোর পথ ছেড়ে
স্বপ্নেরে-ধ্যানেরে
কাছে ডেকে লয়;
উজ্জ্বল আলোর দিন নিভে যায়,
মানুষেরো আয়ু শেষ হয়।
,,,,,,,সময়ের হাত এসে মুছে ফেলে আর সব-
নক্ষত্রেরো আয়ু শেষ হয়! -জীবনানন্দ দাশ। 

 

ড জিনবোধি ভিক্ষু মহোদয় রচিত জ্ঞানতাপস দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবিরের জীবনি গ্রন্থ রচনা সত্যিকার অর্থেই সময়ের দাবি রাখে। ভবিষ্যত প্রজন্মের সমাজ সদ্ধম্ম রক্ষায় সুচিন্তিত ও পরিশীলিত সংস্কৃতির রক্ষায় মুখ্য ভূমিকা রাখুক এই প্রত্যাশা কামনা কলছি।

অলং ইতি বিখারেণ। 

 

 

সুমনপাল ভিক্ষু

অতিথি অধ্যাপক 

পালি বিভাগ ও  বৌদ্ধ বিদ্যা অধ্যয়ন বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, পালি বিভাগ, সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, কোলকাতা।

 

 

২৫৬৯ বুদ্ধাব্দ

২০২৫ ইংরেজি

মধু পূর্ণিমা

কোলকাতা